সাত ঈশ্বর!

সাত ঈশ্বর!

( একটি বাস্তব গল্প! স্রষ্টা যদি অন্য ধর্মের হয়, কি হবে শেষ বিচারের দিনে? )

কবি শুদ্ধের পড়ার রুমের দেয়ালে ঝুলানো ইষ্ট-এশিয়ান সৌভাগে্যর সাত ঈশ্বর ছবিগুলো মহামতি খুব মনেযোগে দেখছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাদের নাম পড়ছিলেন, তাদের কর্মগুণ মনে করার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময়, কবি শুদ্ধ কফি নিয়ে রুমে আসে। মনোযোগে কেড়ে নিয়ে, কফিকাপ হাতে দিয়ে মহামতিকে জিজ্ঞাসা করে,

– এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন মহামতি?

– সৌভাগের সাত দেবতাদের ছবি। কি অপরুপ অয়বর! তয় তুমি হঠাৎ দেয়ালে অন্য ধর্মের দেবতাদের ছবি ঝুলিয়েছ কেন?
– পরকালের প্রস্তুতি মহামতি? কোন সময় চলে যাই বলা তো যায় না।
– বুঝলাম না! তোমার কি মৃত্যুভয় জেগেছে?
– না! আপনার শিক্ষা মেনে সকল প্রকার ভয়কে জয় করার চেষ্টা করছি। এই ছবিসূত্রের হিসাবটি সহজ। মৃত্যুর পর যদি পরকালে গিয়ে দেখি, ঈশ্বর আছে, তবে সেটা আমাদের বাবা-দাদার শেখানো ধর্মের নয়, অন্যধর্মের ঈশ্বর, তখন কি হবে? তার প্রস্তুতি!
– এসব কি আবোল তাবাল বলছো?
– হ, সত্য মহামতি! আমি সংশয়ে পড়েছি। আমরা যেসব প্রবক্তাদের কথা মানি ও জানি, পরকাল নিয়ে তাদের সবার বর্ণনাই তো প্রিডিকশন, অনুমান! আজ পর্যন্ত তাদের কেউ তো মৃত্যুর পর, পরকাল দেখে এসে আমাদেরকে সত্য ঘটনা বর্ণনা দেননি।
কবি শুদ্ধের কথায় মহামতি আতঙ্কিত হয়ে বলেন,
– যদি তাহাই হয়, তবে তো মহাঝামেলা হয়ে যাবে! তুমি, আমি, সকল নবী-রসুল, সাধু-সন্ত সবাই তো তখন বিচারের এক কাতারে থাকবো। কি আনন্দ, শতভাগ সমাজতন্ত্র! তয় তোমার হঠাৎ এই ভাবনা মনে হলো কেন?
– মহামতি, আপনি তো জানেন, পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম । সকল ধর্মের নিজস্ব – পরকাল, স্বর্গ ও নরক নিয়ে বিচিত্র গল্প আছে। সব মিথই চমৎকার। জাতিসংঘের ইউনাস্কোর মতে- পৃথিবীতে আজো ৩৬০০ এরও বেশী জীবিত ধর্ম ও উপধর্ম রয়েছে। সবাই নিজেদের গল্প, আচার ও বিশ্বাসকে সঠিক, শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর দাবী করে। তাদের প্রবক্তাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ দাবী করে। সকলের মাঝে মাত্র তো একটি ধর্মের ঈশ্বর- প্রকৃত ঈশ্বর, বাকীরা তো রুপকথা, মিথ্যা, বানানো। তবে কোনটি সত্য? সবাই তো নিজেরটাকে সত্য বলে, এই ভাবনা আমাকে সকল ধর্ম জানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। আমি ‘ওয়ার্ল্ড ক্রিপটারস্’ পড়ছি। ধর্মদর্শন বুঝার চেষ্টা করছি।
– খুব ভালো পরিকল্পনা। প্রিজোডিস ত্যাগ করে, আনন্দের সাথে পড়, ভালো ফল পাবে।
– মহামতি, একটি প্রশ্ন। যদি ঈশ্বর আলসেই আপনার ধর্মের না হয়ে, অন্য ধর্মের হয়, তখন পরকালে ঈশ্বরের সামনে আপনি কি করবেন, কি বলবেন?
– আগে বল, তুমি কি করবা?
– আমি সোজা ঈশ্বরের কাছে গিয়ে, পা সাপটে ধরে মাফ চাইবো! অষ্টাঙ্গ প্রণাম করবো। আর আপনি কি করবেন?
– আমি কিছু করবো না। চোখে চোখ রেখে- নির্ভয়ে ঈশ্বরকে বলবো। পৃথিবীতে আমি যে ধর্মটি পালন করেছি, সেটা তোমার দেয়া। যে ধর্মের ঘরে পাঠিয়েছ, সেটা তোমার ইচ্ছায় হয়েছে, দুনিয়াতে আমাকে পাঠানোর আগে তুমি পছন্দ করার কোন সুযোগ আমাকে দেওনি। যদি দিতে, তবে আমি তোমার ধর্ম নিয়েই জন্মাতাম। সুতরাং যদি অন্যধর্ম পালনে আমার দোষ হয়ে থাকে, তবে সেই দোষে তুমিও দোষী।
– ঈশ্বর যদি বলে, তোমাকে তো বিচার বিশ্লেষন করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছিলাম।
– আমি বলবো, আমি তো বিচার বুদ্ধি দিয়েই জীবন যাপন করেছি। ধর্মের পথেই ছিলাম, ভালোবাসার পথেই ছিলাম। স্বার্থপর হইনি, কাউকে ঠাকাইনি, গুন্ডামি-মাস্তানি করিনি, যুদ্ধ-বিগ্রহে সায় দেইনি, চুরি-ডাকাতি-দূনীর্তি করিনি, নেশা-ভান খাইনি, ধর্ষণ-বহুগামিতা করিনি, খুনখারাপি-বাটপারি করিনি, পরপদে- পরসম্পদে লোভ করিনি, অহিংসার বাণী প্রচার করেছি। তোমার দোষে যদি আমি দোষ করে থাকি, তবে তুমি আমাকে নরক দাও । আমি মাথা পেতে নিলাম।
– যুক্তি তো সুন্দর মহামতি, স্রষ্টা কি মানবেন?
– মানবেন না কেন, তিনি তো পরম দয়ালু। আমি নিশ্চিত পরম ঈশ্বর আমাকে নরক দিবেন না। স্বর্গ দেয়া তার সিদ্ধান্ত, আমার নয়। আমি স্বর্গের লোভ ও নরকের ভয় করি না। আমি তার সান্নিধ্য চাই। এটাই আমার পরম ইচ্ছা।-
সাদো, জাপান

স্বর্ণদ্বীপে ফলেনমাস্ক , অন‍্যরকম গল্প

স্বর্ণদ্বীপে ফলেনমাস্ক , অন‍্যরকম গল্প

অবকাশ কাটাতে স্বর্ণদ্বীপে বিলিয়নিয়ার ফলেনমাস্ক আসলো। সঙ্গে কেউ নেই, একা। পুরো শান্তি ও স্বস্থি তার দরকার, তাই সঙ্গে কাউকে আনেনি। এসেই সে একা পুরো দ্বীপ একা হেটেছে। দেখে হতবাক হয়েছে স্বর্ণদ্বীপের সব মানুষ দ্বীর্ঘজীবি, সুখী। পৃথিবীর সব মানুষ যেখানে বেশীদিন বাঁচার জন‍্য দিনগুনে, এখানে মানুষ মরার জন‍্য দিনগুনে। মানুষ সহজে মরে না, বয়সের টানে পিতাপুত্রের চামড়ার ভাঁজ যেন একই রকমের।কুকড়ানো। কে পুত্র, কে পিতা বুঝার উপায় নেই।

সৈকতের পাশে টুরিস্টস্পটে রাখা বেঞ্চিতে বসে আম্রিকান দামি দামি এটাসেটা খাচ্ছে ফলেনমাস্ক। দ্বীপের আদি ষ্টাইলের প্রাকৃতিক খাবারে তার আস্থা নেই। জীবাণুর ভয়ে সব সময় তঠস্থ থাকে। দ্বীপের পানি পর্যন্ত সে পান করে না। কোন কিছু খেতে বাধ‍্য হলে তিনবার চেখে নেয়।

একটু দূরে আরেক বেঞ্চিতে বসে এক বৃদ্ধ মনের আনন্দে বাঁশি বাজাচ্ছিল। নাম তার সুখরাজ। স্বর্গীয় বাঁশীর সুরের মুর্ছনায় আবেশিত হয়ে, সুরের টানে সকল অহংকার ত‍্যাগ করে মাস্ক বৃদ্ধ বংশীবাদকের কাছে যেতে বাধ‍্য হয়। কাছে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধের বংশীধ‍্যান ভেঙ্গে যায়। মাস্ক বৃদ্ধকে বলে,
– আপনার বাঁশির সুর অপূর্ব। আমি কি আপনার বেঞ্চিতে একটু বসতে পারি।
– বসেন।
– ধন‍্যবাদ। কতক্ষন নীরব থাকার পর, এদিক ওদিক তাকিয়ে মাস্ক হেভারসেক থেকে চিপসের প‍্যাকেট বের করে। বলে,
– চিপস খাবেন? আরেকটা প‍্যাকেট আছে। আম্রিকান ‘করমরে’, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি চিপস। বৃদ্ধ বলে,
– ধন‍্যবাদ। আমি আম্রিকান আর চাইনিজ খাবার খাই না। ব‍্যবসার জন‍্য চাইনিজ আর মার্কিনীরা খাবারে ক‍্যামিকেল মেশায়, কারসাজি করে। এদের যে কোন খাবার খেলেই আমার পেটের অসুখ হয।
– তাই নাকি?
– জি, তয় আপনি কে?
– আমাকে চিনেন না? সবাই আমাকে চিনে। আমি চাঁদে ও মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসত বানানোর প্রকল্পের উদ‍্যোক্তা, নাম মাস্ক।
– তাই নাকি? বেশ অদ্ভত কাজ তো? তয় খামিসামা এত সুন্দর একটা গ্রহ দিলেন, আপনি হঠাৎ করে অন‍্যগ্রহে যাওয়ার চিন্তা করছেন কেন?
– এই গ্রহটা তো অনেক ছোট? পরিবেশ, জলবায়ূ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অল্পদিনের মাঝেই এটা মানুষের পূর্ণ হয়ে যাবে। বাসের অযোগ‍্য হয়ে যাবে।
– আপনার ধারনাও ভুল। পূর্ণ হবে না। আপনি কি জানেন না রাশিয়া, চায়না, ব্রাজিল, কানাডা এমনকি আপনার দেশ আম্রিকার কত বড়? এসব দেশের তিনভাগের দুই ভাগ এখনো খালি। পান্তানাল ও আমাজন সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় বার্জিনল‍্যান্ড আছে যেখানে গত ৪.৫ বিলিয়ন বছরেও একবারের জন‍্য মানুষের পদচিহৃ পড়েনি। যে হারে মানুষ বাড়ছে, সেভাবে জন্মহার থাকলেও আরো অন্তত ১ লাখ বছরেও পৃথিবীর ঘনবসতি টোকিও মত ঘন হবে না।

বৃদ্ধ অতানাবের কথা শুনে মাস্ক হতবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, “বৃদ্ধকে তো দেখে অশিক্ষিত মনে হয়েছিল, উনি তো দেখছি শিক্ষিত। সন্তের মত কথা বলে। অনেক কিছু জানে মনে হয়।” ভাবনা ভেঙ্গে মাস্ক বলে,

– আপনি তো দেখছি অনেক তথ‍্য জানেন। গভীরভাবে ভাবেন। তয় এসব কোথায় থেকে জানলেন? ইন্টারনেট থেকে বুঝি? আমি ইন্টারনেট নিয়েও কাজ করি, নিয়মিত মহাশূন‍্যে স‍্যাটেলাইট পাঠাই। ইন্টারনেটের গতি যাতে আরো বাড়ে, তথ‍্যভান্ডার যেন আরো সমৃদ্ধ ও নিরাপদ হয় এরজন‍্য স্পেসস্টেশন বানিয়েছি, দিনরাত কাজ করি।
– ইন্টারনেট, সেটা আবার কি?
– ওরে বাবা, ইন্টারনেট কি আপনি বুঝেন না? আপনি কি এই যুগের মানুষ? তাহলে শিখেন কিভাবে? যোগাযোগ করেন কিভাবে?
– বই পড়ে, টিভি দেখে শিখি। প্রকৃতি থেকে, বন্ধুদের সাথে আলাপ করে শিখে? আমার একটি সুন্দর ল‍্যান্ডফোন আছে, ৪৭ বছর বয়স, এখনো সুন্দর কাজ করে।

এমন সময় ফলেনমাস্কের দামী কেচলা ফোনটা বেজে উঠে। নম্বর চেক করে বলে, একটা জরুরীফোন বউযের কাছ থেকে এসেছে, একটু অপেক্ষা করুন।

ফোনে চলতি ইংরেজীতে কথা বলার পর থেকে মাস্ক আগের মত প্রাণবন্ত নেই।গুছিয়ে কথা বলতে পারছে না। সব কিছু যেন ভেঙ্গে পড়ছে। বারবার দ্রুত নিজেকে তুলে ধরে রাখার সবচেষ্টা করছে। কেমন যেন মনমরা, আনমনা, অস্থির । বৃদ্ধ বলে,
– অশান্ত হয়ে গেলেন কেন?
– দুঃখের খবর, আমার ৪০টি স‍্যাটেলাইটকে সৌরঝড় গ্রাস করেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল বুঝি।
– কত ক্ষতি হবে?
– অনেক, আনুমানিক এই দ্বীপের মত ১০টা দ্বীপ কেনা যাবে!
– তাই নাকি? অনেক টাকার ব‍্যাপার সেপার।
– জি
– তয় ৪০টি স‍্যাটেলাইটের দাম কি আপনার প্রাণের চেয়েও বেশী দামি?

