আমাদের নান্নু ভাই

আমাদের নান্নু ভাই

টোকিও তো যে কয়েকজন সুনামধন‍্য বাংলাদেশী আছেন নান্নু ভাই তাদের একজন। প্রবাসীর বাংলাদেশী ও বাংলাদেশ সম্পকিত সকল সাউথ এশিয়ান ও জাপানিরা তাকে এক নামে চিনেন ও শ্রদ্ধা করেন।

আদর্শ জাতীয়বাদী নান্নু ভাই একজন প্রভাবশালী ব‍্যবসায়ী। গাড়ি ব‍্যবসার সাথে সাথে নানান ধরনের এক্সপোর্ট-ইমম্পোর্ট ব‍্যবসা করেন, কনসালটেন্টসীর পাশাপাশি সামাজিক সুকর্মের সঙ্গে অতিসক্রিয়। প্রবাসীদের বিপদে পাশে থাকেন, সব রকমের সহযোগীতা করেন। বিষয়টি আমার হৃদয় জয় করেছে।

আমি দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে নান্নু ভাইয়ের কাজ করি। জে.এম.সি.সি ( জাপান মুসলিম চেম্বার অফ কমার্স) ও তার অফিসের কাজের মাধ‍্যমে নান্নু সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কাজের মাধ‍্যমে আমি সব ক্লাইন্টকে পারিবারিক সখ‍্যতা গড়ে তুলি। নান্নু ভাইয়ের সঙ্গেও তেমনটা হয়েছে। ২০১৯ সালে বৈশাখী মেলাতে শুধু একবার ছালাম বিনিময় হয়েছিল। এরপর কখনো সম্মুখ দেখা হয়নি।

এবার টোকিও বৈশাখীমেলার এসাইমেন্ট করে ফেরার দিন তাকে ফোন করেছিলাম,
– ভাইজান, চলে গেলাম। এবার দেখা হলো না । আগামী যাত্রায় দেখা হবে ।

এ’কথা বলতেই তিনি বললেন।
– আজ যেতে পারবেন না। অন্ততঃ একদিন থাকতেই হবে। গুরুত্বপূর্ণ কথা ও কাজ আছে।
– তাহলে হোটেলের রুম বুকিং দিলাম।
– আরে না, হোটেলে থাকবেন কেন? আমার বাংলো আছে। সেখানে আপনি থাকবেন। আপনি আমার অতিথি।

ইভেন্ট-এসাইনমেন্ট ছাড়া আমি সাধারণত বাড়ির বাহিরে রাত্রি যাপনের দাওয়াত গ্রহন করি না। কিন্তু নান্নু ভাই এমন ভালাবাসামাখা কন্ঠে দাওয়াতটি দিলেন, আমি আর না করতে পারলাম না। রাজি হযে গেলাম।

আমি যদিও দীর্ঘদিন ধরে জাপানে থাকি, জাপানি জীবন ও আচারে অভ‍্যস্ত হলেও, টোকি’র ব‍্যস্ত জীবনকালচারে একেবারেই অভিজ্ঞ নই। সব সময়ই আমার টোকিও যাত্রা সিনকানসেন ষ্টেশন থেকে নারিতা এয়ারপোর্ট পর্যন্তই সীমাবন্ধ থাকে।

টোকিরও অতি প্রয়োজনীয় ষ্টেশন ও জায়গা গুলোও আমি আজো চিনি না । ট্রেন মিসিং, ভুল ষ্টেশনে যাত্রা, হেন্ন সুন্দরীদের পাল্লায় পড়া ইত‍্যাদি শঙ্কা নিয়ে চিবাতে তার অফিসে চলে গেলাম। ষ্টেশনে নিজেই আমাকে নিতে আসলেন। তার বাড়ি, গাড়ি, নারী ও অফিস দেখে, প্রথম পলকেই আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

একেবারেই পুরোন ঢাকার কোটিপতি ব‍্যবসায়ীর আয়োজন। অফিসের আলিশান সাজসজ্জা, ফোন আর অনলাইনে মুহু মুহু গাড়ির অর্ডার দেখে,
‘জাপানে ব‍্যবসা করতে না পারা’ নিয়ে আমার যে প্রিজোডিস ছিল কেটে গেল। আস্থা ফিরে আসলো
– ইচ্ছে করলে, মানুষের সঙ্গে সৎযোগাযোগ থাকলে, সেবা দিলে যে টাকা রোজগার করা সহজ – তার বাস্তব প্রমান পেলাম নান্নু ভাইয়ের কাজকর্মে।

ব‍্যবসার কথার পাশাপাশি, বাস্তবতা, সুখ-শান্তিতে ভরা জীবনের গল্প বললেন। ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হওয়ার পর- নানান দেশে থাকার পর জাপানে কিভাবে দেশান্তরি হলেন, স্থায়ী হলেন সে গল্প শুনে অভিভূত হলাম। কিভাবে জিরো থেকে একজন মানুষ ইচ্ছা করলেই যে সম্পদশীল, ক্ষমতাবান হিরো হতে পারে তার প্রমান জাপান প্রবাসী নান্নু ভাই।

গ্রামীণ সরলতায় আমার কথা বলা তিনি প্রশংসা করলেন। আমার ডিজাইন সেন্সে মুগ্ধ হয়ে তার অনলাইনে গাড়ী বেচাকেনার ই-কর্মাস সাইট বানানোর কাজটি দিলেন। টাকা রোজাগরের আনন্দ যখন আমার হৃদয়ে উপচে পড়ছিল, তখনই বললেন,

– চলেন, আপনাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। আপনি তো টোকিও তে কখনো ঘুরেন না।

নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন ‘টোকিও একুয়া সিটি’ তে।
যা বিখ‍্যাত সমুদ্র তলদেশের টানেল ষ্টেশন ও শপিংমল। (Tokyo Wan Aqua-Line Expressway)এখান থেকেই সমুদ্র তলদেশের টানেলের মাধ‍্যমে ‘ওতা কাওযাসাকি ও কিজারাজু’ দুই শহরকে যুক্ত হয়েছে। রেইন-বু বিজ্রের সৌন্দর্য, টুরিষ্ট ইলিমেন্টে সাজানো একুয়াসিটিতে চারদিকে থেকে আসা সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসে আমার প্রাণ ভরে গেল। সবচেয়ে ভালো লাগলো জাপানের শত্রুদেশ আমেরিকার ‘ষ্টেচু অফ লির্বাটি’ রেপ্লিকা দেখে। শুত্রুকে ভালোবাসলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, তারই নির্দেশন হিসাবে জাপান এটি বানিয়েছে। শত্রুদেশ থেকে, এটমবোমা নিক্ষেপকারী আমেরিকা আজ জাপানের বন্ধুরাষ্ট্র।

আমি শুধু নামে নয, কাজেও মহামতি । কারো সঙ্গে রেষ্টুরেন্ট ঢুকলে, আমি কখনো, দেশে কিংবা বিদেশে- কাউকে বিল দিতে দেই না। কিপটা জাপানিদের মত চুপ থাকি না। নান্নু ভাই একের পর এক, স্টারবার্ক সহ নানান দামি-দামি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথম দিকে আমি পেমেন্ট করতে চাইলেও, পরে আর চাইনি, জাপানি হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বুঝে গিয়েছিলাম – আমি বিল দিলে এসাইমেন্ট থেকে পাওয়া সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। খালি হাতে বাড়ি গেলে জাপানি সুন্দরী বউয়ের নিশ্চিত বাংলা ঝারি খেতে হবে। সেই ভয়ে আমি তঠ্স্থ ছিলাম।

নান্নু ভাইয়ের কাছ থেকে আমি যে মুল‍্যায়ন ও আথিতিয়তা পেয়েছি, আমি তা কখনো ভুলবো না । আমার ধারণা ছিল – অতিদাম ও কঞ্জুসদের দেশ- জাপানে থাকতে থাকতে প্রবাসীরাও হয়তো জাপানিদের মত কিপটা হয়ে য়ায়। আসলে তা হয় না। পদ্না-মেঘনা-যুমুনার মত বিশাল বাঙালি হৃদয়। তা কখনো কুলশিত হয় না। তার প্রমান পেলাম নান্নু ভাইয়ের পরম ভালোবাসায়।

নান্নু ভাই অসংখ‍্য ধন‍্যবাদ । ভালো থাকবেন নান্নু ভাই, সত্ত্বর আশাকরি আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ।

সাত ঈশ্বর!

সাত ঈশ্বর!

( একটি বাস্তব গল্প! স্রষ্টা যদি অন্য ধর্মের হয়, কি হবে শেষ বিচারের দিনে? )

কবি শুদ্ধের পড়ার রুমের দেয়ালে ঝুলানো ইষ্ট-এশিয়ান সৌভাগে্যর সাত ঈশ্বর ছবিগুলো মহামতি খুব মনেযোগে দেখছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাদের নাম পড়ছিলেন, তাদের কর্মগুণ মনে করার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময়, কবি শুদ্ধ কফি নিয়ে রুমে আসে। মনোযোগে কেড়ে নিয়ে, কফিকাপ হাতে দিয়ে মহামতিকে জিজ্ঞাসা করে,

– এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন মহামতি?

