Jul 15, 2022 | সাহিত্য
সব সময়ই জাপানিদের প্রশংসা করতে করতে সব বাঙালিদের মত আমিও অনেকটা হয়রান। বাশার স্যারের পোষ্টের সূত্রধরে আজ বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করে নিজের মনে লুকিয়ে থাকা অভিজ্ঞতা গুলো খুঁজে পেলাম।
যারা স্বল্পমেয়াদে টুরিজম বা সেমিনার ভিজিটে জাপানে আসেন, তাদের কাছে জাপানকে স্বর্গ মনে হয়। জাপানিদেরকে এঞ্জেল মনে হবে। স্বল্পভাষিতা মানে বিনয়, গাড়ি-বাড়ি-নারীতে পরিপাটিতা, রোবটের মত সময় সচেতনতা দেখলে – এটা ভাবাই স্বাভাবিক।
২০০৫ সালে আমি যখন প্রথম জাপানি আসি, আসার আগে ভাবতাম ‘জাপান হয়তো হবে – ষ্টারটেক বা গেইম ওর্যাল্ডের মত উন্নত। এসে দেখি, মুক্তাগাছার মারুয়ারীপট্টি, আর গ্রামগুলো মুজাটি গ্রামের মতই।
দ্বীর্ঘমেয়াদে জাপানে থাকলে সবারই অন্যরকম, আসল অভিজ্ঞতা হয়। যে বিষয়গুলো প্রথমে দৃষ্টি কাড়ে, কষ্ট দেয়
১) এরা মহাকিপটা । মরে গেলেও এক ইয়েনও দান করে না, কাউকে ধার দেয় না। নির্দয়, হৃদয়হীন। ভিক্ষা-দান তো পরের কথা; মা-বাবাকেও টাকা দিলেও বলে,
– কবে ফেরত দিবা? আত্নকেন্দ্রিক বললে কম বলা হবে, স্বার্থপর বললে বেশী বলা হবে না।
২) জাপানে প্রকাশ্য ছোট ছোট দূর্নীতি নাই, এটা সত্য। তবে বড় বড় কর্পোরেট ঠিকই দাইন মারে, যার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই। অফিসিয়াল সহজ কাজেও মহা ঝামেলাময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে । যা অনেক সময় দূনীর্তির চেয়েও জটিল, বেশী কষ্ট দেয়! যার কারণে ইউরোপিয়ান ও আম্রিকানরা ব্যবসা বা চাকুরি করতে চায় না। জুত পায় না।
৩) এরা প্রিয়জনের সামনে কফি খায়, কিন্তু অফার করে না। এমন চরম স্বার্থপর, অভদ্র, মেনে নেয়া কষ্টকর! খরচ হবে বলে, প্রয়োজনের বাহিরে আড্ডা দেয় না, অতিব্যস্ততা দেখায়। বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে চায় না। শুনেছি ডেটিং এর সময়ও নাকি বয়ফ্রেন্ড , গার্লফ্রেন্ড যার যার বিল, সে সে দেয়। ( ডেটিং এর অভিজ্ঞতা আমার জাপানে নাই, তাই নিশ্চিত করতে পারলাম না, দুঃখিত! )
৪) প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে, প্রিয় বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডও চিনে না।
৫) মারামারি না করলেও, বর্ণবাদ না থাকলেও, ভিতরে ভিতরে এরা বিদেশীদের ঘৃণা করে, অদক্ষ মনে করে, সম্মানজনক কাজে সুযোগ ও নিয়োগ দিতে চায় না, দেয় না। এদের সরকারী অফিসে কোন ইমিগ্রেন্ড অফিসার আজো পাইনি। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল- পাবলিক রিলেশন অফিসেও না। যা ইউরোপ-আম্রিকাতে অকল্পনীয়।
সব যোগ্যতা থাকার পরও, সব পরীক্ষা পর হবার পরও নাগরিকত্ব তো পরের কথা এজোক্যান ( স্থায়ী ভিসা) দিতে চায় না। অজানা কারণ দেখিয়ে আবেদন বাতিল করে দেয়। যা কানাডা, আম্রিকা সহ পশ্চিমা ও ইউরোপের মানববান্ধব দেশে অকল্পনীয়।
৬) ভাষার ব্যাপারে এরা ইস্পাত কঠিন। ইংরেজী পারলেও বলতে চায় না। ইন্টারন্যাশনাল হতে চায় না। বিদেশী দেখলে এরা ইংরেজী ভুলে যায়। আসল কথা হলো – বন্ধু হতে চায় না। গাইজিন, মানে বিদেশীদেরকে ঝামেলা মনে করে। ঝামেলা মুক্ত জীবন তো সুস্থ জীবন নয়। পুতুল জীবন আর মানুষের জীবনের মাঝে তফাৎটা এখানেই। অনেকাংশ জাপানি এই সহজ বিষয়টা বুঝতে চায় না । হয়তো এই কারণে এরা, নিজের অজান্তেই চরম একাকিত্বে ভুগে, সব পাবার পরও ভালোবাসাহীনতায় থাকে- দূর্বলচিত্তের জাপানিরা হিরিগিরি, আত্নহনন করে।
৭) সারাদিন বুঝানোর পরও বিকাল বেলায় একই কথা বলে । একেবারেই বদলাতে চায় না। নিজেদেরকে সঠিক মনেকরে। তবে ঝগড়া করে না। বড় জিনিষ দেখতে বা বুঝতে পারে না। ভিশন কম। যোগাযোগে খুবই দূর্বল! আমি বলি- জাপানিদের কমিউনিকেশন- শ্লো মিটিমিটি, হাসিহাসি কমিওনিকেশন। যা একেবারেই আরামপ্রদ না । একটা বললে আরেকটা বুঝে। দ্রুত রেসপন্স না করলেও, সময় মত ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে। তাই আমি অনেক জাপানিকে মুক্তাগাছার ভাষায় বলি – ‘মিচকা শয়তান!’
৮) আধুনিক জাপানিরা বাড়িতে দাওয়াত দিতে চায় না। কারণটা অজ্ঞাত। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় – বিদেশী দেখলেই এরা ভাবে, গাইজিন হয় প্রেম করতে বা লুট করতে জাপানে এসেছে। সবাইকে একই পাল্লায় মাপে।
৯) অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, জাপানিদের মত হয়ে গিয়েও, নাগরিকত্ব পাবার পরও, ৩০-৪০ বছর জাপানে থাকলেও বলে- ‘গাইজিন। (বিদেশী)’! বিদেশী দেখলে ভূতের সঙ্গে তুলনা করে বাচ্চাদেরকে মা’য়েরা ভয় দেখায়। বলে- ‘শিজুকানি, গাইজিন আবুনাই’। ( চুপ কর, বিদেশী- মাইর দিব/ বিপদজন বিদেশী )
১০) অধিকাংশ তরুণ-তরুণীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে চায় না। একেবারে ভিশন নাই। ১২ ক্লাস পার করেও ভাবে লেখাপড়া শেষ। এবার মাস্তি করার পালা, কাজ করার সময়। সুখী না হয়েও, মনেমনে মনকলা খায়। একটুতেই খুশী হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ব্যয়বহুল এই অজুহাতে, অধিকাংশই লেখাপড়া চুকিয়ে, কামলাগিরি আর লিভটুগেদার শুরু করে দেয়! দেখে লাজুক মনে হলেও, অধিকাংশ শহরে জাপানিদের লজ্জাশরম কম, যা মন চায় তাই করে।
পিএইচডি হোল্ডার আর কনষ্ট্রাকশন ওয়ারকার সবাইকে একই কামলা কাতারে এনে, জীবনের জয়গান, সমতার জয়গান গায়। নিজেদেরকে সমাজতন্ত্রিদের চেয়ে সভ্য প্রমান করতে চায়। উপরে উপরে এটা সুন্দর দেখালেও, ফলটা হয়ে যায় মাকালফল, দরকাচুরা!
১১) লেখাপড়া বেশী না করার কারণে, রাজনৈতিক সচেতন না হওয়ার কারণে- তিক্ষ্ন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না! জ্ঞান-দর্শনের অভাব, এবং সবক্ষেত্রেই নেতৃত্বের অনুপস্থিতি, আম্রিকাপ্রেম লক্ষণীয়।
এ যেন ঠিক বাংলাদেশের উল্টো । বাংলাদেশ সবাই নেতা হতে চায়, আর জাপানে সবাই কামলা/প্রজা হতে চায়। অন্যের বা সমাজের দায়িত্ব নিতে চায় না। ভাবে সমাজ সেবা – সরকারী অফিসারের কাজ। যা অনেকাংশে আপত্তিকর । ফলত সামাজিক জীবন স্থবীর হয়ে যায়। রাস্তাঘাট উন্নত হলেও, প্রকৃত মানবিক উন্নয়ন কম হয়।
১২) একজন মানুষ শিক্ষিত ও ধনী হলে, চকচকে গাড়িতে চড়লে, ব্রেন্ডের কাপড় চোপড় পড়লে, স্বল্পবাসী বিনয়ী ভাব দেখালেই যে ভদ্র ও সভ্য হয় না, তার প্রমান – জাপানের শহরের মানুষ। আর অশিক্ষিত, দরিদ্র ও অসচেতন হলেও যে একজন মানুষ ভদ্র ও সভ্য হয় তার প্রমান, বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ।
১৩) তবে একটা সত্য- চুরি, ডাকাতি ও বাটপারি হয় না। বিদ্যুৎ যায় না। প্রতি বাড়িতে গরমপানি ও ঠান্ডাপানির ব্যবস্থা আছে। আইন খুব কড়া। হাকিম লড়ে তো হুকুম লড়ে না। তাই সৎ বা অসৎ কেউ আইন ভাঙ্গে না। আইনের ভয়ে যারা অতিচালাক, তারা অতি কৌশলে কোন প্রকার প্রমান না রেখে, আসল কাজটি করে ফেলে। ফলে ভুক্তভোগি হায়হায় করলেও, প্রমান না থাকার কারনে টু-শব্দ করতে পারে না।
১৪) আর তেমন বেশী কিচু খারাপ নাই। আমি মনেকরি উপরের বিষয়গুলো জাপানিরা অতিক্রম করতে পারলে, জাতীয়তাবাদিতার বদলে আন্তর্জাতিকবাদ চর্চ্চা শুরু করে, বাহিরে অন্তরে সমান করলে, জাপানির সত্যিকারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবে। এরা যা চায় তা করতে পরে। লক্ষনীয় বিষয়- গত কয়েক দশক ধরে এদের মাঝে চায়নাফোবিয়া কাজ করছে, আর আম্রিকান লাভুলাভু কাজ করেছে! যা ক্লোডওয়ার সময়ের রেশারেশির চেয়েও ক্ষতিকর, মারাত্নক।
১৫) সংক্ষেপে যদি বলি- দৃষ্টিকটু বিষয় গুলো হলো
– লাভ হোটেল, পিঙ্ক হোটেল, সিঙ্গেল মাদার, সিঙ্গেল ফাদার, পুরুষ পতিতা (আমি পুরুষ বা নারী সব রকমের পতিতাবৃত্তির রিরোধী), কথায় কথায় তালাক আর একদিনের পরিচয়েই ফুলশয়্য খুবই দৃষ্টিকটু বিষয়। ব্যক্তিস্বতন্ত্রনা, আইন ও স্বাধীনতার কারণে এই বিষয়ে কেউ মুখ খোলে না।
১৬) সমাজনীতিতে নিজের বিষয় গুলো সচেতন মানুষের পক্ষে মানা কষ্টকর..
– এরা প্রতিদিন চাইনিজ স্যুপ খায়, চাইনিজ কাঞ্জিতে লিখে, চাইনিজ জিনিষ না হলে বাজারের ব্যাগ ভরে না, তারপরও বলে – চায়না খারাপ।
– মাথার উপর দুইটা বোমা মেরে, প্রায় ৩ লাখ মেরে ফেলেছে, তারপরও বলে আম্রিকা জিন্দাবাদ। আব্বা হুজুর জিন্দাবাদ।
– রাশিয়ার তেলগ্যাস না হলে চলে না, তারপরও বলে ইউক্রেন শ্রেষ্ঠ। জুসি ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি সরব ও পক্ষ নিলেও; ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগান ইত্যাদি যুদ্ধে, শুধু জাপান সকার না- পুরো জাতির মুখে কুলুপ ছিল।
– এক অদ্ভদ ব্যবস্থা। নিজের দেশের মানুষকে বেকার ভাতা বা প্রয়োজনীয় ভাতা দেয় না, কিন্তু অন্য দেশে দান করে, অযথা আম্রিকান সৈন্য পালে। ( কারোনার সময় জাপানিরা আড়াই বছরে,মাত্র ১৫ দিনের খরচ সহযোগীতা পেয়েছে। অথচ কানাডা-নিউজিল্যান্ড সহ ইউরোপের গরীব দেশের মানুষেরাও সারা বছর আপদকালীন ভাতা পেয়েছে। এদের সরকার অতীব ধনী, কিন্তু মানুষকে কার্যত অতীব গরীরবানা হালে চলতে বাধ্য করে। )
– এরা পশ্চিমাদের মত হতে চায়, কিন্তু ইংরেজী শিখে না। আন্তজার্তিক হতে চায় না। লেখাপড়া করতে চায় না। আমার মনেহয়- দর্শনশাস্ত্রে হয় এতের আগ্রহ নাই, না হয় বুঝে না, বা বুঝতে দেয়া হয় না। এরাবিয়ানদের মত – ‘প্রশ্ন’ করাকে এরা অপছন্দ করে। অঘোষিত অপরাধ মনেকরে। প্রতিবাদ ও সমালোচনা করলে এরা অল্পতেই কাতর ও পাথর হয়ে যায়।
বি.দ্র; যাইহোক, আমার আসছে ‘জাপান স্মৃতি, বাংলা প্রীতি’ বইয়ে এ বিষয়ে একটি অধ্যায় লিখবো । বিষয়গুলোকে আশাকরি সবাই গঠনমূলক দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন কিছু ভুল বললে বা লিখলে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিসাবে নিবেন। বেয়াদবি নিবেন না
———
সাদো, জাপান
১২ জুলাই, ২০২২
Mar 21, 2022 | সাহিত্য
মাস্তানি ও জমিদারীর দিন শেষ
😂😂
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বহুত তেলেসমাতির পর, চায়নার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সাথে আম্রিকার প্রেসিডেন্ট ভাইদেনের লাভটকের পর; হোয়াইট হাউজ থেকে হাছা কোন প্রেসকনফারেন্স হয়নি। আম্রিকা-বৃটিশ ও ইউরোপিয়ানরা এখন অনেকটা চুপ, মুখে কুলুপ।
গনতান্ত্রিক ও তথাকথিত সুশীল সভ্য সাদাদের বিশ্বনাটক দেখে মহামতি অবাক। সবচেয়ে বেশী অবাক পশ্চিমা মিডিয়া ও কোম্পানিগুলোর স্ব-ইচ্ছায় সাটডাউন, নিজে নিজে পুংমারা খাওয়া ও সেলফ সেন্সশীপ দেখে। আশ্চর্যের বিষয় –
যুদ্ধ হয় ইউক্রেনে, আর নিউজ প্রকাশিত হয় লন্ডন ও ওয়াশিংটনে। আর পাপেট জিলিনেস্কি রাশিয়ার ধারাবাহিক কিলঘুষি খাওয়ার পরও বলে,
– আরেকটা মার, আরেকটা মার।… আরকেটা মারলে তোর নাক ফাটাইয়া দিমু, রাশিয়া।
– মাইর খাওয়া পাপেট জিলিনেস্কি পাশে কি আসলেই সুবিধাভোগি, সুবিধাবাদী মাস্তান আম্রিকা ও পশ্চিমারা আছে?
আমার তো মনেহয়, পুরো বিষয়টা আম্রিকার ষড়যন্ত্র। জেলেনেস্কিকে নাচাচ্ছে আসলে পূর্ব ইউরোপে অস্ত্রের রমরমা বানিজ্য করার জন্য, ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য না।
মহামতি ভেবে কূল কিনারা পায় না, ইউক্রেন যদি নেটো ও ইইউ এর মেম্বার হয়, তারা কি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও সুখী মানুষ হয়ে যাবে? কোন কোয়ালিশনের মেম্বার হওয়া কি জাতে উঠা বা উন্নত হওয়ার সার্টিফিকেট? লিথুনিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, পোলেন্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ইত্যাদি সাবেক সোভিয়েত দেশগুলো তো এখন ইইউ’র মেম্বার, সোভিয়েত ভাঙ্গার পর তারা কি আসলেও তেমনটা উন্নত হয়েছে, যেমনটা চেয়েছিল? বাস্তব সত্য – হয়নি।
পুরো বিষয়টা নিয়ে চায়ের টেবিলে কবি শুদ্ধ ও মহামতি দু’জনেই মহাচিন্তিত। আদা চায়ে চুমুক দিয়ে কবি শুদ্ধ মহামতিকে বলে,
– মহামতি হারমাতিদের দিন শেষ । অস্ত্র, পর্ণ আর সফটওয়ার নির্মাতা আম্রিকানদের দিন শেষ। মানুষমারা যুদ্ধে আমি কষ্টে পেলেও, আম্রিকা আর পশ্চিমাদের মুক্তমঞ্চে লেডামারার দেখে আনন্দিত।
– কি রকম?
– মানুষ এখন বুঝে গেছে অস্ত্র ও সফটওয়ার খাওযা বা পড়ার জিনিষ না। এগুলো না থাকলেও মানুষের চলে। ভাত, খাবার তেল না থাকলে চলে না। ওরা অস্ত্র, চুমাচুমির সিনেমা, ক্রেডিটকার্ড আর সফটওয়ার ছাড়া এখন সব জিনিষ বানানো ভুলে গেছে।
– তাই নাকি?
– হ, সত্তরের দশকের পর থেকে আম্রিকার উৎপাদন আকাশমুখী, জীবনমুখী না। এতদিন অন্যের পণ্যে এটাসেটা করে, সারা দুনিয়ার মানুষকে ভয় ও লোভ দেখিয়ে, ব্যবসার তেলেসমাতির নামে অন্যের ভাড়াভাতে ভাগড়া দিয়ে চলেছে। এক অর্থে আম্রিকা আর পশ্চিমারা গরীব ও সর্বহারার সম্পদ ও সম্ভাবনা লুট করে ধনী হয়েছে। আর বোধহয় দুই নম্বরি করতে পারবে না।
– কি রকম? বুঝিয়ে বল
– অনেক বড় গল্প। সব কথার সারমর্ম, ওরা এখন বাংলাদেশের গার্মেন্টস্ অস্বীকার করলে কাপড় না পড়ে নেংটা থাকতে হবে। এখন ওরা মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়ার তেলগ্যাস অস্বীকার করলে ‘তেলগ্যাস’ ছাড়া গাড়ি চালাতে হবে, এখন চায়নাকে অস্বীকার করলে ওদের শপিং মল খুলতে হবে না, পাতিল ছাড়া রান্না করে খেতে হবে, টিসু ছাড়া সুচু করতে হবে।
কবি শুদ্ধের কথা শুনে যুদ্ধের অশান্তিতেও মহামতি হাসে।
Mar 19, 2022 | সাহিত্য
‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’ মতে সুখি দেশের তালিকায় সাত ধাপ এগোল (১০১ থেকে ৯৪ নম্বরে) বাংলাদেশ! ৯৪ নম্বর নয়, বাংলাদেশকে আমি এক নম্বরে দেখতে চাই।
সুখের তালিকায় আপাতত আমি দেশের ৯৪ নম্বরে খুশী আছি। বহুত বেটাগিরি, যার না তার মাতাব্বরি, কচুপাতার পানির মত টলমল ‘জান ও মালের নিরাপত্তার’ মাঝে বীমা, পেনশন ও ইউরোপ কানাডার মত মাগনা বেকারভাতা ছাড়াই সুখে আছি, উৎসবের আনন্দে বিলে সবাই মিলে মাছ ধরি, এটা কম কথা না।
আমার আপাতত স্বস্তির কারণ হলো, সুখের তুলনা বাংলাদেশ নিশ্চিত আম্রিকার চাইতে এগিয়ে আছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ আম্রিকার মত যত্রতত্র শপিংমলে মানুষ মারার অস্ত্র কিনতে পায় না। কথায় কথায় গরীব দেশের মানুষ মেরে সাধু-সন্ন্যাসি থাকার চেষ্টা করে না। পর্ণ ইন্ড্রাস্টি, ক্যাসিনো সিটি, যুদ্ধযান নির্মান কারখানা ও হালাল পতিতালয় বাঙালি এখনো প্রেকটিস করে না। আমার দেশের মানুষ গরীব ও অশিক্ষিত হলেও বেমানান সুশীল দেখায় না, আম্রিকার শিক্ষিতদের মত একচোখা নীরবতা পালন, সেলফসেন্সরশীপ, সর্বপরি ভালোমানুষে অভিনয় করে না।
মৌলিক অধিকার ও আয় বোজগারের বিচারে বাংলাদেশে মার্জিন বেশী থাকলেও, অগ্রসর পরিবারের সদস্য ও নাগরিকরা এখানে প্রায় বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্যসুবিধা ( সরকারী হাসপাতালে) পায়। গ্রামের মানুষ নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করে, গান গাইতে গাইতে ধান কাটে, মাছের ঝাল তরকারি ও আলুভর্তা দিয়ে গলা পর্যন্ত কষা ভাত খায়, আরামে দুপুরে ঘুমায়। যা ইউরোপ, আম্রিকা ও জাপানের মানুষেরা কল্পনাও করতে পারে না। বাংলাদেশের বহুপদের গরীবি খাবার খেতেও আম্রিকা-জাপান-ইউরোপে অনেক টাকা লাগে।
টাকা থাকুক বা না থাকুক, কাছামেরে নির্বাচনী মিছিল করা, বউ পিটানো, ক্ষমতাবাদের বেটাগিরি আর গলাবাজির গর্ব করা সুখ অবশ্যই আমাদের আছে।
তথাকথিক নির্বাচনী গনতন্ত্রের চেয়ে, এখন সরকারী-বেসরকারী দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতি কমানো জরুরী। পুরোপুরি আইনের শাসন থাকলে- আমি নিশ্চিত ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া’র চাইতে দ্রুত গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাব। আম্রিকার আরো হিংসার পাত্র হব।
উন্নয়নের চলার পথে যদি বৃটিশের ভূত আর কলোনিয়াল অপশক্তি বাগরা না বাজায় , তবে অবশ্যই আমরা এগিয়ে যাবো। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
আমরা সবাই উন্নয়নধারা এখন জানি, কিন্তু করি না। আমাদের উন্নয়নের জন্য দরকার – সমতার মানসিকতা, ফাও ভাজি দিয়ে তিনটা পরোটা না খাওয়া, আর জাপানের মত সেবা প্রদানকারী কায়িক পরিশ্রমী মানুষের আয় অফিসার-লেভেলদের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ করা। তাহলে সত্যিই আমাদের সুখ ঘরে ঘরে চলে আসবে।
সরকারী হিসাব-রক্ষকরা, ট্রেজারারগণ সৎ হলে, হিসাবরক্ষন ঠিকহলে অপচয়-দূনীর্তি কমে যাবে। শেখ হাসিনা যে ভাবে এগুচ্ছেন, তাতে আমার আস্থা আরো বেড়ে গেছে। শেখ হাসিনার মত ১২ জন নেতা ও নেত্রী দেশে থাকলে, বাংলাদেশকে কেউ পিছে টেনে রাখতে পারবে না। তাই বিকল্প দেশপ্রেমিক সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে আমি প্রধানমন্ত্রী দেখতে ভালোবাসি।
Related article: https://bit.ly/3ihd9mU
—
Mar 19, 2022 | সাহিত্য
আম্রিকার হুশিয়ার, চায়না প্রবল চাপ, ইসরাইলের হুমকি, ইউক্রেনের আর রক্ষা নেই, আমরা শেষ দেখে নিব, আমাদের চেন না ইত্যাদি গুন্ডামি শব্দ কূটনৈতিক আলোচনায় বরাতে মিডিয়াতে, বিশেষ করে সাউথ-এশিয়ার মিডিয়াতে যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়।
একটি দেশের সবচেয়ে সুশীল মানুষ সেই দেশের প্রেসিডেন্ট, তিনি কি আরেকটি দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল- সচেতন মানুষ, প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী মিনিষ্টারের সাথে এমন অভদ্র শব্দ ব্যবহার করেন? তাদের রেফারেন্স দিয়ে বাংলা মিডিয়াগুলো যত্রতত্র নরম আলোচনাকে গরম বলে ব্যাখ্যা করে কেন? মাস্তানি ডায়লগ ষ্টাইলে টাইটেল দিয়ে খবর প্রকাশ করে কেন? এতে কি মিডিয়ার দায়িত্বহানি হয় না?
যে শব্দগুলো মেইষ্ট্রিম মিডিয়া ব্যবহার করে, সেই মাতাল শব্দগুলো যদি আসলেই প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রী-মিনিষ্টাররা ব্যবহার করেন, তবে কি তাদের দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পাবে? আমি যতদূর জানি কূটনীতি মানেই ‘অ্যাবষ্টাক্টনেস’, কৌশলে বাঘ মারা, ‘মুরগীমারা মাস্তানি না’।
যদি আসলেই সরাসরি আক্রমনাত্বক শব্দ ব্যবহার করে, আমি নিশ্চিত রথিমহারথিরাও আলোচনা রেখে, সাধারণ মানুষের মত মারামারি, ধরাধরি শুরু করে দিবে আলোচনার টেবিলেই।
দেশে দেশে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হলেও, বাস্তবে আমরা রথিমহারথিদের মাঝে মারামারি দেখি না। নেতাগিরি করা, আর জেলেনাস্কির মত মাঠগরম করা কথা এক না। একজন নেতা ভবিষত দেখতে পারেন, চাপাবাজরা দেখতে পান না।
আমার কেন যেন মনে হয়, মিডিয়া নিজেদের খেয়াল খুশীমত নরম শব্দগুলোকে, গরম শব্দে অনুবাদ করে, সুশীল শব্দগুলোকে কুশীলতায় প্রতিস্থাপন করে। উদ্দেশ্য বোধহয় সংবাদের সস্তা জনপ্রিয়তা। আপনাদের কি মনেহয়?
বি.দ্র.: রশিয়া-ইউক্রেন গ্যাঞ্জামের এই সময় সংবাদ নিয়ে বিশ্বব্যাপি কারুকাজ ও তেলেসমাতি বুঝলাম। সাউথ এশিয়ার মিডিয়া-পত্রিকাগুলো শুধু রং লাগায় বাড়তি কাটতি’র জন্য । কিন্তু আম্রিকা ও পশ্চিমা দুনিয়ার মিডিয়া পুরো সংবাদই বদলে দেয়। বিষয়টা পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে যায় যখন দেখি- প্লোবাল মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে, একমুখি সংবাদ প্রকাশ করে। সবচেয়ে করুণ বিষয়- যুদ্ধ হয় ইউক্রেনে, সংবাদ ও রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে, লন্ডনে…
Mar 19, 2022 | সাহিত্য
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আমার ও আব্বার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর ‘হিটলার মার্কা’ বা ‘চার্লি চ্যাপলিন মার্কা’ মোছ থাকলেও, চরিত্রে হিটলারি বা কৌতুকের ছিটেফোঁটা ছিল না। শান্ত ও সিরিয়াস মানুষ ছিলেন। তাঁর সরলতা ও সততা মুগ্ধতার সাথে দেখিয়ে আব্বা আমাকে বলতেন,
– দেখছ, কত ভালো মানুষ? কত সরল মানুষ? এমন মানুষ হইতে হব। তাহলে জীবন স্বার্থক…
আব্বার কথায়, বিচারপতির সরলতায় অনেকটা আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই অতি সরল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলাম। হৃদয়ে বিশ্বাস লালন করতে শুরু করেছিলাম- সৎ ও সরল মানুষের কষ্ট হলেও, শেষ পর্যন্ত সিনেমার নায়কের মত জয়ী হয় ও হবেই।
২০০১ সাল পর্যন্ত আমার অতি সরল পথে চলার ব্রত গোড়াদের মত বহুত বলবৎ ছিল। এরজন্য আমি অনেকের কাছে প্রিয় সাহাবুদ্দীন আহমদের মত হাসির পাত্রও হয়েছিলাম। যদিও আমার পূর্ণ আস্থা ছিল – আমার সরলতা হাসির বিষয় না।
মহাকালের সরলতার মহাযাত্রায়, কয়েকজন ‘দয়াল বাবা, কলা খাবা’, মাগনা কুতুবের পাল্লায় পড়ে মাইনকাচিপায় ছিলাম। তবে নিজের প্রতি, নিজের সরলতার বিশ্বাস বিশ্বাস হারাতাম না। অতি আস্থার সাথে পথ চলার পর যখন বুঝলাম পেটে ভাত জুটবে না, আরো বেকার থাকতে হবে, মানুষের কাছে হাত পাতার অবস্থা হবে, তখন পথ একটু বদলিয়েছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় পাশের ৫ বছর পরও চাকুরি-বউ-প্রেমিকা কোন কিছু ছুটছে না, তখন একটু হতাশা হযেই, বৈষয়িক ও কৌশলী হতে শুরু করেছিলাম। শেষমেষ খানিকটা সফল হয়েছি। জাপানি বউ-পোলাইপান পেয়েছি। এখন আমি নিজেকে বেশ চালাক মনেকরি, যদিও প্রায় সব মানুষ এখনো আমাকে সরল ও বোকা মনেকরে।
যাইহোক আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবন থেকে বুঝলাম,
অতি সরলতা ও অতি সততা সব সময় ভালো না। অনেক সময় হীতে বিপরীত হয়। জীবনের মুখোমুখি হয়ে, জয়ী হতে হলে আমাদেরকে কৌশলী হতে হয়। বুদ্ধির চর্চার করতে হয।
আমি এখন মনে করি – চাতুরতা মন্দ হলেও, অন্যের ক্ষতি না করে, কৌশলে নিজের হিস্যা আদায় ও অবস্থান ঠিক রাখা মন্দ না।
মহামতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রয়াণ দিবসে, আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন শোকবার্তা নেই। বিষয়টা আমার দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। অথচ তিনি চরিত্র ও কর্মগুণে তিন-তিনবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিলেন। আজকে তচ্ছতার কারণটা আমাদের সবার জানা। তার অতিসততার কারণে – চতুর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসেছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অনেক ক্ষতি করেছিল।
আমরা সবাই জানি তিনি সৎ ও সরল ছিলেন। কিন্তু এটাও আমরা বুঝেছি, অতি সততা অতি সরলতা মাঝে মাঝে দেশ ও দশের অকল্যান ডেকে আনে। তার অতি সততার সুযোগে সুবিধাবাদীরা একতার বদলে দেশকে বিভাজিত করেছিল, দূনীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিল।
মহাত্না সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রয়ানে আমি দুঃখিত। তার সততা ও অবদানে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার ৯২ বছরের জীবনে জাতিকে যা দেবার তার চেয়ে অনেক বেশী দিয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সরলতার প্রতিককে, ‘প্রিয় স্রষ্টা’ খামিসামা – অবশ্যই অদৃশ্য ভালোবাসার জগতে অপার শান্তি দিবেন, পুরুস্কৃত করবেন।