কূটনীতি ও  মিডিয়াতে গুন্ডামির শব্দ!!

কূটনীতি ও মিডিয়াতে গুন্ডামির শব্দ!!

আম্রিকার হুশিয়ার, চায়না প্রবল চাপ, ইসরাইলের হুমকি, ইউক্রেনের আর রক্ষা নেই, আমরা শেষ দেখে নিব, আমাদের চেন না ইত‍্যাদি গুন্ডামি শব্দ কূটনৈতিক আলোচনায় বরাতে মিডিয়াতে, বিশেষ করে সাউথ-এশিয়ার মিডিয়াতে যত্রতত্র ব‍্যবহার করা হয়।

একটি দেশের সবচেয়ে সুশীল মানুষ সেই দেশের প্রেসিডেন্ট, তিনি কি আরেকটি দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল- সচেতন মানুষ, প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী মিনিষ্টারের সাথে এমন অভদ্র শব্দ ব‍্যবহার করেন? তাদের রেফারেন্স দিয়ে বাংলা মিডিয়াগুলো যত্রতত্র নরম আলোচনাকে গরম বলে ব‍্যাখ‍্যা করে কেন? মাস্তানি ডায়লগ ষ্টাইলে টাইটেল দিয়ে খবর প্রকাশ করে কেন? এতে কি মিডিয়ার দায়িত্বহানি হয় না?

যে শব্দগুলো মেইষ্ট্রিম মিডিয়া ব‍্যবহার করে, সেই মাতাল শব্দগুলো যদি আসলেই প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রী-মিনিষ্টাররা ব‍্যবহার করেন, তবে কি তাদের দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পাবে? আমি যতদূর জানি কূটনীতি মানেই ‘অ‍্যাবষ্টাক্টনেস’, কৌশলে বাঘ মারা, ‘মুরগীমারা মাস্তানি না’।

যদি আসলেই সরাসরি আক্রমনাত্বক শব্দ ব‍্যবহার করে, আমি নিশ্চিত রথিমহারথিরাও আলোচনা রেখে, সাধারণ মানুষের মত মারামারি, ধরাধরি শুরু করে দিবে আলোচনার টেবিলেই।

দেশে দেশে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হলেও, বাস্তবে আমরা রথিমহারথিদের মাঝে মারামারি দেখি না। নেতাগিরি করা, আর জেলেনাস্কির মত মাঠগরম করা কথা এক না। একজন নেতা ভবিষত দেখতে পারেন, চাপাবাজরা দেখতে পান না।
আমার কেন যেন মনে হয়, মিডিয়া নিজেদের খেয়াল খুশীমত নরম শব্দগুলোকে, গরম শব্দে অনুবাদ করে, সুশীল শব্দগুলোকে কুশীলতায় প্রতিস্থাপন করে। উদ্দেশ‍্য বোধহয় সংবাদের সস্তা জনপ্রিয়তা। আপনাদের কি মনেহয়?

বি.দ্র.: রশিয়া-ইউক্রেন গ‍্যাঞ্জামের এই সময় সংবাদ নিয়ে বিশ্বব‍্যাপি কারুকাজ ও তেলেসমাতি বুঝলাম। সাউথ এশিয়ার মিডিয়া-পত্রিকাগুলো শুধু রং লাগায় বাড়তি কাটতি’র জন‍্য । কিন্তু আম্রিকা ও পশ্চিমা দুনিয়ার মিডিয়া পুরো সংবাদই বদলে দেয়। বিষয়টা পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে যায় যখন দেখি- প্লোবাল মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে, একমুখি সংবাদ প্রকাশ করে। সবচেয়ে করুণ বিষয়- যুদ্ধ হয় ইউক্রেনে, সংবাদ ও রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ‍্যে, লন্ডনে…

আমার সরলতা ও  মহামতি সাহাবুদ্দীন আহমদ

আমার সরলতা ও মহামতি সাহাবুদ্দীন আহমদ

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আমার ও আব্বার প্রিয় ব‍্যক্তিত্ব। তাঁর ‘হিটলার মার্কা’ বা ‘চার্লি চ‍্যাপলিন মার্কা’ মোছ থাকলেও, চরিত্রে হিটলারি বা কৌতুকের ছিটেফোঁটা ছিল না। শান্ত ও সিরিয়াস মানুষ ছিলেন। তাঁর সরলতা ও সততা মুগ্ধতার সাথে দেখিয়ে আব্বা আমাকে বলতেন,
– দেখছ, কত ভালো মানুষ? কত সরল মানুষ? এমন মানুষ হইতে হব। তাহলে জীবন স্বার্থক…

