জাপানি মন ও বাঙালি পণ!

জাপানি মন ও বাঙালি পণ!

জাপানে থাকতে হলে জাপানিদের মত হয়েই থাকতে হয়, হবে।

আমরা যারা জাপানে থাকি, এমন কেউ নেই যে জাপানিদের আচার ও কালচারে আহত হয়নি। আধুনিক জাপানিরা ইউরোপিয়ান ও এরাবিয়ানদের মত তেরা, অহংকারী ও ক্ষতিকারক না হলেও, মারদাঙ্গা বর্ণবাদি না হলেও, অনেকে জাপানিদেরকে বর্ণবাদী বলেন! ‘নীরব রেসিষ্ট’ আখ‍্যা দিয়ে – অনেকে বহুত অপছন্দ করেন।

বিদেশীদের এমন অভিযোগের মুল কারণটি হলো – জাপানিরা এশিয়ান হলেও বাঙালি মনোভাব, সততা ও কালচারে প্রায় পুরোটাই বিপরীত! গুনগত মানে, সততায়, পরিচ্ছনতা, সচেতনতা ও বিনয়ে জাপানি পুরো জাতিটিকে আমার পারফেকশনিষ্ট মনেহয়। শুদ্ধতায় অনেক সূচিবাই গ্রস্থ মনেহয়। যা অনেক সময় হালকা হালকা ভাবে, ছাড় দিয়ে চলা বাঙালিদের মনে আরামের বদলে বেরাম তৈরী করে। যারা জাপানি ভিন্নতাকে বুঝতে পারেন, মেনে নিতে পারেন, তাদের কাছে জাপান স্বর্গের মতো সুন্দর দেশ! আর যারা মেনে নেন না, তাদের কাছে হাবিয়া দোজখ।

অধিকাংশ সাউথ এশিয়ানরা ‘মেইনষ্ট্রিম জাপানি সমাজে’ মিশতে না পারার কষ্টের মাঝে, জাপানিদের ভুল ধরতে না পেরে পদে পদে জাপানিদের বকাবকি করেন। বিশেষ করে অন‍্যদেশ থেকে আসা সেমেটিক ধর্মের বিশ্বাসীরা, অনুসারীরা ‘বিধর্মী, বেলাহেজ, কাফের’ পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করেন না । এরা সবক্ষেত্র ‘সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে। এই আরো বেশী প্রবল হয়েছে ২০০৮ সালে ফেইসবুকিং এর সহজ প্রচার ও প্রসারের ফলে। সবক্ষেত্রে জাপানিদের খুঁত ধরতে গিয়ে, ভুল না পেয়ে হয়রান হয়ে যায়। নিজেদের অসভ‍্যতাগুলোকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত’ করে গোপন করে রাখেন। ফলত- জাপানি সুন্দরীদের সঙ্গে প্রেম করতে পারেন না। হাতে গোনা কয়েকজন বিয়ে করলেও, ইমরান শরীফের মত মাঝপথে ‘অতি দোষারুপ’ করে, যাত্রাভঙ্গ করেন! আর মনের দুঃখে একা একা নলা-কচলিয়ে হাত দিয়ে সুসি-বিরানী খান। একাকিত্ব কাটানোর জন‍্য সন্ধ‍্যায় মসজিদ, মন্দির আর গুরুদুয়ারাতে ফাকিস্তানি আদলে মাগনা রুটি-পরোটা, নিহাড়ি-বিরানী খান। এরপরও যাদের ভালোবাসাহীনতা মন থেকে না কাটে, তারা কিছু টাকা পয়সা হলেই বকাবকি করতে করতে দেশে চলে যান! বিয়ের মাধ‍্যমে যাদের এজোকেন (স্থ‍ায়ী ভিসা) হযেছে, তারা জাপানি সুন্দরী বউকে ডিভোর্স দিয়ে, পাকা বয়সে দেশ থেকে আরেকটি কচি বা মুটকি বিয়ে করে এনে, আরেক মহা ঝামেলায় যুক্ত হন। মনে মনে বলেন- ‘যার জ্বালা সেই জানে’।

এরচেয়ে বড় অসভ‍্যতা কি হতে পারে, শুধুমাত্র ভিসার জন‍্য একজন জাপানিকে বিয়ে করে । শরীরিক সম্পর্ক থেকে মেসি জামাই সেজে অভিনয় করে। ভিসা পওয়ার সাথে সাথে নানান প্রকার অত‍্যাচার করে ঘর থেকে বের করে দেয়। কোন বিদেশী যদি কোন বাঙালি সুন্দরিকে এমনটি করে – তবে বাংলাদেশী সমাজ, মানুষ ও আইন তা মেনে নিবে? কিন্তু জাপানি মুক্ত কালচারে বিশ্বাসী বলে, ব‍্যক্তিগত বিষয় বলে মেনে নেয়।

জাপানি সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আয়োজনের পারও, বিদেশী ও জাপানিদের অবস্থান বৈপরিত‍্য তেমনটা কমানো যায়নি। কারণটা জন‍্য জাপানি প্রশাসন ও আগত প্রবাসী দুই পক্ষই বেশ বিরক্ত। জাপানিরা বুঝাতে পারে না – জাপানে থাকতে হলে তোমাকে জাপানি হয়েই থাকতে হবে। আর বিদেশীরাও নিজেদের সত্ত্বা, এমনকি টোকিতে লাল গালিচা পার্টিতেও শাড়ি-সালোয়ার কামিজ পড়েন। দেশে নিজেদের সংস্কৃতিতে ‘পদদলিত’ করলেও, বিদেশে নিজস্ব অভ‍্যাস, রীতি-কালচার ত‍্যাগে করতে চান না – কারণ আসলেই রহস‍্যময় ও অজানা। মহাবিপদ জেনেও অধিকাংশ বিদেশী বেসিক পরিবর্তনে আগ্রহী নন। যারা আগ্রহী তাদের সংখ‍্যা খুবই নগণ‍্য!