– সৌভাগের সাত দেবতাদের ছবি। কি অপরুপ অয়বর! তয় তুমি হঠাৎ দেয়ালে অন্য ধর্মের দেবতাদের ছবি ঝুলিয়েছ কেন?
– পরকালের প্রস্তুতি মহামতি? কোন সময় চলে যাই বলা তো যায় না।
– বুঝলাম না! তোমার কি মৃত্যুভয় জেগেছে?
– না! আপনার শিক্ষা মেনে সকল প্রকার ভয়কে জয় করার চেষ্টা করছি। এই ছবিসূত্রের হিসাবটি সহজ। মৃত্যুর পর যদি পরকালে গিয়ে দেখি, ঈশ্বর আছে, তবে সেটা আমাদের বাবা-দাদার শেখানো ধর্মের নয়, অন্যধর্মের ঈশ্বর, তখন কি হবে? তার প্রস্তুতি!
– এসব কি আবোল তাবাল বলছো?
– হ, সত্য মহামতি! আমি সংশয়ে পড়েছি। আমরা যেসব প্রবক্তাদের কথা মানি ও জানি, পরকাল নিয়ে তাদের সবার বর্ণনাই তো প্রিডিকশন, অনুমান! আজ পর্যন্ত তাদের কেউ তো মৃত্যুর পর, পরকাল দেখে এসে আমাদেরকে সত্য ঘটনা বর্ণনা দেননি।
কবি শুদ্ধের কথায় মহামতি আতঙ্কিত হয়ে বলেন,
– যদি তাহাই হয়, তবে তো মহাঝামেলা হয়ে যাবে! তুমি, আমি, সকল নবী-রসুল, সাধু-সন্ত সবাই তো তখন বিচারের এক কাতারে থাকবো। কি আনন্দ, শতভাগ সমাজতন্ত্র! তয় তোমার হঠাৎ এই ভাবনা মনে হলো কেন?
– মহামতি, আপনি তো জানেন, পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম । সকল ধর্মের নিজস্ব – পরকাল, স্বর্গ ও নরক নিয়ে বিচিত্র গল্প আছে। সব মিথই চমৎকার। জাতিসংঘের ইউনাস্কোর মতে- পৃথিবীতে আজো ৩৬০০ এরও বেশী জীবিত ধর্ম ও উপধর্ম রয়েছে। সবাই নিজেদের গল্প, আচার ও বিশ্বাসকে সঠিক, শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর দাবী করে। তাদের প্রবক্তাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ দাবী করে। সকলের মাঝে মাত্র তো একটি ধর্মের ঈশ্বর- প্রকৃত ঈশ্বর, বাকীরা তো রুপকথা, মিথ্যা, বানানো। তবে কোনটি সত্য? সবাই তো নিজেরটাকে সত্য বলে, এই ভাবনা আমাকে সকল ধর্ম জানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। আমি ‘ওয়ার্ল্ড ক্রিপটারস্’ পড়ছি। ধর্মদর্শন বুঝার চেষ্টা করছি।
– খুব ভালো পরিকল্পনা। প্রিজোডিস ত্যাগ করে, আনন্দের সাথে পড়, ভালো ফল পাবে।
– মহামতি, একটি প্রশ্ন। যদি ঈশ্বর আলসেই আপনার ধর্মের না হয়ে, অন্য ধর্মের হয়, তখন পরকালে ঈশ্বরের সামনে আপনি কি করবেন, কি বলবেন?
– আগে বল, তুমি কি করবা?
– আমি সোজা ঈশ্বরের কাছে গিয়ে, পা সাপটে ধরে মাফ চাইবো! অষ্টাঙ্গ প্রণাম করবো। আর আপনি কি করবেন?
– আমি কিছু করবো না। চোখে চোখ রেখে- নির্ভয়ে ঈশ্বরকে বলবো। পৃথিবীতে আমি যে ধর্মটি পালন করেছি, সেটা তোমার দেয়া। যে ধর্মের ঘরে পাঠিয়েছ, সেটা তোমার ইচ্ছায় হয়েছে, দুনিয়াতে আমাকে পাঠানোর আগে তুমি পছন্দ করার কোন সুযোগ আমাকে দেওনি। যদি দিতে, তবে আমি তোমার ধর্ম নিয়েই জন্মাতাম। সুতরাং যদি অন্যধর্ম পালনে আমার দোষ হয়ে থাকে, তবে সেই দোষে তুমিও দোষী।
– ঈশ্বর যদি বলে, তোমাকে তো বিচার বিশ্লেষন করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছিলাম।
– আমি বলবো, আমি তো বিচার বুদ্ধি দিয়েই জীবন যাপন করেছি। ধর্মের পথেই ছিলাম, ভালোবাসার পথেই ছিলাম। স্বার্থপর হইনি, কাউকে ঠাকাইনি, গুন্ডামি-মাস্তানি করিনি, যুদ্ধ-বিগ্রহে সায় দেইনি, চুরি-ডাকাতি-দূনীর্তি করিনি, নেশা-ভান খাইনি, ধর্ষণ-বহুগামিতা করিনি, খুনখারাপি-বাটপারি করিনি, পরপদে- পরসম্পদে লোভ করিনি, অহিংসার বাণী প্রচার করেছি। তোমার দোষে যদি আমি দোষ করে থাকি, তবে তুমি আমাকে নরক দাও । আমি মাথা পেতে নিলাম।
– যুক্তি তো সুন্দর মহামতি, স্রষ্টা কি মানবেন?
– মানবেন না কেন, তিনি তো পরম দয়ালু। আমি নিশ্চিত পরম ঈশ্বর আমাকে নরক দিবেন না। স্বর্গ দেয়া তার সিদ্ধান্ত, আমার নয়। আমি স্বর্গের লোভ ও নরকের ভয় করি না। আমি তার সান্নিধ্য চাই। এটাই আমার পরম ইচ্ছা।-
সাদো, জাপান

জাপানি মন ও বাঙালি পণ!

জাপানি মন ও বাঙালি পণ!

জাপানে থাকতে হলে জাপানিদের মত হয়েই থাকতে হয়, হবে।

আমরা যারা জাপানে থাকি, এমন কেউ নেই যে জাপানিদের আচার ও কালচারে আহত হয়নি। আধুনিক জাপানিরা ইউরোপিয়ান ও এরাবিয়ানদের মত তেরা, অহংকারী ও ক্ষতিকারক না হলেও, মারদাঙ্গা বর্ণবাদি না হলেও, অনেকে জাপানিদেরকে বর্ণবাদী বলেন! ‘নীরব রেসিষ্ট’ আখ‍্যা দিয়ে – অনেকে বহুত অপছন্দ করেন।

বিদেশীদের এমন অভিযোগের মুল কারণটি হলো – জাপানিরা এশিয়ান হলেও বাঙালি মনোভাব, সততা ও কালচারে প্রায় পুরোটাই বিপরীত! গুনগত মানে, সততায়, পরিচ্ছনতা, সচেতনতা ও বিনয়ে জাপানি পুরো জাতিটিকে আমার পারফেকশনিষ্ট মনেহয়। শুদ্ধতায় অনেক সূচিবাই গ্রস্থ মনেহয়। যা অনেক সময় হালকা হালকা ভাবে, ছাড় দিয়ে চলা বাঙালিদের মনে আরামের বদলে বেরাম তৈরী করে। যারা জাপানি ভিন্নতাকে বুঝতে পারেন, মেনে নিতে পারেন, তাদের কাছে জাপান স্বর্গের মতো সুন্দর দেশ! আর যারা মেনে নেন না, তাদের কাছে হাবিয়া দোজখ।

অধিকাংশ সাউথ এশিয়ানরা ‘মেইনষ্ট্রিম জাপানি সমাজে’ মিশতে না পারার কষ্টের মাঝে, জাপানিদের ভুল ধরতে না পেরে পদে পদে জাপানিদের বকাবকি করেন। বিশেষ করে অন‍্যদেশ থেকে আসা সেমেটিক ধর্মের বিশ্বাসীরা, অনুসারীরা ‘বিধর্মী, বেলাহেজ, কাফের’ পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করেন না । এরা সবক্ষেত্র ‘সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে। এই আরো বেশী প্রবল হয়েছে ২০০৮ সালে ফেইসবুকিং এর সহজ প্রচার ও প্রসারের ফলে। সবক্ষেত্রে জাপানিদের খুঁত ধরতে গিয়ে, ভুল না পেয়ে হয়রান হয়ে যায়। নিজেদের অসভ‍্যতাগুলোকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত’ করে গোপন করে রাখেন। ফলত- জাপানি সুন্দরীদের সঙ্গে প্রেম করতে পারেন না। হাতে গোনা কয়েকজন বিয়ে করলেও, ইমরান শরীফের মত মাঝপথে ‘অতি দোষারুপ’ করে, যাত্রাভঙ্গ করেন! আর মনের দুঃখে একা একা নলা-কচলিয়ে হাত দিয়ে সুসি-বিরানী খান। একাকিত্ব কাটানোর জন‍্য সন্ধ‍্যায় মসজিদ, মন্দির আর গুরুদুয়ারাতে ফাকিস্তানি আদলে মাগনা রুটি-পরোটা, নিহাড়ি-বিরানী খান। এরপরও যাদের ভালোবাসাহীনতা মন থেকে না কাটে, তারা কিছু টাকা পয়সা হলেই বকাবকি করতে করতে দেশে চলে যান! বিয়ের মাধ‍্যমে যাদের এজোকেন (স্থ‍ায়ী ভিসা) হযেছে, তারা জাপানি সুন্দরী বউকে ডিভোর্স দিয়ে, পাকা বয়সে দেশ থেকে আরেকটি কচি বা মুটকি বিয়ে করে এনে, আরেক মহা ঝামেলায় যুক্ত হন। মনে মনে বলেন- ‘যার জ্বালা সেই জানে’।

