পাঠ‍্য পুস্তক!

পাঠ‍্য পুস্তক!

বাংলাদেশে পাঠ‍্য পুস্তক আপডেটে সুখবরটা জেনে আমার মনে আনন্দধারা বইছে।

আরেকটা ভালো কাজ করার দরকার । ভালো শিক্ষক তৈরী করা , না পারলে ৫০ বছর আগের সৎ ও স্মার্টফোনহীন শিক্ষক পেলে মন্দ হবে না। ১৫০-২০০ বছর পূর্বের হাবাগোবা কিন্তু তুখোর শিক্ষক-আর্চায‍্য প্রথা আনতে পারলে তো আসাধারণ হবে আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও প্রকৃতি নির্ভর শিক্ষাপদ্ধতি অসাধারণ ছিল! কিন্ত বাঙালী পাত্তাই দিল না, অথচ জাপানীরা গ্রহন করলো আধুনিকরুপে!

আজ জাপানে ১০০ ভাগ মানুষ সুশিক্ষিত, স্বশিক্ষিত সৃজনশীল, সৎ ও স্মার্ট! বাংলাদেশের শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত হলে – বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না! যেমনটা পারেননি – জাপানের। ২য মহাযুদ্ধের পর থেকে, গত ৬০+ বছর ধরে মিডিয়া, সরকার, করপোরেট প্রমুখ সবার প্রথম ও প্রধান কেন্দ্র শিক্ষা, সেবা ও অধিকার উন্নয়ন! গনতন্ত্র, নিরাপত্তা ও সুশীলতা এখন জাপানের ঘরে ঘরে; যার দ্বিতীয় উদাহরন পৃথিবীতে নেই, এমনকি দাপটি আম্রিকা-যুক্তরাজ‍্যেও না! বাংলাদেশ নিয়ে আমার আশা-স্বপ্ন আছে; থাকবে আজীবন।

মিসাইল ও মৃত‍্যু আতঙ্ক!

মিসাইল ও মৃত‍্যু আতঙ্ক!

উত্তর কোরিয়া থেকে আজ আবার আমাদের উপর দিয়ে একটি মিসাইল চলে গেল! বন্ধুরা, যদি মরে যাই ক্ষমা করে দিও! তোমাদের ভালো না বেসে, সেবা না করেই এই বুঝি তাড়াতাডি স্বগে চলে গেলাম!…
———-
With loud fire-whistle, I woke up from sleep this morning. A ballistic missile launched again from North Korea flew over Japan and landed in the Pacific Ocean 2,200 kilometers east of Hokkaido. All we were in fear of death!

My son Koon was very worried and stayed under the table to save himself until the TV says – we are safe! The Japanese school teachers now teach the students, how one can protect the self during missile attack!

In the morning, the whole Japan was in war-alert! I was taking pictures of the horrible pre-death moments! I understand – how miserable human mind in war-field with fear of death!

It is needed to stop all kind war and conflict! We are looking an atomic free, war free peaceful world!

জেগে উঠো বাংলার নোবেল প্রেমিকগণ!

জেগে উঠো বাংলার নোবেল প্রেমিকগণ!

গত কয়েক দিনে অন্ততঃ ১০০টি নোবেল ষ্ট‍্যাটাস পড়েছি ফেইজবুকে। নিজে বা নিজের সন্তান কিভাবে নোবেল পেতে পারে কেউ তা বলেনি! সবাই বলেছে
– অন‍্যে কিভাবে পেতে পারে! কার পাওয়া উচিত, কার না পাওয়া উচিত, কে পেয়ে কি করেছে, কে না পেয়ে বিষ খেয়েছে ইত‍্যাদি!

২০১৬-১৭ সাল, এই দুই বছরে আমি বাংলাদেশের ‘শিশুদের স্বপ্নের’ উপর একটি ফটোষ্টরি করার জন‍্য অন্তত ২০০-৩০০ জন শিশু-কিশোরের সঙ্গে কথা বলেছি, ছবি তুলেছি!

‘তোমার জীবনের লক্ষ‍্য কি?’ এ সরল প্রশ্নের উত্তরে, গ্রামের অধিকাংশ শিশুরা বলেছে,

– জানি না!
– স‍্যারে জানে!
– মায়ে কইছে মওলানা হইতে!
– দেহি আল্লায় কি করে!
– পরেডা পরে দেহা যাবো! এহন ভাইবা লাভ কি?
– বাপে কইছে এইট পাশের পর বুঝানে লগে গার্মেন্টে যাইতে… ইত‍্যাদি

আর শহরের ও সুবিধাভোগী তোতাপাখি শিশুরা বলেছে,

আব্বা-আম্মা (ফেইজবুক ওয়ালা) কইছে

– ডাক্তার, ডাক্তার, ডাক্তার ….হইতে
– ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার….হইতে

( মুন্সিগঞ্জে একজন শুধু কইছে, আমি বিজ্ঞানী হইতে চাই, পদার্থ বিজ্ঞানী!)

আর ইংরজী স্কুলের ও মাদ্রাসার পুলা-মাইয়ার কি কইবো, হেইডা তো আমরা সবাই জানি, তাই পাকনাদের লগে কথা কই নাই!

এখনও ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং এ সরাসরি নবেল প্রাইজ নাই । তারপরও নবেল প্রেমিক বাংলার শিক্ষিত পিতা-মাতারা
কেন ডাক্তার ডাক্তার করে?
কেন ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার করে?
ফেইজবুকের পছন্দ, আর আসল বুকের পছন্দ ভিন্ন কেন?