জাপানে থেকে, জাপানে খেয়ে, জাপানে পড়ে – জাপানী হতে চান না, না বদলানোর দোষে জাপানিদেরকে গাওড়া বলা গালিবাজের সংখ‍্যা প্রবাসে কম নয়। হোষ্ট দেশে থেকে, হোষ্ট দেশকে সম্মান না করার কুকর্মটি অনেকটা হাস‍্যকর! সুবিধা নিবে কিন্তু এপ্রিসিয়েট করবে না, এটি কি ঠিক? বাংলাদেশকে পছন্দ করে না, তার জনগোষ্ঠী ও কালচারকে বকাবকি করে এমন বিদেশীদের কি বাঙালিরা মেনে নিবে? ইউরোপ আমেরিকার সংস্কৃতিকে বাঙালি সাদরে গ্রহন করলেও, জাপানিদেরটা ভালো হবার পরও গ্রহন করতে চায় না, কারণটি অদৃশ‍্য। দৃশ‍্যমান ভিন্নমত থাকার পরও আমাদের তুলনায় জাপানিরা বিদেশীদেরকে উদারভাবেই গ্রহন করে ও করছে। অথচ আমরা যেন তা মানতে ও বুঝতে চাই না।

আমিও পূর্বে জাপানিদের নিয়ে অভিযোগ করতাম; এখন বিষয়টি বুঝি! আসলে জাপানিরা বদলায় না, এটা বলা ভুল। যেটুকু বদলানো দরকার সেটুকুই বলায়। কিন্তু বদলানো প্রক্রিয়াটি খুব ধীর, সুস্থির ও হিসাবের ফরমূলাতে সীমাবন্ধ- যা বিদেশীদের অসহ‍্য লাগে। অনেকে বলে – জাপানিরা আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় বন্দি জাতে, এদের মুক্তি দরকার।
অবজেক্টিভলি চিন্তা করলে বুঝা যায় – আসলে জাপানিদের বদলানো সুযোগ নেই- শুরু থেকে এরা নিজেদেরকে বদলিয়েই এত উন্নত হযেছে। আমরা যেমনটা চাই, তেমন করে বদলালে এদের ইউনিকনেস চলে যাবে। এরা আগের মত হিংস্র, সাম্রাজ‍্যবাদী ও পশ্চিমাদের মত ‘কৌশলি, লোভি, শট ‘ হবে । নষ্ট হয়ে যাবে।

আমরা জানি জাপানিদের জীবন, সংস্কৃতি, আচার-আইন যথাসম্ভব রিক্স-ফ্রি ভাবেই সাজানো! পরিবেশে ভূমিকম্প, সুনামি ও দূর্যোগ কবলতা, জীবনে দারিদ্রতার প্রবলতা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবন্ধতার কারনে – আদিকাল থেকেই জাপানের সবাই নিরাপত্তা সচেতন। যে কোন সময় অপ্রত‍্যাশিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাই তারা সব সময় আতঙ্কগ্রস্থ থাকে। তাই ‘সেইফ জোনে’ থাকা জাপানিদের সাধারন পছন্দ। অযথা ঝামেলা যেন জীবনকে কষ্টময় না করতে পারে – তাই তারা কঠোরভাবে আইন মানে, সাবধানে পা ফেলে, একতাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে। যা অন‍্য দেশে, এমনকি উন্নত ইউরোপ আমেরিকাতেও অকল্পনীয়।

লক্ষণীয় ‘বিদ‍্যুৎ ও যোগাযোগে’ এত উন্নত হবার পরও; জাপানের প্রায় সকল বাড়িতে দূর্যোগ মোবাবের প্রস্তুতি হিসাবে কাঠের সংগ্রহশালা থাকে। বছরের পর বছর কাট ব‍্যবহার হয় না, তবুও তারা কাঠ রাখে, বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করে। মূল কারণটা হলো – ভুমিকম্প হলে যাতে, খাদ‍্য, শীত, রান্না ও অন্ধকারের প্রকোপে মরতে না হয়।

‘রিক্স-ফ্রি’ ভাবনা ও সংস্কৃতির কারণে- এরা পশ্চিমাদের মত দিল দরিয়া নয়। ‘স্বর্গের মিথ‍্যা লোভে’, দান-খয়রাত তো পরের কথা – এরা ডিজিট‍্যাল কয়েনও ব‍্যবহার করে না, বুড়োরা নগদ টাকা পছন্দ করে, অযথা আগলা পিরিত করে কাউকে বাড়িতে ঢুকায় না, দাওয়াত দেয় না, অপচয় করে ফুটাঙ্গি দেখায় না! রিক্স-ফি থাকার জন‍্য, রিক্স-ফি রাখার জন‍্য গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে হোটেলে রাখে। ইমিগ্রেশনেও কানাডা-আমেরিকার মত বিদেশীদের দুইহাতে গ্রহন করে না। নেটিভ জাপানিদের মত না হলে নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টও দিতে চায় না।

এভাবে খুঁজলে জাপানের প্রতিটি ঘটনা ও আচারের পিছনে- নিরাপত্তা ও নিরাপদে থাকার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এই মুলকারণটি বুঝে, অবজেক্টিভলি জাপানকে গ্রহন করলে – নিশ্চিত বাঙালির জাপানবাস সুখি ও সুন্দর হয়ে যায়।