আব্বার কথায়, বিচারপতির সরলতায় অনেকটা আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই অতি সরল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলাম। হৃদয়ে বিশ্বাস লালন করতে শুরু করেছিলাম- সৎ ও সরল মানুষের কষ্ট হলেও, শেষ পর্যন্ত সিনেমার নায়কের মত জয়ী হয় ও হবেই।

২০০১ সাল পর্যন্ত আমার অতি সরল পথে চলার ব্রত গোড়াদের মত বহুত বলবৎ ছিল। এরজন‍্য আমি অনেকের কাছে প্রিয় সাহাবুদ্দীন আহমদের মত হাসির পাত্রও হয়েছিলাম। যদিও আমার পূর্ণ আস্থা ছিল – আমার সরলতা হাসির বিষয় না।

মহাকালের সরলতার মহাযাত্রায়, কয়েকজন ‘দয়াল বাবা, কলা খাবা’, মাগনা কুতুবের পাল্লায় পড়ে মাইনকাচিপায় ছিলাম। তবে নিজের প্রতি, নিজের সরলতার বিশ্বাস বিশ্বাস হারাতাম না। অতি আস্থার সাথে পথ চলার পর যখন বুঝলাম পেটে ভাত জুটবে না, আরো বেকার থাকতে হবে, মানুষের কাছে হাত পাতার অবস্থা হবে, তখন পথ একটু বদলিয়েছিলাম।

বিশ্ববিদ‍্যালয় পাশের ৫ বছর পরও চাকুরি-বউ-প্রেমিকা কোন কিছু ছুটছে না, তখন একটু হতাশা হযেই, বৈষয়িক ও কৌশলী হতে শুরু করেছিলাম। শেষমেষ খানিকটা সফল হয়েছি। জাপানি বউ-পোলাইপান পেয়েছি। এখন আমি নিজেকে বেশ চালাক মনেকরি, যদিও প্রায় সব মানুষ এখনো আমাকে সরল ও বোকা মনেকরে।

যাইহোক আমার ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবন থেকে বুঝলাম,
অতি সরলতা ও অতি সততা সব সময় ভালো না। অনেক সময় হীতে বিপরীত হয়। জীবনের মুখোমুখি হয়ে, জয়ী হতে হলে আমাদেরকে কৌশলী হতে হয়। বুদ্ধির চর্চার করতে হয।

আমি এখন মনে করি – চাতুরতা মন্দ হলেও, অন‍্যের ক্ষতি না করে, কৌশলে নিজের হিস‍্যা আদায় ও অবস্থান ঠিক রাখা মন্দ না।

মহামতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রয়াণ দিবসে, আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন শোকবার্তা নেই। বিষয়টা আমার দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। অথচ তিনি চরিত্র ও কর্মগুণে তিন-তিনবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিলেন। আজকে তচ্ছতার কারণটা আমাদের সবার জানা। তার অতিসততার কারণে – চতুর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসেছিল। প্রত‍্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অনেক ক্ষতি করেছিল।

আমরা সবাই জানি তিনি সৎ ও সরল ছিলেন। কিন্তু এটাও আমরা বুঝেছি, অতি সততা অতি সরলতা মাঝে মাঝে দেশ ও দশের অকল‍্যান ডেকে আনে। তার অতি সততার সুযোগে সুবিধাবাদীরা একতার বদলে দেশকে বিভাজিত করেছিল, দূনীতির স্বর্গরাজ‍্য বানিয়েছিল।

মহাত্না সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রয়ানে আমি দুঃখিত। তার সততা ও অবদানে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার ৯২ বছরের জীবনে জাতিকে যা দেবার তার চেয়ে অনেক বেশী দিয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সরলতার প্রতিককে, ‘প্রিয় স্রষ্টা’ খামিসামা – অবশ‍্যই অদৃশ‍্য ভালোবাসার জগতে অপার শান্তি দিবেন, পুরুস্কৃত করবেন।

