Oct 13, 2021 | সাহিত্য
নানা-নানি, দাদা-দাদি’র কাছ থেকে কি কখনো এভাবে বকশিস পেয়েছেন? আমি বহুবার নানা-নানির কাছ থেকে পেয়েছি।
কিন্তু আমি প্রতিবারই নিতে চাইতাম না । শরম পাইতাম।
দাদা-দাদির কাছ থেকে পাই না। কারণ দাদাকে দেখি নাই, আমার জন্ম্রের আগেই তিনি মারা গেছেন। শুনেছি দাদা অনেক ধনী ও জমির মালিক ছিলেন। সুন্নতি ছিলেন, বহু বিবাহ করে ছিলেন। তবে গ্রামে থাকা দাদি’র বেহাল অবস্থা দেখে বুঝতাম না- দাদা তালুকদার দিলেন। ছেলেবেলায় প্রায়শঃ আব্বার সঙ্গে ফলফলাদি কিনে নিয়ে দাদিকে ইটাচকি গ্রামে দেখতে যেতাম। দাদা বেঁচে থাকলে হয়তো পেতাম, তবে বড় জেঠা আমাকে অনেকবার দিয়েছে।
নানা-নানি’র চাইতে সেলামী বেশী পেয়েছি কোটিপতি খালা-খালু’র কাছ থেকে। আমি নিতে চাইতাম না বলে, খালা বলতেন।
– তুই তো নিবি না, তোর মাকে দিইস, কিছু কিইনা দিব।
বিশ্ববিদ্যালয় পাশের পর অসুস্থ শুনে নানাকে একদিন দেখতে গেলাম। নানা তো একশো টাকার দুইটা নোট হাতে গুচে দিয়ে বলে,
– এখন তো বড় হইছস, এত অল্প টাকায় চলবো?
আমি হাসতে হাসতে কইছিলাম ,
– লাগবো না । আমি এখন কামাই করতে পারি।
– তোর টা তোর, এইটা রাখ। চা খাইস। দেখিস আবার সিগ্রেট কিনিস না।
– নানা, আমি বিড়ি খাই না।
– তাহলে তো ভালোই । দাঁত, শরীর দুইটাই অনেকদিন ভালা থাকবো।
—
বি.দ্র;ফটোগ্রাফারের নাম জানি না, তাই ক্রেডিট দেয়া গেল না, দুঃখিত।
Oct 11, 2021 | সাহিত্য
এক দশক আগে ২০০৯ সালে, নয়াদিল্লীতে হিন্দু ডাল চাপাতি খেয়েছিলাম। যার স্বাদ আজো মুখে লেগে আছে। কয়েকদিন ধরে বার বার মনে পড়ছিলো। তাই সুন্দরী বউরে কইলাম, আটা কিনে আনবেন। আনলো।
আজ সকালে নিজে পাক্কা ৪০মিনিট খরচ করে বানালাম। কিন্তু শিবসেনা বাবুর্চিদের মত ফুলে নাই, গোল হয় নাই। তবে স্বাদ হয়েছে কাছাকাছি।
নিজের হাতে নিজের খাবার পাক করার স্বাদই আলাদা। ভালোবাসা ও কষ্ট থাকে বলে ভিন্নমাত্রা পায়। যা বাংলাদেশে অধিকাংশ বেডাইন পায় না। খাবারের জন্য সহজে – হয় বুয়া বউ, না হয় পড়ার রেষ্টুরেস্টুের হৈহুল্লার আশ্রয় নেয়।
