জাপানের মহামারি- বাঙালির দুঃচিন্তা!

জাপানের মহামারি- বাঙালির দুঃচিন্তা!

– জাপানে দক্ষ বিদেশীরা থাকে না! এই জাতি গরীর হয়ে যাবে!
– জাপানের জনসংখ‍্যা কমে যাচ্ছে, এই জাতি বিলীন হয়ে যাবে!
– জাপানে লক্ষ‍ লক্ষ বাড়ি খালি পড়ে আছে, গজব নেমেছে!
– বাঙালিরা জাপানিদের চেয়ে ধনী, ধার্মিক ও সৎ! চল চল জাপানে চল!
– জাপানি বেহায়া, যে কোন মুহুর্তে দেশটি সাগরের তলায় ডুবে যাবে!
——————

সমস‍্যা সব দেশে আছে ও থাকবে। সমস‍্যা সমাধান ও এগিয়ে চলার নামই উন্নয়ন! ইচ্ছকৃত ভাবে সমস‍্যা সৃষ্টি করা, ও সমাধান না করে জিয়ে রাখাকে আমি সবচেয়ে মারাত্নক অভ‍্যতা মনেকরি ! আর এই অসভ‍্যতা জাপান অনেকাংশে কাটিয়ে উঠেছে, বাংলাদেশে পদে পদে, পথে প্রান্তরের ঘটছে। সমস‍্যা সমাধানের পরও জাপানে অনেক সমস‍্যা ও সীমাবন্ধতা আছে। ভালোর মাঝে মন্দ লুকিয়ে থাকে।

সবকিছুরই সুবিধা ও অসুধিধা আছে। জাপানের তুলনায় উন্নয়নের অনেক কিছুই এখনো আমাদের প্রিয় দেশ, বাংলাদেশে শুরুই হয়নি। তারপরও আমরা অনেকে সেলফ জাষ্টিফিকেশন করি। চরম সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতার মাঝেও জাপান যা করেছে, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ, এমনকি আমেরিকা-ইংল‍্যান্ডও তা করতে পারেনি। জাপানের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো-

জাপানে বেতনের ব‍্যবধান, মার্জিন কম! বেটাগিরির শ্রেণী বৈষম‍্য নেই। সাধারণ মানুষ ভিক্ষা, চুরি-চামারি করে না! ঘুষ খায় না! পারতপক্ষ মারামারি করে না! প্রকাশ‍্যে একজন আরেকজনকে থমক দেয় না! স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ও তদবীর করে না! টাকা থাকুক না বা থাকুক- কেউ না খেয়ে মরে না! ইত‍্যাদি

অনেক প্রবাসী বলেন, “জাপানে এখন বাংলাদেশের চেয়ে বেতন কম!” আয়ের তুলনায় ব‍্যয় বেশী- এই দৃষ্টিতে বক্তব‍্যটির সঙ্গে আমি একমত! তবে আসল সত‍্য হলো – বাস্তবতাটি শুধু বাংলাদেশের ৫% সুবিধাভোগী মানুষের বেলায় সঠিক! বাকী ৯৫% বাংলাদেশীর ধরতে গেলে গরীব, হতদরিদ্র ! নিজের ভালো খাবার, ভালো বাসস্থান, ভালো চিকিৎসা, এমন কি ভালো চিন্তা করার সামর্থ‍্যতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু জাপানের ৯৫% মানুষ দৌড়ের উপর থাকলেও, প্রয়োজন মেটাতে পারে।

🇧🇩 🇯🇵
জাপানে অদৃশ‍্য বর্ণবাদ আছে। একথা অনেকটা সত‍্য! জাপান সরকার বিদেশীদেরকে অনেক আইনের মারপ‍্যাঁচ দেখায়! এমনকি বিদেশীদের বাপদাদা দেয়া নামটিও বদলাতে বাধ‍্য করে। চাকর-বাকর, কামলা মনে করে! ইমিগ্রেশন তো এখনো আমাকে জিজ্ঞাসাই করেনি – আমি শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত। বাস্তবতা এত নিখুঁত যে- কেউ অভিযোগ করতে পারে না, আবার সহ‍্যও করতে পারে না। তাই দক্ষ বিদেশীরা এখানে থাকতে উৎসাহ বোধ করে না। তবে জাপান প্রেমিক বিদেশী কেউ ভাষা, সংস্কৃতি ও লেখাপড়ায় নেচারালাইজড হলে- তার তেমন সমস‍্যা হয় না। সহজে নাগরিত্ত্ব পেয়ে যায়। আর জাপানি বিয়ে করলে – জাপানি কেরাবেরা তেরাগিরি মেনে নিয়ে সহজে জাপানে স্থায়ী হতে পারে।

লক্ষনীয বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষিত মেধাবানরা বৃত্তি পেয়ে জাপানে পিএইডি করতে আসে, হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া, কেউ জাপানে শেষ পর্যন্ত থাকে না। হয় বাংলাদেশে, না হয় ইউরোপ-আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া-কানাডায় ইত‍্যাদি মুক্ত কালচারের কোন দেশে চলে যায়! জাপানে আইনের শাসন ও বিনয়ের রীতি থাকার পরও বিদেশীরা থাকতে চায় না!

