প্রিয় মানুষ, আবৃত্তিকার কামরুল হাসান মঞ্জু চলে গেলেন!

প্রিয় মানুষ, আবৃত্তিকার কামরুল হাসান মঞ্জু চলে গেলেন!

সকালেই এই দুঃসংবাদটি শুনে মর্মাহত হলাম। ছাত্র জীবন থেকে মানুষটি আমার প্রিয় আবৃতিকার ছিলেন। ক‍্যাসেটে তার, স্বৈরাচার বিবোধী ও ভালেরাসার আবৃতি শুনে অভিভূত হতাম। কি সুন্দর কন্ঠ, যেন হৃদয়ের ভাষা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ে, তার অনেকগুলো ক‍্যাসেটের সংগ্রহ ছিল আমার।

এরপর বিএনএনআরসি’র বজলু ভাই, মন্জু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ২০০৬ সালে। তিনি একজন মিল্টিমিডিয়া ডিজাইনার খুঁজছিলেন। বজলু ভাই বলেছিলে,
– একজন ভালো মানুষ ও দক্ষ ডিজাইনার দিলাম। সারা জীবন, নিশ্চিন্তে সিরাজ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। মাল্টিমিডিয়া প্রডাকশন নিয়ে- আপনার ব‍্যস্ততা অনেক কমে যাবে!

প্রিয় মানুষের সামনে সেদিনের নিজের প্রশংসা শুনে কাচুমুচু করেছিলাম। শ্রদ্ধায় তাকিয়ে ‘যথা সম্ভব সেবা দেয়া হবে’ এই সম্মতি জানিয়ে ছিলাম।

পরিচয়ের প্রথম থেকেই মঞ্জু ভাই আমাকে খুব ভালোবাসতেন, রিলাই করতেন, কাজের প্রশংসা করতেন। প্রথম দেখাতেই তার গড়া এনজিও ‘মাস লাইন মিডিয়া সেন্টারের’ অফিসিয়াল ওয়ের ডিজাইনার বানিয়েছিলেন।

এরপর এমএমসি’র পাশাপাশি ‘শিশু প্রকাশ’ অনলাইন পত্রিকাসহ ৪ টা ওয়েব সাইট বানিয়েছিলাম, ওয়েব মাষ্টার হিসাবে কাজ করেছে ‘মাজিজো টিম’। বেশ কয়েকটি ভিডিও ডকুমন্টেরীও বানিয়ে ছিলাম তার সঙ্গে । মাচিজো সঙ্গে এমএমসি’র সম্পর্ক ছিল শেষ পর্যন্ত, ২০১৬ পর্যন্ত।

এরপর হঠাৎ ক্রনিক ডাইবেটিসে অসুস্থতার কারণে সংঘটন ছোট করে অবসরে চলে গেলেন; যা আমার কাজের সিডিওলে শুণ‍্যতা তৈরী করেছিল। মঞ্জুভাই ও তার এমএমসি’র সঙ্গে টানা ১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা ছিল অনবদ‍্য।

লেনাদেনা, কথায় ও কাজে ছিলেন সৎ, পরিস্কার ও প্রফেশাল । মিডিয়া, উন্নয়ন ও ম‍্যানেজম‍্যান্টের অনেক কিছুই তার কাছ থেকে শিখেছি।

পরপারে মঞ্জু ভাইয়ের শান্তি কামনা করেছি।
তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ও সুসম্পর্ক আমি কখনো ভুলবো না!

মানুষ যা চায়, তাহাই পায়!

মানুষ যা চায়, তাহাই পায়!

তানজিয়া মনবসু বৃত্তি পেয়ে এ মাসেই জাপানে এসেছে। সে আমার ঢাকা অফিসে ৩ বছর চাকুরি করেছে। ভদ্র, সৎ ও মেধাবী মেয়ে। মাচিজোতে যোগ দেয়ার সময়- ইন্টারভিউতে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
– কেন মাচিজোতে যোগ দিতে চান?

উত্তরে সে সৎ ভাবে বলেছিল,
– আমি জাপান শিক্ষা গ্রহন করতে চাই। বাংলাদেশের পরেই আমার পছন্দের দেশ জাপান। আপনার কোম্পানীতে যোগ দিতে পারলে, আমার মনেহয় সুযোগটা সৃষ্টি হতে পারে।
আমি হেসে বলেছিলাম,
– তা কি করে হয়? আমরা তো বাংলাদেশী কোম্পানী, বাংলাদেশেই কাজ করি। নামটা শুধু জাপানি! মাঝে মাঝে আউস সোর্সিং করি মাত্র!

