এসো ফেইসবুক ঝামেলা থেকে মুক্ত হই।

এসো ফেইসবুক ঝামেলা থেকে মুক্ত হই।

জেনে বা না জেনে, বুঝে না বুঝে আমরা ফেইসবুকে মাত্রারিক্ত ভাবে যুক্ত হয়েছি। আমাদের চেনা-অচেনা অনেক বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক হয়েছে। আমার পরিবারিক ও ব‍্যক্তিগত অনেক তথ‍্য, ছবি ও ভিডিও সহজে প্রকাশের কারণে আর্কাইভ হয়েছে। ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে এটা পুরোপুরি বাদ দেয়া যাবে না। তবে সোশাল ডাইট সম্ভব। আবেগে তাড়িত হয়ে মাত্রারিক্ত ব‍্যবহারের কারণে আমাদের অনেক মূল‍্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। আসল কাজ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে মনযোগ চলে যাচ্ছে , যা অনেকটা ঝামেলার। ফেইসবকু ঝামেলা থেকে পরিত্রাণের আমার সহজ বুদ্ধি –

১) মোবাইল থেকে ফেইসবুক ও ইন্ট্রোগ্রাম এপস ডিলট করা, এবং ব্রাউজ করে ব‍্যবহার করা।
২) সকল অটো-রবোটিং নোটিফিকেশন অফ করা, হিউম‍্যান কমিউনিকেশনকে গুরুত্ব দেয়া।
৩) প্রয়োজন ছাড়া নিউজফিডে আনলিমিটেট স্ক্রল না করা ।
৪) অন‍্যের পোষ্টে কমেন্ট ও লাইক শেয়ার কম করা । নিজের পোষ্ট দেয়া। সময় নষ্ট বহুদিনে গড়া নিজের সম্মানহানি করা। বিষয়টাকে অতি আবেগে তুচ্ছ না ভাব।
৫) পত্রিকার মত নিদ্দিষ্ট সময় ফেইসবুক খোলা/পড়া। দিনে একবার বা দুইবার , শুধু কম্পিউটার থেকে , ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের বেশী ব‍্যবহার না করা।
৬) ফেইসবুক যে সময় নষ্ট করে, আমাদের জন‍্য অলাভজক হলে জুকারবাঘের জন‍্য এটা মহালাভের এই বিষয়টা মনে আনা ।
৭) ফেইসবুকে বদলে অন‍্য সোসাল মিডিয়া যেমন – লিঙ্কডইন ব‍্যবহারে মনোযোগী হওয়া।
৮) ফেইসের মাধ‍্যমে অতি সহজে ধনী ও বিখ‍্যাত হওয়ার মানসিকতা পরিত‍্যাগ করা। লাইক ও শেয়ার হাঙ্গার পরিত‍্যাগ করা।
৯) অন‍্যকে বদলানো বদলে, নিজের বদলানো ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। অন‍্যের টাইম লাইনে অযথা গোয়েন্দাগিরি
না করা।
১০) সকল প্রকার এআই নোটিফেকিশেন বা এলার্ট বন্ধ রাখা
১১) যে সব বন্ধু, আমার মত অতিরিক্ত পোষ্ট দেয়, যাদের ভয় বা হিংসা লগে তাদেরকে আনফ্রেন্ড বা আনফলো করা
১২) যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি বা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাদেরকে আনফ্রেন্ড করা। কারণ তারা এক ক্লিকের বন্ধু, হয়তো ফেইক ও অনিরাপদ।
ইত‍্যাদি

আমি সবগুলো করতে পারলেও ৫ নম্বরটা করতে পারি না ।কাজের কারণে আমাকে সব সময়ই অনলাইনে থাকতে হয়। কম্পিউটার এখন আমার শরীরের অংশ হয়ে গেছে।