উল্লেখ‍্য, বাংলার ভাবগতি দেখে মনেহচ্ছে – নোবেল প্রাইজ মানেই ‘সাহিত‍্য’ আর ‘শান্তি’র পুরুস্কার। এটা আমাদের ভুলা উচিত না, পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, অর্থনীতি জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় নোবেল প্রাইজ আছে যার একটি বাংলাদেশ এগুনো জয়ী হতে পারেনি, স্বপ্ন থাকলে আপনার আমার সন্তানও পেয়ে যেতে পারে ।

সুতরাং আশা হারাবেন না । অন‍্যের তুস্তির আগে নিজের ও নিজের সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখুন। একটু স্বার্থপর হোন! বেশী নিঃস্বার্থবাদী ভালো না! নোবেল না আসুক – বাংলার বুকে অন্ততঃ অনেক জ্ঞানী-বিজ্ঞানীর জন্ম হবে।

কষ্টের কথা, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে বলার মত ১ জনও বিজ্ঞানীর জন্ম হয়নি! অথচ কত বিশ্ববিদ‍্যালয়, কত নেকাপড়া!

এই দুর্ভাগা জাতির কি কোন অধিকার আছে নোবেল, নোবেল করার?

একজন সুন্দরী জাপানি কবিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ

একজন সুন্দরী জাপানি কবিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ

আমার পুত্র করোনেট (১২) লেখাপড়ায়’ বেশ ভালো, কিন্তু প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকে। বইপত্র-রুম গোছায় না! অতি ব‍্যস্ত থাকে! খেলাধূলার চেয়ে ডিজাইন-এনিমেশনের প্রতি তার টান। হয়তো বাবার স্বভাব বেশী পেয়েছে! আমরা ওকে কম্পিউটারের প্রতাপ ছাড়া সৃজনশীল জীবন-যাপনে অভ‍্যস্থ করতে চাই, কিন্তু পারি না। আমি যখন কম্পিউটার বন্ধ করতে বলি, তখন বিরক্ত হয়ে বলে,

– দিনে মাত্র দেড় ঘন্টা ব‍্যবহার করি! এত ডিষ্টার্ব কর ক‍্যান? তোমার মত সারাদিন ব‍্যবহার করি না! তুমি আগে কম্পিউটার ছাড়, তারপর আমি ছাড়ুম!..

“কলিকালের পুলাইপান, শাসন করার যায় না! মুখে উপর উল্টো কথা শুনাইয়া দেয়!” আমি মনে মনে বলি, “আমি কি তা পারবো রে বাবা? এটাই তো আমার নেশা-পেশা!..”

তার মানসিক চাপের কারণ অাবিস্কারের জন‍্য ‘ইউকা'(৫৫+) নামের এক কবিরাজের কাছে হঠাৎ আমার বউ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল! মরমীবাদ ও শক্তির প্রবাহের প্রতি আমার আস্থা থাকলেও কবিরাজীর প্রতি আমার ভক্তি নেই । একেবারে অবৈজ্ঞানিক, ভন্ড ও অশিক্ষিত মনে হয়।

জ্ঞান, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও অধিকার চর্চ্চায় জাপান এশিয়ার একনম্বরে হলেও; আজো এখানে নানা ধরনের আদি চিকিৎসা, কবিরাজী, হেকেমী, ঝাঁড়-ফুঁ এশিয়ান দেশগুলোর মতোই জনপ্রিয়। উন্নত হওয়ার পরও জাপান তার নিজস্ব প্রাচীন রীতিগুলো পরিত‍্যাগ করেনি। পুইরা বানাইয়া হাসপাতাল গুলো এখনও ঔষধ দেয়। কুসংস্কারগুলো বেশ গর্বের সঙ্গে লালন করে। জাপানিরা বলে,

– এগুলো আমার সম্পদ, আদি কালচার, কোন না কোন ভাবে সংরক্ষণ করতেই হবে!…

অযুক্তিক ও ক্ষতিকর দিক পরিত‍্যাগ করে জাপান আদি রীতি ও প্রকটিস গুলো অাধুনিকায়ন করেছে, যা অফিসিয়ালি স্বীকৃত ও সিটি অফিসে অধীনে সব রের্কড আছে!

‘মেইড ইন জাপান’, এমনি একটি ঝাঁড়-ফুঁ’র নাম ‘রেইকি’। যীশু’র মতো হাত দিয়ে ছোঁয়ে এ পদ্ধতিতে রোগ ভালো করে দেয়া যায়! জাপানে রেইকি’র উৎপক্তি হলেও সারা দুনিয়ায় এটি এখন বেশ নেচারাল হিলিং মেথড হিসাবে জনপ্রিয়।

পশ্চিমা আধুনিক ক‍্যামি‍ক‍্যাল চিকিৎসার পদ্ধতি প্রতি সাধারনতঃ জাপানিদের ভক্তি কম। এরা বলে, তরিৎ লাভ হলেও ক‍্যামিকেল নাকি লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী করে! তবে ইষ্ট-এশিয়ান প্রাকৃতিক চিকিৎসার প্রতি আমার বউয়ের একটু বেশী টান। জীবন ও ভাবনা প্রকৃতি নির্ভর করতে পারলে জান দেয়! বেশী দাম হলেও আরগানিক খাবার কিনে! অন‍্য প্রদেশের মাছ-মাংস-সবজি পর্যন্ত কিনতে চায় না। আমার মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি লাগে!

কবিবাজের কথা শোনা সঙ্গে সঙ্গে আমার তো রাগে চোখ দিয়ে পারলে রক্ত বের হয়। কল্পনায় ভেসে উঠেছিল বাংলাদেশের কবিরাজের পরিচিত মুখ!

‘ঝাকড়া চুল, লাল টকটকে ডেরাডেরা রক্তচোখ ওয়ালা একজন কড়া মেজাজের মানুষের ছবি, ভাঙ্গা গলায় জোড়ে জোড়ে কথা বলছে, শরীরে গন্ধের উৎকট তৈল দিয়ে ক‍্যারিশমা দেখাচ্ছে ইত‍্যাদি!’….

জাপানি কবিরাজের চিকিৎসালয় দেখে তো আমি মাথা খারাপ। আমার ধারনার ঠিক উল্টো! হিলিং সেন্টারের কামড়াটি ছোট হলেও সব কিছুই ‘পাঁচ-তারা হোটেলের’ রুমের মত সাজানো, মনকাড়া লাইটিং, পরিপাটি, সুগন্ধ ভরা, বুক সেলফে অনেক দূর্বভ বই। যা বাংলাদেশের এফআরসিএস ডাক্তার খানাতেও নাই!

আর কবিরাজ মানুষটি শিক্ষিত, সুন্দরী, স্মার্ট, মধু মাখা কন্ঠে স্মীত হেসে কথা বলেন!…

করোনেটের সঙ্গে কাউন্সিলিং করার পরে, খাটিয়াতে শুইয়ে, কতক্ষন দূর থেকে মন্ত্র-ফুঁ দিয়ে অবশেষে অাবিস্কার করলেন- করোনেটে ‘নেগেটিভ’ পাওয়ার বেশী, তাই ষ্ট্রেসে থাকে। ওকে পজেটিভ পাওয়া দিয়ে শক্তির বেলেন্সে আনতে হবে। কোন কিছুতেই চাপা-চাপি করা যাবে না। যা ভালো লাগে না, তাই যেন করতে দেয়া হয়। যেসব খারার, রঙের পোষাক ও আচরনে পজেটিভ পাওয়ার বাড়ে তার একটি তালিকা দিলেন!

পুরো চিকিৎসা পদ্ধতি আমি গেষ্টের চেয়ারে বসে দেখছিলাম । মাঝে মাঝে ছবি আর ভিডিও তুলছিলাম। টেবিলে রাখা মজাদার দামী বিস্কুট গুলো সাবার করছিলাম আর মিটিমিটি হাসছিলাম!

প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে- ইউকা সান, ১ ঘন্টা রেইকি করে, হাতের ছোঁয়ায় করোনেটে শরীরে পজেটিভ শক্তি প্রবাহ করলেন । ফি নিলেন ৭৫০০ ইয়েন ( ৭৫ ডলার)। এক ঘন্টায় ৭৫ ডলার রোজগার বেশ বড় অংকে আয়! দামটা শুনে আমি ইতস্ততা করলে, মিসুজু সান বলে,
– বেশী দাম না, দিনে ২-৩ জনের বেশী রোগী পায় না ! তাছাড়া কাজটি তো সবাই পারে না । শিখতে অনেক টাকা লেগেছে, কষ্ট হয়েছে…

চিকিৎসা শেষে, গাড়ীতে ফেরার পথে করোনেট কে জিজ্ঞাসা করলাম,

– কেমন লাগছে? মানুষটা ভস্ড না তো?

– না বাবা! ভন্ডামী করলে কেউ আসবে না! ঠকালে পুলিশে ধরবে। পরীক্ষা দিয়ে রেজিষ্টেশন নম্বর নিতে হয়! দুই নম্বরী করার সুযোগ নই!… আমার আগের চেয়ে ভালো। উনার মেসেজে এত অারমে পেয়েছি যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!…

পুত্র ও বউয়ের কাবিরাজের অতি প্রশংসা শুনে তো আমি হাদারাম বোকা। বউ-পোলাকে ভালোবাসতে হলে তো দেখছি, এখন করিরাজী ভালোবাসতে হবে!

জাপানে ভাষা আন্দোলন- সাফল‍্য ও সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের সৎসাহস

জাপানে ভাষা আন্দোলন- সাফল‍্য ও সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের সৎসাহস

‘ভাষা আন্দোলন’ কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে শুধু বাঙালী না, এখন পৃথিবীর সমস্ত ভাষাপ্রেমিকদের মনেপড়ে ১৯৫২ সালের আত্নত‍্যাগের কথা।  ২০০৫ সালে জাপানে আসার পর থেকে দেখছি জাপানী সমাজের পদে পদে ভাষা আন্দোলন।  ইংরেজী ও পশ্চিমা সংস্কৃতির দাপটেও এরা অদৃশ‍্য অহিংস লড়াইয়ে টিকে আছে সাফল‍্যের সাথে।  মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন আন্দোলন তো হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে।  কিন্তু শহীদমিনার বানিয়ে যেন আন্দোলন থামিয়ে দিয়েছি।  লড়াই পরিবর্তে যেন চলছে আপোষরফা, উল্টোরথে যাত্রা, আত্নবিসর্জনের মহাউৎসব।

জাপান পুঁজিবাদী দেশ, সমতা, মুক্তবিশ্ব ও মুক্ত অর্থনীতিতে বিশ্বাসী হলেও, সংস্কৃতি ও স্বদেশপ্রেমে এরা বেশ রক্ষণশীল।  যখন-তখন যে কেউ এসে গাঢ়ে চড়ে বসবে, তা এরা মেনে নেয় না।  জাত যাবে যাক, কিন্তু মান দিতে এরা নারাজ! তবে জাপানি সমাজে যুক্তি সঙ্গত, উপকারী সবকিছুই গ্রহনীয়।  এদের গ্রহনের মাত্রাটা লক্ষনীয় ভাবে ধীর ও সুদূরপ্রসারি। পুরো ব‍্যাসস্থাটাই যেন চলে অলিখিত ও অদৃশ‍্য অভিভাবকত্বে।  ভবিষৎ ফলাফলের চিন্তা-।সরকার, পরিবার, মিডিয়া ও বিদ‍্যালয় সব জায়গাতেই স্পষ্ট!