একটু চুপ থেকে তানজিয়া বলেছিল,
– স‍্যার, আপনার সঙ্গে কাজ করলে হবে, আমার বিশ্বাস!

শান্ত স্বভাবে তানজিয়াকে আমি সেদিন ‘না’ করেনি। আমি ও আমার স্ত্রী সাই দিয়ে নিয়োগ দিয়েছিলাম। ও যোগদেয়ার পর পরই, আমি বড় বড় ৩টি জাপানি ওয়েব-প্রজেক্ট পেয়েছিলাম। অনলাইনে – কাজের ফাঁকে, সুযোগ পেলেই সে বলতো,
– স‍্যার আমি জাপানে আসতে চাই। পড়া-লেখা বা চাকুরী না হোক, অন্ততঃ দেখেতে চাই।

ভিসার গ‍্যারাকল আমি জানি, তাই সরাসরি সাই দিতাম না । তবে সাহস দিতাম!
– ঠিক আছে চেষ্টা করবো, দেখি কোনভাবে আনা যায় কিনা!

আমিও অবসরে, স্কাইপে – এটা সেটা নানান রকমের কৌশল ও বুদ্ধি দিতাম , যাতে সে কম খরচে বা বিনা খরচে জাপানে আসতে পারে। মনবসু স্কলারশীপ পাবার ব‍্যাপারে; জাপানি প্রফেসারকে লেখালেখি’র আমার বুদ্ধিটা তার কাজে লেগেছে। তানজিয়া এখন জাপানে।
– কানাগাওয়া বিশ্ববিদ‍্যায়লে ‘আর্টিফেসিয়াল ইনটেলিজেন্স’ এর উপর উচ্চ শিক্ষার জন‍্য বৃত্তি পেয়ে এ মাসেই জাপানে এসেছে।

আমি তার বৃত্তি পাবার সংবাদটি শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। অজানা-অচেনা এই দেশে, তাকে সাহস দেয়ার জন‍্য, গত পরশু- টোকিও তে থাকার সময, আমি ওর বিশ্ববিদ‍্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে সে অতন্তঃ আনন্দিত হয়েছিল। একসঙ্গে জাপানি ট্রেডিশনাল খাবার খেলাম। ‘কাঁচামাছ’ ( সুসি/ সাসিমি) প্রথম খেয়ে সে বললো,
– স‍্যার, কাঁচা মাছ এত সুস্বাধূ হতে পারে, আমি কখনো ভাবতেই পারিনি। আপনার লেখা পড়ে জেনে ছিলাম, আজ তা বুঝলাম।

তানজিয়া ‘জাপান আসার’ ঘটনাটি থেকে আবার প্রমানিত হলো,
– ‘মানুষ যা চায়, তাহাই পায়!’
কথাটা আধ‍্যাত্বিক মনে হলেও, মোটেও আধ‍্যাত্নিক না! ইহজাতিক ও শাশ্বত। শর্ত শুধু আসলেই মন থেকেই চাইতে হয়, ভালোবাসার সাথে চাইতে হয়। যে ভালোবাসার সাথে চায়, দরদ দিয়ে চেষ্টা করে, তার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকে না । হয়তো পূর্ণ হতে একটু সময় লাগে- যেমনটা লাগে একটা চারা গাছে ফল ধরতে ।

সুখের কথা, আমি আমার জীবনে যা চেয়েছি- প্রায় সব কিছুই পেয়েছি। যে গুলো পাইনি, ক্ষণিকের জন‍্য কষ্ট পেলেও পরে বুঝেছি – না পেয়ে ভালো হয়েছে। চাওয়ার ছোট জিনিষটা পেলে, পরে যে আরো ভালো ও বড়টা পেয়েছি, তা পেতাম না । হিসাব নিকাশের করে – সুফল, নিজের ঘরে পেয়ে, ‘খামিসামা’কে ধন‍্যবাদ-শুকরিয়া জানাই।

আমার মনেহয় তানজিয়া- মন থেকে চেয়েছিলম, তাই পেয়েছে।

জাপানের সুপ্ত দারিদ্রতা! – রির্পোট ও জাপান স্মৃতি!

জাপানের সুপ্ত দারিদ্রতা! – রির্পোট ও জাপান স্মৃতি!