মুল কারণ- পদে পদে নিখুঁততা, আইন ও রীতির বাঁধার পাশাপাশি রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। ২০-৩০ বছর জাপানে থাকার পরও, আমরা বাঙালিরা কফির দাম ১০-২০ টাকা গুনি! ৩০০-৪০০ ইয়েন ভাবতে পারি না। অথচ ঠিকই নিজের বেতন ও রোজগার কয়েক লক্ষ ইয়েনে গুনতে ভালোবাসি।

বাংলাদেশের তুলনা জাপানে আয় অনেক হলেও, জাপান ধনীরাষ্ট্র হলেও- G7 দেশগুলোর মাঝে জাপানে সবচেয়ে নূন‍্যতম মুজুরি কম। ঘন্টায় মাত্র ১০০০ ইয়েন, মানে ১০ ডলার! অথচ আমেরিকায় ১৮ ডলার, মানে ১৮০০টাকারও অধিক।

সরকার ধনী হওয়ার পরও, নাগরিকদে এত টানাটানি থাকার পরও- জাপানে এখনো বেকার ভাতা চালু হয়নি। বিদেশীদের জন‍্য জাপানি সরকারী চাকুরি তো পরের কথা- স্থাযী চাকুরির সুব‍্যবস্থা নেই। জাপান প্রশাসনের ভাবখানা এমন- টাকার জন‍্য জাপানে আইছো, কষ্ট করে টাকা কামাই করে থাক, আরামে থাকতে দিমু না! অথচ আমেরিকায় গোয়ান্দা সংস্থাতেও বিদেশীদের নিয়োগ পায়।

🇧🇩 🇯🇵
“জাপানে মানুষ কমে যাচ্ছে, মহামারি শুরু হয়েছে” বহুল প্রচলিত এই ধারণা আমি মনেকরি ভুল। আমার আশেপাশে প্রায় সবারই ৩-৪ জন সন্তান দেখি। আমার নিজেও রয়েছে ৩ সন্তান। আমরা বুঝতে ভুল করি- আয়তনে জাপান বাংলাদেশের ৩ গুণের বেশী, কিন্তু জনসংখ‍্যা বাংলাদেশে প্রায় সমান। তাছাড়া জাপানিরা হৈ-হুল্লা করে না, ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করে, বাঙালীর মতো রাস্তাঘাটে ফুচকা-রসমালাই খায় না, আড্ডাবাজি করে না, তাই জনসংখ‍্য বুঝা যায় না। তবে সিবুইয়া ষ্টেশনে গেলে বুঝা যায়, হাজার হাজার লোকের জেব্রাক্রসিং পার হতে দেখলে বুঝা যায়, টোকিও গুলিস্তানের চেয়ে কম ব‍্যস্ত নয়। তাছাড়া জাপানি সবাই গাড়িতে চলে, তাই রাস্তার হাঁটারত মানুষের সংখ‍্যা কম।

এটা সত‍্য উন্নত স্বাস্থ‍্যসেবার ও সুষম খাদ‍্যাভ‍্যাসের কারণে জাপানে মৃত‍্যুর হার কম। বুড়ো মানুষের সংখ‍্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই। পশ্চিমাদের প্রভাবে তরুণ সমাজ বিয়ে করতে চায় না। এর মুল কারণ- শারীরিক ভালোবাসা সহজলভ‍্যতা, নারীপ্রগতি ও জেন্ডার ইকুয়ালিটি! বিয়ের পর অধিকাংশ জাপানিদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো যায় না। অনেকে বলেন- জাপানি বউরা হোম ইয়াকুজা, বাড়ির মাফিয়া। ব‍্যাংক একাউন্ট সহ বউরা সব কন্ট্রোল করে! জামাইয়ের কথা শুনে না! সব সময় তাপ ও চাপের উপর রাখে। ছেলেমেয়েরা এই বাস্তবতা দেখে বড় হয়, সাংসারিক জীবনের প্রতি আগ্রহী হয় না। হাস‍্যকর হলেও সত‍্য- অনেক জাপানি পুতুলকে বিয়ে করলেও, নারীকে বিয়ে করতে চায় না।

বিয়ে না করার অন‍্যতম আরেকটি মুল কারণ- ফ্রিসেক্স, বিবাহপূর্ব বা বিবাহছাড়া শারিরিক সম্পর্কে বাঁধা না থাকা। বিয়ে ছাড়া ‘এটা-সেটা’ সব করা গেলে- ভরণপোষনের দায়িত্ব নিয়ে মানুষ বিয়ে করবে কেন? আমি যতদূর বুঝি- জাপান থেকে যতদিন পিঙ্ক হোটেল, লাভ হোটেল, সুনগা কালচার ইত‍্যাদি হেন্নরীতি বন্ধ না করা গেলে, স্বাধীন তরুণ-তরুণীদের বিবাহের বলয়ে আনা কষ্টকর হবে। পাশাপাশি জীবন থেকে অদৃশ‍্য অভাব না কমানো গেলে, বিশেষ করে জিনিষপত্রের দাম ও বউদের তাপচাপ না কমানো গেলে জাপানিরা আগের মত পরিবার গঠনে আগ্রহী হবে না।

🇧🇩 🇯🇵
বাংলাদেশের মিডিয়াতে , বিশেষ করে চটকদার অনলাইন ব্লগগুলোতে ফুটানো হচ্ছে- মানুষের অভাবে জাপানে লক্ষ লক্ষ বাড়ি খালি পড়ে আছে। ধর্ম না মানার কারণে – জাপানে গজব পড়েছে। এমন সংবাদ সঠিক নয়।
এ’সব ব্লগাররা জাপানে না এসে, মোল্লামার্কা অর্ধশিক্ষিত প্রবাসীদের গল্প শুনে, সাত-অন্ধের হাতি দেখার মত চমকপ্রদ সংবাদ প্রচার করছে। অথচ নিজের দেশে খালি জমিদার বাড়ি, অর্পিত সম্মতির বিল্ডিংগুলোর বেহাল অবস্থা, জাদরেল শাহ আজিজের কুষ্টিয়ার খালিবাড়ীতে মানুষের হাগামুতার কথা প্রচার করে না। জাপানের ১০০টি বাড়ির মাঝে ৫-১০টি পুরাতন বাড়িতে মানুষ থাকে না, এটাকে কি মহামারি হিসাবে গণ‍্য করা যায়?

তবে এ’কথা সত‍্য, ইয়াং জেনারেশনের শহর মূখীতার কারণে, গ্রামে ও মফস্বলে পতিত বাড়ি আছে। যে ভাবে বলা হচ্ছে তেমন না! বাংলাদেশেও এমনটা হয়- বিশেষ করে গ্রামের ধনীরা শহরে বা ঢাকায় স্থানাস্তরিত হলে।
জাপানিরা পুরাতন বাড়িঘরকে বলে- আকিয়া। জনসংখ‍্যার হার কমে যাওয়াতে – ওরারিশ ও অভাব না থাকার কারণে, বাবা-মায়ের সম্পদের প্রতি সন্তানদের লোভ না থাকার কারণে- লেখাপড়া বা চাকুরির জন‍্য বাড়ী থেকে বের হলে বাড়িতে না ফেরার কারণে, বাবা-মার মৃত‍্যুর পরে জাপানের ঘরবাড়ি পরিত‍্যক্ত হয়ে যায়। ‘ওবুন ফেস্টুবল’ মানে ‘পূর্বপূরুষদের জন‍্য প্রার্থনা’র ছুটি ছাড়া জাপানিরা সাধারনত নিজ জন্মস্থানে আসে না।
বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও, ব‍্যস্ততার কারণে বাড়িতে আসতে পারে না। বাবা-মা বা দাদা-দাদি মারা গেলে, বংশের কেউ না থাকলে বাড়িটি এমনি পড়ে থাকে! আকিয়া হয়ে যায়। এক সময় খাসজমিতে পরিনত হয়। কেউ কেউ দাতব‍্য খাতে দান করে দেয়।

🇧🇩 🇯🇵
যাইহোক শুধু জাপান নয়, সারা দুনিয়াতে এখন জনসংখ‍্যা কমছে, অভাব ও স্বার্থপরতা বাড়ছে তো বাড়ছেই। সেই তুলনায়- আইনের শাসন থাকার কারণে, আমি মনেকরি জাপানে মহামারি কম হচ্ছে।