স্বর্ণদ্বীপে ফলেনমাস্ক , অন‍্যরকম গল্প

স্বর্ণদ্বীপে ফলেনমাস্ক , অন‍্যরকম গল্প

অবকাশ কাটাতে স্বর্ণদ্বীপে বিলিয়নিয়ার ফলেনমাস্ক আসলো। সঙ্গে কেউ নেই, একা। পুরো শান্তি ও স্বস্থি তার দরকার, তাই সঙ্গে কাউকে আনেনি। এসেই সে একা পুরো দ্বীপ একা হেটেছে। দেখে হতবাক হয়েছে স্বর্ণদ্বীপের সব মানুষ দ্বীর্ঘজীবি, সুখী। পৃথিবীর সব মানুষ যেখানে বেশীদিন বাঁচার জন‍্য দিনগুনে, এখানে মানুষ মরার জন‍্য দিনগুনে। মানুষ সহজে মরে না, বয়সের টানে পিতাপুত্রের চামড়ার ভাঁজ যেন একই রকমের।কুকড়ানো। কে পুত্র, কে পিতা বুঝার উপায় নেই।

সৈকতের পাশে টুরিস্টস্পটে রাখা বেঞ্চিতে বসে আম্রিকান দামি দামি এটাসেটা খাচ্ছে ফলেনমাস্ক। দ্বীপের আদি ষ্টাইলের প্রাকৃতিক খাবারে তার আস্থা নেই। জীবাণুর ভয়ে সব সময় তঠস্থ থাকে। দ্বীপের পানি পর্যন্ত সে পান করে না। কোন কিছু খেতে বাধ‍্য হলে তিনবার চেখে নেয়।

একটু দূরে আরেক বেঞ্চিতে বসে এক বৃদ্ধ মনের আনন্দে বাঁশি বাজাচ্ছিল। নাম তার সুখরাজ। স্বর্গীয় বাঁশীর সুরের মুর্ছনায় আবেশিত হয়ে, সুরের টানে সকল অহংকার ত‍্যাগ করে মাস্ক বৃদ্ধ বংশীবাদকের কাছে যেতে বাধ‍্য হয়। কাছে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধের বংশীধ‍্যান ভেঙ্গে যায়। মাস্ক বৃদ্ধকে বলে,
– আপনার বাঁশির সুর অপূর্ব। আমি কি আপনার বেঞ্চিতে একটু বসতে পারি।
– বসেন।
– ধন‍্যবাদ। কতক্ষন নীরব থাকার পর, এদিক ওদিক তাকিয়ে মাস্ক হেভারসেক থেকে চিপসের প‍্যাকেট বের করে। বলে,
– চিপস খাবেন? আরেকটা প‍্যাকেট আছে। আম্রিকান ‘করমরে’, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি চিপস। বৃদ্ধ বলে,
– ধন‍্যবাদ। আমি আম্রিকান আর চাইনিজ খাবার খাই না। ব‍্যবসার জন‍্য চাইনিজ আর মার্কিনীরা খাবারে ক‍্যামিকেল মেশায়, কারসাজি করে। এদের যে কোন খাবার খেলেই আমার পেটের অসুখ হয।
– তাই নাকি?
– জি, তয় আপনি কে?
– আমাকে চিনেন না? সবাই আমাকে চিনে। আমি চাঁদে ও মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসত বানানোর প্রকল্পের উদ‍্যোক্তা, নাম মাস্ক।
– তাই নাকি? বেশ অদ্ভত কাজ তো? তয় খামিসামা এত সুন্দর একটা গ্রহ দিলেন, আপনি হঠাৎ করে অন‍্যগ্রহে যাওয়ার চিন্তা করছেন কেন?
– এই গ্রহটা তো অনেক ছোট? পরিবেশ, জলবায়ূ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অল্পদিনের মাঝেই এটা মানুষের পূর্ণ হয়ে যাবে। বাসের অযোগ‍্য হয়ে যাবে।
– আপনার ধারনাও ভুল। পূর্ণ হবে না। আপনি কি জানেন না রাশিয়া, চায়না, ব্রাজিল, কানাডা এমনকি আপনার দেশ আম্রিকার কত বড়? এসব দেশের তিনভাগের দুই ভাগ এখনো খালি। পান্তানাল ও আমাজন সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় বার্জিনল‍্যান্ড আছে যেখানে গত ৪.৫ বিলিয়ন বছরেও একবারের জন‍্য মানুষের পদচিহৃ পড়েনি। যে হারে মানুষ বাড়ছে, সেভাবে জন্মহার থাকলেও আরো অন্তত ১ লাখ বছরেও পৃথিবীর ঘনবসতি টোকিও মত ঘন হবে না।

বৃদ্ধ অতানাবের কথা শুনে মাস্ক হতবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, “বৃদ্ধকে তো দেখে অশিক্ষিত মনে হয়েছিল, উনি তো দেখছি শিক্ষিত। সন্তের মত কথা বলে। অনেক কিছু জানে মনে হয়।” ভাবনা ভেঙ্গে মাস্ক বলে,