জাপানে দারিদ্রতা আছে একথা কোন বাঙালিকে বললে হয়তো চমকে যাবে! আসলে আছে, তবে সর্বহারা নেই! লেভেল ভিন্ন! কেউ কাজ করলে – এখানে দরিদ্র থাকে না ।

তবে ইচ্ছে করেই কাজ না করা- যেমন কুইরা, অলস, ‘ভালো লাগে না’ মানসিক রোগী, ইনটোভার্ট, মদারু-বহেমিয়ান মানুষের সং‍খ‍্যা কম না । আসল রুপটা বুঝা যায় না, জাপানিদের হাসি-খুশি বিনয়ী ভাবের কারণে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোষাক ভেষভুষার কারণে!

কনবিনিয়েন্স জীবন হওয়ার কারণে, অল্পদাম সহজলভ‍্য- রামেন-সুবা (স‍্যুপ নুডুলস্), সেনডিওস-বার্গার ইত‍্যাদি খেয়ে দিন পার করা যায় বলে- কেউ ক্ষুধার্ত থাকে না; খাবারের জন‍্য হাত পাতে না। তাই নেটিভ জাপানিদের দরিদ্র বলা যাবে না, টানাটানির মানুষ বলা যায়।

আমার ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতা- জিনিষের দাম বেশী হওয়ার কারনে! জীবনের সব সুযোগ ভোগ করার ইচ্ছা-তাগিদের কারণে, বাবা-মা দুইজনকেই কাজ করতে হয় (আমি ছাড়া সবাই তাই করে..)! মানবাধীকার ও অভাবের ভয়ের কারণে – এখানে বাংলাদেশের মত, প্রায় সবার খানসামা-চাকর নাই ! জামিদারী রীতিনীতি নাই! অন‍্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল‍্য করার সুযোগ নাই, কেউ করে না!

‘এদারকা মাল ওদার করে’, ‘কাজ না করে’, মার্কেটিং ও নেটওয়ার্কিং এর তেলসমাতি দেখিয়ে; ঢাকা-লন্ডন-আম্রিকার মত, এখানে সহজে ও দ্রুত ধনী হওযার সুযোগ কম! জাপানিরা রক্ষনশীল ও জাতীয়তাবাদী হওয়াতে, বিদেশীরা তেমন বাও পায় না! দালাল-সৃষ্টি হয় না! এমনকি ঘরের খবর, পরকে বলে না।

জামাই হিসাবে, আর যাইহোক আমাকে তো এখন আর পর মনে করতে পারে না । তাই অনেক কিছুই বলে, বুঝি! তাছাড়া আমার ছেলে-মেয়ে জাপানে লেখাপড়া করছে! আমার খাবার থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন নেটিভদের মত! এই রিপোর্টের প্রায় সব তথ‍্যই সঠিক!

জাপানিরা ‘কি ছিনুরে, কি হনুরে’ আবেগে- বড়গিরি দেখায় না বলে- মন্দ কাজে সহজে ম‍্যানেজও করা যায় না! আইন ভঙ্গ করে, চুরি-ডাকাতি-দূর্নীতি করে, পার পাওয়া যায় না বলে – অভাবের ব‍্যাবধানটা বাংলদেশের মত আকাশ-পাতাল নয়! অনেকটা সামাজতন্ত্রিক-গণতন্ত্রের মত!

তাছাড়া – প্রকাশ‍্য ভিক্ষুকও নেই, টোকাই নেই, কম বেতন ও অধিকার বঞ্চিতদের মিটিং-মিছিল কম বলে, আসল খবর দৃশ‍্যমান নয়! (তবে মোবাইলে টেক্সষ্ট দেখিয়ে বিদেশীদের কাজ থেকে চেয়ে, মেগে খাওয়া মানুষ আমি পেয়েছি, টোকিও তে)

ভয়ের কিছু নেই; জাপানিরা উদে‍্যাগী! সমস‍্যা আর যাইহোক বাংলাদেশে প্রর্যায়ে যাবে না অন্ততঃ ১০০+ বছর।

❤️❤️ তথ‍্য বহুল রিপোর্টের জন‍্য মনজুরুল ভাইকে (Monzurul Huq) ধন‍্যবাদ। 😂😂রিপোর্টটা পড়ে বুঝলাম আমি কেনে এখনো বিলিয়নিয়ার হই নাই!

রির্পোট লিঙ্ক: http://bit.ly/2PgbMsY

হে মানুষ!  আজো কত কিছু অজানা!

হে মানুষ! আজো কত কিছু অজানা!