জাপানিরা যে ভাবে ভ‍্যাট-টেক্স দেয়, সে অনুপাতে সরকার থেকে সুবিধা পায় না। এটা নিশ্চিত- জাপান সরকার পশ্চিমাদেশ গুলোর লগে পাল্লা দিয়ে, জনগনকে সহযোগীর উদারনীতি চালু করলে – জাপানিদের টানাটানি দ্রুত কেটে যাবে। জাপান আসলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ট একটি বাসযোগ‍্য দেশ হবে। গভীর ও উন্নয়ন-ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কারণে বাংলাদেশও দ্রুত এগিয়ে যাব। শুভ কামনা ।

আমাদের নান্নু ভাই

আমাদের নান্নু ভাই

টোকিও তো যে কয়েকজন সুনামধন‍্য বাংলাদেশী আছেন নান্নু ভাই তাদের একজন। প্রবাসীর বাংলাদেশী ও বাংলাদেশ সম্পকিত সকল সাউথ এশিয়ান ও জাপানিরা তাকে এক নামে চিনেন ও শ্রদ্ধা করেন।

আদর্শ জাতীয়বাদী নান্নু ভাই একজন প্রভাবশালী ব‍্যবসায়ী। গাড়ি ব‍্যবসার সাথে সাথে নানান ধরনের এক্সপোর্ট-ইমম্পোর্ট ব‍্যবসা করেন, কনসালটেন্টসীর পাশাপাশি সামাজিক সুকর্মের সঙ্গে অতিসক্রিয়। প্রবাসীদের বিপদে পাশে থাকেন, সব রকমের সহযোগীতা করেন। বিষয়টি আমার হৃদয় জয় করেছে।

আমি দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে নান্নু ভাইয়ের কাজ করি। জে.এম.সি.সি ( জাপান মুসলিম চেম্বার অফ কমার্স) ও তার অফিসের কাজের মাধ‍্যমে নান্নু সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কাজের মাধ‍্যমে আমি সব ক্লাইন্টকে পারিবারিক সখ‍্যতা গড়ে তুলি। নান্নু ভাইয়ের সঙ্গেও তেমনটা হয়েছে। ২০১৯ সালে বৈশাখী মেলাতে শুধু একবার ছালাম বিনিময় হয়েছিল। এরপর কখনো সম্মুখ দেখা হয়নি।

এবার টোকিও বৈশাখীমেলার এসাইমেন্ট করে ফেরার দিন তাকে ফোন করেছিলাম,
– ভাইজান, চলে গেলাম। এবার দেখা হলো না । আগামী যাত্রায় দেখা হবে ।

এ’কথা বলতেই তিনি বললেন।
– আজ যেতে পারবেন না। অন্ততঃ একদিন থাকতেই হবে। গুরুত্বপূর্ণ কথা ও কাজ আছে।
– তাহলে হোটেলের রুম বুকিং দিলাম।
– আরে না, হোটেলে থাকবেন কেন? আমার বাংলো আছে। সেখানে আপনি থাকবেন। আপনি আমার অতিথি।

ইভেন্ট-এসাইনমেন্ট ছাড়া আমি সাধারণত বাড়ির বাহিরে রাত্রি যাপনের দাওয়াত গ্রহন করি না। কিন্তু নান্নু ভাই এমন ভালাবাসামাখা কন্ঠে দাওয়াতটি দিলেন, আমি আর না করতে পারলাম না। রাজি হযে গেলাম।

আমি যদিও দীর্ঘদিন ধরে জাপানে থাকি, জাপানি জীবন ও আচারে অভ‍্যস্ত হলেও, টোকি’র ব‍্যস্ত জীবনকালচারে একেবারেই অভিজ্ঞ নই। সব সময়ই আমার টোকিও যাত্রা সিনকানসেন ষ্টেশন থেকে নারিতা এয়ারপোর্ট পর্যন্তই সীমাবন্ধ থাকে।

টোকিরও অতি প্রয়োজনীয় ষ্টেশন ও জায়গা গুলোও আমি আজো চিনি না । ট্রেন মিসিং, ভুল ষ্টেশনে যাত্রা, হেন্ন সুন্দরীদের পাল্লায় পড়া ইত‍্যাদি শঙ্কা নিয়ে চিবাতে তার অফিসে চলে গেলাম। ষ্টেশনে নিজেই আমাকে নিতে আসলেন। তার বাড়ি, গাড়ি, নারী ও অফিস দেখে, প্রথম পলকেই আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

একেবারেই পুরোন ঢাকার কোটিপতি ব‍্যবসায়ীর আয়োজন। অফিসের আলিশান সাজসজ্জা, ফোন আর অনলাইনে মুহু মুহু গাড়ির অর্ডার দেখে,
‘জাপানে ব‍্যবসা করতে না পারা’ নিয়ে আমার যে প্রিজোডিস ছিল কেটে গেল। আস্থা ফিরে আসলো
– ইচ্ছে করলে, মানুষের সঙ্গে সৎযোগাযোগ থাকলে, সেবা দিলে যে টাকা রোজগার করা সহজ – তার বাস্তব প্রমান পেলাম নান্নু ভাইয়ের কাজকর্মে।

ব‍্যবসার কথার পাশাপাশি, বাস্তবতা, সুখ-শান্তিতে ভরা জীবনের গল্প বললেন। ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হওয়ার পর- নানান দেশে থাকার পর জাপানে কিভাবে দেশান্তরি হলেন, স্থায়ী হলেন সে গল্প শুনে অভিভূত হলাম। কিভাবে জিরো থেকে একজন মানুষ ইচ্ছা করলেই যে সম্পদশীল, ক্ষমতাবান হিরো হতে পারে তার প্রমান জাপান প্রবাসী নান্নু ভাই।

গ্রামীণ সরলতায় আমার কথা বলা তিনি প্রশংসা করলেন। আমার ডিজাইন সেন্সে মুগ্ধ হয়ে তার অনলাইনে গাড়ী বেচাকেনার ই-কর্মাস সাইট বানানোর কাজটি দিলেন। টাকা রোজাগরের আনন্দ যখন আমার হৃদয়ে উপচে পড়ছিল, তখনই বললেন,

– চলেন, আপনাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। আপনি তো টোকিও তে কখনো ঘুরেন না।

নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন ‘টোকিও একুয়া সিটি’ তে।
যা বিখ‍্যাত সমুদ্র তলদেশের টানেল ষ্টেশন ও শপিংমল। (Tokyo Wan Aqua-Line Expressway)এখান থেকেই সমুদ্র তলদেশের টানেলের মাধ‍্যমে ‘ওতা কাওযাসাকি ও কিজারাজু’ দুই শহরকে যুক্ত হয়েছে। রেইন-বু বিজ্রের সৌন্দর্য, টুরিষ্ট ইলিমেন্টে সাজানো একুয়াসিটিতে চারদিকে থেকে আসা সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসে আমার প্রাণ ভরে গেল। সবচেয়ে ভালো লাগলো জাপানের শত্রুদেশ আমেরিকার ‘ষ্টেচু অফ লির্বাটি’ রেপ্লিকা দেখে। শুত্রুকে ভালোবাসলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, তারই নির্দেশন হিসাবে জাপান এটি বানিয়েছে। শত্রুদেশ থেকে, এটমবোমা নিক্ষেপকারী আমেরিকা আজ জাপানের বন্ধুরাষ্ট্র।

আমি শুধু নামে নয, কাজেও মহামতি । কারো সঙ্গে রেষ্টুরেন্ট ঢুকলে, আমি কখনো, দেশে কিংবা বিদেশে- কাউকে বিল দিতে দেই না। কিপটা জাপানিদের মত চুপ থাকি না। নান্নু ভাই একের পর এক, স্টারবার্ক সহ নানান দামি-দামি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথম দিকে আমি পেমেন্ট করতে চাইলেও, পরে আর চাইনি, জাপানি হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বুঝে গিয়েছিলাম – আমি বিল দিলে এসাইমেন্ট থেকে পাওয়া সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। খালি হাতে বাড়ি গেলে জাপানি সুন্দরী বউয়ের নিশ্চিত বাংলা ঝারি খেতে হবে। সেই ভয়ে আমি তঠ্স্থ ছিলাম।

নান্নু ভাইয়ের কাছ থেকে আমি যে মুল‍্যায়ন ও আথিতিয়তা পেয়েছি, আমি তা কখনো ভুলবো না । আমার ধারণা ছিল – অতিদাম ও কঞ্জুসদের দেশ- জাপানে থাকতে থাকতে প্রবাসীরাও হয়তো জাপানিদের মত কিপটা হয়ে য়ায়। আসলে তা হয় না। পদ্না-মেঘনা-যুমুনার মত বিশাল বাঙালি হৃদয়। তা কখনো কুলশিত হয় না। তার প্রমান পেলাম নান্নু ভাইয়ের পরম ভালোবাসায়।

নান্নু ভাই অসংখ‍্য ধন‍্যবাদ । ভালো থাকবেন নান্নু ভাই, সত্ত্বর আশাকরি আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ।