‘জিরো থেকে হিরো, হিরো থেকে জিরো’ হিরো আলমের এই ষ্ট্রোকহাঙ্গার ( খ্যাতিক্ষুধা, জাতেউঠার ক্ষুধা), বিষয়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল না। আমার ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে, বন্ধু মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ‘ব্রেইভ হিরো’ মন্ত্রব্যের সুত্রধরে আমার এই লেখা ।
আমি বলেছি – ভাইজান, আপনার মন্তব্যটা ক্ষুদ্র , কিন্তু বিরাট বড় গুরুত্ব লালন করে।এটা বাংলাদেশের বর্তমান মেইনষ্ট্রিম লেখক, শিল্পী ও সুশীলদের দরদের অনুরুপ। যারা নিজের অবস্থান রাখার জন্য সব রকমের ষড়যন্ত্র, ফন্দিফিকির করে, কোন আদর্শ-মতবাদের ধারধারে না, কিন্তু সমতার ও মানবাধীকারের কথা বলে সুশীলতা বড়াই করে।
আমি বন্ধুকে বিষয়টা বুঝানোর জন্য বলছি –
আমার নাম দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের নামে নাম, আর আপনার নাম সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামে নাম। মানবাধীকার ও একই মানবজাতির সদস্য হিসাবে, সম্রাটগণ ও আমাদের মাঝে কোন তফাৎ নেই। কিন্তু আমি বা আপনি যদি রাজার পোষাক পড়ে, অহংকারের সাথে রাস্তা দিয়ে ঘুরি, রাজকীয় সংলাপে ব্যবহার করি, আর বলি ‘আমরা সবাই রাজা’ বিষয়টা কেমন হবে?
ব্যাপারটা বিনোদনের দৃষ্টিতে মজার ও আর্কষনীয় হলেও ; মানুষ কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করবে! হয় পাগল বলবে, না হয় বন্ধুবান্ধব ও আত্নীয়রা আমাদেরকে নিয়ে বিব্রত বোধ করবে। আরো বিষয়টা জটিল হবে, যখন নিজের পাগলমী না বুঝে, অন্য সবাইকে আমরা পাগল বলতে শুরু করবো। অগ্রজ পরামর্শকদেরকে নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করবো। …
হিরো আলম এমনি হাস্যকর ও অসভ্যতা চর্চা করেছে প্রতিদিন। তাকে অভিনেতা বা শিল্পী মানাতে আমার কোন সমস্যা নেই। টেলিসামাদ, সাইফুদ্দিন, রবিউল , কাজল সহ প্রমূখ কৌতুক অভিনেতাকে যদি আমরা মেনে নিতে পারি , তাকে মেনে নিতে আমাদের অবশ্যই সমস্যা নেই। প্রশ্ন হলো সে তার গন্ডিটা বুঝে না। হিরো ও শিল্পীর ভূমিকাটা বুঝে না।
আমার প্রশ্ন হলে – সে তার সীমা বুঝে না। যত্রতত্র সীমা অতিক্রম করে, একের পর এক বির্তকিত কাজ করে চলে! আলোচনায় থাকে, ভাড়ামি করে, নিজের ভিউ কেন্দ্রিক সস্তা জনপ্রিয়তা মানিটাইজের ব্যবসা তুঙ্গে রাখে , পকেট রমরমা করে। তাকে কেন আমরা ইন্টারটেইনার, মানিমেকার না বলে- হিরো বলবো?