বৃদ্ধের কথা শুনে মাস্ক চমকে যায়, সচেতনতা জেগে উঠে। প্রাণের চেয়ে দামী জিনিষ তো দুনিয়াতে নেই। এই ভাবনায় মাস্কু পুরো নীরব হয়ে যায়, যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে। কোন উত্তর না নিয়ে ফলেনমাস্ক বলে,

– ব‍্যবসার কথা বাদ দেন। আজ ক্ষতি হয়েছে, কাল লাভ হবে, লাভ-লোকসান দুইয়ে মিলেই তো ব‍্যবসা। বড় বড় স্বপ্ন আর ব‍্যবসার ভারের ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম, একটু শান্তির জন‍্য স্বর্ণদ্বীপে এসেছি। শান্তি আমার চাই ই।

– ভালো। ধন‍্যবাদ। এই দ্বীপটা আসলেই সুন্দর, শান্তির নীড়। চাইলে এখানে আপনি আমার মত শান্তি ভোগ করতে পারেন। শর্ত শুধু প্রকৃতিকে মেনে নেয়া, গ্রহন করা। এই দ্বীপের সবকিছুই আমার কাছে স্বর্গের মত মনেহয়। কোন কিছুতেই ভুল ধরতে পারি না। সব কিছুই যেন মনেহয়, যেমনটা দরকার তেমন করেই সাজানো।
– ঠিক বলেছেন। পারফেকশনের সাথেই প্রকৃতি সব সাজায়। ভারসাম‍্যতাই প্রকৃতির ধর্ম।
– প্রকৃতি বলেন কেন? স্রষ্টা বললে আরো সঠিক হবে, সবকিছুকে আরো কাছে পাবেন, জীবন্ত মনে হবে, একতা বোধ করবেন।

অনেকক্ষণ সুমুদ্রের দিকে তাঁকিয়ে থাকার পর, সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসমান দুলখেলা মাছ ধরার নৌকা দেখিয়ে ফলেনমাস্ক বলে,
– কি অপূর্ব দৃশ‍্য, আমি যদি ঐ মাঝির মত আনন্দে মাছ ধরতে পারতাম, কতই না ভালো হতো।
– যদি মন থেকে চান, পাবেন। মানুষ মন থেকে যা চায়, তাই পায়।
– বুঝেছি। তয়, আপনি কি করেন?
– মাছ ধরি, ঐ জেলের মত মাছ ধরতাম। বয়সের কারনে পুত্রধন এখনো সাগরে যেতে দেয় না, যদিও আগের মতই আমি সবল। তারপরও মাঝে মাঝে ওর সাথে সাগরে যাই, মাছ ধরি।
– ও তাই বুঝি। অসাধারণ। তয় আপনার মাছ ধরার নৌকা কয়টা?
– একটা!
– মাত্র একটা? সারাজীবন কাজ করে মাত্র একটি নৌকার মালিক হয়েছেন? এত কম কেন?
– আমার তো একটাই দরকার। বেশী দিয়ে কি করবো? কে চালাবে? আগে আমি চালাতাম, এখন পুত্র চালায়।
– কেন আরেকজনকে দিবেন। হয় লোক রেখে চালাবেন, না হয় ভাড়া দিবেন। সে আপনার হয়ে চালাবে। বেশী বেশী মাছ ধরবে। বাজারে মাছ বিক্রি করে আরেকটা নৌকা কিনবেন। এভাবে আপনার অনেক নৌকা হবে, আপনিও আমার মত অনেক ধনী হতে পারেন।
– ও তাই নাকি, ধনী হওযার এই সহজ বুদ্ধিটা তো আমাকে আগে কেউ কখনো দেয়নি। তয় বেশী ধনী হয়ে লাভ কি?
বৃদ্ধের কথা শুনে মাস্ক হতবাক হয়। মনে মনে ভাবে, ধনী হলে কি লাভ, এই বুড়ো বুঝে না, ওনাকে কেমনে কি বুঝাই?
বৃদ্ধ অতানাবে বলে, কি ভাবছেন মিস্টার মাস্ক?
– তেমন কিছু না। ধনী হলে আপনার অনেক টাকা হবে। আপনি বসে বসে খাবেন। অন‍্যরা আপনার হুকুম তামিল করবে, অনেক সম্মান করবে। আপনি আরামে থাকবেন।
– আমি তো বসে বসেই খাই। অনেক আরামেই আছি। জীবনে কোন সমস‍্যা নেই। যা চাই, তাই পাই। আরামে থাকার জন‍্য এতকষ্ট করে অনেকগুলো নৌকার মালিক হওয়ার দরকার কি?
মাস্ক বৃদ্ধের কথা খোঁচার আঁচ পেয়ে অপমানবোধ করে। কিন্তু আবেগ দেখায় না। আরো শান্ত হয়ে বলে,
– ও তাই? আপনার তো অনেক টাকা নাই।
– তা ঠিক, তবে সুখ ও সন্তুষ্টি তো আছে। আপনার কি অনেক টাকা? আপনার কয়টা নৌকা?
– নৌকা নাই তবে অনেকগুলো গাড়ি আছে। আমার একটা কচলা গাড়ির কোম্পানি আছে, দামি দামি গাড়ি বানায়!
– তাহলে তো দেখছি আসলেই আপনি অনেক ধনী মানুষ।
– হ, লোকে বলে আমি বিলিয়নিয়ার।
– ওরে বাবা। এর মানে, আপনি অনেক বুদ্ধিমান, নিজের লাভের লাগি অনেক মানুষকে খাটাতে পারেন।
– খাটানো বলছেন কেন? আমি তো উদ‍্যেক্তা, ব‍্যবসায়ি। ব‍্যবসার মাধ‍্যমে মানবসেবা করি, মানুষের কাজ ও রুজির ব‍্যবস্থা করি, সমাজ সেবা করি।
– তা ঠিক। তবে ব‍্যবসায় শুভঙ্করি না থাকলে ধনী হওয়া যায় না। ছোট সময় আমার বাবা বলতেন, দুনিয়াতে যে যত মানুষকে ব‍্যবহার করতে পারে, ঠকাতে পারে সে তত ধনী, সে তত বিখ‍্যাত হয়।
– এটা তো সন্তদের দর্শন। আপনার বাবা কি সন্ত ছিলেন?

স‍্যাটেলাইটের শোকে মাস্ক বারবার আনমনা হযে যাচ্ছে। মন যাওয়ার কথা মহাশূন‍্যে, সেখানে না গিয়ে আম্রিকায় চলে যাচ্ছে, কোনভাবে নিজেকে নিজের সাথে রাখতে পারছে না। এবার বুঝি শেয়ারবাজারে আমার ধস নামবেই।
এত অস্থিরতার মাঝেও মাস্কভাবে ‘স্বর্ণদ্বীপের আমাকে কেউ বিলিয়নিয়ার হিসাবে, কচলার মালিক হিসাবে জানে না কেন। কেউ তো বাড়তি সম্মান করছে না! কেউ কি আমার সম্পর্কে জানে না? এখানে একটি মিডিয়া সেন্টার বানানো জরুরী। মানুষকে লেটেষ্ট তথ‍্য জানানো দরকার। নইলে মানুষের আদিমতা, মূর্খতা কববে না। ব‍্যবসার ক্ষেত্র তৈরী হবে না। এই সুন্দরদ্বীপে নিজের গুরুত্ব কম, এই ভাবনায় মাস্কের মন হতাশায় ধসে পড়ে। চরম একাকিত্ব বোধ হয়, হৃদয়ে ভালোবাসাহীনতার তুফান জাগে। এখানে ডলারের দাম থাকবে না এটা কোন কথা হলো? এখানে মানুষ কেন বড় হতে চায় না, কেন মানুষ একে অন‍্যকে টপকে যেতে চায় না? কেন মানুষ বহেমিয়ান বুদ্ধ-গান্ধী’র মত নিমোহ থাকতে চায়? বিষয়টা নিয়ে গবেষনা করা দরকার। এদেরকে আধুনিক বানাতেই হবে।

বৃদ্ধের প্রশ্নবাণ থেকে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে মাস্ক নিজেকে নিজে বুঝ দেয়, ” তোয়াজ করবে কেন এখানে তো গাড়ি বা স‍্যাটেলাইটের দরকার নেই। দরকার শুধু শান্তি, সেটা তো দেখছি সবার ঘরে আছে। ”

মাস্কের সঙ্গে কথপোকথনের সময় হঠাৎ আরেক বৃদ্ধ কাছে আসে। মাথার চুল অগোছালো, আলোদুলো। বয়স তার আনুমানিক ৬৫ । হাতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো বৃদ্ধ অতানাবের একটি প্রট্রোট ও একটি খাতা। নীচুস্বরে মাস্ক বলে,
– আপনার বন্ধু বুঝি?
– না, ও আমার একমাত্র পুত্র ‘কিমতারু’, বড় ডানপিঠে ছেলে। এখন ভদ্র হয়ে গেছে। আমার বয়স ৮৭ বছর, যে কোন মুহুর্তে খামিসামার কাছে চলে যেতে পারি, তাই ভয়ে থাকে। এখন অনেক কথা শুনে, সম্মান করে। কোন বেয়াদবি করে না।