– আপনি তো দেখছি অনেক তথ‍্য জানেন। গভীরভাবে ভাবেন। তয় এসব কোথায় থেকে জানলেন? ইন্টারনেট থেকে বুঝি? আমি ইন্টারনেট নিয়েও কাজ করি, নিয়মিত মহাশূন‍্যে স‍্যাটেলাইট পাঠাই। ইন্টারনেটের গতি যাতে আরো বাড়ে, তথ‍্যভান্ডার যেন আরো সমৃদ্ধ ও নিরাপদ হয় এরজন‍্য স্পেসস্টেশন বানিয়েছি, দিনরাত কাজ করি।
– ইন্টারনেট, সেটা আবার কি?
– ওরে বাবা, ইন্টারনেট কি আপনি বুঝেন না? আপনি কি এই যুগের মানুষ? তাহলে শিখেন কিভাবে? যোগাযোগ করেন কিভাবে?
– বই পড়ে, টিভি দেখে শিখি। প্রকৃতি থেকে, বন্ধুদের সাথে আলাপ করে শিখে? আমার একটি সুন্দর ল‍্যান্ডফোন আছে, ৪৭ বছর বয়স, এখনো সুন্দর কাজ করে।

এমন সময় ফলেনমাস্কের দামী কেচলা ফোনটা বেজে উঠে। নম্বর চেক করে বলে, একটা জরুরীফোন বউযের কাছ থেকে এসেছে, একটু অপেক্ষা করুন।

ফোনে চলতি ইংরেজীতে কথা বলার পর থেকে মাস্ক আগের মত প্রাণবন্ত নেই।গুছিয়ে কথা বলতে পারছে না। সব কিছু যেন ভেঙ্গে পড়ছে। বারবার দ্রুত নিজেকে তুলে ধরে রাখার সবচেষ্টা করছে। কেমন যেন মনমরা, আনমনা, অস্থির । বৃদ্ধ বলে,
– অশান্ত হয়ে গেলেন কেন?
– দুঃখের খবর, আমার ৪০টি স‍্যাটেলাইটকে সৌরঝড় গ্রাস করেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল বুঝি।
– কত ক্ষতি হবে?
– অনেক, আনুমানিক এই দ্বীপের মত ১০টা দ্বীপ কেনা যাবে!
– তাই নাকি? অনেক টাকার ব‍্যাপার সেপার।
– জি
– তয় ৪০টি স‍্যাটেলাইটের দাম কি আপনার প্রাণের চেয়েও বেশী দামি?

বৃদ্ধের কথা শুনে মাস্ক চমকে যায়, সচেতনতা জেগে উঠে। প্রাণের চেয়ে দামী জিনিষ তো দুনিয়াতে নেই। এই ভাবনায় মাস্কু পুরো নীরব হয়ে যায়, যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে। কোন উত্তর না নিয়ে ফলেনমাস্ক বলে,

– ব‍্যবসার কথা বাদ দেন। আজ ক্ষতি হয়েছে, কাল লাভ হবে, লাভ-লোকসান দুইয়ে মিলেই তো ব‍্যবসা। বড় বড় স্বপ্ন আর ব‍্যবসার ভারের ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম, একটু শান্তির জন‍্য স্বর্ণদ্বীপে এসেছি। শান্তি আমার চাই ই।

– ভালো। ধন‍্যবাদ। এই দ্বীপটা আসলেই সুন্দর, শান্তির নীড়। চাইলে এখানে আপনি আমার মত শান্তি ভোগ করতে পারেন। শর্ত শুধু প্রকৃতিকে মেনে নেয়া, গ্রহন করা। এই দ্বীপের সবকিছুই আমার কাছে স্বর্গের মত মনেহয়। কোন কিছুতেই ভুল ধরতে পারি না। সব কিছুই যেন মনেহয়, যেমনটা দরকার তেমন করেই সাজানো।
– ঠিক বলেছেন। পারফেকশনের সাথেই প্রকৃতি সব সাজায়। ভারসাম‍্যতাই প্রকৃতির ধর্ম।
– প্রকৃতি বলেন কেন? স্রষ্টা বললে আরো সঠিক হবে, সবকিছুকে আরো কাছে পাবেন, জীবন্ত মনে হবে, একতা বোধ করবেন।

অনেকক্ষণ সুমুদ্রের দিকে তাঁকিয়ে থাকার পর, সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসমান দুলখেলা মাছ ধরার নৌকা দেখিয়ে ফলেনমাস্ক বলে,
– কি অপূর্ব দৃশ‍্য, আমি যদি ঐ মাঝির মত আনন্দে মাছ ধরতে পারতাম, কতই না ভালো হতো।
– যদি মন থেকে চান, পাবেন। মানুষ মন থেকে যা চায়, তাই পায়।
– বুঝেছি। তয়, আপনি কি করেন?
– মাছ ধরি, ঐ জেলের মত মাছ ধরতাম। বয়সের কারনে পুত্রধন এখনো সাগরে যেতে দেয় না, যদিও আগের মতই আমি সবল। তারপরও মাঝে মাঝে ওর সাথে সাগরে যাই, মাছ ধরি।
– ও তাই বুঝি। অসাধারণ। তয় আপনার মাছ ধরার নৌকা কয়টা?
– একটা!
– মাত্র একটা? সারাজীবন কাজ করে মাত্র একটি নৌকার মালিক হয়েছেন? এত কম কেন?
– আমার তো একটাই দরকার। বেশী দিয়ে কি করবো? কে চালাবে? আগে আমি চালাতাম, এখন পুত্র চালায়।
– কেন আরেকজনকে দিবেন। হয় লোক রেখে চালাবেন, না হয় ভাড়া দিবেন। সে আপনার হয়ে চালাবে। বেশী বেশী মাছ ধরবে। বাজারে মাছ বিক্রি করে আরেকটা নৌকা কিনবেন। এভাবে আপনার অনেক নৌকা হবে, আপনিও আমার মত অনেক ধনী হতে পারেন।
– ও তাই নাকি, ধনী হওযার এই সহজ বুদ্ধিটা তো আমাকে আগে কেউ কখনো দেয়নি। তয় বেশী ধনী হয়ে লাভ কি?
বৃদ্ধের কথা শুনে মাস্ক হতবাক হয়। মনে মনে ভাবে, ধনী হলে কি লাভ, এই বুড়ো বুঝে না, ওনাকে কেমনে কি বুঝাই?
বৃদ্ধ অতানাবে বলে, কি ভাবছেন মিস্টার মাস্ক?
– তেমন কিছু না। ধনী হলে আপনার অনেক টাকা হবে। আপনি বসে বসে খাবেন। অন‍্যরা আপনার হুকুম তামিল করবে, অনেক সম্মান করবে। আপনি আরামে থাকবেন।
– আমি তো বসে বসেই খাই। অনেক আরামেই আছি। জীবনে কোন সমস‍্যা নেই। যা চাই, তাই পাই। আরামে থাকার জন‍্য এতকষ্ট করে অনেকগুলো নৌকার মালিক হওয়ার দরকার কি?
মাস্ক বৃদ্ধের কথা খোঁচার আঁচ পেয়ে অপমানবোধ করে। কিন্তু আবেগ দেখায় না। আরো শান্ত হয়ে বলে,
– ও তাই? আপনার তো অনেক টাকা নাই।
– তা ঠিক, তবে সুখ ও সন্তুষ্টি তো আছে। আপনার কি অনেক টাকা? আপনার কয়টা নৌকা?
– নৌকা নাই তবে অনেকগুলো গাড়ি আছে। আমার একটা কচলা গাড়ির কোম্পানি আছে, দামি দামি গাড়ি বানায়!
– তাহলে তো দেখছি আসলেই আপনি অনেক ধনী মানুষ।
– হ, লোকে বলে আমি বিলিয়নিয়ার।
– ওরে বাবা। এর মানে, আপনি অনেক বুদ্ধিমান, নিজের লাভের লাগি অনেক মানুষকে খাটাতে পারেন।
– খাটানো বলছেন কেন? আমি তো উদ‍্যেক্তা, ব‍্যবসায়ি। ব‍্যবসার মাধ‍্যমে মানবসেবা করি, মানুষের কাজ ও রুজির ব‍্যবস্থা করি, সমাজ সেবা করি।
– তা ঠিক। তবে ব‍্যবসায় শুভঙ্করি না থাকলে ধনী হওয়া যায় না। ছোট সময় আমার বাবা বলতেন, দুনিয়াতে যে যত মানুষকে ব‍্যবহার করতে পারে, ঠকাতে পারে সে তত ধনী, সে তত বিখ‍্যাত হয়।
– এটা তো সন্তদের দর্শন। আপনার বাবা কি সন্ত ছিলেন?

স‍্যাটেলাইটের শোকে মাস্ক বারবার আনমনা হযে যাচ্ছে। মন যাওয়ার কথা মহাশূন‍্যে, সেখানে না গিয়ে আম্রিকায় চলে যাচ্ছে, কোনভাবে নিজেকে নিজের সাথে রাখতে পারছে না। এবার বুঝি শেয়ারবাজারে আমার ধস নামবেই।
এত অস্থিরতার মাঝেও মাস্কভাবে ‘স্বর্ণদ্বীপের আমাকে কেউ বিলিয়নিয়ার হিসাবে, কচলার মালিক হিসাবে জানে না কেন। কেউ তো বাড়তি সম্মান করছে না! কেউ কি আমার সম্পর্কে জানে না? এখানে একটি মিডিয়া সেন্টার বানানো জরুরী। মানুষকে লেটেষ্ট তথ‍্য জানানো দরকার। নইলে মানুষের আদিমতা, মূর্খতা কববে না। ব‍্যবসার ক্ষেত্র তৈরী হবে না। এই সুন্দরদ্বীপে নিজের গুরুত্ব কম, এই ভাবনায় মাস্কের মন হতাশায় ধসে পড়ে। চরম একাকিত্ব বোধ হয়, হৃদয়ে ভালোবাসাহীনতার তুফান জাগে। এখানে ডলারের দাম থাকবে না এটা কোন কথা হলো? এখানে মানুষ কেন বড় হতে চায় না, কেন মানুষ একে অন‍্যকে টপকে যেতে চায় না? কেন মানুষ বহেমিয়ান বুদ্ধ-গান্ধী’র মত নিমোহ থাকতে চায়? বিষয়টা নিয়ে গবেষনা করা দরকার। এদেরকে আধুনিক বানাতেই হবে।

বৃদ্ধের প্রশ্নবাণ থেকে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে মাস্ক নিজেকে নিজে বুঝ দেয়, ” তোয়াজ করবে কেন এখানে তো গাড়ি বা স‍্যাটেলাইটের দরকার নেই। দরকার শুধু শান্তি, সেটা তো দেখছি সবার ঘরে আছে। ”

মাস্কের সঙ্গে কথপোকথনের সময় হঠাৎ আরেক বৃদ্ধ কাছে আসে। মাথার চুল অগোছালো, আলোদুলো। বয়স তার আনুমানিক ৬৫ । হাতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো বৃদ্ধ অতানাবের একটি প্রট্রোট ও একটি খাতা। নীচুস্বরে মাস্ক বলে,
– আপনার বন্ধু বুঝি?
– না, ও আমার একমাত্র পুত্র ‘কিমতারু’, বড় ডানপিঠে ছেলে। এখন ভদ্র হয়ে গেছে। আমার বয়স ৮৭ বছর, যে কোন মুহুর্তে খামিসামার কাছে চলে যেতে পারি, তাই ভয়ে থাকে। এখন অনেক কথা শুনে, সম্মান করে। কোন বেয়াদবি করে না।

এ বলে মাস্কের সঙ্গে বৃদ্ধ পুত্রকে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিমতারু বাবাকে খাতাটি দেখিয়ে বলে,
– বাবা, সুবচনটা তো ঠিক করে দিলে না। যে কোন মহুর্তে তো চলে যেতে পারো। তোমার কবরের শিলালিপিটা আগেবাগে বানিয়ে রাখা ভালো, দেখে দাও। বৃদ্ধ আনন্দ ও তৃপ্তির সাথে পুত্রের লেখা সুবচনটি পড়ে, একটু ঠিক করে দেয়।

” হে পথিক, মহাকালের মহাযাত্রায় ক্ষণিক বিরতি হয়েছে এ জনপথে আমার। এদ্বীপে ভালোবাসার একটি ছোট প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছিলাম। তোমারা ভালোবাসার প্রদ্বীপ জ্বালাও, জীবন আলোকিত হবে, পূর্ণ হবে সকল সুখ আয়োজন।” ”

—-
শাহজাহান সিরাজ
জাপান, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভিন্নপথের পথিক – চারণ সাংবাদিক মনোনেশ দাস

ভিন্নপথের পথিক – চারণ সাংবাদিক মনোনেশ দাস

প্রায় ৩০ বছর পর সকালে হঠাৎ চারণ সাংবাদিক ‘মনোনেশ দাস’ সঙ্গে নানান বিষয়ে অনেক কথা হলো। আমি তার ভাবনা, কাজ ও একাগ্রতার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হলাম।

স্কুলে পড়াকাল থেকে ‘দৈনিক সংবাদ’ এ চারণ সাংবাদিক মোনাতাজউদ্দিনের লেখা পড়া ছিল আমার অভ‍্যাস। মোনাতাজউদ্দিনের ভিন্নধারার গল্পবলার ষ্টাইলে মফস্বলীয় সাংবাদিকতা আজো হৃদয়ে ভালোবাসার মালা গেঁথে আছে। সে কথাটা আজ মনোনেশ দা মনে করিয়ে দিল।

মোনাজাত উদ্দিনের মত একই ষ্টাইলে, আমার জন্মস্থান মুক্তাগাছার সাংবাদিক ‘মনোনেশ দাস’ গত তিনযুগ ধরে চারণ সাংবাদিকতা করছেন। যে সব সংবাদ ও বিষয়কে মূলধারার মিডিয়া ও সংবাদপত্রগুলো সংবাদই মনে করে না, সে সব বিষয়কে সংবাদ বানানোই মনোনেশ দাসের কাজ। অজানা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল‍্যের বিষয় ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি পাঠকদেরকে আগ্রহী করে তোলা, সংবাদ প্রকাশের মাধ‍্যমে তৃণমূল মানুষকে অনুপ্রাণিত করাই তার শিল্প ।

আর এই সুকর্মটি করতে করতে তিনি আজ জনপ্রিয়। মনোনেশ দা দীর্ঘদিন ধরে আমার পরিচিত । তবে মুক্তাগাছায় থাকতে তার সাথে তেমন সখ‍্যতা গড়ার সুযোগ হয়নি, তবে হৃদয়ে অন‍্যরকম টান ছিল। দেখা হলেই আপনজন মনে হতো। কাকতলীয় ভাবে আমি ও মনোনেশ দা একই গ্রাম ‘মুজাটি’তে জন্মেছি। হয়তো অজানা সে কারণেই আমাদের মাঝে অদৃশ‍্য একটু বেশী টান আছে। মনোনেশ দা’ আমার চেয়ে বয়সে চার বছরের ছোট হলেও তার হাসিমাখা মুখ সবসময় আমাকে বুন্ধত্বের আবেগে কাছে টানে।

ইন্টারনেটের মাধ‍্যমে জাপান থেকেও আমি তার লেখা নিয়মিত পাই। তার সংবাদ আর হাসিমাখা মুখ আমাকে বারবার প্রিয় মফস্বল মুক্তাগাছায় নিয়ে যায়। কৈশোরের নস্টালজিয়া জাগায়।

সোশাল মিডিয়ার এই মাগনা ডিস্ট্রিবিউশনের যুগে লেখালেখি ও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে নেয়া মুস্কিল। মনোনেশ দা’র জীবনেও তা ঘটেছে। প্রথম থেকে পেশাজীবি সাংবাদিক হলেও, জীবিকার কারণে ডিজিট‍্যালের এই মরাযুগে ফুলটাইম সাংবাদিকতা করতে পারেন না, ব‍্যবসাকে বিকল্প আয়ের পথ হিসাবে নিয়েছেন। তারপরও তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতা ছাড়েননি। যথা সম্ভব সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাংবাদ ও গল্পবলায় মানুষকে অবিরত অনুপ্রানিত করে চলছেন। গ্রামীণ ও মফস্বলের সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা বহাল রেখেছেন। মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহ এলাকার ‘প্রতাপি ও বাহুল‍্যে’র স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, মানুষ ও প্রকৃতিকে বিভিন্ন মাধ‍্যমে নানান ভাবে তুলে ধরছেন।

কাজের বহু স্বীকৃতির পাশাপাশি পেয়েছেন ‘নাগরিক চেতনা সাহিত্যসংঘের বিশেষ সন্মাননা। সাংবাদিকতা করেছেন বিখ‍্যাত দৈনিক জাহান, দৈনিক অগ্নিশিখা, দৈনিক শ্বাশত বাংলা, ইংরেজি দি ডেইলি গুড মনিং এবং দৈনিক ইত্তেফাকে । বর্তমানে সাংবাদিকতা, ব‍্যবসার পাশাপাশি লিখছেন বিডি নিউজ টুয়েনটি ফোর, সামহোয়ারইনব্লগ, কাগজ ব্লগে ।

মুক্তাগাছার সু-সন্তান চারণ সাংবাদিক মনোনেশ দাসের সুস্বাস্থ‍্য ও আরো সফলতা কামনা করছি।

সাক্ষাৎকার

পরিমনির 💖 ভালো সিনেমা।

পরিমনির 💖 ভালো সিনেমা।

গোপনে বিয়ে, পরিমনির সিনেমাটা শেষ পর্যন্ত ভালো হলো। আমি খুশি। আশাকরি আর কোন উল্টোপাল্টা, ক‍্যারাবেরা হবে না।
অতি সহজে, অতি অল্প খরচে বিয়ে-শাদীর সুযোগ থাকার পরও, অতি খরচের ‘বাবা-সালসা’, ‘র‍্যাপ-বিষ্ট’, ‘লাগালাগা’র দুনিয়াতে পাগলা বাছুরের মত, যুবক-যুবতীদের লাফানো ঠিক না। হৃদয়ে আসল ভালোবাসা থাকলে, আসল ভালোবাসা জাগলে সব দৃশ‍্য, সব নাটক বদলে যায়।

বির্তকিত ভালোবাসার জগতকে বিদায় দিয়ে, স্থায়ী ও সুন্দর ভালোবাসার জগত, সংসার জীবনে প্রবেশের জন‍্য পরিমনিকে ধন‍্যবাদ।
বিতার্কি নায়িকাকে , বিনাবির্তকে গ্রহনের জন‍্য উদার রাজকেও অনেক ধন‍্যবাদ।

আশাকরি সন্তান গ্রহন, সন্তান লালনের আগামী দেড় বছরের বিরতি ও ছুটিতে পরিমনির হৃদয়ে আসল ভালোবাসার শুদ্ধফুল ফুটাবে।
💖 সকলের হৃদয়ে ভালোবাসার অপূর্বফুল ফুটুক, সেই কামনা রইলো।

সততায় ও সমতায় কে কত দূর?  মুমিন নাকি জমিন?

সততায় ও সমতায় কে কত দূর? মুমিন নাকি জমিন?

তাহাজ্জুদি আস্তিক ও সামাজতন্ত্রি নাস্তিক , দুই মেরুতে থাকা আমার দুইজন বন্ধু আছে। মতে ও পথে দুই মেরুতে থাকা দুই বন্ধু বাপ-মায়ের সম্পদ ভাগের সময় একমেরুর মানুষ হয়ে গেল।

আস্তিক বন্ধু ধর্মমতে শরীয়া আইন মেনে বোনদেরকে তিন ভাগের এক ভাগ দিল। নিজে ভালোটা নিল, গাঙ্গিনাপাড়ের বাড়িটা বেশী পেল, কিন্তু বোনদের দিল সবচেয়ে কম দামের, ডোবার পঁচা জমিটা।

পুরুষতন্ত্রের জৌলসে সম্পদ বেশী পেয়েও মুমিনআত্না ঠান্ডা হয় না। দামী সব সম্পদ তার চাই-ই চাই। এর জন‍্য মুমিন ভাই, আল্লাহ’র দারস্থ না হয়ে, দারস্থ হলো মেম্বার-চেয়ারম‍্যানের। মতব্বরদের কাছে বিচার দিয়ে, নিজের পক্ষে বিচারটা আনলো।

আর সর্বদা ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ আর সমাজতন্ত্রের কথা বলা , আধা-নাস্তিক বন্ধু হয়ে গেলে পুরো আস্তিক, ধার্মিক, শরীয়াহ আইনপন্থী। ধর্ম না মানলেও, নারী-পুরুষ সমতার কথা বললেও, সে’ও একই কায়দায় বোনদেরকে দিল তিন ভাগের একভাগ, সবচেয়ে পঁচা ও কম দামের ঝুপড়ি-আড়ার জমিগুলো, আর সে নিল গুলশানের আলিশান বাড়িটা।

এইজন‍্য নিজের বলা, মুখে ফেলা-তোলা-মানবাধীকার, সমাধীকার, আইনের তোয়াক্কা করলো না। দলপাঁকিয়ে, মেম্বার-চেয়াম‍্যানদেরকে ধরে, দাপটি আত্নীয়দের কাছে সাথে লবিং-টবিং করে নিজের পক্ষে বিচারটা আনলো। সবচেয়ে দামী বাড়ি ও জমি নিজের পক্ষে নিয়ে সে এখনো সমাজতন্ত্র ও ন‍্যায়‍্যতার স্বপ্ন দেখছে। দেশ-বিদেশে আন্দোলন করছে।

সম্পদ ও জমি বন্টনে আস্তিক ও নাস্তিকের কি অপূর্ব মিল। কি অপূর্ব সংস্কৃতি আমাদের।