কথায় কথায় সে চেহারা, আঞ্চলিকতার উচ্চারন নিয়ে হীনমন্যতা প্রকাশ করে। বিষয়টা আসলে তা নয়। অধিকাংশ মানুষের চেহেরা, বংশ ও যোগ্যতায় হিরো আলমের চেয়ে বেশী ভালো না। তবে আমরা প্রতিদিনের চেষ্টায় সেই সীমাবন্ধতা কাটিয়ে উঠি। হীনমন্যতা ভুগি না। চেষ্টা ও কাজ করে এগিয়ে যাই।
শুনতে মন্দ হলেও বলতে পারি – কাজ ও যোগ্যতার বিচারের, বাংলাদেশে তার মাসিক আয় ২০ হাজারের বেশী হবে না, কিন্তু সে মাসে ইউটিউব থেকেই মাসে ৮০ হাজার থেকে ৪ লাখ রোজগার করে। যা অভাবনীয়। আর্থিকভাবে সে বিরাট সফল, স্বচ্ছল। আর এর জন্যই হয়তো তার শরীর ও মাথা সব সময় গরম থাকে।
শুধু সে না, আত্নজাতিক ক্ষেত্রেও অনেকে এমনটা করছেন। যেমন – জেলেনেস্কি করেছে। নিজের দেশের মানুষ মরছে, একটি শক্তিশালী দেশ তার দেশ গিলছে; আর মহাসিরিয়াস সে বিষয়টাকে সে তোয়াক্কা না করে – স্বস্ত্রীক ভোগের মডেল হচ্ছে। নিজ দেশের মানুষের জীবন-মরন সমসাকে কে হাস্যকার বলে, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
কে কি ভাবছে, ভবিষতে কি হবে সেটা তার বিষয় না। নিজের কাজ করাই তার স্থিরলক্ষ্য।
একরোখা লক্ষ্য-মটিবেশন – আধ্যাত্নিক সাধনার জন্য আর্কষনীয় হলেও, বাস্তব জীবনের জন্য নয়। এই বিষয়টা অদৃশ্য সফলতায় পাগল- বিনোদনষ্টদের অধিকাংশই বুঝে না। তাই হয়তো মানসম্মান-দায়িত্ব না দেখে, গেইমের পর গেইম চালিয়ে যায। লাভ, স্ত্রী-পাটনার বদলো থেকে শুরু করে চুলকানির প্রকার করে। শিল্প চর্চার চেয়ে প্রপাগান্ড শোবিজ চালিয়ে যায়।
আমি যতদূর জানি – হিরো আলম এমন একজন মানুষ, স্কুল-কলেছে ঠিকমত লেখাপড়া করেনি, এখনো করে না! নিজেকে গড়ে তুলে না, এবং গড়ে তোলার ইচ্ছাও আপতত তার চরিত্রপ্রকাশে দেখা যাচ্ছে না। এমন একজন নিম্ন মানের মানুষকে শিল্পী হিসাবে কি গ্রহন করতে পারি?
আমি এক রিপোর্টে দেখেছি হিরো আলম বাউন্ডাইলে, ছ্যাবলা, একাধিক নারীর সাথে একসঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখে! মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানের প্রতি বেসিক দায়িত্ব পালন করে না। ঠেডামি করে। মুখের উপর তর্ক করে, নিচুতার সাথে মাটিতে কথা পড়তে দেয় না, হেসে হেসে বিরোধে জড়ায়।
অনেকে বলে – তার দারিদ্রতা, কালো রঙ্গের চেহারা, সবদিকে থেকে নিম্নমান তাকে ব্যাঙ্গচরিত্র করে তুলেছে। সে নিজেকে এমন ভাবে প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠিত করে, তার প্রতিটি কথাকে নিয়ে হাসাহাসি করা যায়।
আমি বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখি, যদি সে আসলেই বদলাতে চায়, বদলে যেতে পাররে। অজো পড়াগায়ের আরজ আলী মাতাব্বর, মহামতি লালন, আমাদের প্রিয় নজরুল সহ অনেকে অল্পশিক্ষিত ছিলেন, বংশ ও চেহেরায় পরিচয়ে সালমানশাহ মত অভিজাত ছিলেন না, কিন্তু উনারা কেউ সীমা লঙ্গন করেননি। দক্ষতা ও সুশীলতার সাথে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন। যার কারণে আজো আমাদের তাদেরকে স্বরণ করি।