কিছুদিন আগে ‘রিও’ নামের এক তরুণ জাপানি বন্ধুর সঙ্গে, ‘বিদেশীদের সম্পর্কে জাপানিদের ধারনা-ভাবনা’ নিয়ে আলাপ করছিলাম। সে বলল – কিছুদিন আগে পরীক্ষামূলকভাবে টোকিওতে একটি কোম্পানী শুধু বিদেশীদের দিয়ে একটি বিভাগ চালু করেছিল! দ্রুত সেই কোম্পানিটি লসে পড়েছিল। বিদেশীদের নিম্নমানের সেবা, হেলাফেলা আচরণ, চুরি ও অযথা এটাসেটার করার কারণে কোম্পানিটি সেই বিভাগটি বন্ধ করে দিতে বাধ‍্য হয়েছিল। তাহলে বুঝ – জাপানিরা কেন বিদেশীদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না।

যতই দিন যাচ্ছে আমি জাপানকে গভীরভাবে বুঝতে পারছি, মেনে নিচ্ছি, আমার জাপানবাস দিনদিন সুখময় হচ্ছে। কি শান্তি ঘরে ঘরে।
লিঙ্কের ভিডিও দেখলে জাপানিদের মাইনসেট সহজে বুঝা যায়।
https://youtu.be/dGIMF0tHDnQ

ডারউইন যা বলেননি , ফেইসবুক তা বলছে!

ডারউইন যা বলেননি , ফেইসবুক তা বলছে!

The Facebook bloggers, before making a comment on ‘Evolution and Adaptation’, please read again. the basic Evolution Theories, ‘Origin of Species’, and related books.

বানর কখনো মানুষ হয় না। এ’কথা শতভাগ সত‍্য। আরো সত‍্য বাঙালি বানর – কখনোই মানুষ হয় না ও হবে না। এক্ষেত্রে অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্ব প্রায় সম্পূর্ণ মিথ‍্যা। বিবর্তন নিয়ে সোসাল মিডিয়াতে অযথা কুতর্ক তার প্রমান।

বিশ্ববিদ‍্যালয়ে টানা ৬ বছর (১৯৯১-১৯৯৬) প্রকৃতি বিজ্ঞান, জিওলজি, বির্বতনবাদ ও অভিযোজন তত্ত্বগুলো পড়ে এটুকু বুঝেছি।

বানর বা বানর জাতীয় জীবেররা প্রকৃতির বিরূপ ও সুরূপ বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে দৈহিক ও মানসিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। সৃষ্টি হয় টিকে থাকা নতুন বৈশিষ্ট‍্যের প্রজাতির। এমন পরিবর্তনের ফল- আজকের বুদ্ধিমান মানুষ। অভিযোজন ও বিবর্তন এখানেই শেষ নয়। বিবর্তন একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। এটি দীর্ঘদিন ধরে, সৃষ্টির প্রথম থেকে লক্ষ-লক্ষ‍ বছর ধরে চলে আসছে, ও চলবে।

এটি নিশ্চিত হাজার ও লক্ষ বছর পর – আজকের মানুষ আর আজকের মত থাকবে না । দৈহিক গঠন ও মানসিকতায় বিপুল পরিবর্তন ঘটবে। যেমন বর্তমানের মানুষ ও আদিকালের মানুষের মত নেই। সোজা কথায় – এই পরিবর্তনই বিবর্তন ও অভিযোজনের ফল। খাপ খাইয়ে খাইয়ে শুধু মানুষ নয়, সকল জীব-প্রজাতিগুলো আরো উন্নত হয়। প্রকৃতির প্রতিকূল অবস্থার সাথে মানাতে পারলে পরিবর্তিত হবে, উদ্ভব হবে আরো উন্নত মানব ও প্রজাতি, না মানাতে পারলে মরে যায় । যেমন মরে গেছে ডাইনোসর ও নানান বিলুপ্ত প্রানী। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম।

অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্বগুলো যারা মিথ‍্যা বলেন, তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রায় ১০০টি শাখাকে মিথ‍্যা বলতে চান, অস্বীকার করেন। যা মেনে নেয়া অসম্ভব, মানবজাতির জন‍্য ক্ষতিকর ও এক ধরনের মূর্খতা। তারা আসলে ইভালিউশন বিষয়টির বেসিস বৈশিষ্ট‍্য ও উদ্দেশ‍্য জানেন না, বুঝেন না।

ডারউইন কখনো যা বলেননি – তা খৃষ্টান, হিন্দু ও সালাফি মোল্লারা অনবরত বলেন। হিন্দু সাধু ও মুসলমান মোল্লারা বাইবেলকে অস্বীকার করলেও, তারা বাইবেলিক জেনেসিস অর্থাৎ সৃষ্টিতত্ব ঠিকই মানেন। কুতর্কটি আরো প্রখর হয়েছে – ফেইজবুকে বানর মার্কা সহজ ব্লগারদের মাধ‍্যমে, যাদের উপস্থাপনা খুবই হাস‍্যকর।

প্রকৃতি বিজ্ঞানে ডক্টরেট করা আমার অভিজ্ঞ প্রিয় স‍্যারেরা, যারা বিবর্তনবাদ পড়াতেন, তাদেরকে কখনো বলতে শুনিনি- বানর থেকে মানুষ হয়েছে। কিন্তু অনলাইন কানার হাটবাজারে, অন্ধ-অতিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান ও সত‍্যকে নিয়ে কৌতুককর গল্প করেন, মহামতি ডারউইনকে বকাবকি করেন। যারা অধিকাংশ বুঝে না ও মানতে চায় না – ইডেন গার্ডেন বলতে বাস্তবে কোন গার্ডেন নেই, এটা মধ‍্যপ্রাচ‍্যের মিথোলজি, লোককথা। বৈজ্ঞানিক উপাত্ত, ফসিল-নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অতিআদি এককোষি জীবের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, কিন্তু ‘টেরেস্ট্রিয়াল প্যারাডাইস’ এর অস্তিত্ব ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও বিজ্ঞানে পাওয়া যায় না।

আমার অভিমত – কল্পকাহিনীর এ গল্পগুলো বাস্তব না হলেও অবশ‍্যই এগুলোর মনস্তাত্ত্বিক, আধ‍্যাত্ত্বিক ও মানবিক শিক্ষার বিচারে মহামূল‍্য আছে। তবে প্রতিকী বিষয়কে – বাস্তব ভেবে মানবজাতি যেন আজ মহাবিপদে আছে। আমি মনেকরি ‘আমাদের পরিবারই’ ‘টেরেস্ট্রিয়াল প্যারাডাইস’, আমাদের পিতা-মাতাই এই মহাকাব‍্যের মহানায়ক-মহানায়িকা।

মোটকথা গোরারা আজো মানতে ও বুঝতে চায় না – সব বিজ্ঞানী সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ। আর ধর্মীয় সাধুরা অধিকাংশই অশিক্ষিত, মূর্খ, কোন বিদ‍্যালয়ে না গিয়ে, পাহাড়বাসী-নাগাসন্ন‍্যাসী হয়ে নিজেদেরকে মহাজ্ঞানী দাবী করেন।

আমার ব‍্যক্তিগত মত- ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের মিলানো ঠিক নয়। কারণ বিজ্ঞান হলো- প্রমান যুক্ত প্রস্তাবনা , আর ধর্ম হলো প্রমানহীন প্রস্তাবনা।

ধর্মে অনুমান ভিত্তিক, প্রমানহীন প্রচলিত মিথ‍ থাকে, যা বিজ্ঞানে থাকে না। আজকে যা বিজ্ঞানে প্রমানিত, তা কালকে মিথ‍্যা প্রমানিত হলে, বিজ্ঞানীরা দুঃখিত হন না, প্রমানিত নতুন সত‍্যকে মেনে নেন, স্বাগত জানান।

অন‍্যদিকে তথাকথিত – আচার কেন্দ্রিক ধার্মিকেরা আদি গ্রন্থের কল্পলেখাকে মিথ‍্যা প্রমানের পরও মেনে নেন না। জেনে-বুঝে অযথা রাগান্বিত হন। যা গোড়ামি সৃষ্টি করে।

সমাজকে আফগানিস্তান ও সৌদির মত পিছনের দিকে টেনে রাখতে চান। ইউরোপ-আমেরিকা; জাপান-চীনের মত প্রগতির দিকে উৎসাহিত করেন না।

তাই পাঠ‍্যপুস্তকে অভিযোজন তত্ত্ব নিয়ে যেসব যাজক-প্রাদী-মোল্লারা বির্তক করছেন, তাদেরকে আবার বিষয়টি গভীরভাবে বুঝা ও মানার অনুরোধ রইলো। নতুবা ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ তিনটিই অন্ধকারে ঘুরপাক খাবে। আমি নিশ্চিত – অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্ব মানলে কেউ – নাস্তিক, অধার্মিক, মুরতাদ, মোনাফেক ও তামসিক হবে না। বরং সত‍্যের অনুসারী হবেন।

সবার আগে আমাদের সবাইকে বুঝা উচিত‍্ – ধর্ম ও বিজ্ঞান দু’টোরই উদ্দেশ‍্য মানব কল‍্যাণ। ধর্ম যখন অকল‍্যাণের কারণ হয় – ধর্ম তখন ধর্ম থাকে না, অধর্ম হয়ে যায়।

বিমান বন্দরে লাগেজ প্রেম

বিমান বন্দরে লাগেজ প্রেম

বিমানবন্দরে ল‍্যাগেজ প্রেম

আমি গুণে মহামতি হলেও – পদে, দাপটে ও অর্থে নিতান্তই দরিদ্রজন। তাই বিমান বন্দরে ভিআইপি গেইট দিয়ে এখনো বিমানে চড়তে পারি নাই, পথটাও জানি না, লবিং-টবিং করে কিভাবে এই জাতে উঠতে হয়, বুঝতে পারি না।

সেই কারণে, বডিং-ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্র প্রতিবারই বহু নিরক্ষর প্রবাসীর সাক্ষাৎ পাই। অনেকের ইমিগ্রেশনের ফরম পূরণ করে দিতে হয়। ভুল করা প্রথম অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপদ বিদেশযাত্রার জন‍্য এটাসেটা যেচে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হয়।

কেচালটা হয় তখনই, যখন – বিমানে করে ঢাকায় আসা-যাওয়ার সময় কেউ তার ল‍্যাগেজে নিতে অনুরোধ করে।ভারি ভারি উপহারে বস্তাবোজাই করা, ক্লান্ত প্রবাসী যখন তার বাড়তি ব‍্যাগটি আমার নামে এন্টি করার অনুরোধ করে, তখন মায়া লাগে।

কিন্তু আমি বরারই, আবেগ কন্ট্রোলে রাখি। জাপানি সুন্দরি বউয়ের পরামর্শে – এসব ক‍্যাচালে রাজি হই না। এরজন‍্য আবেদনকারী সাধারন যাত্রী হলে তেমন মাইন্ড করে না। তবে অনেকের বুলিং এর শিকার হই । বিশেষ করে চোরাচালানী ধাচের যাত্রীদের, ল‍্যাগেজ পার্টির কর্মীদের – যাদের কমন বুলিং ,

– বাঙালি একটা বেইমানের জাত। বিদেশীরা হেলপ করতে পারে, দেশিভাই, দীনিভাইয়েরা হেল্প করে না। ছোটলোক, বাঙাল কখনো মানুষ হইবো না। ছোট একটা ব‍্যাগ নিতে অসুবিধা কি? কাপড় নষ্ট হয়ে যাবো? নিজের লাগেজ কম, তারপরও রাজি হয়। …

যে যতই বকাবকি, ঝকাঝকি – বুলিং করুক না কেন। নিজের আত্নীয় ছাড়া, ব‍্যাগ খুলে দেখে নেয়া ছাড়া – লাগেজ নিতে রাজি হবেন না।

কারণ – ব‍্যাগটি আপনার নামে এন্ট্রি হবার পর, সেটি আর ঐ ব‍্যক্তির থাকবে না, আপনার হয়ে যাবে। ওখানে কোন মাদক, বা চোরাচালানের সোনাদানা, হিরা-জহরত, সেক্সিটয়, ড্রন, কসমেটিক্স ইত‍্যদি জিনিষ থাকলে, সেটার জন‍্য আপনি ফেঁসে যেতে পারেন । অবৈধ জিনিষ ধরা পড়লে, আপনাকে জেলে যেতে হতে পারে, ঐ ব‍্যক্তিকে নয়।

সুতরাং বিমানের বডিং নেয়ার সময বা বিমান বন্দরে ঘুরাঘুরি সময়- অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আগলা পিরিত পরিতাজ‍্য।

আমি এমন অপরাধীর খপ্পরে বহুবার পড়ে ছিলাম। কেউ ঘুষ চাইলে বা ভয় দেখালে দিবেন না। প্রয়োজনে সিনক্রিয়েট করবেন। এয়ারপোর্ট পুলিশের সহযোগীতা নিবেন। এদের সবচেয়ে বেশী উৎপাত হয় চায়নার গুয়ানজু, সাংহাই, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর আর মধ‍্যপ্রাচ‍্যের রোডগুলোতে। আমি মধ‍্যপ্রাচ‍্যের রোডে যোগাযোগ করি না। তবে মালেশিয়ার আর চায়না রোডের অবস্থা যা ইচ্ছা তাই।

এখন বুঝেছি- প্রতিবারেই বহু অনুরোধের পরও রাজি না হয়ে মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। একবার তো চীনে গোয়ানজু’তে একদল চোরাচালানি আমাকে পারলে মারতে আসে। তারপরও রাজি হয়নি। পরে জেনেছি- এরা লাগেজ পার্টি । চায়না থেকে অবৈধভাবে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স আনে। অনেকবার বলার পরও যখন আমি রাজি হয়েনি তখন বলে,
– আপনি ঢাকায় যান, দেইখা লমু। বিমান বন্দর পার হইতে দিমু না । সবখানে আমাগো লোক সেট করা আছে।

এই থ্রেটটির পর আমি আসলেই ভয পেয়ে গিয়েছিলাম। রিসিপশন গেইটের কাছে আমার ভাই ও অফিসের লোককে আসতে বলেছিলাম, যাতে কোন বিপদ না হয়।

চোরাচালানিরা বহুত চালাক। যাতে মানুষ সন্দেহ না করে, তাই এদের দলে নায়িকাদের মত জুসি সুন্দরী থাকে। এরা দলে বেঁধে থাকে। একজন ধরা পড়লে, সবাই এক হয়ে রক্ষা করে, উল্টো ফাপড় লয়।

২০০১ সালে এমনি এক মহাবিপদে পরেছিলাম। এটা ছিল দ্বিতীয় বিদেশযাত্রা- সিঙ্গাপুরেে। তখন একটু হাবাগোবা ছিলাম। প্রায়ই আমাকে গছিয়ে দিয়েছিল – বলেছিল ,

– আপনার তো ল‍্যাগেজ কম, নিয়ে যান, আপনার বাসায় থেকে আমার লোক গিয়ে ব‍্যাগটা নিয়ে আসবে। আপনাকে দুই’শ ডলার দিমু। কোন ঝামেলা হবে না।

আমি রাজি হয়নি। সাম্ভব‍্য অনেক মহাবিপদের পথ অতিক্রম করে আলহামুল্লিল্লাহ, বুঝেছি – কত বিপদ থেকেই না রক্ষা করেছেন খামিসামা।

জাপান প্রবাসীদের বলি – জাপানে আসার সময় হয়তো অনেক বলবে এর ভিতর কিছু মশলা আছে। নিয়ে জান। আমার তো ৩০ কেজি পার হয়ে গেছে।

আমার সোজা অনুরোধ- রাজি হবেন না। জিনিষটা খারার মশলা – নাকি পান করা আসল মশলা, মানে ‘হিরোইন টিরইন’, গাঁজা-চরশ তা কি করে বুঝবেন?

কেউ হয়তো বলবে-
– আমার ভাই অসুস্থ মানুষ। এখানে তার বছরের ঔষধ আছে। একটু নিয়ে নেন, একটু উপকার করেন।

অতি আবেগ সৃষ্টি করলেও রাজি হবেন না । ঔষধটা রোগের নাকি, দেওয়ানা হওযার ঔষধ; মানে ইয়াবা-বাবা হবে না, এর নিশ্চয়তা কি?

এখন কোন জুসি সুন্দরীও যদি অনুরোধ করে, সোজা চাষাবুষার মত বলে দেই ,
– এত ল‍্যাগেজ আনছেন কেন? এনেছেন, এখন ভারতি চার্জ-জরিমানা দিয়ে নিজের নামে নিয়ে যান । আমাকে গছাবেন না। আমি আপনার দায়িত্ব নিতে পারবো না, দুঃখিত।

এই বলে কেটি পড়ি। বেশি কথা বললে, আরো দুইটা কথা শুনিয়ে দেই,
– এত অসচেতন হওয়া ঠিক না । একজন মানুষের ২০-৩০ কেজি’র বেশী জিনিষ বিদেশ থেকে আনা-নেয়া করতে হয় না। তাই এয়ারলাইন্স গুলো এই নিয়মজারি করেছে। আপনার বেশী জিনিষ দরকার হলে শীপ-পোষ্টে নেন। এয়ারলাইন্সে নিতে হবে কেন? এত তাড়া কিসের? একটু ধীরে নিলে ক্ষতি কি