মানুষ হয়ে মানুষকে না জেনে মরে যাবো, এটা তো ঠিক না।
এনসাইক্লোপেডিয়ার পড়ার শখ থেকে, প্রকাশের ৩ মাস আগেই আমি আমাজনে ‘Peoeples and Places’ বইটি বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম।

বইটি গত পরশু হাতে পেয়ে আনন্দে আত্নহার হয়েছিলাম! এখন পড়ছি – সারা দুনিয়া কত রকমের মানুষ! কত রকমের কালচার! কত অজানা রহস‍্যময় জায়গা! ভাবতেই অবাক লাগে! মন নানান রঙের ফুলে সাজানো বাগানে চলে যায়!

বিশ্ববিদ‍্যালয় শেষছে ২৪ বছর আগেই, কিন্তু লেখাপড়া রয়ে গেছে। আমি ভূ-বিজ্ঞানের ছাত্র। তারপরও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে আমার প্রবল আগ্রহ ছাত্রজীবন থেকেই, যা আজো প্রবল । সাহিত‍্য, মিডিয়া, আরকিওলজি, কালচারাল এনথ্রোপলজি, জিওগ্রাফি, সরকার ও রাজনীতি আমার খুবই প্রিয়। প্রায়শ – বন্ধুদের বলতাম, জিওলজি’র পরির্বতে এসব বিষয়ের একটি যদি পড়তাম, লেখাপড়া আমার অনেক আনন্দের হতো।

সুযোগ পেলে; বিষয় গুলো পড়ুয়া বন্ধু বিপু, জিয়া, রুপম, আখের, শরীফ, আমিন প্রমুখের রুমে চলে যেতাম। ওদের পাঠ‍্য বই পড়তাম। আর পড়শি বিভাগ হওয়াতে, ক্লাসের ফাঁকে- ‘প্রত্নতত্ত্ব’ বিভাগের লাইব্রেরী ছিল আমার প্রিয় পড়ার স্থান! আমি বিষয়গুলোকে জীবন, জিওলজি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিতে‍্যর সঙ্গে মেলানো চেষ্টা করতাম! যা আমার মনন ও চিন্তাকে অনেক গভীর সমৃদ্ধ করেছে।

হায়রে আমার টিফিন!

হায়রে আমার টিফিন!

আমার পুরো স্কুলজীবনটা কেটেছে দুপুরে পুড়ি বা সিঙ্গারা খেয়ে! দুপুর হলেই ক্ষুধায় কারত থাকতাম, আমার প্রিয় নরারুণ বিদ‍্যানিকেতনে! ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত, স্কুলের কাছেই বাড়ি থাকার পরও, যেতাম না। আশানুরুপ ক্লাসে পড়ালেখার অবস্থান না করতে পেরে পিতামাতা-স‍্যারদের তাপে ও চাপে থাকতাম!

প্রাইমারীতে প্রথম হলেও, শহরের হাইস্কুলে – ৬ম থেকে ৮ষ্টম ক্লাসে, রুল থাকতো ১৫ এর পরে। এত পরে রুল হাজিরা দিতে আমার ভালো লাগতো না! কিন্তু প্রথম ব্রেঞ্চিতে বাসা ও আশা হারাইনি। সতি‍্যই টেষ্ট, প্রি-টেষ্ট ও এসএসসিতে প্রথম হয়ে, সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলাম!
– গেরামের এই পুলাডা এত ভালা ছাএ হইলো কেমন?

যখন আমার ক্লাসে ফলাফল ভালো হতে শুরু করলো, আমি উপরে উপরে ভদ্র-সুবোধ থাকলেও; স‍্যার বা মা-বাপের আদেশ অমান‍্য করেই বাড়ি চলে যেতাম। দুপুরে বাড়ি যাওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও – থোর কেয়ার করতাম!

টিফিনের ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে, পুড়িটা হাতে নিয়েই, ২ মিনিটের মাঝেই, কাউকে না বলে- বাড়িতে ফুট! ভর দুপরে মা বাড়িতে দেখে অবাক হতেন, বকা দিতেন!
– স্কুল পালাইয়া আইছস নাকি?
– না, খাইতে আইছি!
– রান্না শেষ হয় নাই, খাবি কি? এখন আইসোস ক‍্যান! তোর বাপে জানলে রাগ করবো, স‍্যারেরাও মাইর দিব!
– আরে না, মারবো না । এখন আমি ভালা ছাত্র । কথা দিলাম, আগামীবার আমার রুল নম্বর ১ হইবো! তাড়াতাড়ি কুমড়ার পাতা দিয়া একটা নুনা-ইলিশের টুকরা বা মাছ-ডিম যা ইচ্ছা ভাইজা দেও !

আম্মা সহজ-সরল, তাই কবতো! আধা কাঁচা মাছ ভাজি দিয়ে, ততা ভাতের কয়েক নলা খেয়েই স্কুলে দৌড় দিতাম! সদ‍্য পরা পেটে জল-ভাত নড়াচড়া করতো, দৌড়ের উপর ব‍্যাথ‍্যা পেতাম! স্কুলে ফিরতে দেরী হওযার জন‍্য মাঝে মাঝে স‍্যারের বেতের ভারি খেতাম! বেশী না – ১০ মিনিট দেরীর জন‍্য ১০ টা আঘাত! অনেক সময় রাগি স‍্যারেরা ক্লাসের বাহিরে দাড় করিয়ে রাখতো! জানালা দিয়ে দেখতাম প্রিয় বন্ধুরা- মুচকি মুচকি হাসছে। ক্লাসের সুন্দরী বান্ধবীদের চাপা হাসিতে- লজ্জায় নুয়ে যেতাম! তারপরেও পালিয়ে টিফিন খাওয়া ছাড়তাম না!

আমার স্কুল জীবনের টিফিনে এই করুণ দশা হলেও, আমার সন্তানেরা বেড়ে উঠছে, ‘সুষম খাদে‍্য’!

পছন্দ হোক বা না হোক – জাপানে সব শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে খেতে হয়! একই খাবার, দুপুরে! ধনী-গরীব বাঁচ-বিচার নাই! প্রতিটি জুনিয়ার হাইস্কুল ও হাইস্কুলে রয়েছে ডাইনিং রুম, রান্না ও খাবারের বিশাল আয়োজন। শিশুরা বিভিন্ন ঋতুর সবজি-ফলও ফলায়। নিজেদের তৈরী খাবার নিজেরা খায় প্রায়শঃ ! সুষম খাদ‍্য তৈরী ও গ্রহনের অভ‍্যাস, জাপানে শিক্ষার অংশ ।

আমার দীর্ঘদিনের প্রত‍্যাশা ছিল- বাংলাদেশে কেন সুষম খাদে‍্যর টিফিন চালু হয় না। জীবনমুখী শিক্ষা ও ভাবনা চালু হয় না! প্রয়োজনে পিতামাতা বাড়তি টাকা দেয়া দিতে পারে! সরকারও তো দিতে পারে, দেয় না কেন? শিশুরা অপুষ্টি আর ক্ষুধায় বেড়ে উঠবে! অসুস্থ জাতি গাঢ়ে রেখে- সরকার অফিস-দালান-টাকা দিয়ে করবে কি?

বাংলাদেশে একটি উন্নয়নশীল দেশ, লক্ষ‍ লক্ষ‍ শিক্ষার খাবার তো ব‍্যয়বহুল। তাছাড়া বাংলাদেশ তো সামাজতান্ত্রিক দেশ না! এত টাকা পাবে কোথায়? পিতামাতারাও তো উন্নতদেশের মানুষের মত ভ‍্যাট-ট‍্যাক্স দেয় না, দিতে পারে না! আয়োজকরা ফাঁক পেলেই
“সরকারকে মাল দরিয়া মে ঢাল”!
চুরি-তসরুফ করে! বিরাট ঝামেলার কাজ!

এই স্বযুক্তিতে আমার অভিযোগ কেটে গিয়েছিল । অবশেষে বাংলাদেশ সরকার ‘ওয়েলফেফার ষ্টেট’ ও ‘সামাজতান্ত্রিক দেশ’ গুলোর মতো টিফিন নীতি চালু করেছে। জেনে আনন্দিত হলাম।

আশাকারি, ধনী-গরীর শিশুরা একসাথে, একই খাবার খেয়ে -সম্পর্কে, বর্ণে ও স্বভাবে; জাপান ও স্কা‍্যানডেনেবিয়ানদের মত সমতা আনবে। চালু হবে, সুস্থ জীতি গড়ায় সুষম খাদে‍্যর আরো সচেতনতা। আর স্কুলের শিক্ষকরাও, শিশুদের খাবারের টাকা মারিং না করে শিক্ষার মর্যাদা রাখবে।

=======
সরকারের সায় পেল ‘স্কুল মিল নীতি’ এখন চুরিদারি না হইলেই হয়!
( সারাদেশে সব প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় কোটি শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে দুপুরের খাবার সরবরাহে একটি নীতির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।)

জাপানি ভোটের সুন্দরী ক‍্যানভাচার

জাপানি ভোটের সুন্দরী ক‍্যানভাচার

Japan is preparing for Diet’s upper house election on 21 July

লাঠি-শোটা, গুন্ডা-বদমাইশ, রামদা-বল্লম নিয়া শো-ডাউন করা যাবে না । মোবাইলে কথা বলে ভোট চাওয়া যাবে, কিন্তু এসএমএস করা যাবে না, টাকা টেন্সফার করা যাবে না ।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্র্রাথী ভোট চাইতে পারবে না! কারণ – ভোট দিবে না, চোখে মুখে সেই ছাপ দেখে; ভোটের পর ‘দেইখ‍্যা লইমু’র সম্ভাবনা আছে! সংখ‍্যালঘুরদের চোখ রাঙানো, পিঠে হাত ভুলানো সম্ভবনা থাকে! আর থাকে প্রতাপশালীদের দামী সাকে (মদ-টত) উপহার দিয়ে, ওজিসামা বলে, তেল মেরে, লোভ দেখিয়ে, আত্নীয়-টাত্বীয় বলে; দলে ভাগানো সম্ভাবনা থাকে! তাই – প্রার্থীর বাড়ি বাড়ি যাওয়া জাপানি ভোটাভোটিতে নিষিদ্ধ, হারাম!

দশজনের অসুবিধা হবে না, এমন জায়গায় ‘একা একা’, ছবির মত বিরাণভূমিতে হাও-গাও করে ভোট চাওয়ার বাঁধা নাই! তবে মাগনা কামলা, চামচা-চেলা ব‍্যবহার নিষিদ্ধ! অফিসিয়াল ষ্টাফ ও ডিকলিয়ার কর্মী ছাড়া কেউ পোষ্টার-ফেষ্টুন হাতে রাখতে পারবে না! কাছামারা-ঘামঝরা মানুষ নিয়া দল লম্বা করা যাবে না । ধর্মের দোহাই তো পরের কথা, বিপক্ষের প্রার্থী- অযুক্তি আচরনের প্রমান জাহির করতে পারলে, প্রতিপক্ষ বিনাভোটে পাশ।

শুনেছি – প্রার্থীরা নাকি একে অনে‍্যর ভুল ধরার জন‍্য, গোপনে পেইড এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে রাখে! ফলত, রুই-কাতলও ভোটে যোগ‍্যতা হারানোর প‍্যারাকলে পড়ার ভয়ে তথস্থ থাকে!

এই হলো জাপানি ভোটের উৎসব। পুরোই যেন বাংলাদেশ, ফাকিস্তান আর ‘জয় শ্রী রাম’ ভারতের উল্টো!

আসছে ২১ শে জুলাই ভোট হবে। রাস্তায় প্রতি প্রার্থীর ১টি করে গাড়ী ও মাইক ছাড়া কিছু দেখছি না। কেমন যেন মেটমেটা, মরামরা লাগছে!
– মাগনা চা খাওয়া ধুম, টাকার খেলা, মিথ‍্যা আশ্বাস, পাগলা-মিছিল, কান ফাটানো হাস‍্যকর মাইকিং ছাড়া কি নির্বাচন জমে?

গতকাল, জাপানি ভোটের এই সুন্দরী ক‍্যানভাসারের ছবিটা তোলেছি। তোলার আগে সুন্দরী মাইয়ারে কইলাম,
– তোমার একটা ছবি তুলি?
হেসে বলে,
– তোল!
– ফেইজবুকে দিমু, ঠিক আছে?
– দিও! তয়, আমার নাম দিও না !

জাপানে, ফেইজবুকেও ছবি ব‍্যবহারের আগে অনুমতি লাগে। বান্ধবী তো পরের কথা; বউয়েরও । এই কারণে, আমার বউয়ের ছবি, টাইম লাইনে কম ঘুরে! “কি শান্তি ঘরে ঘরে!”

বেশী ফূর্তি ভালো না, বেশী আনন্দ, বেশী ছেবলামি ভালো না! বিশেষ করে রাজনীতি আর ভোটাভুটি’র মত সিরিয়াস বিষয়গুলোতে! বাংলাদেশে গনতন্ত্র, জাপানের মত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করুক; সমাজ ও উন্নয়ন বিকশিত হোক; সেই কামনা রইলো!