এরচেয়ে বড় অসভ‍্যতা কি হতে পারে, শুধুমাত্র ভিসার জন‍্য একজন জাপানিকে বিয়ে করে । শরীরিক সম্পর্ক থেকে মেসি জামাই সেজে অভিনয় করে। ভিসা পওয়ার সাথে সাথে নানান প্রকার অত‍্যাচার করে ঘর থেকে বের করে দেয়। কোন বিদেশী যদি কোন বাঙালি সুন্দরিকে এমনটি করে – তবে বাংলাদেশী সমাজ, মানুষ ও আইন তা মেনে নিবে? কিন্তু জাপানি মুক্ত কালচারে বিশ্বাসী বলে, ব‍্যক্তিগত বিষয় বলে মেনে নেয়।

জাপানি সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আয়োজনের পারও, বিদেশী ও জাপানিদের অবস্থান বৈপরিত‍্য তেমনটা কমানো যায়নি। কারণটা জন‍্য জাপানি প্রশাসন ও আগত প্রবাসী দুই পক্ষই বেশ বিরক্ত। জাপানিরা বুঝাতে পারে না – জাপানে থাকতে হলে তোমাকে জাপানি হয়েই থাকতে হবে। আর বিদেশীরাও নিজেদের সত্ত্বা, এমনকি টোকিতে লাল গালিচা পার্টিতেও শাড়ি-সালোয়ার কামিজ পড়েন। দেশে নিজেদের সংস্কৃতিতে ‘পদদলিত’ করলেও, বিদেশে নিজস্ব অভ‍্যাস, রীতি-কালচার ত‍্যাগে করতে চান না – কারণ আসলেই রহস‍্যময় ও অজানা। মহাবিপদ জেনেও অধিকাংশ বিদেশী বেসিক পরিবর্তনে আগ্রহী নন। যারা আগ্রহী তাদের সংখ‍্যা খুবই নগণ‍্য!

জাপানে থেকে, জাপানে খেয়ে, জাপানে পড়ে – জাপানী হতে চান না, না বদলানোর দোষে জাপানিদেরকে গাওড়া বলা গালিবাজের সংখ‍্যা প্রবাসে কম নয়। হোষ্ট দেশে থেকে, হোষ্ট দেশকে সম্মান না করার কুকর্মটি অনেকটা হাস‍্যকর! সুবিধা নিবে কিন্তু এপ্রিসিয়েট করবে না, এটি কি ঠিক? বাংলাদেশকে পছন্দ করে না, তার জনগোষ্ঠী ও কালচারকে বকাবকি করে এমন বিদেশীদের কি বাঙালিরা মেনে নিবে? ইউরোপ আমেরিকার সংস্কৃতিকে বাঙালি সাদরে গ্রহন করলেও, জাপানিদেরটা ভালো হবার পরও গ্রহন করতে চায় না, কারণটি অদৃশ‍্য। দৃশ‍্যমান ভিন্নমত থাকার পরও আমাদের তুলনায় জাপানিরা বিদেশীদেরকে উদারভাবেই গ্রহন করে ও করছে। অথচ আমরা যেন তা মানতে ও বুঝতে চাই না।

আমিও পূর্বে জাপানিদের নিয়ে অভিযোগ করতাম; এখন বিষয়টি বুঝি! আসলে জাপানিরা বদলায় না, এটা বলা ভুল। যেটুকু বদলানো দরকার সেটুকুই বলায়। কিন্তু বদলানো প্রক্রিয়াটি খুব ধীর, সুস্থির ও হিসাবের ফরমূলাতে সীমাবন্ধ- যা বিদেশীদের অসহ‍্য লাগে। অনেকে বলে – জাপানিরা আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় বন্দি জাতে, এদের মুক্তি দরকার।
অবজেক্টিভলি চিন্তা করলে বুঝা যায় – আসলে জাপানিদের বদলানো সুযোগ নেই- শুরু থেকে এরা নিজেদেরকে বদলিয়েই এত উন্নত হযেছে। আমরা যেমনটা চাই, তেমন করে বদলালে এদের ইউনিকনেস চলে যাবে। এরা আগের মত হিংস্র, সাম্রাজ‍্যবাদী ও পশ্চিমাদের মত ‘কৌশলি, লোভি, শট ‘ হবে । নষ্ট হয়ে যাবে।

আমরা জানি জাপানিদের জীবন, সংস্কৃতি, আচার-আইন যথাসম্ভব রিক্স-ফ্রি ভাবেই সাজানো! পরিবেশে ভূমিকম্প, সুনামি ও দূর্যোগ কবলতা, জীবনে দারিদ্রতার প্রবলতা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবন্ধতার কারনে – আদিকাল থেকেই জাপানের সবাই নিরাপত্তা সচেতন। যে কোন সময় অপ্রত‍্যাশিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাই তারা সব সময় আতঙ্কগ্রস্থ থাকে। তাই ‘সেইফ জোনে’ থাকা জাপানিদের সাধারন পছন্দ। অযথা ঝামেলা যেন জীবনকে কষ্টময় না করতে পারে – তাই তারা কঠোরভাবে আইন মানে, সাবধানে পা ফেলে, একতাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে। যা অন‍্য দেশে, এমনকি উন্নত ইউরোপ আমেরিকাতেও অকল্পনীয়।