প্রথম আদম ও ইভের সন্ধানে…

প্রথম আদম ও ইভের সন্ধানে…

ছোট বেলা থেকে আমার একটা ভদ্রবাতিক আছে, সব কিছুকে বিজ্ঞান, যুক্তি ও নান্দিকতার সাথে মিলানোর চেষ্ঠা করি। আমি মোটাসোটা লাজুক মানুষ, তাই আমার বুদ্ধিও একটু মোটা – আসল জায়গায় হাত দেই তবে প্রতিবাদী, সংশয়বাদী এক কথায় গোড়া নাস্তিক বা আস্তিকদের মত একরোখা হতে পারি না। একটু নন্দ দুলালের মত হেলেদুলে চলতে ভালোবাসি । ফলত আমার চিন্তা-চেতনা খুনসুটি থাকলেও গাঢ়ে ত্রাস ও রুখতা ভর করতে পারে না।

অনেক চিন্তা ভাবনা করে বুঝলাম, আমার ম্বভাবটা সনাতনি ও সেকেলে হলেও নিরাপদ। যার সারমর্ম- ধর্ম ও দর্শন ছাড়া যাবে না। কারণ আমি এখনো মনেকরি ‘ধর্ম-কালচার, দর্শন-মিথ’ সত‍্যের মন, অদৃশ‍্য রুপ। মন ছাড়া সত‍্যের দেহ, মানে দৃশ‍্যমান সত‍্য- বিজ্ঞান মৃত।

এক কথায় ধর্ম-দর্শন প্রমানহীন সত‍্যের প্রস্তাবনা, আর বিজ্ঞান হলো সত‍্যের প্রমানযুক্ত প্রস্তবনা। এ বিষয়ে আমি প্রিয় বিজ্ঞানী আইনষ্টাইনের সাথে একমত,
‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান ল‍্যাংড়া, আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধত্ব’।

বিজ্ঞানীদের ও আমার ধর্মটা অবশ‍্যই মোল্লাতান্ত্রিক আচারে , বাতাসা-প্রসাদ, পূজো-হরিবল, ওয়াজ-মহফিলে সীমাবদ্ধ নয়। হৃদয় থেকে হৃদয়ে, ভালোবাসায়, প্রকৃতিক নিয়মে সারা মহাজগতে উদ্ভাসিত, আলোকিত।

দর্শন, ধর্ম ও বিজ্ঞান প্রেমিক হওয়ার কারণে আমার দিনের অধিকাংশ সময়ই অজান্তে অলাভজনক চিন্তায় ব‍্যয় হয়। ক্লাইটের কাজ করার পরে যা সময় পাই, তার পুরোটা ব‍্যায় হয় ‘টুকিটাকি পড়া ও লেখালেখিতে’, একটু এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে ছবি তোলতে। শিল্প, দর্শন ও উন্নয়ন- আগ্রহের বিষয়ে কোথায় নতুন তথ‍্যের আঁচ পেলে – জানার জন‍্য আমি উৎগ্রীব হয়ে যাই।

তুখোড় ব‍্যবসা সফল সালাফি ‘জাকির নায়েক’কে নিয়ে একটি পোষ্টের সূত্র ধরে জানলাম – ‘আদম ও ইভের’ কাহিনি আক্ষরিক সত‍্য না, প্রতীকি সত‍্য। খ্রি. পূ. ২৫০০-৩০০০ সালের দাপট- আক্কাদিয় জাতির লোককথা, নৈতিকমিথ ( Research link: https://bit.ly/3EAs0SF ) থেকে নেয়া। এই মিথের উপর ভিত্তি করেই ইহুদী বাইবেল ( ওল্ড টেষ্টামেন্ট – মানে তাওরাত ও যবুর ) এর প্রথম অধ‍্যায়- ‘জেনেসিস’ রচিত। যার মুলস্তম্ভ এক ইশ্বরবাদী সকল সেমেটিক ধর্মের।

মিথ মানে লোককথা, রুপকথা। তাইতো আদম ও ইভের মিথের কোন ঐতিহাসিক ও জিওলজিক‍্যাল প্রমানিক ভিত্তি নেই। থাকা সম্ভবও না।

মিথ, ধর্ম, দর্শন নিয়ে এত ঘটাঘাটি করি তারপরও ১৯৮১ সালে আদম হাওয়া’ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা- ‘THE MYTHICAL RELATIONSHIPS BETWEEN: ADAM AND THE MYTHS OF ANCIENT MESOPOTAMIA’ বহু বছর পর
হাতে পেলাম। তাই একটু রিগ্রেট ফিলিং হয়েছে।

আমি জিওলজি পড়া, ধর্মীয় স্বাধীনতা বিশ্বাসী একজন সর্বধর্মীয় ভক্ত, মানবাধীকার ও মিডিয়া কর্মী। জিওলজিক‍্যাল টাইমস্কেলে পৃথিবীর ৪.৫ বিলিয়নের বছরের ইতিহাস প্রমানিত। প্রধান প্রজাতির প্রায় সকল জীব ও প্রানের অস্তিত্ব ফসিল ও নানান উপায়ে প্রমানিত হয়েছে। জিওলজি বা আরকিওলজিতে অপ্রমানিত ‘ইডেন গার্ডেন’ নিয়ে প্রশ্ন করে, আমি মাঝে মাঝে ঘেমে যাই। উত্তরের কোন কুলকিনারা পাই না।
– যে আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীর প্রায় ৪০০-৫০০ কোটি সেমেটিক বিশ্বাসীরা প্রথম মানব বা মানবী বলে মান‍্য করে , তারা কি আসলেই ঐতিহাসিক বাস্তব চরিত্র? এ প্রশ্নের উত্তর যদি মিথ‍্যা হয়, তবে সংখ‍্যা গরিষ্ঠ সেমেটিকদের বিশ্বাসের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাবে। হয়তো এ কারণেই আব্রাহামিকরা বিষয়টা নিয়ে তেমন ঘাটাঘাটি করে না।

প্রমানিত না হলেও – আবেগগত ও সাইকোলিক‍্যাল দৃষ্টিতে- আমি
বাবা আদম, মা হাওয়া ও ইডেন গার্ডেনের মহানাটককে মানি, পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা আলোচনায় যত্রতত্র ব‍্যবহার করি। আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে ইডেন গার্ডেনের সমরুপ খুঁজে পাই।

সংসারের কর্তাকে আদম, কর্তীকে ইভ, আর ঝামেলা সৃষ্টিকারী তৃতীয় পক্ষকে লুসিফারের ভূমিকাতে বিচার করলে, জটিল অঙ্কটা সরল হয়ে যায়। গন্দম ফলকে যদি ‘প্রিমেরাইটাল বা এক্সটা মেরাইটাল সেক্স’ গন‍্য করা হয়, তবে তো মানবের পতনের কারণটা বুঝা যায়। তবে গডের পজিশন রুপক ও বাস্তবে একই। কারণ তিনি সর্বব‍্যাপি, সয়ম্ভু, নিরাকার, পরম ভালোবাসার আধার।

যাইহোক আদি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনেক আলোচনা করা যেতে পারে। আমার ‘বুঝ ও দর্শন’ অন‍্য আরেকটি প্রবন্ধে তুলে ধরবো।

সর্বোপরি আমার প্রস্তাব – ধর্মীয় সত‍্যের নামে অনেক মিথ‍্যা আমাদের জীবন, সংসার ও বিশ্বকে আদি-অজগরের মতে আষ্টেপিষ্টে গ্রাস করে আছে। যা অনেক সময় আমাদেরকে অন্ধ ও বিবেকহীন করে দেয়। তাই কোন কিছু বিশ্বাস ও আচার হিসাবে পালনের আগে আমাদেরকে অবশ‍্যই প্রশ্ন করতে হবে। প্রমানিক বা অপ্রমানিক যেভাবেই সঠিক মনে হোক না কেন – অন‍্যের ও নিজের জীবনের জন‍্য ক্ষতিকর কোন কিছু গ্রহন করা যাবে না। প্রচার ও প্রসার করা ঠিক হবে না। অযথা সম্পদ, শক্তি ও সময় না করাই শ্রেয়।

যেই আদম-হাওয়া আক্কাদিয় জাতি মিথ, তাকে যদি ‘শ্রীলংকার’ আদমশৃঙ্গের শ্রাইনে খুঁজে বেড়াই – সেটা যেমন সঠিক সত‍্য হবে না, আবার প্রতিকী গল্পকে বাস্তব বলাটাও ঠিক হবে না।

কল্পনাও অনেক সময় বাস্তবের চেয়েও বাস্তব হয়। তাইতো কবিগুরু বলেছেন।

“….নারদ কহিলা হাসি, সেই সত্য যা রচিবে তুমি-
ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’ …”


Art Credit: Wiki Pedia
Artist: Peter Paul Rubens, Jan Brueghel the Elder
Year: c. 1615

‘ডেভেলাপমেন্ট ট্যুরিজমে’ ও ‘ঘরে ফাইভ ষ্টারের নাস্তা’

‘ডেভেলাপমেন্ট ট্যুরিজমে’ ও ‘ঘরে ফাইভ ষ্টারের নাস্তা’

সকালে ঝলমলে বৌদ উঠেছে। চারদিক আলোর বৃষ্টিভালোবাসায় সিক্ত, চকচকে। প্রাতঃভ্রমণে ওসাদো পর্বত থেকে অনবরত আসা শুদ্ধবাতাস আমার হৃদয়ে প্রেম জাগিয়েছে। মনে হয়েছে, আমি মহাকালের এক মহাযাত্রী। দিন দিন প্রতিদিন নিজের অজান্তেই ভালোবাসার মহাকাব‍্য রচনা করে চলছি।

ঘরে ফিরেই নাস্তা বানালাম। শুদ্ধমন নিয়ে – ফাইভষ্টার রেষ্টুরেন্টের চাইতেও বিশুদ্ধ করে নাস্তা বানালাম। খাবারের আইটেম গুলো সহজ সরল হলেও স্বর্গীয়। জাপানি সুন্দরী বউয়ের নিজের হাতে বানানো প্রেমমাখা ইংলিশ ব্রেড, চিজপনির, মধু, গাছের পারসিমন (কাকি), ব্রেন্ড কফি আর সবজি স‍্যুপ।

দেশে থাকতে – যখন ‘মানবাধীকার ও উন্নয়ন’ নিয়ে আমার কন্ঠ সোচ্ছার ছিল, তখন দেশ বিদেশ থেকে ‘মাল্টিমিডিয়া জার্নালিষ্ট’, ‘ফটোগ্রাফার’ কাম ‘একটিভিষ্ট’ ( আরো কত কি) নামিদামী মানুষ হিসাবে ‘ডেভেলাপমেন্ট ট্যুরিজমে’র সুযোগ পেতাম। প্রয়াশঃ গরীর মানুষের মুখের ছবি দিয়ে প্রজেনটেশন করে, দেশ-বিদেশের ফাইভষ্টার হোটেলে মাগনা খেতাম। আর দ্রারিদ্রমুক্ত, ব‍্যাবধানমুক্ত
উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতাম।

জাপানে আসার পর থেকে আমার সেই কর্মযজ্ঞে শ‍্যাওলা পড়েছে। কারণ এখানে প্রাইভেসী, কপিরাইট, সরকার ও জনগনের দ্রুত সমতা-সমাধানে ইস‍্যু পাওয়া মুস্কিল। সবাই শিক্ষিত, ধনী ও সচেতন হলে- এনজিও, ফটোগ্রাফার, জার্নালিষ্ট ও একটিভিষ্টদের যে ভাত নাই তা হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি।

এরপরও বাংলাদেশের নাম ভাঙ্গিয়ে মাঝেমাজে টুকিটাকি দাওয়াত পাই। সেটাও হয়ে গেছে – কারোনার কারণে অনলাইন। ফাইভষ্টারের নাস্তা তো পরের কথা, বক্তৃতা শেষে যে নাজরানা পেতাম, সেটাও পাই না। আয়োজক কয়,
– ভাই দুঃখিত, এবার বাজেট নাই। ভলেনটিয়ারলি করে দিবেন। আপনি তো ভালো মানুষ, টাকার কাঙ্গাল না।

ভাবগতি দেখে মনেহচ্ছে ‘এসডিসি’ আর ‘এইচআর’ এনজিওত কাজ করার ফলে ডেভেলাপমেন্ট ট্র‍্যুরিজমের সেই সুযোগের সুদিন আর আসবে না। নিজের টাকা দিয়েই বিদেশে যেতে হবে, ফাইভস্টারে খেতে হবে।

মানুষ এখন দিন দিন ধনী হচ্ছে, সোস‍্যাল মিডিয়ার কারণে সবাই সব দ্রুত জেনে যাচ্ছে। কেউ কোন কিছু জানতে, শেখতে ও পাড়তে চায় না। ভাব দেখায় – সব জানে, সব মানে।

আর ইউরোপ-আম্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া-জাপানের মত যদি কোন ভাবে আইনের শাসন বাংলাদেশে এসে যায়, সবাই শিক্ষিত-সচেতন হয়ে যায়, তবে তো আর কোন কথাই নেই। উন্নয়নসভার নামে মাগনা ডালপুড়ি আর সিঙ্গারা খাওয়া পুরো বন্ধ হয়ে যাবে।

ভবিষতের প্রস্তুতি হিসাবে, নিজেই ‘ফাইভ স্টার’ হোটেলের আদলে মজার মজার খাবার বানানো অভ‍্যাস রপ্ত করছি। দেখি না কি হয়।

আমার নিরামিষ ভোজের সুখশান্তি

আমার নিরামিষ ভোজের সুখশান্তি

লাল মাংসের হারাম ও হালাল বির্তক, এবং স্বাস্থ‍্যহানী থেকে বাঁচার জন‍্য সবজির পথ আবার বেছে নিয়েছি।

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গান্ধীবাদ চর্চাকালে নিয়মিত নিরামিষ ভোজি ছিলাম। শেষমেষ টাকার অভাবে, প্রথম প্রেমিকা হারানের পর যখন বুঝলাম – গান্ধীজি’র মত নেংটি পড়ে, সব ছেড়ে দিয়ে মহামতি হওয়া যাবে না, সংসার করা যাবে না, তখন আবার নগর সভ‍্যতায় গমন করেছিলাম। মাল্টিমিডিয়ার জগত এসেছিলাম।

২২ বছর পর অতীত হাতরিয়ে দেখছি, নিরামিষ ভোজের অভ‍্যাসটা মন্দ ছিল না। খরচ কম, লাভ বেশী ছিল। যদি চালিয়ে যেতাম- হয়তো স্বাস্থ‍্য, নীতি, ধর্ম ও পকেট সবই আরেটু ভালো থাকতো।

তখনকার কালে অভিজ্ঞতা থেকে অহিংসবাদের সম্পর্কে বুঝেছি: ক্ষমতা পাওয়া ও টাকা রোজগারের আগেই টাকা ছেড়ে দিতে হয় না। এতে পদে পদে অপমানিত হতে হয়। টাকা ও ক্ষমতা রোজগারের পর ছেড়ে দিলে – মহাত্না ও দানবীর হওয়া যায়। নইলে স্বীকৃতি পাওয়া না।

তাই আবার চেষ্টা করছি। তিন বেলায় সবজি-ডাল, ডিম-দুধ খাচ্ছি। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার চেষ্টা করছি। সুন্দরী জাপানি বউ তো আমার অবতারি সুশৃঙ্খল কাজকাম দেখে হতবাক। হয়তো মনে মনে ভাবে,
– আমার অবাধ‍্য স্বামীটার কি হইলো। মাংস খায় না, কিন্তু মাংসের সসেস খায়। মাথা ঠিক আছে তো? মোদি আর লালু যাদবের মতো নিরামিষি ভোজের ভেক ধরে নাই তো?

যে যাই বলুক, মজার ও দামী মাংস পেলে কিন্তু খেতে ভুলবো না ।

আমার মতবাদ- অন‍্যের ক্ষতি না করে, মাঝে মাঝে অনিয়ম করা ভালো, এতে নিয়মের দাম বাড়ে। আমার নিরামিষ ভোজ গোড়ামি ধর্মচর্চা নয়, শুদ্ধতা চর্চার অংশ।

চেষ্টা করে দেখি মহাত্না’র মতো আবার যুক্তিশীল মহামতি হওয়া যায় কিনা। তাই আজ লাঞ্জে ডাল ভর্তা ঢেড়শ ভর্তা খাচ্ছি। গত দুই সপ্তাহ ধরে- কম খেয়ে, বেশ হালকা শান্তি শান্তি লাগছে।

“ওঁম শান্তি, জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক!”

সামাজিকতার নামে অসামাজিকতা : জাপান ও বাংলাদেশে সোস‍্যাল মিডিয়ার ব‍্যবহার।

সামাজিকতার নামে অসামাজিকতা : জাপান ও বাংলাদেশে সোস‍্যাল মিডিয়ার ব‍্যবহার।

১. সামজিকতা ও অসমাজিকতা

প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে অনেক পোষ্ট, বই, ওয়েবসাইট, ব্লগ, নাটক, ভিডিও ইত‍্যাদি তৈরী হচ্ছে। বিষয়টা বিপুল আনন্দের। যা চেয়েছিলাম তাই হচ্চে। ‘কুন হাইফা কুন’ – ‘বললাম হও, হয়ে গেল’। আমাদের ক্ষমতা এখন অনেকটা খামিসামার সমরুপ। তবে বেশী ভালো যে ভালো না – তার প্রমান, ‘যা ইচ্ছা তা বলা’, ‘যা ইচ্ছা তা করা’ এক অর্থে স্বেচ্ছাচারিতার কালচার স্বগৌরবে চলছে।

– স্বেচ্চাচারিতা ও স্বাধীনতা এক না।

আমি ব‍্যক্তিগতভাবে সেন্সরশীপের পক্ষে নই। তবে প্রকাশের পূর্বে একটি শর্ত প্রকাশক ও কনটেন্ট মেকারের জন‍্য বাধ‍্যতামূলক করা দরকার। যা হতে পারে

– কনটেন্টটি ব‍্যক্তি, সংসার, সমাজ ও দেশের জন‍্য ক্ষতিকর হবে না। বাঙালির সুশীলতার ঐতিহ‍্য ও সবার সমান অধিকারকে নসাৎ করবে না। প্রত‍্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন‍্যের মানহানি করবে না। নিজের শারীরিক, মানসিক ও কালচারাল স্বাস্থ‍্যের জন‍্য ক্ষতি হবে না।

এই সুকর্মটি করতে বাঙালির যেমন পুরোটাই অনিহা, অদক্ষতায় একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। জাপানিরা তার উল্টো – ‘জান যাবে তবে মান দিবে না’। জাপানিরা অনেকসময় নিজের মন্দদিক উদ্দেশ‍্যমূলক ভাবে সোসালমিডিয়াতে প্রকাশ করলেও, অন‍্যেরটা কখনো করে না। কেউ হারমাতি করলে – আইনগত মামলার পাশাপাশি, সামাজিক ভাবে শ্রীঘরে যেতে হয়। ‘হেন্ননস্ত’ মানে ‘পাগল বা মন্দমানুষ’ হিসাবে বিনেপয়সায় খেতাব পেতে হয়।

যার কারণে বেটাগিরির মিডিয়া ফেইসবুক এখনো জাপানে জনপ্রিয় হয় নি। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রিয়তায় ফেইসবুক শীর্ষে। অনেক সময় ফেইসবুক নিজের জামাই-বউয়ের চাইতেও প্রিয় হয়ে যায়, যা হাস‍্যকর।

২. মিডিয়া কন্ট্রোল

৪০% ফেইজবুক লাইক বাংলাদেশের। এ খবর ২০১৬ সালের । এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সফলতার খবর এত দেরীতে পেলাম। আজ পড়ে মন খারাপ করেছি। এত সোস‍্যাল মিডিয়া ব‍্যবহার করেও আপডেট হতে পারলাম না। যাইহোক এখন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে হবে পারসেন্টিসটা কত বেড়েছে। শুনেছি – ঢাকায় নাকি এখন লাইক বেচা-কেনা হয়। তার মানে পারসেন্টিস অতি চালাক ‘জুকার বাঘ’এর চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্তত ৬০ ভাগের বেশী চলে গেছে, বোধহয়। কারণ – কাজ কাম কম করে, বেশী লাভের বেলায়- বাঙালি, আম্রিকান আর বৃটিশদের তিন জাতীর মাথা ভালো।

৩. জাপানে ফেইজবুক

জাপানিরা কড়া কমিউনিষ্ট, সৌদি আর অতি পুজিবাদী আম্রিকানদের মত কৌশলে, নিজের কোটে ফল রেখে মিডিয়া কন্ট্রোল করে না। সেন্সরশীপ করে না।

জাপানিদের ভাবগতি, নীতি,
– যত পার টেক ব‍্যবহার কর, কিন্তু কপিরাইট মানহানি ও প্রাইভেসী আইন মানতেই হবে। নইলে জরিমানা, মামলা ও জেল। (তবে নিশ্চিত হামলা হবে না, জারিমানার টেকা দিতেই হবে। )

ফলত মানুষ নারী-বাড়ি-গাড়ি’র ছবি দেয় না। শুধু মানুষ না, কাউকে না বলে গাড়ির নাম্বার প্লেইটে ছবি বা ভিডিও তে আসলে, সংখুব্ধের ‘ট্রেটিং’র মামলার ভয় থাকে।

মামলারর ভয়ে- দানব গোগল নিজেও স্ট্রিটভিউ তে পথচারীর ফেইজ ব্লার করতে বাধ‍্য হয়েছে।

তাই জাপানি ফেইজবুকাররা, অযথা বাংলাদেশী ফেইজবুকারদের মত ‘ধর্ম , মান-অপমান, নেতাগিরি, বাবুনগরী-রাজনীতি; নিয়ে ফেরা প‍্যাঁচাল পারে না। লাইক ও শেয়ার বেচাকেনা করে না।

জাপানি সুন্দরী ফেইজবুকারদের টাইম লাইন বেশ মজার। হেরাবেড়া তেরা- নিজের সাজন ফ‍্যাশন থাকে। ফুল-পাখি আর পাহাড়-পর্বতে ভরা। সেক্সি ফটো গুলো শুধু পর্ণসাইটে বা পারসোনাল সাইটে থাকে প্রফেশল‍্যাল হলে ।

ফেইজবুক, বাংলাদেশের মত জাপানে জনপ্রিয়তা পাইনি।
আইন শৃঙ্খলায় ও শান্তিতে বাঙালি পিছনে পড়ে থাকলেও – ফেইজবুকিং ও ইউটিউবিং এ বেশ এগিয়ে। আরো এগিয়ে যাও বাঙালি, সুযোগ তোমাদের হাতে।

জাপানের কোন অনুষ্ঠানে আগে প্রবেশ পথে- ‘নো ক‍্যামেরো’, ‘নো স্পোকিং’ থাকতো। এখন নতুন আইকন যুক্ত হয়েছে। ‘না এসএনএস’ (নো সোস‍্যাল মিডিয়া)। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বলে দেয়া হয়- কেউ যদি না বলে তোমাদের ছবি বা ভিডিও তোলে তোমার শ্রেণী শিক্ষকে বলবে। এটা শুধু প্রাইভেসীর জন‍্য নয়, চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি বিরুদ্ধে কড়া উদ্দে‍্যাগ ।

ফলত অন‍্য শিশুদের ছবি তো পরের কথা, আমি আমার নিজের শিশুদের ছবিও আরামে তুলতে পারি না। অনুমতি নিতে হয়। কষ্ঠের কথা আমরা এত সভ‍্য – বাংলাদেশ ও ঢাকার কোন অনুস্ঠানের প্রবেশ পথে এখনো দেখিনি ‘নো ক‍্যামেরা’, ‘নো এসএনএস’। তার মানে আমরা ফুটাঙ্গি দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি।কিন্তু পাবলিক টয়লেট পরিস্কার রাখতে ভালোবাসি না। পরবর্তীজনে কি হবে, তা একটুও চিন্তা করি না।

প্রচার ও প্রসারে আমরা মরিয়া থাকি। প্রয়োজনে বাস্তবতা বদলে লেজে-গোবরে করে, ছেড়াবেড়া করে ফেলি।

—-
Related podcast link: http://bit.ly/36UYXdT

পুঁজোর পায়েস

পুঁজোর পায়েস

পুঁজো উপলক্ষ‍্যে মুক্তাগাছায়, হিন্দু বন্ধুদের বাড়িতে নৈবদ‍্য – নাড়ু, চিড়ামুড়ি, মিষ্টিমন্ডা ইত‍্যাদি প্রসাদ খেতাম । জাপানে যেমনি মিষ্টিমন্ডা নাই, তেমনি সম্প্রদায়িকতার বেডাগিরিও নাই। মা দূর্গার নামে সকালে প্রসাদ মনে করে পায়েস খাচ্ছি। হৃদয় সকল ধর্মের প্রেম লালন করছি। দেখি না আরেকটু বেশী শুদ্ধ হওয়া যায় কিনা