জাপানবাসী হওয়ার পর থেকে অন‍্য আট-দশটা বিদেশীদের মতো আমাকেও ভাষার কারণে, সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।  বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাভাষার প্রতি আমার বিশেষ আবেগে টান থাকার কারনে- দীর্ঘ প্রবাস জীবনেও জাপানী ভাষা ও সংস্কৃতি দক্ষভাবে রপ্ত করতে পারিনি! বেশ সময় নিয়েছে।  যা আমাকে কষ্ট প্রায়শঃ পীড়া দেয়! জাপানীদের সবকিছুই ভিন্ন, সরল, একরোখা ও রক্ষণশীল বলে মাঝে মাঝে অনাগ্রহ ও বিরক্তি জাগে।
ভাষা ও সংস্কৃতি প্রতি জাপানিদের প্রণোদনা – মহাকবি আব্দুল হাকিম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্রপাধ‍্যায় সহ যেসব বাঙালী মনীষীরা সর্বস্তরে বাংলার প্রচলনে রক্ত-মাংস-আবেগ মিশিয়ে কাজ করেছেন,  তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে।  আমার আস্থা বেড়ে গেছে – সবস্তরে বাংলা প্রচলন করা গেলে, স্বদেশপ্রেম, বাংলাদেশের উন্নয়ন, উন্নত চিন্তা ও সভ‍্য জীবন-যাপন কেউ আটকে রাখতে পারবে না।

পৃথিবীতে যত গুলো দেশ উন্নত ও স্বনিভর্র হয়েছে, প্রতিটি দেশই মাতৃভাষাকে সর্বস্তরে প্রচলন করে বড় হয়েছে।  ভাষা নিয়ে যেসব জাতি শুভঙ্করি করেছে, আপোষ করেছে, তাদের কেউ কেউ অর্থনীতিতে উন্নত হলেও (যেমন হংকক, সিঙ্গাপুর ইত‍্যাদি) কিন্তু আত্নমর্যাদায় দৈন‍্যতা কেটে উঠতে পারেনি।

মাত্র দুই দশকে নিজ ভাষায় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ব‍্যবহার করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপানে দ্রুত উন্নয়ন দেখে,  ১৯৬২ সালে বিশ্বখ‍্যাত বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিম্মিত হয়েছিলেন।  ‘আধুনিক বিজ্ঞান এবং মানবের ভবিষ্যৎ অভিমুখ কী হবে’, শিরোনামের এক জাপান-সম্মেলনে ইংরেজী জানা জাপানী বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষকদের নিজ ভাষায় বক্তব্য দেয়া দেখে অবাক হয়েছিলেন।  নিজ ভাষায় সঠিক ভাবে বুঝে, আত্নস্থ করে, সমাজ ও জীবনে প্রতিফলনের জাপানীদের সেই ভালোবাসা আজো অটুট আছে।  প্রয়োজন ছাড়া জাপানীরা ইংরেজী বা অন‍্যভাষায় কথা বলে না।  নিজের ভাষার চেয়ে অন‍্য ভাষা বা সংস্কৃতিকে অধিক গুরুত্ব দেয় না।  বিদেশীদের সাথে ইংরেজী বললেও, এরা নিজেদের মাঝে সবসময় জাপানীতে শু্দ্ধভাবে কথা বলে।

আধুনিক টয়লেটের বোতাম থেকে শুরু করে, পণ‍্যের বিজ্ঞাপন, সরকারী ফরম, নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতা, টিভি অনুষ্ঠান সবই জাপানী।  ইংরেজী ভাষার উপনেবেশিক ও আন্তজার্তিক বিস্তার ফ্রান্স, জার্মান, রাশিয়া, চীন ও আরাবিয়ান রাষ্ট্রগুলোর মতো জাপানীদের ভুগিয়েছে- কিন্তু টলাতে পারেনি।  এই লড়াইয়ে যে জাতি হাল ছেড়েছে, উন্নয়নের সাথে সাথে ভাষা-সংস্কৃতি-সম্পদ, জাত-মান-কুল সবই সেবই সেসব জাতির গেছে।  এককথায়, যে সব দেশে ইংরেজী প্রীতি ও বিদেশপ্রীতি যত কম, সে সব দেশ তত বেশী জাতীয়তাবাদী, স্বদেশপ্রেমিক।  ফলে জাপান-জার্মান-ফ্রান্স-রাশিয়া ইত‍্যাদি আত্নমর্যাদার কারণে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির আজ বিশেষ ফ‍্যাক্টর।

শুনতে খারাপ শোনায়, তবুও বলতে হয় – আমাদের বিদেশপ্রীতি, লন্ডনস্মৃতি, নিউয়র্কগীতি আমাদের কপাল খেয়েছে।  এর ফলে আমরা আজো হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুচ্ছি! আস্থার সাথে দৌড়াতে শিখিনি! তাই হয়তো নিজের দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে অন‍্যদেশের জন‍্য উৎপাদন করতে চাই! নিজের দেশের মানুষের আগে বিদেশীদেরকে কাপড় পড়ানোর জন‍্য মরিয়া থাকি! নিজের দেশে টাকা অন‍্যদেশের ব‍্যাংকে রাখে শান্তি বোধ করি।  সরকারি-এনজিও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে বাঙালীর জন‍্য ইংরেজীতে রির্পোট লিখি! দেশে ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ‍্যালয় থাকার পরও ছেলে-মেয়েদেরকে বিশাল খরচে দেশান্তরি করি, বিদেশে পড়াতে ভালোবাসি।  ফলশ্রুতিতে প্রত‍্যক্ষ ও প্ররোক্ষ ভাবে আমরা গাছেরও হারাই, তলারও হারাই।  তবে, আমি আশাবাদী, এইদিন থাকবে না! হৃদয়ে থাকা স্বদেশ প্রেম জাগলে আমাদেরকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।  পরির্বতন আসবেই।

অনেকে হয়তো আমার সঙ্গে ভিন্নমত হবেন।  ইংরেজী যদি না শিখি, আন্তজার্তিক ব‍্যবসা যদি না করি, তবে তো আমরা আরো পিছিয়ে পড়বো।  কথাটা সব উন্নয়নশীল ক্ষেত্রে সত‍্যি ! কিন্তু নিজেদের সতিত্ব বিসর্জন দিয়ে, নিজ ভাষা-সংস্কৃতি ত‍্যাগ করে ‘জাতে উঠার মিথ‍্যা মানসিকতা’ হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।  ইতিহাসে এমন উদাহরণ অনেক।  ব‍্যবসা করতে হলে, বিজ্ঞান শিখতে হলে নাগা-সন‍্যাসী হয়ে মাতৃভাষা ত‍্যাগ করে  ইংরেজী শিখতে হবে, এ ধারণা ভুল।  ইংরেজী না জেনেও, জাপানীরা আজ ৩৩০ এর অধিক বহুজাতিক-কোম্পানীর মালিক! দুনিয়াব‍্যাপি দাপটের সঙ্গে ব‍্যাবসা করছে।  ফ্রান্সের প‍্যারিস হয়ে গেছে বিশ্ব সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ইত‍্যাদি।  প্রবল ইংরেজীপ্রীতির পরও আমাদের ঘরে বলতে গেলে একটি বহুজাতিক কোম্পানীও নেই! বিজ্ঞানে বিশেষ কোন আবিস্কার নেই।  আমাদের মাথাপিছু আয় এখনো ২ হাজার ডলারের নীচে! আমাদের ইংরেজী প্রীতি, ইংরেজ শাসনের স্মৃতি কি দিয়েছে? আমি মনেকরি – এখন সময় এসেছে প্রশ্ন করার, পথ বদলে জাপানীদের মত নিজপথে চলার।

জাপানীরা স্বদেশী, পাশাপাশি আন্তজাতিকবাদী! কোন পণ‍্য বানালে বিদেশে বাজারজাত করার আগে চিন্তা করে নিজের দেশে প্রয়োজন ও বাজার নিয়ে।  নিজের দেশে যে ব‍্যবসা সফল হয় না, তা আন্তজার্তিক বাজারেও জনপ্রিয়তা পায় না।  ভিন্নদেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন‍্য ইংরেজী বা অন‍্য ভাষায় কথা বলার বিপক্ষে আমি নই।  ‘দ্বিতীয়’ অর্থাৎ ‘গৌণ ভাষা’ হিসাবে শেখার কৃতিত্ব আছে।  তবে নিজে দেশে – নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলার পরির্বতে অশুদ্ধ উচ্চারণে, অদ্ভুট অভিনয়ে ও জটিল মানসিকতায় ইংরেজি বলার বাহাদুরিকে আমি বোকামি মনেকরি! নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে উল্লাস করা মনে করি।

কষ্টের কথা – প্রাণের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাওয়ার পরও বাংলা সর্বস্তরে চালু হয়নি আজো।  এটা কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, আমাদের সমাজিক ও জাতীয় সমস্যা।  বাংলাদেশে অফিস-আদালত-বিদ‍্যালয়সহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাকে নানান ভাবে অবহেলা করে, গর্বের সঙ্গে ইংরেজির ব্যবহার করা হয়! সংবিধানিক রীতি ও প্রেরণা অমান‍্য করা হয় অহরহ! এজন‍্য কোন নাগরিক বা অফিসারকে ভোগান্তি পোহাতে হয় না।  কিন্তু জাপানের অফিস-আদালত-বিদ‍্যালয়সহ কোথায় জামাই-আদরে ইংরেজী ব‍্যবহার করা হয় না।  কারণ ছাড়া ইংরেজী বা অন‍্য ভাষা ব‍্যাবহার অলিখিত অপরাধ!

বাংলা ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাসনামল ১৯৭৫ পর্যন্ত অক্ষুণ ছিল।  ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পাঠ-জটিলতা সম্পর্কিত দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রীয় ভাবে বাংলার পরিবর্তে ‘ইংরেজি ভাষা’ কে প্রাধান্য দেয়া হয়।  এরপর থেকে শুরু হয় সর্বত্র ইংরেজীতে পরিপত্র জারির রেওয়াজ।  উন্থান হয় ইংরেজি ভাষাকে গুরুত্বপ্রদানকারী নব‍্য এলিট শ্রেণীর।  এই এলিটরাই চার দশক ধরে বাংলা ভাষা উপর গোপনে ও প্রকাশ্য অত‍্যাচার করছে।  যার নগ্ন কুফল – আজ সরকারি বড় কর্তারা ভুল ইংরেজি লিখলে লজ্জিত হন; কিন্তু ভুল বাংলায় দোষ মনে করেন না! বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে বক্তব‍্য দিয়ে নিজেদের প্রজ্ঞাবান মনে করেন।  অথচ গ্রাহক-পাঠক-শ্রোতা সবাই বাঙালী, বাংলা ভাষাভাষি, ইংরেজ নন!

বিদেশী ভাষা ব‍্যাবহারে জাপান ও বাংলাদেশের চিত্র পুরাই ভিন্ন! জাপানে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হলে – জাপানী জেনে,  জাপানীদের মতো হয়েই বাস করতে হয়, কাজ করতে হয়।  কিন্তু বাংলাদেশে, একজন ইংরেজী জানা বিদেশী – বাংলা না জেনেও বিশাল দাপটের সঙ্গে সারাজীবন কাজ করতে পারে।  কোন সমস‍্যা হয় না ।  তার মোসাহেবের অভাব হয় না।  বাংলাদেশে বাসকালে, বিদেশী বাংলাভাষা শেখার কোন চাপ বা প্রয়োজনবোধ করেন না।

সম্প্রতি এক সকালে আমি আমার ছোট পুত্র ‘কওন’কে ইংরেজী শিখাচ্ছিলাম।  বড় পুত্র ‘করোনেট’ বললো,
– বাবা, তুমি ওকে ইংরেজী শেখাচ্ছো কেন? ওকে হয় বাংলা শেখাও, না হয় জাপানী শেখাও।  বড় হয়ে হয় বাংলাদেশে, না হয় জাপানেই কাজ করবে।  ইংল‍্যান্ড বা আমেরিকাতে কাজ করবে না!”
আমি বললাম,
– ইংরেজী শেখার আগে নিজের ভাষা শিখতে হয়, তোমাকে কে বলেছে।
সে বললো
– স্কুলে, সেনসে ( শিক্ষক) বলেছে।  তিনি বলেছেন, নিজের ভাষা প্রাণের ভাষা, এই ভাষাই নাকি একমাত্র প্রকৃত আনন্দ ও উন্নয়ন নিশানা পাওয়া যায়!
আমি ১২ বছরের পুত্রের সচেতনতা দেখে হতবাক!