সকালে ঢাকার রেস্টুরেন্টের ভীড়ের মাঝে ধমকা ধমকি করে, অনেকক্ষণ বসে থেকে, নিহাড়ি-পরোটা খাওয়াতেও অনেক আনন্দ আছে। আমি পূর্বে বাংলাদেশে গেলে প্রায় প্রতিদিনই সকালে নাস্তা রেস্টুরেন্টে করতাম। জাপানে আসার পর থেকে, বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকে জাপানিদের মত খাবার ও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কারণে খেতে পারি না। রুটির আগেই আমর চোখ পড়ে মেসিয়ারের কাঁধে ঝুলানো ময়লাপড়া সেতসেতে গামছা-তোয়ালের দিকে।
খাবার দেয়ার আগে, তাদের প্রায়শঃ হাত দিয়ে ঘাম মুছা, হুলে হাত দেয়া দেখার পর থেকে, আমার রেস্টুরেন্টু খাওয়া আগ্রহ কমে গেছে। তবে এখনও খাই। পরিস্কার ও বড় রেস্টুরেন্ট না হলে খেতে মন চায় না।
সবাই রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য অনেকক্ষন বসে থাকলেও আমাকে ঢাকায় এখন তেমন বসে থাকতে হয় না। মেজেজাটা হলে, আমি একই রেষ্টুরেন্টে, একই টেবিলে, প্রায় একই সময় নাস্তা খেতে যাই।
খাওয়ার শেষে গুড়ো সব টাকার সাথে প্রতিবারই ২০-৩০টাকা মেসিয়ারকে বসকিস দেই। ফলত – আমি রেস্টুরেন্টে ঢোকার সাথে সাথে – মেসিয়ার সব কাজ ফেলে আমার দিক দৌড়ে আসে, অপ্রয়োজনীয় ভাবে নিজ গামছায় চেয়ার মুছে দেয়। বলে
– বসেন স্যার, বসেন স্যার..
চাওয়ার আগেই ফাও ডাল-সবজি, বাড়তি মাংসার পাওয়ার সাথে সাথে, বাদশাহ শাহজাহানের সমাদর পাই।
কি শান্তি ঘরে ঘরে।
Oct 8, 2021 | সাহিত্য
অতিব্যস্ত ও তুখোড় পেশাজীবি শাহরুখ খানের জীবন থেকে শিক্ষা- ‘আর নয় ব্যস্ততা, সুখের জন্য চাই পিতাপুত্রের সুসম্পর্ক!’
২০০০ সালে আমার জাপানি শিক্ষক ‘টেটসুয়া আমানো সান’ বলে ছিলেন, ‘Busyness’ means ‘loss of time, loss of heart’ and ‘loss of opportunities’
এই বিজনিস মানে ব্যবসা নয়, অতি ব্যস্ততা। কথাটি আমার মনে ধরে ছিল। সে থেকেই আমি ব্যস্ততা নিয়ে সর্তক। আমি নিজেকে সব সময় বুঝানোর চেষ্টা করি,
‘সম্পদ-খ্যাতি, আভিজাত্য -জৌলুস’ মানুষের জীবনে প্রকৃত সুখ আনে না। সুখ আসে ‘সুসস্পর্ক, ভালোবাসা, অন্যকে বুঝা-জানা ও মানা থেকে।
অনেক উদাহরণের মাঝে শাহরুখ খানের জীবন থেকে আমরা বুঝতে পারি, জীবনে ব্যস্ততা কি করুণ পরিনতি ডেকে আনে।
ছেলেকে বাবার সঙ্গে কথা বলতে হলেও নাকি, এপায়ন্টমেরন্ট নিতে হতো। এরিয়ান পুলিশ হেফাজতে বলেছে, বাবা তাকে একেবারেই সময় দিত না। ..
