‘আফটার প্রফেট’ – ‘পয়গম্বরের পর’
‘আফটার প্রফেট’ – ‘পয়গম্বরের পর’ আশিক আকবরের নতুন বই। আশিক আকবর একজন প্রথা বিরোধী কবি ও সৃজনশীল মানুষ। তার মত ‘সব ছেড়ে দিয়ে’ বহেমিয়ান স্টাইলে, ভিন্নধারার সন্তজীবন যাপানের সাহস আমার নেই।
আমরা একই বিদ্যালয়, ‘নবারুণ বিদ্যা নিকেতনে’র ছাত্র, একই এলাকা ‘মুক্তাগাছা’র মানুষ। তিনি আমার বড়ভাই, বন্ধু। স্কুলে পড়াকালে তার সঙ্গে আমার তেমন পরিচয় ছিল না। তার প্রথম বই প্রকাশের পর, প্রিয় শিক্ষক ‘রাধা মাধব সাহা’ স্যারের কাছ থেকে নামটা শুনে ভালোবেসে ছিলাম।
এরপর দুইবার দেখা হযেছে মাত্র। একবার মুক্তাগাছার নতুন বাজারের খালি চা স্টলে, কবি নাসির মামুন আর আশিক আকবেরর সাথে ‘দীর্ঘক্ষণ জো-হুজুর চা আলাপে’ হৃদয়ের সম্পর্ক ঘটেছে। তার সব নতুন ভিন্ন ভাবনার সঙ্গে আমি একমত না হলেও, তার শাশ্বত চিন্তাকে সাধুবাদ জানাই।
তার নতুন কবিতার বই ‘আফটার প্রফেট’, আশাকরি বন্ধুরা কিনবেন ও পড়বেন। মূল্য মাত্র ১৫০ টাকা।
গ্রামবাসী কবি এখন অসুস্থ। নিশ্চিত টাকার দরকার, যদিও বলেন না। পাশাপাশি বইটি কিনলে, গ্রামের পোলার হাতে কিছু টাকা যাবে। ভবিষতে আরেকটি সুন্দর বই প্রকাশে আগ্রহী হবেন। তার বইটি সম্পর্কে কবি ‘আশিক আকবর’ নিজে লিখেছেন।
—
আমার
একশ রকম কবিতা
বইটির 90% কাজ কমপ্লিট। এখন শুধু
আফটার প্রফেট
বা পয়গম্বরের পর
বইটির আর কিছু অর্ডার হলেই নতুন বইটি প্রকাশ করতে পারি। একশ এক রকম কবিতা হবে ই-বুক।
আফটার প্রফেট
বা পয়গম্বরের পর
অর্ডার করুন। পৃথিবীর একটি ব্যাতিক্রমই কবিতা ধর্মী বইয়ের গর্বিত মালিক হোন।
এর প্রচলিত মূল্য 150/-
সর্বহারা মূল্য 100/500/1000/-
যে কোনো মূল্যের অর্ডার করুন।
পূর্বে যারা বইটি নেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। তাদের তালিকা তৈরা করা আছে, দ্রুতই সবার কাছে বই পৌঁছে যাবে।
আ . আ
22/9/21
—–
যোগাযোগের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/profile.php
হায়রে দুনিয়া
লোকটি উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। নিজে ভোগ না করে, এটাসেটা করে, ঢাকায় একাধিক বাড়ি গাড়ি ফ্লাট করেছেন।
উনসত্তর বছর বয়সে, সবাইকে ভূগিয়ে, সকালে করোনায় মারা গেছেন।
ঘরে লাশ রেখে – অশ্রুপাতে রিপরীতে; ছেলেমেয়ে, মেয়ের জামাইয়ের চোখেমুখে লোভ আর আক্রোশের রক্ত। কতক্ষন পর পর বিদেশে নিকট আত্নীয়দের সঙ্গে ফোন করে, সলা-পরামর্শ করছে,
– কে কোন বাড়ি-ফ্লাট পেয়েছে। কোনটা কাকে দিয়েছে, কেন দেয়েছে! কারটা দাম বেশী, কারটা কম দাম ইত্যাদি
শেষ বিদায়ের চেয়ে, ‘পাওয়া-না পাওয়ার’ হিসাবটা যেন সবার কাছে মূখ্য বিষয়।
বাজারের খালা
( Working-class women in Bangladesh. )
খালারা আমাদের পরিচিতজন। খালা মানে মায়ের বোন। মায়ের আসল বোনকে আমার গায়ে মাখলেও, কর্মজীবি নারী খালাদের গায়েমাখা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মুখে, কথায় কথায় খালা বললেও, আমাদের অন্তরে বহুলাংশে এদের বাস নেই।
এই শ্রমজীবি শ্রেণীটা- ১ম মহাযুদ্ধের আগে, সারা পৃথিবীতে দেশে দেশে শিকল বাঁধা দাস হিসাবে – ইংরেজ সহ, ইউরোপিয়ান সভ্যজনদের দ্বারা, যা ইচ্ছা তাহাই ভাবে, ‘পশুর’ মত ব্যবহৃত হতো। ভারতবর্ষে যারা সুন্দরী ছিল, তারা রাজা-বাদশাহ, সম্রাট-জমিদারদের বাঈজীখানায়, হেরেমখানায় অতিযত্ন পেত।
খালারা আমাদের সমাজের বিশাল অংশ। অনেকটা পুচ শুকনো বিষফোঁড়ার মত সমাজের গায়ে বেঁচে থাকে । যার ব্যাথা মাঝে থাকলেও, আমরা ভোগ করতে করতে সহে গেছি। এখন, বুঝেও না বুঝার ভাব করি। অনেকটা চিরস্থায়ী ভেবে মেনে নিয়েছি।
খালাদের হাতে- আমরা যারা সুবিধাভোগী তাদের রান্না হয়, কাপড়কাচা হয়, অফিসারদের ছেলেমেয়ে বড় হয়। এরা প্রায়শঃ উচ্ছিষ্ট ও উদ্বৃত্ত খায়। সবার আগে দামী মাছ-মাংস দেখে রান্না করলেও, সবার পরে খায় ! কখনও খেতে পায়, কখনো পায় না।
বাসাবাড়িতে স্থায়ী বুয়া খালারা আমাদের একই ঘরে, একই ছাদের নীচে, সবচেয়ে কাছাকাছি থাকলেও, সবচেয়ে দূরে যেন বাস করে। আমাদের অমর্যাদা হবে, তাই আমাদের পাশের চেয়ারে বাসতে সাহস ও সুযোগ পায় না। আমরা যা খাই, আমরা যা পরি, তা তারা কল্পনার তুলিতেও আঁকতে পারে না। ববং দামী স্পেশ্যাল কিছু কিনে দিলে, এরা বব্যহার করে না। দামী সবান বা কাপড় কিনে দিলে, ব্যবহার না করে ট্রাঙ্কে রেখে দেয়। গ্রামদেশে যাওয়ার সময়; ছেলে-মেয়ে ও আত্নীয়স্বজনকে উপহার দেয়ার জন্য নিয়ে যায়।
আমার জাপানি নায়িকা, মানুষে মানুষে তফাৎ বুঝে না, আলাদা করতে পারে না। এটা তার রোগ বা অভ্যাস না। জন্মগত সংস্কৃতি। বাইডিফল্ট আধুনিক জাপানিরা সব মানুষকে সমান মনে করে। নিজের কাতারে রাখে। প্রথম থেকেই বউ আমার – ঢাকার বাসায় বুয়া না রাখার পক্ষে। আমি বলছিলাম,
– আপনি বিদেশী, সুন্দরী-শিক্ষিত মানুষ, ঘর পরিস্কার করবেন, রান্না করবেন, এটা মানায় না। মানুষ খারাপ ভাববে। তার এক উত্তর ছিল,
– আমি তো গৃহিনী, হাউজ ওয়াইফ! ঢাকায় আমার তো কোন কাজ নাই। বসে বসে খাব কেন?
– এটা বাংলাদেশের এলিটদের সংস্কৃতি। ধনী-শিক্ষিতদের বুয়া দিয়ে কাজ করায় (যদিও আমি তেমন ধনী না)
বউ আমতা আমতা করতো। প্রথম আমি বিষয়টি বুঝি নাই। পরে যখন- তার ‘প্রেমে ভাগের’ আশঙ্কাটা বুঝলাম; তখন তাকে বুঝিয়ে ছিলাম ।
– মহামতি সিরাজ, অত খারাপ মানুষ না। আপনার ভালোবাসার গোলাপফুলের পাপড়ি ছিড়ে আরেকজনকে দিব না। এক্সটা মেরাইটাল রিলেশনশীপে বিশ্বাসী নয়।
যখন মহামতি আসল চরিত্রটা বুঝলো, জামাই তার ভালোবাসার সম্পর্কে পিওর, তখন ঢাকার বাসায় বুয়া রাখতে সায় দিয়েছিল। বাজারে গেলে, বুয়ার জন্য একই ব্যন্ডের সাবান-প্রসাধনীর দুইসেট কিনতো। বুয়া ব্যবহার না করলে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় ঝারি দিত। অনেকবার বলার পরও, খালা য়খন ব্যবহার করতো না। একদিন কারণটা জানতে চাইলে, মুক্তাগাছা থেকে আনা খালা বলেছিল,
– মামা, মামীরে কন, এত দামী সাবান আমি গায়ে দিতে পারি না। চামড়া খসখস করে। আমার লইগা হয়, তিব্বত না হয় দেশী লাক্স সাবান আনবেন।
ঘরের বুয়াদের বিষয়টা আমাদের জানা থাকলেও, আমরা কি জানি – বাংলাদেশের প্রতিটি বাজারে, বিশেষ করে রসুন পিয়াজের আড়ৎএ থাকা খালাদের বাস্তবতা? তাদের জীবন কিভাবে চলে? শুনেছি, এরা কেউ কেউ দমে দমে বিড়ি টানে, অধিকাংশ স্বামী-সংসার হারা, দিনে আড়তে কাজ করে – রাতে অধিকাংশই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দেহব্যবসা করে, লাং রাখে।
শ্রমজীবি, কর্মজীবি নারী দেশে থাকবে না , এটা আমি চাচ্ছি না। এটা কোন দেশেই সম্ভব না। মানুষকে তো কাজ করেই খেতে হয় , ও হবে। আমার চাওয়া – অর্থনৈতিক ও সমাজিক মর্যাদার ব্যবধান নিয়ে।
আমার বর্তমান বাস- জাপানেও কর্মজীবি নারী আছে। কিন্তু সবাই শিক্ষিত ও সচেতন। বেতন ও শিক্ষার ব্যবধান না থাকার কারণে, মর্যদাতেও তেমন হেরফের নেই। মালিকের মত বুয়ারাও উন্নত ডেসিং করে, গাড়ি চালায়, একই দৃষ্টিতে দেকে। ফলত কেউ চুলে ধরা তো পরের কথা, ধমকও দিতে পারে না। গৃহকর্তীর চেয়ে অনেক জাপানি বুয়া সুন্দরী হওয়ার কারণে, অধিকাংশ জাপানি বউ ‘শেয়ার্জ নিগারের’ মত সংসার ভাঙার ভয়ে, স্বামী হারানের ভয়ে তঠস্থ থাকে। হয়তো, টানাটানি পাশাপাশ এ কারণে জাপানি বউয়েরা, ঘরে বুয়া রাখে না, রাখতে চায় না। রাখলেও ঘরে রাত্রিযাপন করতে দেয় না।
রোগের নাম পারফেকশন!
পারফেকশন ও ইমপারফেকশন, কুয়ালিটির কুতুকুতু যে একটা রোগ- তা যদি কেউ, যে কোন বিষয়ে জাপানিদের সাথে একদিন একটি কাজ করে তা, সহজে বুঝে যাবেন। জাপানিদের এই রোগ সুচিবাই রোগের চেয়েও মহাভয়াবহ!
রোজগারের বিকল্পপথ থাকলে নিশ্চত বলবেন- ছাইড়ে দেয় মা, কাইন্দা বাঁচি। মনেহয় এই কারণেই জাপানিদের সঙ্গে প্রবাসীদের গালায় গলায় ভাব নাই। বাঙালিরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিজস্ব কমিউনিটি ও ফাপড়বাজির স্টাইল গড়ে তুলেছে।
সব জাপানিরা সাধারনত ক্ষুরধার নিঁখুত ভাবে কাজ করে, নইলে টাকা নাই, শান্তি নাই! আর বাঙালিদের বেলায় ঠিক উল্টোটা- হেলাফেলা, ইয়ার্কিঠাট্টা, কিন্তু লাভের বেলায়, বেতনের ষোলআনা। বিষয়টা নিজের ও নিজের জাতির দূর্বলতা, যা স্বীকার করতে আমার কষ্ট ও দ্বিধা নেই । আমি মনেকরি , যদি বাঙালি তাদের দূর্বলতাটা বুঝে ও পরির্বতনে সিরায়াস হয়, তবে দ্রুত আরো সফলতা পাবে।
আমি আউট সোসিং এর লোক। গত ২০০১ সাল থেকে মাল্টিমিডিয়া, গ্রাফিক্স ও ভিডিও’র ভিনদেশী কাজ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পেট চালাই। সহজে কাজ ও টাকা পাওয়া যায় বলে, সবার মত আউট সোর্সিং আমার বেশ পছন্দ।
গত ১০-১৫ বছর ধরে ভারত-ফাকিস্তানের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে আইটি’র আউট সোর্সিং বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে আছে। ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান কাজের বন্যা বাংলাদেশে থাকলেও, জাপানি কাজ তেমন নেই। আমি অনেক চেষ্টা করেও, জাপানি কাজ বাংলাদেশে তেমন নিতে পারি নাই। কারণটা জাপানিদের পারফেকশন আর আমাদের ইমপারপেকশনের সাথে যুক্ত।
আমি আমার একাধিক জাপানি ক্লাইন্টকে জিজ্ঞাসা করেছি,
– জাপানে কাজ না করিয়ে , বাংলাদেশে ও ভারতে শাখা খুলে কাজ করালে তো অনেক কম দামে কাজ করাতে পারে, করাও না কেন?
তারা বলে,
– তোমার ধারণা ভুল । আমি জাপানে কাজ করালে কম দাম পড়ে।
– কি বল? বুঝলাম না বুঝাইয়া কও।
– ভাষা, সংস্কৃতি ও পারফেকশন কুয়ালিটি একটা মেজর বিষয়! জাপানের যে কোন কোম্পানী বা ব্যক্তিকে দিয়ে যদি সফটওয়ার, ভিডিও বা ওয়েব সাইট বানাই, তবে একবার-দুইবার দেখিয়ে দিলেই হয়। কিন্তু ইন্ডিয়া বা বাংলাদেশে করালে ১০বার বুঝিয়ে বলেও, ঠিক কুয়ালিটিটা পাওয়া যায় না । সময় ও বাড়তি কাজে হিসাবে করলে, দাম অনেক বেশী পড়ে। টাইম ইস মানি।
– তাই নাকি?
– হ, ঝগড়া, মনকষির ঝামেলাও কম হয়। তোমরা বাংলাদেশীরা তো একটু ভালো। ইন্ডিয়ান আউট সোসিংএর লোকজন তো, অল্প টাকায় কাজ নেয়ার পর, আধাকাজ করে বলে, এটা অনেক টাকার কাজ, বড় কাজ, বাড়তি বাজেট না করলে, কাজটা করতে পারবো না। ঝুলাইয়া রাখে। যা জাপানিদের কাছে অসহ্য, বাটপারি। আর ফাঁকিস্তানিরা তো কিছু কাজ করে, অর্ধেক টাকা নিয়ে ফুট দেয়, আর যোগাযোগ রাখে না।
শুধু বাংলাদেশ না, সবোপরি- পৃথিবীর সব দেশেই, পারফেক্ট তো দূরের কথা- এমন মানুষ অনেক আছে, যারা বেসিক বিষয়ে দক্ষ ও পারফেক্ট না। অন্যের সুবিধা ও অসুবিধা বুঝে না।
বাংলাদেশীদের বেলায়- এটা ঘটে আধুনিক স্কুল-কলেজ ও পরিবারগুলোর অমনযোগীতার কারণে, লোভ কারণে! চাকুরী, মানে টাকা কেন্দ্রিক শিক্ষায় অতিমনেযোগীতার বলে। আত্নকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার প্রবল প্রতাপের কারণে।
আসলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দক্ষ, সুখী ও সুন্দরভাবে সততার সাথে জীবন যাপন। ফুটাঙ্গি দেখানো না, দক্ষতা ও মর্যাদায় বৈষম্য তৈরী না। এ ব্যাপারে জাপান অনেক এগিয়ে। জাপানিরা এত এগিয়ে, পারফেকশনে এত কড়া, আত্নকেন্দ্রিক- বেসিক বিষয়েও কম্পোমাইজ ও হারমোনাইজ করতে চায় না! ফলে পারফেকশের নামে যত্রতত্র অত্যাচার চলে। অযথা জটিলতা করে , যা আমার কাছে মানসিক রোগ মনেহয়। ফলে জাপানিরা গ্লোবাল বিজনিজ আনন্দের সাথে, লাভের সাথে করতে পারে না। দৃশ্যত চাইনিজদের কাছে ফেল করেছে।
জাপানে কাজের চাপ ও পারফেকশনের নিয়ে ‘কোম্পানী বস’ দের বাড়াবাড়ির কারণে অনেক আত্নহত্যাও ঘটে। আর বাঙালির বেলায় ঘটে- ছলছাতড়ি, ঠাট্টামশকরা করে সিরিয়াসনেসকে তেল দিয়ে গলানোর তদবীল। বাস্তবতা জটিল হয়ে গেলে, বাঙালী পালায়। রাগে, দুঃখে কষ্টে বলে – “দরকার নাই, দরকার নাই..”
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে একবার সিরাজগঞ্জে, একদল জাপানি ও কোরিয়ান ডাক্তার টিমের সঙ্গে একটি চক্ষু শিরিরে গিয়েছিলাম। বাঙালি জোয়ান ডাক্তার, রোগীদের চিকিৎসা রেখে কোরিয়ান সুন্দরী নার্সের লগে টাঙ্কি মারছিল । ছবি তোলা ও এটাসেটা নেয়ার নামে, মাইয়ার গায়ে হাত দিয়ে, ফূর্তি করার চেষ্টা করছিল। রিরক্ত হয়ে জাপানি টিমলিডার মিষ্টার শিরাসি আমাকে বলেন,
– তোমাদের ডাক্তারটাকে থামতে বল, কাজে মন দিতে বল। খুব ফাইজলামি করছে।
আমি ডাক্তারকে একপাশে ডেকে নিয়ে কানে কানে বললাম,
– ভাই, দেশের মানসম্মান খায়েন না। লাগাইতে মন চায়, জায়গা মত লাগায়েন, এখানে না!
– চেতেন কেন, ইয়ার্কি করতাছি!
– গায়ে হাত দেন কেন?
– ভাই, সিরিয়াস হয়েন না! বউ নাই, বয়স হইছে, চান্স নিতাছি। মালটা ভালা আছে। একটু লাইন করাইয়া দেন।
অতি পারফেকন যেমন ভালো না, বেশী হেলাফেলাও ভালো না। জাপানি ও বাংলাদেশী দুই ধরণের পারফেকশনের লগে কাজের আমার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা।
গত মাসে একটি জাপানি ওয়েবসাইট কাজ শেষ করেছি। ১৫ দিনের কাজ, শেষ করতে লাগলো ৭ মাস। কানে ধরে বলেছি,
– আল্লাহ এমন জাপানির পাল্লায় আর ফেলিও না।এদের টাকা পাওয়া যেন মোহর পাওয়া।
আর বাংলাদেশ, গত দুই বছরে টাকা দিয়েও সময়মত সঠিক ভাবে বই প্রকাশ করতে বহুত ঝামেলা পোহাইয়েছি। লেখালেখা স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। বই লিখতে লেগেছে ৩ মাস, আর প্রকাশ করতে লাগলো ২+ বছর। ৪টা প্রকাশনীর লগোতে তেল দেয়ার পর, এবার তিন বইয়ের মাঝে ২টা বইমেলায় আসবে।
প্রথম মদ্যপান
আমি খাঁটি গেরামের পোলা। মদপান তো পরের কথা, ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে মদের বোতলও দেখি নি। তবে ছোটবেলায় মুক্তাগাছায় মদ্যপ মানুষকে মাতলামি করতে দেখে মজা পেতাম, কাউকে কাউকে ড্রেন পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট পেতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর, ১ম বর্ষে আল বিরুনীর এক্সটেনশনে, ডাইমন্ড বন্ধুর রুমে চকচকে ঝকঝকে মদের বোতল দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। সুন্দর বোতলটিতে অতি সাবধানে আদর বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
– দোস্ত, এইডা কি?
– ওয়ান!
কতক্ষণ হাতানোর পর, বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– ওয়াইন আর মদ কি এক?
বন্ধু ডাইমন্ড মুচকি হেসে বলে,
– এক না, তয় কাছাকাছি! এটা খাঁটি আঙ্গুরের রস দিয়ে বানানো। মদ ভাত পঁচিয়ে বানানো হয়। ওয়ান মজা, খাবা? আজ সন্ধ্যাই সবাই খামু । বিকালে রুমে চাইলা আইসো।
বন্ধুকে বললাম,
– হারাম না তো?
– আরে না, মদ খাওয়া হারাম, ওয়াইন খাওয়া হারাম না! বেহেস্তে সবাইকে ওয়ান খেতে দেয়া হবে! হারাম হলে, বেহেস্তে দিবে কেন?
– তাই নাকি? ঠিক আছে!
জীবনে প্রথম আঙ্গুরের রসে বানানো ওয়ান খাবো, এই ভাবনায় ফুরাফুরা মেজাজ নিয়ে বিকালে ডাইমন্ড বন্ধুর রুমে গেলাম। গিয়া দেখি, ৫ জন বন্ধু, দুইটা বড় বড় বোতল আর গ্লাস নিয়ে বসে মজমা করছে, হাত চপকাইতে চপকাইতে আমাকে দেখে হাসছে।। আর বলছে,
– তুমিও খাবা?
আমি দুনুমুনু করে বলি,
– খাইতে তো মন চায়! হারাম কিনা ভাবতাছি।
– আরে হারাম না! খাও, খাও, একটু খাও! চেক কর!
ইতিমধ্যে সবার কোর্স শেষ। প্রিয় হোষ্ট বন্ধু আবার বললো,
– মদ আর ওয়ান এক না । হেজিটেট করিও না, আনন্দের সাথে খাও! ফিলিংস আসবো। মদ খায় ছোট লোকে, আর ওয়াইন খায় শিক্ষিত মানুষে, বড়লোকে।
একটু বড়লোকি মুড নিলাম। নিজেকে সবার লগে লগে, হাইক্লাস ভাব দেখাতে শুরু করলাম।
– ঠিক আছে দেও, একটু খাই!
মুখে দেয়ার লগে লগে আমার শরীরে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত, কেমন যেন একটা বিদ্যুতের শক্তি ঝিলিক মারলো! সারা শরীর কেঁপে গেল! মনে হলো আমার শরীর আর মন যেন বদলে গেছে। অজানা কোন শক্তির দখলে চলে গেছে। গ্লাসের পুরোটা খেয়ে ডাইমন্ড বন্ধুকে বললাম ।
– দোস্ত, আরেকটু দেও! মজা পাইছি!
চাকমা বন্ধু বলে,
– আর দেইস না । পইড়ার যাইতে পারে । কোনদিন খায় নাই! বাকিটা মিষ্টার উন্মাদের লইগা রাখ। ঢাকা গেছে, একটু পরেই আসবো। ২০ মিনিট পরেই উন্মাদ হাজির। এসে বলে,
– দোস্ত, তোরা একলা একলা আমার রাইখা খাইলি?
হোষ্ট ডাইমন্ড বন্ধু বলে,
– আর না, তুই হইলি আমাগো জানের দোস্ত! সব সময় মজা দিয়া বেড়াস, তোরে ছাড়া আমরা খাই ক্যামনে? রাইখা দিছি।
আস্তে আস্তে কুমড়া বন্ধু কয়,
– দে, ওরে দে!
– ঠিক আছে! কাপড় বদলাইয়া আসুক!
উন্মাদ রুমে গেলে, ডাইমন্ড কুমড়ার কানে কানে বলে,
– সব শেষ। ঐডা তো পানি।
– ঠিক আছে, ঐডাই দে। আমি মজা লুটার জন্য পানি দিয়ে বেশী করে রেখেছি! ও উন্মাদ, বুঝবো না, একটু গন্ধ থাকলেই হইলো! এটা খেয়েই দেখিস, ও পাঠ লইবো! পানি বলিস না!