লক্ষণীয় ‘বিদ‍্যুৎ ও যোগাযোগে’ এত উন্নত হবার পরও; জাপানের প্রায় সকল বাড়িতে দূর্যোগ মোবাবের প্রস্তুতি হিসাবে কাঠের সংগ্রহশালা থাকে। বছরের পর বছর কাট ব‍্যবহার হয় না, তবুও তারা কাঠ রাখে, বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করে। মূল কারণটা হলো – ভুমিকম্প হলে যাতে, খাদ‍্য, শীত, রান্না ও অন্ধকারের প্রকোপে মরতে না হয়।

‘রিক্স-ফ্রি’ ভাবনা ও সংস্কৃতির কারণে- এরা পশ্চিমাদের মত দিল দরিয়া নয়। ‘স্বর্গের মিথ‍্যা লোভে’, দান-খয়রাত তো পরের কথা – এরা ডিজিট‍্যাল কয়েনও ব‍্যবহার করে না, বুড়োরা নগদ টাকা পছন্দ করে, অযথা আগলা পিরিত করে কাউকে বাড়িতে ঢুকায় না, দাওয়াত দেয় না, অপচয় করে ফুটাঙ্গি দেখায় না! রিক্স-ফি থাকার জন‍্য, রিক্স-ফি রাখার জন‍্য গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে হোটেলে রাখে। ইমিগ্রেশনেও কানাডা-আমেরিকার মত বিদেশীদের দুইহাতে গ্রহন করে না। নেটিভ জাপানিদের মত না হলে নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টও দিতে চায় না।

এভাবে খুঁজলে জাপানের প্রতিটি ঘটনা ও আচারের পিছনে- নিরাপত্তা ও নিরাপদে থাকার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এই মুলকারণটি বুঝে, অবজেক্টিভলি জাপানকে গ্রহন করলে – নিশ্চিত বাঙালির জাপানবাস সুখি ও সুন্দর হয়ে যায়।

কিছুদিন আগে ‘রিও’ নামের এক তরুণ জাপানি বন্ধুর সঙ্গে, ‘বিদেশীদের সম্পর্কে জাপানিদের ধারনা-ভাবনা’ নিয়ে আলাপ করছিলাম। সে বলল – কিছুদিন আগে পরীক্ষামূলকভাবে টোকিওতে একটি কোম্পানী শুধু বিদেশীদের দিয়ে একটি বিভাগ চালু করেছিল! দ্রুত সেই কোম্পানিটি লসে পড়েছিল। বিদেশীদের নিম্নমানের সেবা, হেলাফেলা আচরণ, চুরি ও অযথা এটাসেটার করার কারণে কোম্পানিটি সেই বিভাগটি বন্ধ করে দিতে বাধ‍্য হয়েছিল। তাহলে বুঝ – জাপানিরা কেন বিদেশীদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না।

যতই দিন যাচ্ছে আমি জাপানকে গভীরভাবে বুঝতে পারছি, মেনে নিচ্ছি, আমার জাপানবাস দিনদিন সুখময় হচ্ছে। কি শান্তি ঘরে ঘরে।
লিঙ্কের ভিডিও দেখলে জাপানিদের মাইনসেট সহজে বুঝা যায়।
https://youtu.be/dGIMF0tHDnQ

ডারউইন যা বলেননি , ফেইসবুক তা বলছে!

ডারউইন যা বলেননি , ফেইসবুক তা বলছে!

The Facebook bloggers, before making a comment on ‘Evolution and Adaptation’, please read again. the basic Evolution Theories, ‘Origin of Species’, and related books.

বানর কখনো মানুষ হয় না। এ’কথা শতভাগ সত‍্য। আরো সত‍্য বাঙালি বানর – কখনোই মানুষ হয় না ও হবে না। এক্ষেত্রে অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্ব প্রায় সম্পূর্ণ মিথ‍্যা। বিবর্তন নিয়ে সোসাল মিডিয়াতে অযথা কুতর্ক তার প্রমান।

বিশ্ববিদ‍্যালয়ে টানা ৬ বছর (১৯৯১-১৯৯৬) প্রকৃতি বিজ্ঞান, জিওলজি, বির্বতনবাদ ও অভিযোজন তত্ত্বগুলো পড়ে এটুকু বুঝেছি।

বানর বা বানর জাতীয় জীবেররা প্রকৃতির বিরূপ ও সুরূপ বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে দৈহিক ও মানসিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। সৃষ্টি হয় টিকে থাকা নতুন বৈশিষ্ট‍্যের প্রজাতির। এমন পরিবর্তনের ফল- আজকের বুদ্ধিমান মানুষ। অভিযোজন ও বিবর্তন এখানেই শেষ নয়। বিবর্তন একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। এটি দীর্ঘদিন ধরে, সৃষ্টির প্রথম থেকে লক্ষ-লক্ষ‍ বছর ধরে চলে আসছে, ও চলবে।

এটি নিশ্চিত হাজার ও লক্ষ বছর পর – আজকের মানুষ আর আজকের মত থাকবে না । দৈহিক গঠন ও মানসিকতায় বিপুল পরিবর্তন ঘটবে। যেমন বর্তমানের মানুষ ও আদিকালের মানুষের মত নেই। সোজা কথায় – এই পরিবর্তনই বিবর্তন ও অভিযোজনের ফল। খাপ খাইয়ে খাইয়ে শুধু মানুষ নয়, সকল জীব-প্রজাতিগুলো আরো উন্নত হয়। প্রকৃতির প্রতিকূল অবস্থার সাথে মানাতে পারলে পরিবর্তিত হবে, উদ্ভব হবে আরো উন্নত মানব ও প্রজাতি, না মানাতে পারলে মরে যায় । যেমন মরে গেছে ডাইনোসর ও নানান বিলুপ্ত প্রানী। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম।

অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্বগুলো যারা মিথ‍্যা বলেন, তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রায় ১০০টি শাখাকে মিথ‍্যা বলতে চান, অস্বীকার করেন। যা মেনে নেয়া অসম্ভব, মানবজাতির জন‍্য ক্ষতিকর ও এক ধরনের মূর্খতা। তারা আসলে ইভালিউশন বিষয়টির বেসিস বৈশিষ্ট‍্য ও উদ্দেশ‍্য জানেন না, বুঝেন না।

ডারউইন কখনো যা বলেননি – তা খৃষ্টান, হিন্দু ও সালাফি মোল্লারা অনবরত বলেন। হিন্দু সাধু ও মুসলমান মোল্লারা বাইবেলকে অস্বীকার করলেও, তারা বাইবেলিক জেনেসিস অর্থাৎ সৃষ্টিতত্ব ঠিকই মানেন। কুতর্কটি আরো প্রখর হয়েছে – ফেইজবুকে বানর মার্কা সহজ ব্লগারদের মাধ‍্যমে, যাদের উপস্থাপনা খুবই হাস‍্যকর।

প্রকৃতি বিজ্ঞানে ডক্টরেট করা আমার অভিজ্ঞ প্রিয় স‍্যারেরা, যারা বিবর্তনবাদ পড়াতেন, তাদেরকে কখনো বলতে শুনিনি- বানর থেকে মানুষ হয়েছে। কিন্তু অনলাইন কানার হাটবাজারে, অন্ধ-অতিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান ও সত‍্যকে নিয়ে কৌতুককর গল্প করেন, মহামতি ডারউইনকে বকাবকি করেন। যারা অধিকাংশ বুঝে না ও মানতে চায় না – ইডেন গার্ডেন বলতে বাস্তবে কোন গার্ডেন নেই, এটা মধ‍্যপ্রাচ‍্যের মিথোলজি, লোককথা। বৈজ্ঞানিক উপাত্ত, ফসিল-নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অতিআদি এককোষি জীবের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, কিন্তু ‘টেরেস্ট্রিয়াল প্যারাডাইস’ এর অস্তিত্ব ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও বিজ্ঞানে পাওয়া যায় না।

আমার অভিমত – কল্পকাহিনীর এ গল্পগুলো বাস্তব না হলেও অবশ‍্যই এগুলোর মনস্তাত্ত্বিক, আধ‍্যাত্ত্বিক ও মানবিক শিক্ষার বিচারে মহামূল‍্য আছে। তবে প্রতিকী বিষয়কে – বাস্তব ভেবে মানবজাতি যেন আজ মহাবিপদে আছে। আমি মনেকরি ‘আমাদের পরিবারই’ ‘টেরেস্ট্রিয়াল প্যারাডাইস’, আমাদের পিতা-মাতাই এই মহাকাব‍্যের মহানায়ক-মহানায়িকা।

মোটকথা গোরারা আজো মানতে ও বুঝতে চায় না – সব বিজ্ঞানী সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ। আর ধর্মীয় সাধুরা অধিকাংশই অশিক্ষিত, মূর্খ, কোন বিদ‍্যালয়ে না গিয়ে, পাহাড়বাসী-নাগাসন্ন‍্যাসী হয়ে নিজেদেরকে মহাজ্ঞানী দাবী করেন।

আমার ব‍্যক্তিগত মত- ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের মিলানো ঠিক নয়। কারণ বিজ্ঞান হলো- প্রমান যুক্ত প্রস্তাবনা , আর ধর্ম হলো প্রমানহীন প্রস্তাবনা।

ধর্মে অনুমান ভিত্তিক, প্রমানহীন প্রচলিত মিথ‍ থাকে, যা বিজ্ঞানে থাকে না। আজকে যা বিজ্ঞানে প্রমানিত, তা কালকে মিথ‍্যা প্রমানিত হলে, বিজ্ঞানীরা দুঃখিত হন না, প্রমানিত নতুন সত‍্যকে মেনে নেন, স্বাগত জানান।

অন‍্যদিকে তথাকথিত – আচার কেন্দ্রিক ধার্মিকেরা আদি গ্রন্থের কল্পলেখাকে মিথ‍্যা প্রমানের পরও মেনে নেন না। জেনে-বুঝে অযথা রাগান্বিত হন। যা গোড়ামি সৃষ্টি করে।

সমাজকে আফগানিস্তান ও সৌদির মত পিছনের দিকে টেনে রাখতে চান। ইউরোপ-আমেরিকা; জাপান-চীনের মত প্রগতির দিকে উৎসাহিত করেন না।

তাই পাঠ‍্যপুস্তকে অভিযোজন তত্ত্ব নিয়ে যেসব যাজক-প্রাদী-মোল্লারা বির্তক করছেন, তাদেরকে আবার বিষয়টি গভীরভাবে বুঝা ও মানার অনুরোধ রইলো। নতুবা ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ তিনটিই অন্ধকারে ঘুরপাক খাবে। আমি নিশ্চিত – অভিযোজন ও বিবর্তন তত্ত্ব মানলে কেউ – নাস্তিক, অধার্মিক, মুরতাদ, মোনাফেক ও তামসিক হবে না। বরং সত‍্যের অনুসারী হবেন।

সবার আগে আমাদের সবাইকে বুঝা উচিত‍্ – ধর্ম ও বিজ্ঞান দু’টোরই উদ্দেশ‍্য মানব কল‍্যাণ। ধর্ম যখন অকল‍্যাণের কারণ হয় – ধর্ম তখন ধর্ম থাকে না, অধর্ম হয়ে যায়।

বিমান বন্দরে লাগেজ প্রেম

বিমান বন্দরে লাগেজ প্রেম

বিমানবন্দরে ল‍্যাগেজ প্রেম

আমি গুণে মহামতি হলেও – পদে, দাপটে ও অর্থে নিতান্তই দরিদ্রজন। তাই বিমান বন্দরে ভিআইপি গেইট দিয়ে এখনো বিমানে চড়তে পারি নাই, পথটাও জানি না, লবিং-টবিং করে কিভাবে এই জাতে উঠতে হয়, বুঝতে পারি না।

সেই কারণে, বডিং-ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্র প্রতিবারই বহু নিরক্ষর প্রবাসীর সাক্ষাৎ পাই। অনেকের ইমিগ্রেশনের ফরম পূরণ করে দিতে হয়। ভুল করা প্রথম অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপদ বিদেশযাত্রার জন‍্য এটাসেটা যেচে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হয়।

কেচালটা হয় তখনই, যখন – বিমানে করে ঢাকায় আসা-যাওয়ার সময় কেউ তার ল‍্যাগেজে নিতে অনুরোধ করে।ভারি ভারি উপহারে বস্তাবোজাই করা, ক্লান্ত প্রবাসী যখন তার বাড়তি ব‍্যাগটি আমার নামে এন্টি করার অনুরোধ করে, তখন মায়া লাগে।

কিন্তু আমি বরারই, আবেগ কন্ট্রোলে রাখি। জাপানি সুন্দরি বউয়ের পরামর্শে – এসব ক‍্যাচালে রাজি হই না। এরজন‍্য আবেদনকারী সাধারন যাত্রী হলে তেমন মাইন্ড করে না। তবে অনেকের বুলিং এর শিকার হই । বিশেষ করে চোরাচালানী ধাচের যাত্রীদের, ল‍্যাগেজ পার্টির কর্মীদের – যাদের কমন বুলিং ,

– বাঙালি একটা বেইমানের জাত। বিদেশীরা হেলপ করতে পারে, দেশিভাই, দীনিভাইয়েরা হেল্প করে না। ছোটলোক, বাঙাল কখনো মানুষ হইবো না। ছোট একটা ব‍্যাগ নিতে অসুবিধা কি? কাপড় নষ্ট হয়ে যাবো? নিজের লাগেজ কম, তারপরও রাজি হয়। …

যে যতই বকাবকি, ঝকাঝকি – বুলিং করুক না কেন। নিজের আত্নীয় ছাড়া, ব‍্যাগ খুলে দেখে নেয়া ছাড়া – লাগেজ নিতে রাজি হবেন না।

কারণ – ব‍্যাগটি আপনার নামে এন্ট্রি হবার পর, সেটি আর ঐ ব‍্যক্তির থাকবে না, আপনার হয়ে যাবে। ওখানে কোন মাদক, বা চোরাচালানের সোনাদানা, হিরা-জহরত, সেক্সিটয়, ড্রন, কসমেটিক্স ইত‍্যদি জিনিষ থাকলে, সেটার জন‍্য আপনি ফেঁসে যেতে পারেন । অবৈধ জিনিষ ধরা পড়লে, আপনাকে জেলে যেতে হতে পারে, ঐ ব‍্যক্তিকে নয়।

সুতরাং বিমানের বডিং নেয়ার সময বা বিমান বন্দরে ঘুরাঘুরি সময়- অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আগলা পিরিত পরিতাজ‍্য।

আমি এমন অপরাধীর খপ্পরে বহুবার পড়ে ছিলাম। কেউ ঘুষ চাইলে বা ভয় দেখালে দিবেন না। প্রয়োজনে সিনক্রিয়েট করবেন। এয়ারপোর্ট পুলিশের সহযোগীতা নিবেন। এদের সবচেয়ে বেশী উৎপাত হয় চায়নার গুয়ানজু, সাংহাই, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর আর মধ‍্যপ্রাচ‍্যের রোডগুলোতে। আমি মধ‍্যপ্রাচ‍্যের রোডে যোগাযোগ করি না। তবে মালেশিয়ার আর চায়না রোডের অবস্থা যা ইচ্ছা তাই।

এখন বুঝেছি- প্রতিবারেই বহু অনুরোধের পরও রাজি না হয়ে মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। একবার তো চীনে গোয়ানজু’তে একদল চোরাচালানি আমাকে পারলে মারতে আসে। তারপরও রাজি হয়নি। পরে জেনেছি- এরা লাগেজ পার্টি । চায়না থেকে অবৈধভাবে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স আনে। অনেকবার বলার পরও যখন আমি রাজি হয়েনি তখন বলে,
– আপনি ঢাকায় যান, দেইখা লমু। বিমান বন্দর পার হইতে দিমু না । সবখানে আমাগো লোক সেট করা আছে।

এই থ্রেটটির পর আমি আসলেই ভয পেয়ে গিয়েছিলাম। রিসিপশন গেইটের কাছে আমার ভাই ও অফিসের লোককে আসতে বলেছিলাম, যাতে কোন বিপদ না হয়।

চোরাচালানিরা বহুত চালাক। যাতে মানুষ সন্দেহ না করে, তাই এদের দলে নায়িকাদের মত জুসি সুন্দরী থাকে। এরা দলে বেঁধে থাকে। একজন ধরা পড়লে, সবাই এক হয়ে রক্ষা করে, উল্টো ফাপড় লয়।

২০০১ সালে এমনি এক মহাবিপদে পরেছিলাম। এটা ছিল দ্বিতীয় বিদেশযাত্রা- সিঙ্গাপুরেে। তখন একটু হাবাগোবা ছিলাম। প্রায়ই আমাকে গছিয়ে দিয়েছিল – বলেছিল ,

– আপনার তো ল‍্যাগেজ কম, নিয়ে যান, আপনার বাসায় থেকে আমার লোক গিয়ে ব‍্যাগটা নিয়ে আসবে। আপনাকে দুই’শ ডলার দিমু। কোন ঝামেলা হবে না।

আমি রাজি হয়নি। সাম্ভব‍্য অনেক মহাবিপদের পথ অতিক্রম করে আলহামুল্লিল্লাহ, বুঝেছি – কত বিপদ থেকেই না রক্ষা করেছেন খামিসামা।

জাপান প্রবাসীদের বলি – জাপানে আসার সময় হয়তো অনেক বলবে এর ভিতর কিছু মশলা আছে। নিয়ে জান। আমার তো ৩০ কেজি পার হয়ে গেছে।

আমার সোজা অনুরোধ- রাজি হবেন না। জিনিষটা খারার মশলা – নাকি পান করা আসল মশলা, মানে ‘হিরোইন টিরইন’, গাঁজা-চরশ তা কি করে বুঝবেন?

কেউ হয়তো বলবে-
– আমার ভাই অসুস্থ মানুষ। এখানে তার বছরের ঔষধ আছে। একটু নিয়ে নেন, একটু উপকার করেন।

অতি আবেগ সৃষ্টি করলেও রাজি হবেন না । ঔষধটা রোগের নাকি, দেওয়ানা হওযার ঔষধ; মানে ইয়াবা-বাবা হবে না, এর নিশ্চয়তা কি?

এখন কোন জুসি সুন্দরীও যদি অনুরোধ করে, সোজা চাষাবুষার মত বলে দেই ,
– এত ল‍্যাগেজ আনছেন কেন? এনেছেন, এখন ভারতি চার্জ-জরিমানা দিয়ে নিজের নামে নিয়ে যান । আমাকে গছাবেন না। আমি আপনার দায়িত্ব নিতে পারবো না, দুঃখিত।

এই বলে কেটি পড়ি। বেশি কথা বললে, আরো দুইটা কথা শুনিয়ে দেই,
– এত অসচেতন হওয়া ঠিক না । একজন মানুষের ২০-৩০ কেজি’র বেশী জিনিষ বিদেশ থেকে আনা-নেয়া করতে হয় না। তাই এয়ারলাইন্স গুলো এই নিয়মজারি করেছে। আপনার বেশী জিনিষ দরকার হলে শীপ-পোষ্টে নেন। এয়ারলাইন্সে নিতে হবে কেন? এত তাড়া কিসের? একটু ধীরে নিলে ক্ষতি কি

যাইহোক; বন্দরে বা বিমান বন্দরের আগলা পিরিত পরিতাজ‍্য।

বিমান বন্ধরে আরেকটি মহাবিপদের কথা বলি। সঙ্গে থাকা ব‍্যাগ-ল‍্যাপটপ, অপরিচিত, এমনকি ট্রেনজিটে একই এয়ারলাইন্স আসা কারো কাছে দিয়ে বা মুভিংকার্টে রেখে কখনো টয়লেট যাবেন না। নিজের জিনিষ নিজের সঙ্গে রাখবেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। কফিশপে গেলেও দামি ল‍্যাপটপ আর ব‍্যাগটা ভারী হলেও কাঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন। ।

এতে আপনার জিনিষ নিরাপদ থাকবে। কোন কিছু হারানো ভয় থাকবে না। আগলা পিরিত ওযালা যদি আপনার ল‍্যাপটপ, প্রিয় পার্সপোট-টিকেট লয়ে চম্পর্ট দেয়ে, তখন ‘হায় হায়’ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

সর্বোপরি, নিরাপদ হোক আপনার বিদেশযাত্র, সেই কামনাই রইলো।

বি.দ্র.: ছবিটি তুলেছিলাম মালেশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট

স্বার্থপরতার পথ

স্বার্থপরতার পথ

– সবার জীবন থেকে বন্ধ হোক সকল অনিষ্টের মুল কারণ!

শুধু দক্ষিণ এশিয়াতে না, এই করুণ বাস্তবতা সারা দুনিয়ায়। আমরা সবাই জানি – দক্ষিণগোলার্ধের দেশগুলোতে দারিদ্রতা, অনাচার ও অবিচার স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো দেখা যায় না। এটাই তফাৎ!

সব দেশেই আজো রয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের আদিম দাপর্ট ও হটকারীতা। যখন কেউ গদি ছাড়তে চায় না, অনগ্রসরদের এগুতে দেয় না, নিজের অবস্থা ঠিক রাখার জন‍্য নানা কলকৌশল করে – তখনই বুঝতে হবে, “ডাল মে কুচ কালা হে।” সমস‍্যার মুল কারণ স্বার্থপরতা, সেলফ জাষ্টিফিকেশন।

বহু বছর টানা জাপানে থেকে বুঝলাম,
আইনের শাসন ও দূনীর্তিতে জিরো টলারেন্স দেশ হওয়ার পরও – জাপানের আইন ও রীতি সব চলে ক্ষমতাবানদের অনুকূলে । করোনা সময় স্পষ্ট হয়ে গেল- সারা জাপানে অদৃশ‍্য দারিদ্রতায় ভরপুর। এখানে ছেচড়া চোর, ডাকাত নাই, সহজ পথে দূনীতি করে, ভিক্ষামেগে ও ভিক্ষুক হয়ে পার পাওয়া যায় না বলে – দেখা যায় না। বাংলাদেশের মত বুঝা যায় না।

ইদানিং কালে জাপানি নর-নারীর চরম টানাটানি দারিদ্রতার কারণ সংসার গড়তে চায় না। করলেও অধিকাংশই ছেলে-মেয়ে নিতে চায় না। শহরে যারা চরম দারিদ্রতায় থাকে, কিন্তু কাউকে বলতে পারে না – তারা সহজে টাকা রোজগারের জন‍্য অনেকে দেহব‍্যবসা মত সহজ পথ বেছে নেয়। বাঁচার জন‍্য গোপনে এটাসেটা করে। দূর্বল চিত্তের যারা সইতে পারে না – তারা মাঝপথেই জীবনকে চির বিদায় জানায়। আত্নহননের পথ বেছে নেয়। এই কারণে উন্নত হবার পরও জাপানে আজো আত্নহত‍্যার হার বেশী।

আমি মনেকরি – মানুষ যতদিন পর্যন্ত স্বার্থপরতা ত‍্যাগ করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত মানুষের তাহেন তাহেন অবস্থা দূর হবে না। স্বার্থপরতাই সকল অনিষ্টের মুল কারণ! এরই নাম আমাদের সভ‍্যতা, তবে এমন সভ‍্যতা আমরা কামনা করি না।