বুঝা গেল ছেলেকে সময় দেয়া ছাড়া সবই দিয়েছেন বলিউড বাদশাহ, ‘শাহরুখ খান। সম্পদ ও জিনিসে ভালোবাসার পরশ থাকলেও, হৃদয় যে থাকে না- প্রিয় অভিনেতা হয়তো সে কথাটি ভুলে গিয়েছিলেন। হয়তো এ কারণেই ছেলে আরিয়ান ‘একাকিত্ব ও ভালোবাসাহীন’ হৃদয় নিয়ে উদ্ভ্রন্তের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। শেষ মেয় সুখ-শান্তিরর আশায় সব পাওয়ার পরও, শিক্ষা পবার পরও পথভ্রষ্ট হয়ে গেল, ড্রাগ এডিকটেট হয়ে গেল।
আমি মনেকরি, সমাজে শাহরুখ খানের অনেক দেয়া ও পাওয়া হয়েছে। এবার উচিত ছিল- পেশার পাশাপাশি ‘পরিবার, সন্তান ও নিজেকে’ আরো বেশী সময় দেয়া, গুরুত্ব দেয়া, রিলাক্স নেয়া। টাকা বা খ্যতির পিছিনে দৌড়ানো কমানো। কারণ- তার যে পরিমান খ্যাতি হয়েছে, টাকা হয়েছে, মনেহয় কয়েক পুরুষ শুয়ে বসে খেতে পারবে। তারপরও তার কেন যেন সবুর, শান্তি-স্বস্থি ছিল না। চোখ-মুখ ছিল চৌকষতায়, ব্যস্ততায় ভরপুর। কিছু একটা না পাওয়ার বেদনা যেন ছিল তার বাস্তব প্রকাশে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশী টাকা রোজগারের পক্ষে নই। বেশী ব্যস্ত থাকার পক্ষে নই। যদিও রিমোটে কাজ করায়, অনলাইনে অফিস চালানোয় ব্যস্ততা ছাড়তে চায় না। সকাল আটটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায়শ কাজ করতে হয়। তবে, আমি ব্যস্ততাকে গুরুত্ব দেই না। আমার শরীর ব্যস্ত থাকলেও, হৃদয়কে গ্রাস করতে দেই না।
আমার এই ব্যস্ততা মুক্তির সহজ কৌশল হলো, আশা-আকাঙ্খা, স্বপ্ন-সাধনা সম্ভবের ও প্রয়োজনের সীমার মাঝে রাখা।
বাংলাদেশে থাকতে, মাসে ‘প্রথম শ্রেণী কর্মকর্তা’দের বেতনের সমান রোজগার করতে পারলেই আমি মহাখুশী থাকতাম। তাই ২০০২ সালে সংসার শুরুর পর থেকে, ঢাকায় আমার কোন অভাব হয়নি, ব্যস্ততা গ্রাস করেনি।পাক্কা ১০বছর জামাই বউ মিলে নিয়মিত ঘুরাঘুরি করছি , দামি দামি রেষ্টুরেন্টে খেয়েছি। সবুরের কারণে খামিসামা আমাকে কখনো নিরাশ করেনি, যা চেয়েছি তাহাই পেয়েছি।
অতি দামের দেশ জাপানে, বাড়িতে বসে অনলাইনে অফিস চালিয়ে, ফ্রিল্যান্সিং করে প্রথম শ্রেণীর রোজগার ( ৪-৫ হাজার ডলার) করতে পারি না। অভাব থাকলেও গায়ে মাখি না, সমস্যা থাকলেও সমাধান হয়ে যায়। বউকে মাসে ১-২ হাজার ডলার দিয়েই মাফ চাই।
জাপানে আমার টানাটানি থাকলেও ব্যস্ততা নেই। শুধু ব্যস্ততা আছে ফেইসবুকের মাগনা পোষ্টিং আর কমেন্টেস অকথা-কুকথা নিয়ে। এই ব্যস্ততাও কমানোর সকল কৌশল প্রয়োগ করছি। প্রয়োজন ছাড়া নিউজফিড পড়ি না, স্ক্রল করি না, অন্যের টাইম লাইনে গোয়ান্দাগিরি করি না- ভালো ফল পাচ্ছি।
কম রোজগার করি, তাই মাঝে মাঝে বউ রাগ করে । বলে,
– তিনজন ছেলেমেয়ে, ৩-৪ লাখের কম হয় না। আমি বলে দিয়েছি, যা দেই তার চাইতে বেশী দিতে পারুম না। যদি বলেন – টোকিওতে যাবো, টাকা পাবেন, কিন্তু আমাকে পাবেন না।
বউ কাদুকাদু হয়ে বলেছে ,
– ঠিক আছে, আপনার টোকিও তে যাওন লাগবো না। সঙ্গে আছেন , সঙ্গে রাখুন। কম টাকা দিলেও সমস্যা নাই। আমিও তো চাকুরি করি। বাড়িতে বসে আপনি অনেক রোজগার করেন। সবজি ক্ষেতে কাজকাম করে পুষিয়ে দিবেন।
তাই করছি।
টাকা পয়সা না থাকলে আমার খাবাপ লাগে না। কারণ আল্লাহ’র রহমত- আমার কোন লোন নেই। আমার কাছে কেউ টাকা পায় না, আমি বড়-বড়, ধনী-ধনী অনেকের কাছে টাকা পাই। দেয় না। হয়তো আর দিবেও না।
তবে গত মাসে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। পুত্রের নতুন কম্পিউটার দাবী ও আমার না দিতে পারার বেটাগিরি আবেগে।
আমার পুত্র করোনেট এখন ১৬বছর বয়স। এরিয়ানের কাছাকাছি বয়স। ‘বিশ্ববিদ্যালয় যাবে মিউজিজ পড়তে’।
ঢাকায় আমার দুইটা ম্যাক ছিল, একটা পতিত থাকার কারণে- করোনার আগে এনে দিয়েছি। খুশি হয়েছিল। কিন্তু তার নাকি প্রয়োজন আরো বড় ও শাক্তিশালী। বলে ৩৫ মান দেও < মানে ৩৫০০ ডলার>। আমি বলেছি,
– আমার টাকা তো ঢাকায়। করোনার পর এনে দিব।
– না, অনেক দেরী হয়ে যাবে।এখন দেও!
হঠাৎ শুনি করোনেট লোকাল শপিং মলে পার্টটাইম কাজ নিয়েছে। উদ্দেশ্য কম্পিউটারে টাকা জোগাড়। এত অল্প বয়সে কাজ নিয়েছে শুনে আমি মাইন্ড করেছি। বউ বলে
– কষ্ট নিয়েন না। এটা বাংলাদেশ না, জাপান! সবাই অল্প বয়স থেকেই কাজ করে। কাজের সুযোগ আছে। সমাজিত স্বীকৃতি আছে।
– তার মানে এখনই, ১৮বছর হোক, বা বিশ্ববিদ্যায়ল পাশ করুক।
গতকাল দেখি- হঠাৎ পোষ্টে একটি বিশাল কম্পিউটার বাসায় হাজির। সুন্দরী বউকে বললাম,
– কার?
– করোনেট কিনেছে। নিজের টাকায়। তিন মাসে শোধ করে দিবে।
– তাই নাকি?
– হ, তেরা কথা বলবেন না। এপ্রিসিয়েট করবেন।
– এখন কাজ করলে তো লেখাপড়া ভালো হবে না ।
– আরে না, হবে। জাপানে ক্লাসে এক নম্বর দুই নম্বর নাই। সততা, দক্ষতা ও রোজগার শেখায় জাপানি লেখাপড়ার লক্ষ্য, সেটা হবে।
বউয়ের কথা শুনে একটু আশস্ত হলাম। তবে বাঙালি মন থেকে এখনো পিতার মাতাব্বরি আবেগ ত্যাগ করতে পারেনি।
পরিশেষে সবার প্রতি অনুরোধ রইলো,
– টাকাকড়ি, ধনধৌলত, খ্যাতিসম্মান সবই পরিবার ও নিজের সুখের জন্য। সুখ ও শান্তি নষ্ট করে, অতিব্যস্ত হয়ে, সব পেয়ে সব হারানো কারো ঠিক না। নিজেকে ও সন্তানদের কে প্রয়োজন ও সম্ভবের গন্ডিতে রাখবেন। দেখবেন জীবন ও সংসার সুখ-শান্তিতে ভরে গেছে।
সম্পদ থাকলেও, প্রয়োজনের বাহিরে সন্তানদের টাকা-পয়সাদেয়া ঠিক না। কিন্তু সাউথ এশিয়ান ও উন্নয়নশীল দেশের ধনী মানুষেরা দেয়। উন্নত দেশের মানুষ তেমনটা দেয় না – যেমন ওমাবার মেয়ে রেষ্টুরেন্টে কাজ করে… আমার পুত্র শপিং মলে কাজ করে <যদি আমি তেমন বড় মানুষ না..>
ছেলেমেয়েরা – কোথায়, কখন ও কার সাথে মিশে বিষয়টা বাবা-মা’র নিয়মিত খেয়াল রাখা উচিত। যদি না রাখে তবে তবে হয়তো মাস্তি মাস্তির নামে, ফর্তির নামে – পঁচা বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে মিশে অল্প বয়সেই এটাসেটা করবে! গাজা-চরস, বাবা-ফেন্সিডিল খাবে; যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যর জন্য খতিকর। বিনা কারণে হয়তো আপনাদের পকেট খালি করবে, সামাজিক অবস্থানকে অপদস্ত করবে, আইন আদালতে দৌড়াতে বাধ্য করবে।