এ বলে মাস্কের সঙ্গে বৃদ্ধ পুত্রকে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিমতারু বাবাকে খাতাটি দেখিয়ে বলে,
– বাবা, সুবচনটা তো ঠিক করে দিলে না। যে কোন মহুর্তে তো চলে যেতে পারো। তোমার কবরের শিলালিপিটা আগেবাগে বানিয়ে রাখা ভালো, দেখে দাও। বৃদ্ধ আনন্দ ও তৃপ্তির সাথে পুত্রের লেখা সুবচনটি পড়ে, একটু ঠিক করে দেয়।

” হে পথিক, মহাকালের মহাযাত্রায় ক্ষণিক বিরতি হয়েছে এ জনপথে আমার। এদ্বীপে ভালোবাসার একটি ছোট প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছিলাম। তোমারা ভালোবাসার প্রদ্বীপ জ্বালাও, জীবন আলোকিত হবে, পূর্ণ হবে সকল সুখ আয়োজন।” ”

—-
শাহজাহান সিরাজ
জাপান, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

মহাঘটনা ঘটে গেছে!

মহাঘটনা ঘটে গেছে!

ফেরিশিপে বাড়ি ফেরা সময়, ফাইভষ্টার ‘টকিমারো’ পানির জাহাজের বারান্দায় হাঁটছিলাম। মাঝে মাঝে জাপান সাগরের ঢেউয়ের ছবি তুলছিল। সীমাহীন সমুদ্র দিগন্তের ছবি তোলার সময়, হঠাৎ এক জাপানি পৌঢ় পাশে এসে দাঁড়ায়। আমার হাতে মার্কথ্রি ক‍্যামেরা দেখে বলে,
– আর ইউ ফটোগ্রাফার? গুড! ইউর ক‍্যামেরা ইস ভেরি এক্সপেনসিভ, নাইস। আই লাইক ইট।
– আরিগাতা?

জাপানিরা তেমন ইংরেজী বলতে পারে না। লোকটিকে শুদ্ধ বৃটিশ ষ্টাইলে ধীরে ধীরে ইংরেজী বলা দেখে আমি অবাক হলাম। কতক্ষন আমার চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, বললো,
– ইউর আই ইস গুড! ডু ইউ নো- হুয়াই টুডেস স্কাই ইস সো গ্রীণ?

লোকটির অতিধীর কথায় আমি বেশী আরাম পেলাম না। একটু বিরক্তি বোধ হলো। তেমন পাত্তা না দিয়ে আলোকবিদ‍্যার প্রায় ভুলে যাওয়া বিষয় দ্রুত বলে কেটে পড়লাম,
– ইটস লিঙ্কট ইউথ এটম মলিকুল ইন এয়ার, মিক্সষ্ট রিফলেকশন অফ ইয়োলো ওন্ড ব্লু কালারড লাইট!
(বিষয়টা ক‍্যালবিন, সোনালি-নীলের আলোর মিশ্রণের কারণে।)
– ইউ আর রাইট। ইউ আর ইনটেলিজেন্ট।
– থেক্সস্।

বুঝেছিলাম লোকটার দৃষ্টি গভীরে। আরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতে পারে। না পারলে শরমের বিষয় হবে, এই ভয়ে পালানোর পথ খুঁজছিলাম।

কথা বলার সময়, ব‍্যক্তিটির দুই পাশে দুইজন দাঁড়িয়ে থাকা আমার দিকে অতিসর্তকতার সাথে তাকিয়ে ছিল। যেন আমার বলা প্রতিটি শুব্দ গুনছিল। লোক দুইটি চামচা চামচা মনে হলো।
মনে হলো দুইজনই বাংলা সিনেমার ভিলেনের বডিগার্ড, গুন্ডা। বক্তার কথাতে একটু আরাম লাগলেও, সঙ্গী দুইজনের তাকানি আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি। ছেচড়া ছেচড়া লেগেছিল। জাপানিরা সাধারনত চামচা বা টুন্ডা মুসার মত বডিগার্ড রাখে না। কেন রেখে বুঝলাম না। হয়তো ফলোয়ার বা কর্মচারী কেউ হবে।

ফ‍েরির কামড়ায় গিয়ে, কাঁচের দরজায় দিয়ে লোকটিকে দেখিয়ে সুন্দরী বউকে বললাম,
– লোকটা এবনরামল নাকি? মদ খাইছে?
– কেন?
– অতি ভদ্রভাবে কথা বলে। একটু মাতাল মনে হলে। ভাব লইলো যেন সে কোন ধর্মের প্রবক্তা, অতিশুদ্ধ সাধুসন্ত । সব কিছু বেশী পরিপাটি।
বউ একটু চুপ থেকে বলে,
– আরে না, ধর্মের মানুষ না। এই দ্বীপের সবচেয়ে ধনী ও বিখ‍্যাত মানুষ, শিল্পপতি। অনেক ব‍্যবসা আছে তাঁর। কয়েক পুরুষ ধরে বিলিয়নিয়ার, তবে খুবই সৎ ও সম্মানী মানুষ, সমাজকল‍্যানে অনেক দান করে, অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছে। শুনেছি এই দ্বীপে নির্বাসিত এক সামুরাইয়ের বংশধর।
– তাই নাকি?

বিরাট ধনী ও শিক্ষিত শোনার সাথে সাথে আমার মনের চেহেরা একটু পাল্টে গেল । মনে মনে ভাবলাম,
– না জেনে ভালোই হয়েছে। যদি জানতাম অতি মানি-গুনী ও ধনী, হয়তো অন‍্যরকম নাটক ঘটতো। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারতাম না। হয়তো জি, জি করে শুধু শুনতাম।

মনে মনে আরো ভাবলাম – আমার নাপাত্তা দেয়া কথায় লোকটি বেয়াদবি মনে করে নাই তো? আরেকটু কথা বলা দরকার ছিল। বিদেশী ভেবে হয়তো তিনি আমার সঙ্গে আরো কথা বলতে চেয়েছিলেন।


শিক্ষা – বিশ্ব মানবাধীকার সনদের প্রথম অধ‍্যাদেশ মতে, প্রতিটি মানুষ জন্মগত ভাবে ধর্মে, বর্ণে, জাতিতে ও মর্যাদায় সমান। আমরা যদি কারো ব‍্যক্তিগত বিষয়, বিশেষ করে পদপদবী, সম্পদ-খ‍্যাতি না জেনে, গুরুত্ব না দিয়ে – সামান ভাবে শ্রদ্ধা, সম্মান ও কমিউনিকেশন করতে পারি, আমাদের সমাজিক সম্পর্কগুলো দ্রুত বদলে যাবে। শুদ্ধ হবে। একান্ত গোপন তথ‍্য না জানলে মানুষ ইনফিরিওরিটি ও সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগে না।

হায়রে দুনিয়া

হায়রে দুনিয়া

লোকটি উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। নিজে ভোগ না করে, এটাসেটা করে, ঢাকায় একাধিক বাড়ি গাড়ি ফ্লাট করেছেন।
উনসত্তর বছর বয়সে, সবাইকে ভূগিয়ে, সকালে করোনায় মারা গেছেন।

ঘরে লাশ রেখে – অশ্রুপাতে রিপরীতে; ছেলেমেয়ে, মেয়ের জামাইয়ের চোখেমুখে লোভ আর আক্রোশের রক্ত। কতক্ষন পর পর বিদেশে নিকট আত্নীয়দের সঙ্গে ফোন করে, সলা-পরামর্শ করছে,
– কে কোন বাড়ি-ফ্লাট পেয়েছে। কোনটা কাকে দিয়েছে, কেন দেয়েছে! কারটা দাম বেশী, কারটা কম দাম ইত‍্যাদি

শেষ বিদায়ের চেয়ে, ‘পাওয়া-না পাওয়ার’ হিসাবটা যেন সবার কাছে মূখ‍্য বিষয়।

বিলসন্ধ‍্যা

বিলসন্ধ‍্যা

এক গৃহহীন হতদরিদ্র আধা পাগল রাস্তায় দাঁড়িয়ে বহুতল ভবনের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘ঘরে থাকতে কইতাছেন ভালা কথা, থাকুম, কিন্তু যার ঘর নাই বাড়ি নাই, সে থাকবো কোথায়? পথশিশু, বস্তিবাসী ছাড়াও, ঢাহার শহরের বেশীর ভাগ মানুষের আমার মত ঘরবাড়ি নাই, ভাড়াবাড়িতে থাকে! বড়াই করে! টানা কয়েক মাস কাজকাম না থাকলে, আয় রোজগার না হইলে, দেখি না কয়জনের শহরপ্রেম, ফুটাঙ্গি থাকে! সবাই আমার লাহান, সমান হইয়া যাব।’

এ বলে অট্ট হাসিতে হাসতে থাকে, পাগল।

এটা-সেটা করে কতক্ষণ থেমে থাকার পর, পাগলটা আবার প্রলাপ বকতে শুরু করে, ‘নাটকের প‍্যাথেটিক পর্ব শুরুর আগেই, চল নিরাপদে, সবুজ-শ‍্যামল যে গেরামে জন্ম হয়েছিল, সেখানে চইলা যাই। ভালাবাসা পাবার সাথে সাথে, করোনামুক্ত পরিবেশ পাবা। নদী-বিলে মাছ ধরবা, পুকুরে সাঁতার কাটবা, তরতাজা সবজি খাবা। নদী আর প্রকৃতি দেইখা দেইখা, নির্মল হিমেল বাতাস খাইয়া অপার শান্তি পাবা। হয়তো বুকে লুকিয়ে থাকা কবিতাও মুখে ফুটবে।

পাগলের চিল্লাচিল্লি শুনে টক্কর আলী ৩য় তলার বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। টক্কর আলিকে লক্ষ‍্য করে পাগল বলে, ‘আগেই কইছিলাম, গেরামের পোলা লও গেরামে যাই, কেউ কথা শোন নাই, এমনকি রথি-মহারথি, মন্ত্রী-মিনিষ্টারাও শোনে নাই! নীচে নাইমা আসো! আও চইলা যাই, পাগলের এই শহর থেইকা লাভ নাই, চল পালাই।

পাগলের বকবকানি শুনে টক্কর আলি আইসোলেশনের অতি কষ্টেও মজা পায়! হাসে আর মনে মনে বলে, ‘দুনিয়াতে পাগলের সংখ‍্যা দিন দিন বাড়ছে।’

টক্কর আলির হাসি দেখে পাগল আবার বলতে শুরু করে,

”হাইসো না হাইসো না, নিটকাইয়া আর হাইসো না, দুবাইয়ের বুর্জখলিফা কাঁপতাছে! প‍্যারিস, লন্ডন, নিউয়র্ক পুরো খালি! সব বিল্ডিং ভয়ে থরথর করতাছে, চল পালাই, গেরামে যাই! নিজের জায়গায় যাই! দুইদিন আগে বা পরে ঐখানেই তো কব্বর টা হইবো, আগেবাগে গেলে অসুবিধা কি?’

পাগলের কথা শেষ হওয়ার পর, চারদিক অসম্ভব ভয়ার্ত নীবব লাগে। তিন তলা থেকে বামে ডানে তাকিয়ে পুরো রাস্তা দেখে, পুরো শহর খালি, একা একা লাগে। টক্কর আলি হৃদয় মৃত‍্যুভয়ে কেঁপে উঠে। চির বিদায়ের আশঙ্কায় অনুভূতি জেগে উঠে, সবকিছু যেন ভেঙ্গে পড়ে। আশেপাশের সব বিল্ডিংএর কাঁপন অনুভূত হয়। কষ্টে, দীর্ঘশ্বাসে চোখ বন্ধ করতেই টক্কর আলির কল্পণায় ভেসে উঠে, ছেলেবেলায় দেখা নিজ গ্রামের বিলের ধারে সূর্যাস্তের দৃশ‍্য। কতদিন দেখা হয়নি প্রিয় গ্রামের শেষ সোনালী আলো। বোধ করে – স্বর্গে আছি, নিজগ্রামে একজনকেও এখনো করোনা ধরেনি, একজনও এখানে মারা যায়নি! সব রহমত গ্রামে!

চোখ খুলতেই দেখে পাগলটি তার পুটলা থেকে একটি বনরুটি বের করে খাচ্ছে, খাদ‍্যদানা দাড়ি-মোছ লাগছে, এদিক সেদিকে ছিটছে! অস্পষ্ট কন্ঠে বলছে, ‘চিন্তার কারণ নাই, ক‍েবারে-বাবারে ছাড়া গেরামে কোন কিছুর অভাব নেই। কোন কথা না বইলা, সুবোধ বালক ও বালিকারা যদি শান্তিতে থাকতে চাও, বাঁচতে চাও, নিজ গেরামে চলে যাও। হে কমরেডগণ, গেরামে তোমার সব আছে, তুমি তো ঐখানে সর্বহারা নও, ঐখানে তুমি রাজা, অমৃতার সন্তান!’

‘শহরে ঘর নাই বাড়ি নাই, চল নিরাপদ গেরামে যাই!’
এ শ্লোগান জপতে জপতে চৈরঙ্গীর থেকে সুরু এক গলিতে ঢুকে যায়। পাগলটাকে আর দেখা যায় না, আর কথা শোনা যায় না। টক্কর আলি ঘরে এসে, বিছানায় শুয়ে বিশ্রামের চেষ্টা করে। হোম কোয়ারেন্টাইনে, দীর্ঘ গৃহবাসের অবসাদ মনে, তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ, শৈশব থেকে পুরো জীবনের ঘটনা হৃদয়ের পর্দায় সিনেমার মত দেখতে থাকে। পাগলের প্রলাপগুলো নিজের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে কষ্ট পায়। শৈশবের আনন্দ আর স্বর্গসুখ হারিয়ে হৃদয় হাহাকার করে! অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ভাবে, ‘কেন এত কষ্ট, কেন অযথা ব‍্যস্ত বড়াইয়ের জীবনযাত্রা। সুখে থাকার জন্য এত আয়োজন, এত কৌশল, এত ছলছাতুরি কি আসলেই দরকার? আমি কি এতদিন ঠিক পথে চলেছি?’

টক্কর আলি একা একা কাঁদে, জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা করে!

Bill , Marshland , বিল