হাত মুখ ধুয়ে নিজ রুম থেকে, মাঞ্জা মেরে উন্মাদ বন্ধু মজমাতে এসে বসে!
অবশেষে বোতল থেকে উন্মাদকে এক গ্লাস দেয়া হলো, সে তো পানি খেয়েই মাতাল । মজা লুটার জন্য, তাকে সবাই পরোচিত করলাম পুরো এক্সটেশন ঘুরতে। সে তাই করলো! করিডড়ের হেলেদুলে হাটে, আর সব রুমের দরজায় একে একে টুকা দেয়, মাতলামির ভাব নিয়ে, নানান রকমের উভ্রট ডয়লগ দেয়। কমন ডায়লগটা ছিল,
– ভালা আছস দোস্ত? দুনিয়াডা দুইদিনের, অন্ রকম ফিলিংস লাগতাছে! মদ খা, আমার মত মদ খা! মাথা ভালা হইয়া যাবো!
উন্মাদ রুমে রুমে যায়, আর ডায়লগ দেয়! আমরা সবাই উন্মাদের
পিছনে পিছনে হার্টি! মজা লই আর হাসি! কেউ অবাক হলে বলি,
– দোস্ত, মাল খাইছে। মাইন্ড করিস না! এরপর থেকে মিষ্টার উন্মাদের নাম হয়ে গেল, ‘ মিষ্টার টাল’!
গল্পের ভিতরে গল্প
——
প্রাইভেসির কারণে, সত্য ঘটনায় ছন্দ নাম ব্যবহার করার হয়েছে। এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ মদ্যপান। র্যাগ ডে তে বন্ধুরা বাংলা মদ দিয়েছিল, খেয়ে সহ্য না করতে পেরে, বমি করে ফেলে দিয়েছিলাম।
এখন আমি জাপানে থাকি, জেনারেল ষ্টোরেও হাজারো রকমের মদ পাওয়া যায়! কিন্ত খেতে পারি না! অর্থ রক্ষা, মাথা আর ধর্ম রক্ষার কারণে, মাঝে মাঝে পান করতে মন চাইলেও করি না। আমার চাইতে. আমার জাপানি বউ আরো কড়া। বলে, আপনি মুসলমান, মনে রাখবেন, ঐ পঁচা জিনিষ খেয়ে ঘরে আসবেন না। বউয়ের দাতানি তে মাঝে মাঝে মনে হয়, জাপানি সুন্দরী বিয়া করে লাভটা কি হইলো, এ তো দেখতাছি বাঙালী নারীর মতই গোড়া, কড়া!
শপিং মলে, ওয়ান কর্নারে, সুন্দর সুন্দর বোতল সাজানো দেখে, মাঝে মাঝে হাতাই আর বউকে চেতাই,
– কোন যৌতুক-টৌতুক তে দেন নাই! আজ, একটা কিনে দেন না! দুদিন আগে আর পরে, স্বর্গে গিয়ে তো খামুই। আগে বাগে খাইলে অসুবিধা কি? অভিজ্ঞতা হইবো।…
আমার কথা শুনে বউ না কথা না শোনার ভান করি, আমি শুনিয়ে বলি,
– স্রিগ্রেট খাইতে দেন না! পান করতে দেন ন! আশেপাশে এত সুন্দরী একটু ইটিশপিশ করতে দেন না, পাচিংকো (জুয়া খেলার দোকান) তে যাইতে দেন না! এমন বন্দি জীবন কি পুরুষে করতে পারে?
বউ যখন অতি রেগে যায়, তখন প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলি,
– মদ আর পারফিউমের বোতল এত সুন্দর হয় কেন? খালি মন টানে, হাত দিয়ে ধরতে মন চায়!
– এগুলোর ক্লাইন্ট বড়লোক, তাই! এট্রাক্ট করার জন্য! সুন্দর বোতল টেম্পটেশন বাড়ায়! কোম্পানীগুলো চালাকি করে জিনিষের চেয়ে বোতলে বেশী খরচ করে, সুন্দর করতে বানায়, আসলে প্রায় সবই এক!