সবাই আরো সজাগ, সচেতন ও সর্তক থাকবেন।
Oct 7, 2021 | সাহিত্য
ভুনা খিচুড়ি পাকাইছি। ১০০% ডাইবেটিস ও হাইক্যালস্টেরল ফ্রেন্ডলি। পরিমান আগের অর্ধেক। বাটার দেয়া হয়নি, একটু তেল দিয়ে ফ্রাইপ্যান ঘষেছি মাত্র। জাপানি দামী গরুর মাংসের বদলে, হালাল ডিমবাজি।
এপিটাইট কমানোর জন্য হাতের বদলে চামাচ দিয়ে, আস্তে আস্তে খাচ্ছি, মন্দ না । মডেষ্ট ব্র্যাকফাস্ট কাম লাঞ্চ।
কাল ডাক্তার সাহেব কইছে। আজ সুগারমাত্রা ৮.৪, আগে ছিল ৭.৪। এক বেড়েছে। পরের বার সাতের নীচে না কমলে – ইনুসিলিনের ইনজেকশন।
আমি ইনজেকশনকে ভয় পাই। ভাবি – ইনজেকশন নেয়া মানে ডাইবেটিসকে পুরো স্বীকৃতি দেয়া। যা দিতে চাই না। তাই পুরোদমে আগামী ২২ ডিসম্বর পর্যন্ত ডায়েট ও মেদ কমানোর ঘুরাঘুরি চলবে। হাটার সময় ছবি তোলা, ক্যামেরা রাখার নিষেধ থাকলেও মানবো মা।
দেখি না কি হয়। যদি রক্তে চিনিরমাত্রা না কমে, তবে হাল ছেড়ে দিব। আবার বাঙালি ষ্টাইলে, হাত দিয়ে ঘষে নলা পাকিয়ে, ভর্তাভাত খাওয়া শুরু করবো।
যা আছে কপালে- দুই দিন আগে আর পরে মরতে তো হবেই। খেয়ে মরাই ভালো, জাপানিদের মত কিপটামি করে, না খেয়ে মরতে চাই না।
Oct 4, 2021 | সাহিত্য
‘হারুকি মুরাকামি’ জাপানের তুমুলে জনপ্রিয় একজন লেখক । অনেকে বলেন- মুরাকামি, জাপানের হুমাযুন আহম্মেদ। আমি বলি তার চাইতেও বেশী। কারণ ডিজিট্যালের এই লেখালেখির মরা যুগেও, তার বই প্রকাশের আগেই ১৫-১৬ লক্ষ কপি প্রি-সেল হয়ে যায়। লেখালেখি করে যে বিত্তশালী হওয়া যায় – তার প্রমান করেছেন ‘হারুকি মুরাকামি’ ও আমাদের প্রিয় হুমাযুন আহম্মদে।
‘হারুকি মুরাকামি’ শুধু লেখালেখি না, নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি, মানে এথলেট পছন্দ করেন। দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ান আর মনের আনন্দে পাঠকের মনজয় করা বই লিখেন।
আরেকটা কাজ তিনি করেন – নবেল প্রাইজের সময় আসলেই, নবেলে জন্য আলোচিত হন, কিন্তু শেষ মেষ পান না । হয়তো তার লবিং টা ডক্টর ইউনূসের মত পারফেক্ট হয় না।
নবেল যে শুধু কর্মগুণে পাওয়া যায় না, লেবিং এর জোড়ে পেতে হয়, তার প্রমান – ৯ বার তালিকা উঠার পরও গান্ধীজি পুরুস্কার না পাওয়া! ৬ বার আলোচিত হওয়ার পরও লিও টলস্টয় ঘরে না যাওয়া। কিন্তু বহুযুদ্ধ বহাল রাখার পরও অজানা কারণে ওবামার শান্তি নবেল পাওয়া; অর্থনীতিতে কাজ করে শোষনের জাল ‘ক্ষুদ্রঋণ’কে অফিসিয়াল রুপ দেয়াতে আমাদের মহামতি ইউনূসের পাওয়া, অবশ্যই পুরুস্কারটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
যাইহোক, জাপানি এই লেখক কেন নবেল পান না, সে বিষয় গত কয়েকদিন ধরে ফেইসবুকে এটাসেটা লেখা হচ্ছে। এক বন্ধু লিখেছেন,
‘আমি ও মুরাকামি এখনো নবেল পাইনি’।
আরেকজন লিখেছেন,
‘হুমাযুন আহম্মেদরা জনপ্রিয় হতে পারে, নবেল পায় না।’
মুরাকামি কি আসলেই জাপানের হুমাযুন?