যাইহোক; বন্দরে বা বিমান বন্দরের আগলা পিরিত পরিতাজ‍্য।

বিমান বন্ধরে আরেকটি মহাবিপদের কথা বলি। সঙ্গে থাকা ব‍্যাগ-ল‍্যাপটপ, অপরিচিত, এমনকি ট্রেনজিটে একই এয়ারলাইন্স আসা কারো কাছে দিয়ে বা মুভিংকার্টে রেখে কখনো টয়লেট যাবেন না। নিজের জিনিষ নিজের সঙ্গে রাখবেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। কফিশপে গেলেও দামি ল‍্যাপটপ আর ব‍্যাগটা ভারী হলেও কাঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন। ।

এতে আপনার জিনিষ নিরাপদ থাকবে। কোন কিছু হারানো ভয় থাকবে না। আগলা পিরিত ওযালা যদি আপনার ল‍্যাপটপ, প্রিয় পার্সপোট-টিকেট লয়ে চম্পর্ট দেয়ে, তখন ‘হায় হায়’ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

সর্বোপরি, নিরাপদ হোক আপনার বিদেশযাত্র, সেই কামনাই রইলো।

বি.দ্র.: ছবিটি তুলেছিলাম মালেশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট

স্বার্থপরতার পথ

স্বার্থপরতার পথ

– সবার জীবন থেকে বন্ধ হোক সকল অনিষ্টের মুল কারণ!

শুধু দক্ষিণ এশিয়াতে না, এই করুণ বাস্তবতা সারা দুনিয়ায়। আমরা সবাই জানি – দক্ষিণগোলার্ধের দেশগুলোতে দারিদ্রতা, অনাচার ও অবিচার স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো দেখা যায় না। এটাই তফাৎ!

সব দেশেই আজো রয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের আদিম দাপর্ট ও হটকারীতা। যখন কেউ গদি ছাড়তে চায় না, অনগ্রসরদের এগুতে দেয় না, নিজের অবস্থা ঠিক রাখার জন‍্য নানা কলকৌশল করে – তখনই বুঝতে হবে, “ডাল মে কুচ কালা হে।” সমস‍্যার মুল কারণ স্বার্থপরতা, সেলফ জাষ্টিফিকেশন।

বহু বছর টানা জাপানে থেকে বুঝলাম,
আইনের শাসন ও দূনীর্তিতে জিরো টলারেন্স দেশ হওয়ার পরও – জাপানের আইন ও রীতি সব চলে ক্ষমতাবানদের অনুকূলে । করোনা সময় স্পষ্ট হয়ে গেল- সারা জাপানে অদৃশ‍্য দারিদ্রতায় ভরপুর। এখানে ছেচড়া চোর, ডাকাত নাই, সহজ পথে দূনীতি করে, ভিক্ষামেগে ও ভিক্ষুক হয়ে পার পাওয়া যায় না বলে – দেখা যায় না। বাংলাদেশের মত বুঝা যায় না।

ইদানিং কালে জাপানি নর-নারীর চরম টানাটানি দারিদ্রতার কারণ সংসার গড়তে চায় না। করলেও অধিকাংশই ছেলে-মেয়ে নিতে চায় না। শহরে যারা চরম দারিদ্রতায় থাকে, কিন্তু কাউকে বলতে পারে না – তারা সহজে টাকা রোজগারের জন‍্য অনেকে দেহব‍্যবসা মত সহজ পথ বেছে নেয়। বাঁচার জন‍্য গোপনে এটাসেটা করে। দূর্বল চিত্তের যারা সইতে পারে না – তারা মাঝপথেই জীবনকে চির বিদায় জানায়। আত্নহননের পথ বেছে নেয়। এই কারণে উন্নত হবার পরও জাপানে আজো আত্নহত‍্যার হার বেশী।

আমি মনেকরি – মানুষ যতদিন পর্যন্ত স্বার্থপরতা ত‍্যাগ করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত মানুষের তাহেন তাহেন অবস্থা দূর হবে না। স্বার্থপরতাই সকল অনিষ্টের মুল কারণ! এরই নাম আমাদের সভ‍্যতা, তবে এমন সভ‍্যতা আমরা কামনা করি না।

সাহসী হিরো আলম – জিরো যখন হিরো

সাহসী হিরো আলম – জিরো যখন হিরো

বেশী মানুষকে আনন্দ দেয়া, বেশী মানুষের কাছে নিজের বিনোদনকে পৌঁছানোর বিচার বাংলাদেশে এ’দশকে তিনজন শিল্পী এগিয়ে। ১) হিবো আলম, ২) সেফু দা এবং ৩) এটিএনএ’র গায়ক মাহফুজ।

‘জিরো থেকে হিরো, হিরো থেকে জিরো’ হিরো আলমের এই ষ্ট্রোকহাঙ্গার ( খ‍্যাতিক্ষুধা, জাতেউঠার ক্ষুধা), বিষয়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল না। আমার ফেইসবুক ষ্ট‍্যাটাসে, বন্ধু মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ‘ব্রেইভ হিরো’ মন্ত্রব‍্যের সুত্রধরে আমার এই লেখা ।

আমি বলেছি – ভাইজান, আপনার মন্তব‍্যটা ক্ষুদ্র , কিন্তু বিরাট বড় গুরুত্ব লালন করে।এটা বাংলাদেশের বর্তমান মেইনষ্ট্রিম লেখক, শিল্পী ও সুশীলদের দরদের অনুরুপ। যারা নিজের অবস্থান রাখার জন‍্য সব রকমের ষড়যন্ত্র, ফন্দিফিকির করে, কোন আদর্শ-মতবাদের ধারধারে না, কিন্তু সমতার ও মানবাধীকারের কথা বলে সুশীলতা বড়াই করে।

আমি বন্ধুকে বিষয়টা বুঝানোর জন‍্য বলছি –
আমার নাম দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের নামে নাম, আর আপনার নাম সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামে নাম। মানবাধীকার ও একই মানবজাতির সদস‍্য হিসাবে, সম্রাটগণ ও আমাদের মাঝে কোন তফাৎ নেই। কিন্তু আমি বা আপনি যদি রাজার পোষাক পড়ে, অহংকারের সাথে রাস্তা দিয়ে ঘুরি, রাজকীয় সংলাপে ব‍্যবহার করি, আর বলি ‘আমরা সবাই রাজা’ বিষয়টা কেমন হবে?