বাংলাদেশে খৈই হারনো অনেক শিক্ষিতজনের আশঙ্কা – বিজ্ঞান ও সভ‍্যতা ইংরেজী কেন্দ্রিক হওয়ায়, বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা ও সভ‍্যতা চর্চ্চা সম্ভব না।  হয়তো এই অপপ্রচারের কারণেই – চারদিকে শিক্ষিত পরিবাররের শিশুদের ইংরেজী স্কুলে পড়ানো হিরিক।  শহরের পিতা-মাতারা আজকাল শিশুদের বাংলামাধ্যমে পড়াতে চায় না! শিশুরা ‘মা-বাবা’ বদলে ‘মাম্মি-ডেডি’ বলে ডাকুক এটাই তাদের প্রবনতা।  জাপান, ফ্রান্স, জার্মান, স্প্যানে ইংরেজি মাধ্যমে ইস্কুলের প্রতাপ নেই।  স্কুলে ইংরেজি বিষয় থাকলে, ইংরেজী মাধ্যম বলতে কোন কিছু নেই।  এরা ইচ্ছা-অনিচ্চায় বাঙালিদের মতো, একটা বাক্যের মধ্যে দুই-তিনটে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে না! নিজের শিক্ষিত ও বাবু-সাহেব বলে জাহির করে না।

“যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না. নয় বিজ্ঞান বোঝেন না”, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বিখ‍্যাত এই উক্তি সবার জানা! বাংলা ভাষায় জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চ্চা করে যে বিশ্বজনীন হওয়ায় যায়, বাঙালী তিন প্বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, এবং প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ভাবনা ও কাজ জানলে তা বুঝা যায়।

বিশ্ববিদ‍্যালয়ে প্রথম বর্ষে ‘ইংরেজী’ কম জেনে বিজ্ঞান পড়ার ভুক্তভোগী আমি।  ১৯৯০ সালে ভুতাত্ত্বিক বিজ্ঞানে ভর্তির আমি ‘শিলাবি‍দ‍্যা’ নামে মাত্র বাংলা একাডেমি প্রকাশিত একটি বাংলা বই পেয়েছিলাম।  আর বাকি সব বই ছিল ইংরেজীতে।  বাংলা মিডিয়ামে পড়া মফস্বলের ছেলে হঠাৎ ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ার কুফল আমি প্রথমবর্ষে পেয়েছি, প্রথম-দ্বিতীয় হতে পারেনি। পালে এ উল্টো হাওয়া আমার বিশ্ববিদ‍্যালয়ের পুরো ছাত্রজীবনে ছিল। ভুগোলের সঙ্গে মিল থাকার কারণে আমি ওদের বইয়ের অনেক সহযোগীতা নিতাম।  বাংলায় পড়তে চাইতাম, বাংলায় পরীক্ষা দিতে চাইতাম।  কিন্তু শিক্ষকদের অলিখিত মানা ছিল।  আমার বাংলাপ্রীতি কারণে এক শিক্ষক আমার উপর রুষ্ট হয়ে বলতেন,
– শাহজাহান সিরাজ, বিজ্ঞান কি বাংলা সাহিত‍্য? বাংলায় লেখতে চাও কেন? তুমি নম্বর কম পাবে, পাশ করবে না!…

শেষে কোন গত্তর না দেখে, বিজ্ঞান শেখার চেয়ে – ইংরেজী শেখায় আমাকে প্রথমবর্ষে বেশী হয়েছিল।  খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গত বিশ বছরেও বাংলায় ভুতত্ত্ব ও বিজ্ঞান পড়ানোর মত বই এখনো লেখা হয়নি, অনুবাদ হয়নি।  বাংলায় বিজ্ঞান পড়ানো মানসিকতা তৈরী হয়নি, বরং কমেছে।

অথচ আমার পুত্র ‘করোনেট’ জাপানে পড়ে।  বিজ্ঞানের বই, দর্শনের বই, ইতিহাস বই কোনটাই তাকে ইংরেজীতে পড়তে হয় না।  জাপানী ভাষায় পড়ে! ইংরেজী না বলা ও না পারার কারণে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয় না।  স্কুল ও পাড়ার লাইব্রেরীর ৯৯% ভাগ বই জাপানী ভাষায়।  বিদেশী লেখক ও বিশ্ব-ক্লাসিক ছাড়া ইংরেজী বই নাই বললেই চলে।

শুরু থেকেই বাংলা ভাষার উপর। অনেক অত্যাচার, ও নিপীড়ন হয়েছে।  এখনো প্রকাশ্যে ইংরেজি, গোপনে হিন্দি ভাষার, উর্দূ ভাষার, আরবী ভাষার যন্ত্রণা চলছে।  আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অর্জন অনেক।  কিন্তু চর্চ্চায় ব্যর্থতায় প্রচুর।  এখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বেড়েছে।  কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে ও শিক্ষাপদ্ধতিতে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের চেয়ে বৈষম্য কম নয়! সুক্ষ বিচারে দেখলে বুঝা যায় – এখনকার মতো প্রবল বৈষম্য তখনও ছিল না।

আমাদের প্রিয় ভাষা আন্দোলনের মূল প্রত্যাশা ছিল বাংলা ভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।  অথচ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে সেই ভাষা নেই।  ব্রিটিশ, পাকিস্তানি আমলেও বাংলা ভাষার পক্ষে জনমত ছিল; অন্য ভাষার প্রভুত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল।  স্বাধীন বাংলাদেশে আজ সেই প্রতিবাদ নেই, সচেতনতা নেই।  না পেয়ে, পাওয়ার মিথ‍্যা স্বস্থি আছে, যা একেবারে গ্রহনযোগ‍্য না ! বাংলাদেশে যে তরুণসমাজ মাতৃভাষার জন‍্য সোচ্চার হয়েছে, রক্ত দিয়েছে – সেই তরুণ সমাজ এখন আপোষ করে, নিজ ভাষাকে অবহেলা করে! এই করুণ বাস্তবতা একান্তই কাম‍্য নয়।

পৃথিবীতে ৮,৬৩৭টি ভাষা আছে।  প্রতি সপ্তাহে একটা করে ভাষা আক্রান্ত হচ্ছে, লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।  নতুন প্রজন্ম বাংলাভাষাকে ভালোবেসে না শিখলে, শুদ্ধ ভাবে না চর্চা করলে, হয়তো বাংলাভাষাও স্বকীয়তা হারাবে, যেমনটা হারিয়েছে বলিভিয়ার ভাষা!  বলিভিয়ার মানুষ একসময় কথা বলতো ‘আয়মারা’ ও ‘কুয়েছুয়া’ ভাষায়।  খনিজ তেল ও সিসার লোভে স্প্যানিশরা বলিভিয়ায় উপনেবিশ স্থাপন করলো! খনিজের সাথে সাথে ভাষা-সংস্কৃতিও দখল করে নিলো।  জাতে উঠার জন‍্য বলিভিয়ানর স্প্যানিশ ভাষা আবেগের সাথে গ্রহন করলো।  ফলে স্প্যানিশ, আয়মারা ও কুয়েছুয়া ভাষার মিশ্রণে বলিভিয়ায় সৃষ্টি হলো অদ্ভুত এক জগাখিচুড়ি ভাষা।  বলিভিয়ার ১ কোটি মানুষের মধ্যে এখন মাত্র ১০ লাখ মানুষ নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে, বাকিরা কথা বলে খিচুড়ি ভাষায়।

বাংলা ভাষা নিয়ে একই শঙ্কা আছে।  ইংরেজী, আরবী, হিন্দির উৎপাত না কমাতে পারলে, ভয়ের বিষয় বাংলাও হয়তো একদিন খিচুড়ি ভাষা হয়ে যাবে।  এসএমএসের মাধ্যমে, ফেইজবুকের মাধ‍্যমে, এফএম বেতারে মাধ‍্যমে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি যে ‘বাংলিশ’ বলা প্রচলন করা হচ্ছে, বাঙালীকেও হয়তো বলিভিয়ার ভাগ্য বরণ করতে হবে।

সম্প্রতি নতুন উত্পাত শুরু হয়েছে।  নারী-শিশুরা হিন্দি সিনেমা-সিরিয়ালের মাধ‍্যমে হিন্দির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।  ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি শাসনামলেও বাংলার যতটা বিকৃতি হয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশী বিকৃতি হচ্ছে।  বাংলাদেশে প্রায় ৫০টির মত ইলেকট্রনিক গনমাধ্যম আছে।  আমি কারণ খুঁজে পাই না – প্রত‍্যক্ষ আয়-রোজগার, বিনোদন ও ব‍্যাবসার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও অন‍্য দেশের, অন‍্য ভাষার অনুষ্ঠান, কিভাবে বাজার দখল করে! দেশীয় অনুষ্ঠানের নিম্নমানের কারণে, সরকার ও জনগনের সচেতনতার কারণে- দৈইয়ের পরিবর্তে ঘোল খাইয়ে শত কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে? আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির বারোটা বাজাচ্ছে!

গোঁজামিল ও অদ্ভুত ভাড়ামী থেকে আমাদের নাটক, গান, অনুষ্ঠান চলচিত্রকে বেরিয়ে আসতে হবে।  সৃজনশীলতায় স্বশক্তিতে দাঁড়াতে হবে।  চেনাবাহিনী-কেনাবাহিনীর গ্রাস থেকে শিক্ষা, মিডিয়া, ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার সময় এখন।

পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা মিলিয়ে আজ ৩০ কোটিরও বেশি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।  দিন দিন বাংলা ভাষার শক্তি কমে যাচ্ছে।  বাংলা অ্যাকাডেমি নতুন কোন শব্দ তৈরি করছে না।  নানান ছুতা-নাতায় পরিভাষা তৈরি হচ্ছে না।  অথচ আইসল‍্যান্ডের ‘আইস্লেন্ডিক’ ভাষায় মাত্র তিন-চার লক্ষ লোক বলে।  কম্পিউটার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত সব শব্দ আছে তাদের ভাষায়! আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বসংস্কৃতির কারণে নতুন শব্দ আসলেই ওরা আইস্লেন্ডিক অর্থ বের করে ।   অথচ এব‍্যাপারে আমার কত দরিদ্র, অনেকক্ষেত্রেই হীন‍মন‍্য!

প্রযুক্তি নির্ভর একবিংশ শতাব্দীতে তরুণ প্রজন্মও বাংলা ভাষার প্রতি চরম উদাসীন।  প্রযুক্তি বা আধুনিক যোগাযোগ মাধ‍্যমের দোষ দেয়া অন‍্যায়।  মানসিকতা সঠিকপথে থাকলে সুফল অবসম্ভাবী।  জাপানী তরুণ-তরুণীরা নাকি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী মোবাইল চেট র করে।  অথচ তাদের হৃদয় ভাষা ইংরেজী দখল করতে পারেনি। ।উল্টো তাদের উদ্ভাবিত ‘ইমিকন’ ( ইমোজি) আজ সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয়।

শব্দ গ্রহন ও তৈরীর ব‍্যাপারে জাপানে আমার আছে এক অনন‍্য অভিজ্ঞতা।  আমার প্রথম পুত্র, নাম রেখেছিলাম ‘করোনেট’ অর্থাৎ ‘রাজ মুকুট’! জাপানের সিটি অফিসে নাম রেজেষ্ট্রি করতে গেলাম।  অফিসার গ্রহন করলো না, বলল – এ নামের জাপানী অর্থ নাই।  গ্রহন করার যাবে না ।  শেষে শশুর মশাই নাম পরির্তন করে ‘করোনেট্টো’ রাখলেন, জাপানী অর্থ বের করলেন, গ্রহনীয় হলো।  এভাবে জাপানের প্রতিটি মানুষের নাম, দোকানের নাম, পণ‍্যের নাম ইত‍্যাদি প্রাতিষ্ঠানিক ছাঁকুনী দিয়ে ছেঁকে সমাজে প্রচলিত হয়।  নিজস্ব বিশুদ্ধতা রাখা হয়।  বাংলায় এমন ব‍্যবস্থা চালু করা গেলে কতই না ভালো হবে।

উন্নত প্রায় সব দেশেই একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা! অথচ আমাদের শিক্ষা ব‍্যবস্থা বহুধাবিভক্ত, অন্ততঃ ৮ থেকে ১০ ভাগে বিভক্ত! বাংলা নিয়ে নয় বরং ইংরেজি শিখাতেই অভিভাবকদের চিন্তা বেশি, কারণ ইংরেজী না শিখলে সন্তান নাকি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।  এমন চিন্তাতে অতিরিক্ত ইংরেজী প্রীতির কারণে, সিংগাপুরে ‘সিংলিশ’ খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।  কিন্ত নতুন এই সিংলিশ নিয়ে বর্তমানে সিংগাপুরের সরকার ও সুশীল সমাজ বেশ চিন্তিত।

১৮৭২ সালে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, “লেখাপড়ার কথা দূরে থাক, এখন নব্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো কাজই বাংলায় হয় না… ইহাতে বিস্ময়ের কিছু নাই।  ইংরেজি এক রাজভাষা, তাহা অর্থ উপার্জনের ভাষা।’…” কিন্তু এ লেখার দেড়শ বছর পরও আমরা একই বাস্তবতায় অবস্থান করছি।  ইংরেজি এখন আর আমাদের রাজভাষা নয়, তবু ওই প্রবণতা কেন বিদ্যমান?

জাতিক ও আন্তর্জাতিক দুষ্টচক্রের খপ্পরে আজ বাংলার অবস্থা খুবই শোচনীয়।  বাংলা একাডেমির বই নিজের তৈরি ‘প্রমিত বানান রীতি’, স্কুল টেকস্ট বুক বোর্ডের বইয়ে বানান ভুল করা অমার্জনীয় অপরাধ! পুঁজি-নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র-রেডিও-টিভি সমূহে বাংলা ভাষার নানামাত্রিক ভুল ব্যবহার সৃষ্টি করছে বহুমুখী বিভ্রান্তি।  এই নৈরাজ‍্যের সময় মনে হচ্ছে বাংলাকে দেখবাল করার কেউ যেন নেই।  এই করুণ বাস্তবতার মুল কারণ সদিচ্ছার অভাব, আস্থার অভাব।  বাংলা ভাষা প্রচলন আইন আছে, কিন্তু আইন না মানলে অসদাচরণের অভিযোগে নেয়ার কথা।  আমার জানামতে এ পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী কারো বিরুদ্ধেই ‘বাংলা অপব‍্যবহার’ বা ‘না ব‍্যবহার’ করার কারেণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিক্ষার বাহন’ প্রবন্ধে ১৯১৫ সালে লিখেছেন, ‘উচ্চশিক্ষাকে আমাদের দেশের জিনিস করিয়া লইতে হইবে।  পশ্চিম হইতে যা কিছু শিখিবার আছে জাপান তা দেখিতে দেখিতে সমস্ত দেশে ছড়াইয়া দিল, তার প্রধান কারণ, এই শিক্ষাকে তারা দেশী ভাষার আধারে বাঁধাই করিতে পারিয়াছে। অথচ জাপানি ভাষার ধারণা শক্তি আমাদের ভাষার চেয়ে বেশি নয়।  নতুন কথা সৃষ্টি করিবার শক্তি আমাদের ভাষায় অপরিসীম।…বাংলা ভাষাতেই আমরা উচ্চশিক্ষা দিব এবং দেয়া যায়, এবং দিলে তবেই বিদ্যার ফসল দেশ জুড়িয়া ফলিবে।’

বাংলা নিয়ে কারো হীনমন‍্য হওয়া উচিত না।  রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশের প্রমুখের মতো সুসাহিত‍্যিক, হাজারো মনীষীর সৃষ্টি হয়েছে এ ভাষায়।  আসুন আমরা সবাই নিজ ভাষাকে ভালোবাসি, প্রাণের কথা জাপানীদের মত প্রাণ দিয়ে বলি।  বাংলাকে শ্রদ্ধা করি।  স্বদেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে সর্বস্তরে বাংলা প্রচারের মনোযোগী হই।

নিগাতা, জাপান
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

Morning walk

Morning walk

এই বরফ শীতের ঠান্ডায় প্রাতঃভ্রমন শরীর ও প্রকৃতিকে এক করে দেয়। শান্তিতে শরীর-মন উল্লাসিত করে। মনেহয় – আসলেই মানুষ প্রকৃতির অংশ। বিশ্বভ্রমান্ড্রের কেন্দ্র!

My wife believes in a book more than me! Many years, I explained the benefits of morning walk for good health and getting much working time in the morning. But she did not motivated! She has workaholic habits, as the common nature of Japanese. Last week she read a book and changed. She reduced work in the night time. She may now understand, ‘Human being is the part of nature. To lead the healthy and cheerful happy life, one need to always touch of nature with unity as much as possible’. From yesterday she has started morning walks. This morning we enjoyed fresh winter air together with lovely daughter Anika.