একমত হই বা না হই, পছন্দ করি বা না করি, বাংলাদেশে নবেল পাওয়া মত অনেক লেখকের জন্ম হয়েছে, কিন্তু কেউ পাননি, এমন কি আলোচিও হননি।
এ বিয়েষে অতি সাম্প্রতিক লেখকের উদাহরণ – হুমাযুন আজাদ কে দেয়া যেতে পারে। আর নারী অধিকার আন্দোলনের কারণে, ‘তসলিমা নাসরিনের’ নাম বললে হয়তো অনেকে গোস্বা করবেন। তবে সম-অধীকারের সাহসী প্রস্তাবে সে অবশ্যই পুরুস্কার পাওয়ার যোগ্য। আমি মনেকরি তসলিমার অনেক লেখা, অরুন্ধতী রায়কেও হার মানায়।
মুরাকামি নবেল পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে, সাহিত্য প্রেমিক আমার সুন্দরী জাপানি বউকে করলাম,
– এবার সাহিত্যে নবেল টা মুরাকামি পাবেন!
আমার বউ বলে,
– মুরাকামি জনপ্রিয় লেখক, তবে নবেল পাওয়ার মত না। পেলেও তা ঠিক হবে না। মুরাকামির লেখায় চমক আছে, তবে ডুগডুগি ইলিমেন্ট ও যৌন সুরসুরিতে ভরা, যা পাঠকেদেরকে যাদুর মত কাছে টানে। কিন্তু নৈতিকতা ও সুশীলতা কমই শেখায়। জাপানের বাহির থেকে মানুষ উনাকে অনেক মহান লেখক হিসাবে জানে, আসলে তত ভালো না।
বউয়ের কথা শোনার পর মনে হলে,
– মুরাকামি বাংলাদেশের শত বইয়ের জনক ইমদাদুল হক বা অরুণ চৌধুরীর মত নয় তো?
মুরাকামির বিনয়
নিজেকে কখনোই অনন্যসাধারণ মনে করেন না বিশ্বখ্যাত জাপানি জনপ্রিয় লেখক মুরাকামি।
একবার নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে দৌড়ানোর জন্য গেলে এক মহিলা তাঁকে জিগ্যেস করেন তিনিই সেই বিখ্যাত জাপানি ঔপন্যাসিক কি না?
তিনি জবাবে বলেন, না ঠিক তা নয়, আমি কেবলই একজন লেখক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন লোকজন আমাকে এভাবে জিগ্যেস করে আমার খুব অবাক লাগে, কারণ, আমি একজন সাধারণ মানুষমাত্র। বুঝতে পারি না মানুষ কেন আমার সাথে কথা বলতে চায়।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজেকে একজন শিল্পী মনে করি না। লিখতে পারে তেমনই একজন মানুষ কেবল।’
বিস্তারিত // https://bit.ly/2X094ro
——-
ফটো ক্রেডিট: imdb.com