ব‍্যাপারটা বিনোদনের দৃষ্টিতে মজার ও আর্কষনীয় হলেও ; মানুষ কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করবে! হয় পাগল বলবে, না হয় বন্ধুবান্ধব ও আত্নীয়রা আমাদেরকে নিয়ে বিব্রত বোধ করবে। আরো বিষয়টা জটিল হবে, যখন নিজের পাগলমী না বুঝে, অন‍্য সবাইকে আমরা পাগল বলতে শুরু করবো। অগ্রজ পরামর্শকদেরকে নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করবো। …

হিরো আলম এমনি হাস‍্যকর ও অসভ‍্যতা চর্চা করেছে প্রতিদিন। তাকে অভিনেতা বা শিল্পী মানাতে আমার কোন সমস‍্যা নেই। টেলিসামাদ, সাইফুদ্দিন, রবিউল , কাজল সহ প্রমূখ কৌতুক অভিনেতাকে যদি আমরা মেনে নিতে পারি , তাকে মেনে নিতে আমাদের অবশ‍্যই সমস‍্যা নেই। প্রশ্ন হলো সে তার গন্ডিটা বুঝে না। হিরো ও শিল্পীর ভূমিকাটা বুঝে না।

আমার প্রশ্ন হলে – সে তার সীমা বুঝে না। যত্রতত্র সীমা অতিক্রম করে, একের পর এক বির্তকিত কাজ করে চলে! আলোচনায় থাকে, ভাড়ামি করে, নিজের ভিউ কেন্দ্রিক সস্তা জনপ্রিয়তা মানিটাইজের ব‍্যবসা তুঙ্গে রাখে , পকেট রমরমা করে। তাকে কেন আমরা ইন্টারটেইনার, মানিমেকার না বলে- হিরো বলবো?

কথায় কথায় সে চেহারা, আঞ্চলিকতার উচ্চারন নিয়ে হীনমন‍্যতা প্রকাশ করে। বিষয়টা আসলে তা নয়। অধিকাংশ মানুষের চেহেরা, বংশ ও যোগ‍্যতায় হিরো আলমের চেয়ে বেশী ভালো না। তবে আমরা প্রতিদিনের চেষ্টায় সেই সীমাবন্ধতা কাটিয়ে উঠি। হীনমন‍্যতা ভুগি না। চেষ্টা ও কাজ করে এগিয়ে যাই।

শুনতে মন্দ হলেও বলতে পারি – কাজ ও যোগ‍্যতার বিচারের, বাংলাদেশে তার মাসিক আয় ২০ হাজারের বেশী হবে না, কিন্তু সে মাসে ইউটিউব থেকেই মাসে ৮০ হাজার থেকে ৪ লাখ রোজগার করে। যা অভাবনীয়। আর্থিকভাবে সে বিরাট সফল, স্বচ্ছল। আর এর জন‍্যই হয়তো তার শরীর ও মাথ‍া সব সময় গরম থাকে।

শুধু সে না, আত্নজাতিক ক্ষেত্রেও অনেকে এমনটা করছেন। যেমন – জেলেনেস্কি করেছে। নিজের দেশের মানুষ মরছে, একটি শক্তিশালী দেশ তার দেশ গিলছে; আর মহাসিরিয়াস সে বিষয়টাকে সে তোয়াক্কা না করে – স্বস্ত্রীক ভোগের মডেল হচ্ছে। নিজ দেশের মানুষের জীবন-মরন সমসাকে কে হাস‍্যকার বলে, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
কে কি ভাবছে, ভবিষতে কি হবে সেটা তার বিষয় না। নিজের কাজ করাই তার স্থিরলক্ষ‍্য।

একরোখা লক্ষ‍্য-মটিবেশন – আধ‍্যাত্নিক সাধনার জন‍্য আর্কষনীয় হলেও, বাস্তব জীবনের জন‍্য নয়। এই বিষয়টা অদৃশ‍্য সফলতায় পাগল- বিনোদনষ্টদের অধিকাংশই বুঝে না। তাই হয়তো মানসম্মান-দায়িত্ব না দেখে, গেইমের পর গেইম চালিয়ে যায। লাভ, স্ত্রী-পাটনার বদলো থেকে শুরু করে চুলকানির প্রকার করে। শিল্প চর্চার চেয়ে প্রপাগান্ড শোবিজ চালিয়ে যায়।

আমি যতদূর জানি – হিরো আলম এমন একজন মানুষ, স্কুল-কলেছে ঠিকমত লেখাপড়া করেনি, এখনো করে না! নিজেকে গড়ে তুলে না, এবং গড়ে তোলার ইচ্ছাও আপতত তার চরিত্রপ্রকাশে দেখা যাচ্ছে না। এমন একজন নিম্ন মানের মানুষকে শিল্পী হিসাবে কি গ্রহন করতে পারি?

আমি এক রিপোর্টে দেখেছি হিরো আলম বাউন্ডাইলে, ছ‍্যাবলা, একাধিক নারীর সাথে একসঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখে! মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানের প্রতি বেসিক দায়িত্ব পালন করে না। ঠেডামি করে। মুখের উপর তর্ক করে, নিচুতার সাথে মাটিতে কথা পড়তে দেয় না, হেসে হেসে বিরোধে জড়ায়।

অনেকে বলে – তার দারিদ্রতা, কালো রঙ্গের চেহারা, সবদিকে থেকে নিম্নমান তাকে ব‍্যাঙ্গচরিত্র করে তুলেছে। সে নিজেকে এমন ভাবে প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠিত করে, তার প্রতিটি কথাকে নিয়ে হাসাহাসি করা যায়।

আমি বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখি, যদি সে আসলেই বদলাতে চায়, বদলে যেতে পাররে। অজো পড়াগায়ের আরজ আলী মাতাব্বর, মহামতি লালন, আমাদের প্রিয় নজরুল সহ অনেকে অল্পশিক্ষিত ছিলেন, বংশ ও চেহেরায় পরিচয়ে সালমানশাহ মত অভিজাত ছিলেন না, কিন্তু উনারা কেউ সীমা লঙ্গন করেননি। দক্ষতা ও সুশীলতার সাথে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন। যার কারণে আজো আমাদের তাদেরকে স্বরণ করি।

প্রেম, অভিনয়, ব‍্যবসা, গানে, অভিনয় এমনকি একটিভিজমেও সে প্রতাপ রাখতে চায়। যোগ‍্যতা নেই, কিন্তু সমান অধিকার দাবীর সুযোগে- রাজনীতির বেসিক যোগতা না থাকার পরও নির্বাচন করবে- নেতা, এমপি,মন্ত্রি হতে চাইবে। রবীন্দ্রসংগীত আর নরুজলগীতি’র মাঝে ব‍্যবধান করতে পারবে না, কিন্তু আত্নজার্তিক মিডিয়াতে বিভিন্ন ভাষায় গান গাইবে। শ্লীলতা ও অশ্লীলতা বুঝবে না , নিজেকে শিল্পী-সভ‍্য দাবী করবে। আইন-শৃঙ্লা বাহিনীর পরামর্শ অগ্রাহ‍্য করে, গান গাইবে-বেডাগিরি দেখাবে- এটা আসলেই ঠিক না। আমি মনেকরি একটা – অপরাধ। ভাবখানা এমন – আমার যা ইচ্ছা, তাই আমি করুম। তোরা কি পারবি, করিস।

কিছু সভ‍্য মানুষের মানবিক দরদ ও নীরবতাকে – সে হয়তো সমর্থন মনে করে ।

আমি ব‍্যক্তিগত ভাবে মনেকরি – হিরো সাহেব মানসিক রোগে আক্রান্ত, প্রতিমুহুর্তে ভালোবাসাহীনতায় ভূগে । উল্টোপাল্টা কিছু একটা করা জ‍ন‍্য তার হাত-মুখ সবসময় উসপিস করে। যে উসপিসটা মানুষের জন‍্য উৎপাৎ। স্বভাটা ইউটিউব মানিটাইজের জন‍্য মহাযুতের। অস্বাভাবিক কুকর্ম কি- সে হয়তো বুঝে না, বা ইচ্ছাকৃত ভাবে নিয়মিত ভুল করে যায়। তার বেসিক জ্ঞানবুঝ না আসা পর্যন্ত – আমি মনেকরি, তার মানসিক শুদ্ধতার জন‍্য মনোচিকিৎসার ও সুশিক্ষার আওতায় রাখা উচিত। তার সকল সোস‍্যাল মিডিয়ার আইডি বাধ‍্যতামূলকভাবে, মেন্ডালষ্ট্রোক ঠিক না হওযা পর্যন্ত- স্থগিত করা উচিত।

শুধু হিরো আলম না – অনেক আলম এখন আমাদেরকে অযথা উৎপাত করে । এই উল্টোদৌড়ে অনন্ত-বর্ষা, সেফুদা, গায়ক মাহফুস, পরিমনি, গালিবাজ হুজুর, নজি ওসমান, ভিউখেকো ও লাইক খেকো ব্লগারা কম এগিয়ে নয়। এরা সবাই নিম্নমানের কাজ করে, উচ্চমানের বাহাবা ও ফল পেতে মশগুল।

যাইহোক সবশেষে বলতে চাই – নিজের ক্ষতি করে, আমরা শরম ছাড়া হতে পারি। এই পথ সবার জন‍্য খোলা। কিন্তু প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা অন‍্যদেরকে নেংটা করতে পারি না। অন‍্যের মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি করতে পারি না। অন‍্যের মহামূল‍্যবাদ সময় নষ্ট করতে পারি না।

শিক্ষা বিস্তার, বিনোদনের সাথে সভ‍্যতা ও উন্নয়ন আমাদের লক্ষ‍্য। সোসাল মিডিয়া ব‍্যবহার করে, আনসোস‍্যাল চর্চা কর- অসভ‍্যতাকে সভ‍্যতার সাথে মিশিয়ে ফেলার অধিকার করো নেঈ। এভাবে নিজের নিজের সুশীল অবস্থান গড়া যায় না।

ব‍্যক্তিগত ভাবে আমার মনেহয়। :
হিরো আলম নিজে বেশ সচেতন। নিজের কোয়ালিটি সে জানে ও বুঝে, তাই সে নিজেকে সুপিরিওরিটির আবেগে ভাসায়। নিজেকে শেষ্ঠ ও সঠিক দাবী করে। মনোদর্শনে একটি কথা আছে

Superiority is the manifestation of interiority.
“শ্রেষ্ঠত্ব হল অভ্যন্তরীণ দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।

আমার এককথা – মানুষ হিসাবে আমরা সবাই সব কিছু করতে পারি। কিন্তু সবার সব কিছু করা উচিত না। এতে মুল‍্যবান জিনিষের মূল‍্য নষ্ট হয়। বিশেষ করে সাহিত‍্য ও সংস্কৃতির।