প্রেম, অভিনয়, ব্যবসা, গানে, অভিনয় এমনকি একটিভিজমেও সে প্রতাপ রাখতে চায়। যোগ্যতা নেই, কিন্তু সমান অধিকার দাবীর সুযোগে- রাজনীতির বেসিক যোগতা না থাকার পরও নির্বাচন করবে- নেতা, এমপি,মন্ত্রি হতে চাইবে। রবীন্দ্রসংগীত আর নরুজলগীতি’র মাঝে ব্যবধান করতে পারবে না, কিন্তু আত্নজার্তিক মিডিয়াতে বিভিন্ন ভাষায় গান গাইবে। শ্লীলতা ও অশ্লীলতা বুঝবে না , নিজেকে শিল্পী-সভ্য দাবী করবে। আইন-শৃঙ্লা বাহিনীর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে, গান গাইবে-বেডাগিরি দেখাবে- এটা আসলেই ঠিক না। আমি মনেকরি একটা – অপরাধ। ভাবখানা এমন – আমার যা ইচ্ছা, তাই আমি করুম। তোরা কি পারবি, করিস।
কিছু সভ্য মানুষের মানবিক দরদ ও নীরবতাকে – সে হয়তো সমর্থন মনে করে ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনেকরি – হিরো সাহেব মানসিক রোগে আক্রান্ত, প্রতিমুহুর্তে ভালোবাসাহীনতায় ভূগে । উল্টোপাল্টা কিছু একটা করা জন্য তার হাত-মুখ সবসময় উসপিস করে। যে উসপিসটা মানুষের জন্য উৎপাৎ। স্বভাটা ইউটিউব মানিটাইজের জন্য মহাযুতের। অস্বাভাবিক কুকর্ম কি- সে হয়তো বুঝে না, বা ইচ্ছাকৃত ভাবে নিয়মিত ভুল করে যায়। তার বেসিক জ্ঞানবুঝ না আসা পর্যন্ত – আমি মনেকরি, তার মানসিক শুদ্ধতার জন্য মনোচিকিৎসার ও সুশিক্ষার আওতায় রাখা উচিত। তার সকল সোস্যাল মিডিয়ার আইডি বাধ্যতামূলকভাবে, মেন্ডালষ্ট্রোক ঠিক না হওযা পর্যন্ত- স্থগিত করা উচিত।
শুধু হিরো আলম না – অনেক আলম এখন আমাদেরকে অযথা উৎপাত করে । এই উল্টোদৌড়ে অনন্ত-বর্ষা, সেফুদা, গায়ক মাহফুস, পরিমনি, গালিবাজ হুজুর, নজি ওসমান, ভিউখেকো ও লাইক খেকো ব্লগারা কম এগিয়ে নয়। এরা সবাই নিম্নমানের কাজ করে, উচ্চমানের বাহাবা ও ফল পেতে মশগুল।
যাইহোক সবশেষে বলতে চাই – নিজের ক্ষতি করে, আমরা শরম ছাড়া হতে পারি। এই পথ সবার জন্য খোলা। কিন্তু প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা অন্যদেরকে নেংটা করতে পারি না। অন্যের মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি করতে পারি না। অন্যের মহামূল্যবাদ সময় নষ্ট করতে পারি না।
শিক্ষা বিস্তার, বিনোদনের সাথে সভ্যতা ও উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে, আনসোস্যাল চর্চা কর- অসভ্যতাকে সভ্যতার সাথে মিশিয়ে ফেলার অধিকার করো নেঈ। এভাবে নিজের নিজের সুশীল অবস্থান গড়া যায় না।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনেহয়। :
হিরো আলম নিজে বেশ সচেতন। নিজের কোয়ালিটি সে জানে ও বুঝে, তাই সে নিজেকে সুপিরিওরিটির আবেগে ভাসায়। নিজেকে শেষ্ঠ ও সঠিক দাবী করে। মনোদর্শনে একটি কথা আছে
Superiority is the manifestation of interiority.
“শ্রেষ্ঠত্ব হল অভ্যন্তরীণ দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।
আমার এককথা – মানুষ হিসাবে আমরা সবাই সব কিছু করতে পারি। কিন্তু সবার সব কিছু করা উচিত না। এতে মুল্যবান জিনিষের মূল্য নষ্ট হয়। বিশেষ করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির।