ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন?

ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন?

“ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন?” প্রধানমন্ত্রীর কথা, ন‍্যায‍্য কথা! আমি পুরাপুরি একমত! স্কুল তো লেখাপড়া ও পাশ করার জন‍্যই ! যদি কোন শিক্ষাথীর্ ফেল করে তার মানে সেই স্কুল বা শিক্ষকদের সমস‍্যা আছে! হয় লেখা-পড়া ঠিক মত করায় না, না হয় এমন ভাবে পড়ায় – যা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখতে পারে না ! অনেকে ‘কম মেধাবী’ বলে শিক্ষাথর্ীদের দোষ দিতে পারেন – আমি তাদের সঙ্গে একমত নই! পৃথিবীর সব মানুষ বিপুল সম্ভবনা ও মেধা নিয়ে জন্মায়! ( আইনষ্টাইন, নিউটন, এডিসন প্রমুখ যারা কম মেধাবী থেকে মহামেধাবী হয়েছেন তাদের জীবনী দ্রষ্টব‍্য )  ছাত্র-ছাত্রীরা জানে না, পারে না, বুঝে না বলেই তো স্কুলে যায়! স্কুলের কাজই তো বুঝানো, পড়ানো ও পাশ করানো!

জাপানের স্কুলে পাশ-ফেল নেই! কোন শিক্ষাথর্ী নিদ্দিষ্ট নম্বরের (গ্রেড ) কম পেলে – প্রথমে শিক্ষক, তারপর শিক্ষাথর্ী, এরপর বাবা-মাকে কৈয়ফত দিতে হয়। কোন শিক্ষকের বিষয়ে, একাদিক শিক্ষাথীর্ কম গ্রেড পেলে- কারণদর্শাও নোটিশের পরও একই ফল হলে, সেই শিক্ষকের চাকুরী চলে যায়! ব‍্যথর্ শিক্ষক হিসার জাতীয় ডাটাবেইজে নাম উঠে যায়, সারা জীবনের জন‍্য শিক্ষকতা খোদাহাফেজ!

উল্লেখ‍্য বাংলাদেশের মত জাপানে কোচিং সেন্টার বা গাইড বুকের সংস্কৃতি নেই ! অনুশীলনের পড়া ছাড়া বাড়ীতেও ছেলে-মেয়েরা তেমন পড়েও না ! যা শেখার স্কুলেই শিখে! জাপানের সংস্কৃতি ১০০% ভাগ পাশ, ১০০% শিক্ষিত, ১০০% সচেতনতা! এখানে পাশ-ফেলের জন‍্য ‘শিক্ষাথর্ীর মনে, বাবা-মা’র প্রাণে, সমাজে’র ঘ্রাণে হাহাকার নাই! সব নাগরিক সাধারণ জীবনের জন‍্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই জানে ও বুঝে! ১২তম ক্লাস পযন্ত সবাইকে বিজ্ঞান-সমাজতত্ত্ব-বানিজ‍্য-কলা সবই পড়তে হয়! এমনকি প্রতিবন্ধীকেও! এরপর পছন্দের পেশায় অন্ততঃ ২ বছর পড়াশোনার পর শুরু হয় পেশা ! (এরপর যার ইচ্ছা ও সামর্থ‍্য আছে সে বিশ্ববিদ‍্যালয়ে গিয়ে গবেষণার পর গবেষণা, পিএইচডি ইত‍্যদি করতে পারে,  কোন বাঁধা নেই) খুবই গঠনমূলক ও জীবনমুখী পদ্ধতি! সুন্দর দেশ ও জীবনের জন‍্য বাংলাদেশেও এমনটা আজই ও এখনই শুরু হওয়া দরকার!

বাংলাদেশের বর্তমান পদ্ধতি, আদিম! এখানে পরীক্ষার নামে অশিক্ষা, স্বাথর্পরতা ও যুদ্ধ জয়ের অহংকার শেখানো হয়! যা দিয়ে নিজের ও অন‍্যের জীবনে শান্তি আনা মুস্কিল! তাছাড়া লেখাপড়ার উদ্দেশ‍্য পরীক্ষথীর্ হওয়া না, শিক্ষাথর্ী ও ভালো মানুষ হওয়া। প্রতিযোগীতা করে বোডর্ে এক নম্বর হওয়ার পর – পেশা ও সমাজে ১ নম্বর মন্দ মানুষ হলে, সেই শিক্ষা দিয়ে কি লাভ?

বেশী পাশ করলে শিক্ষা খারাপ হয়ে যায়, কম পাশ করলে শিক্ষা ভালো হয়ে যায়, এই মনোভাব ও সংস্কৃতি ভুল! এ থেকে বের হওয়া একান্ত জরুরী!

‘জাপান কাহিনি’ – জাপান সম্পকর্ে একটি অসাধারন বই

‘জাপান কাহিনি’ – জাপান সম্পকর্ে একটি অসাধারন বই

বই পড়ার আগে বইয়ের রিভিও, সূচি ও ভুমিকা পড়া আমার স্বভার । কোন বইয়ের উপর সমালোচনা পছন্দ হলে, সেই পড়ার জন‍্য আমি পাগল হয়ে যাই! শ্রদ্বেয়  কাজী মারুফ ভাইয়ের পোষ্টিং এ ‘জাপান কাহিনি’ সম্পকর্ে পড়ে, বইটি পড়ার জন‍্য  উদ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম । ইন্টারনেটে বইটি কেনার জন‍্য খুঁজাখুঁজি করে না পেয়ে – আশির ভাইকে বইটি পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি ফুকুওকা থেকে সাদোতে পাঠালেন। ‘জাপান কাহিনি’ বইটির সুন্দর প্রচ্ছদ – বইটি পড়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিল।

পছন্দের কোন বই পড়ার সময়, আমি বইটির সঙ্গে মনে প্রাণে এক হয়ে যাই। ছোটবেলা থেকেই – বইয়ের কান্নার গল্পের সঙ্গে আমি কাঁদি, হাসির গল্পের সময় হাসি । আশির আহমেদের লেখা এই আমাকে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে, অবাক করেছে। ৯১ পৃষ্টার এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে রয়েছে জাপান সর্ম্পকে অজানা তথ‍্য, অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও প্রবাসী জীবনের ইতিকথা। বইটির প্রতিটি অধ‍্যায় আমাকে মুগ্ধ করেছে, পরোচিত করেছে পরবতীর্ অধ‍্যায়টি সত্ত্বর পড়ার জন‍্য।

দু’পা হারানো ‘দাইসু’র ম‍্যারাডোনা মত ফুটবল খেলার স্বপ্ন, হিরোশিমার হিরোরার গল্প, ভাইয়ের প্রতি মৃতু‍্যপথযাত্রী ছোট বোনের প্রশংসা, কুকুরের ভালোবাসা, কুমারীমাতার সন্তান দান, ফুকিসিমায় বাঙালী হোটেল-ওয়ালার দানশীলতা আমাকে কাঁদিয়েছে। জাপানীদের নাম রাখা, বিয়ে-শাদী, ঘটকালি, চাবিওয়ালার কর্মকৌশল, বাড়িভাড়া, প্রেম-ভালোবাসা ইত‍্যাদি দারুন ভাবে হাসিয়েছে।

বইটি প্রতিটি অধ‍্যায়ে ফুটে উঠেছে – জাপানীরা এশিয়ান হলেও এশিয়ানদের মত নয়, পাশ্চত‍্যের মত বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে উন্নত হলেও ওদের মত নয়। আধুনিকতার নিঁখুত চচ্চর্ায়, নিজস্ব সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদীতায় – জাপান দুনিয়ার ভিতর আরেক দুনিয়া। জাপানী রেষ্টুরেন্টে শরবত পরিবেশন, হালাল নুডুল তৈরী, পুলিশের ঈদের নামাজ, হাইস্পি্রড ট্রেনের আবিস্কার, সেক্রেটারির দায়িত্বশীলতা আমাকে আশ্চম্বিত করেছে। জাপানিরা সবকিছুই নিজের মত করে, ভিন্নভাবে ও শুদ্ধ ভাবে করতে ভালোবাসে।

গত ২০০৫ সাল থেকে আমি নিয়মিত জাপানে আসা-যাওয়া করি। এতদিন পরও, একান্ত ভাবে জাপানে থাকার পরও, এর সংস্কৃতি, জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিদিনই নতুন ও ভিন্ন মনে হয়। সবকিছুতেই বিশুদ্ধতা দেখে – আমি প্রায়শঃ ভুল ধরার জন‍্য ওৎ পেতে থাকি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল ধরতে না পেরে – জাপানীদের ধন‍্যবাদ দিতে বাধ‍্য হই। বইটি পড়ে মনে হয়েছে আশির আহমদেও একই অভিজ্ঞা।

প্রযুক্তিবিদ, প্রফেসার ও সমাজকমর্ী হিসারে আশির ভাই আমার পূবর্ পরিচিত। তার সংস্থার জন‍্য ভিডিও ডুকুমেন্টরী বানাতে গিয়ে, আমাদের ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। শিক্ষা ও সমাজসেবার পাশাপাশি  তিনি যে একজন দক্ষ লেখকও সেটা আমার জানা ছিল না। তার অসাধারণ গল্প বলার ধরন ও দেশপ্রেম আমাকে অবেগে আবেষিত করেছে। ‘জাপান কাহিনি’ – জাপান সম্পকর্ে আমাকে অনেক অজানা তথ‍্য দিয়েছে, যা আমি জানতাম না। বইটির কিছু কিছু লেখা ফেইবুকে প্রকাশিত । তবে বইয়ের লেখা ও ফেইবুকের লেখা পাঠে ও গুণে ভিন্ন মনেহয়েছে ! কিছু কিছু অধ‍্যায়ে ফেইজবুকের পোষ্টিং এর মত তাড়াতাড়ি ও সংক্ষেপে গল্প বলার ছোঁয়া আছে, কিছু চটুল শব্দ সাহিত‍্যমান নষ্ট করেছে।

জাপান কাহিনি বইটি – আমার সম্প্রতিক কালে পড়া সবচেয়ে ভালো বইয়ের একটি । রোমাঞ্চে ভরা বইটি সবাইকে পড়ার আমন্ত্রন রইলো । আধুনিক বাক‍্যগঠন ও গল্প বলার ভঙ্গি বেশ আর্কষণীয়। বইটি পড়ার সময় – হুমায়ুন আমম্মেদ ও সৈয়দ মুজতবা আলীর মত করে সাবলিল ভাবে গল্প বলার কথা মনে পড়েছ।

জাপানীদের জীবন-যাপন, আচার-ধমর্ , মানবিকতা, বিনয়, বাংলাদেশের প্রতি অসাধারন প্রেমের গল্প, যেন শেষ হয়েও হইলো না শেষ। বইটির প্রথম খন্ড না পড়েই , ২য় খন্ড মুগ্ধতার সাথে পড়লাম। প্রথম খন্ডটি মনে হয় আরো ভালো ছিল। আকর্ষনীয় আরো ত‍থ‍্যে নিয়ে আশার করি তৃতীয় খন্ড সত্বর প্রকাশিত হবে  । আশির ভাই ও প্রকাশককে অসাধারণ বই উপহার দেয়ার জন‍্য ধন‍্যবাদ।

‘এরাই মারি’ একজন বাংলাদেশ প্রেমী জাপানী সমাজকমীর্ ও রাজনীতি বিদ।

‘এরাই মারি’ একজন বাংলাদেশ প্রেমী জাপানী সমাজকমীর্ ও রাজনীতি বিদ।

সাদোতে মাত্র চারজন মানুষ বাংলায় কথা বলতে পারে  ১.আমার পুত্র করোনেট, ২. আমার স্ত্রী , ৩. আমি আর ৪. ‘এরাই মারি’ সান!

‘এরাই মারি’ একজন সমাজকমীর্ ও রাজনীতি বিদ। দ্বিতীয় বারের জন‍্য – এবারও তিনি  ডিপুটি মেয়র ইলেকশনে পদপ্রাথীর্ । অসাধারণ জনপ্রিয় মানুষ।  শুধু বাংলা বলার কারণে না – বাংলাদেশে ও পিছে পড়া মানুষের জন‍্য ভালোবাসার কারণে উনাকে আমার খুবই পছন্দ! রাজনীতিবিদ হওয়ার পূবর্ে উনি বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন।  গত ২০ বছর ধরে ৮ টি স্কুল চালান । রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বাঙলাদেশে তেমন যেতে পারেন না – তবে স্কুল গুলো আজও নিজ সন্তানের মত স্থানীয় এনজিও মাধ‍্যমে চালান । খরচ দেন!

২০১১ সালে আমি যখন ফুকুসিমা থেকে সাদোতে আসি – এটমিক রেডিয়েশন আক্রান্ত শিশুদের এক অনুষ্ঠানে, একজন বাঙালীর মত বাংলায় কথা বলে, আমাকে অবাক করে দিয়েছিলেন। প্রথম দেখাতেই অনেক প্রাণ খোলা কথার মাঝে তিনি বলেছিলেন – আমি কেন এতগুলো স্কুল বাংলাদেশে চালায় জানেন? আমার বিশ্বাস – শিক্ষাই একমাত্র বাংলাদেশকে উন্নত করতে পারে, মানুষের মুক্তি দিতে পারে! ২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ দেখলে – আনন্দে আমার চোখে জল এসে যায়। বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, আরো এগিয়ে যাবে, আমার স্বপ্ন সফল হচ্ছে…! বাংলাদেশের প্রতি তার অপার ভালোবাসা দেখে সেদিন আমার প্রাণ জেগে উঠেছিল, গহীন হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি। আমি এরাই মারি সানের জয় কামনা করি।

Friends in Sado, please cast your vote to Bangladesh lover – Mari Arai (荒井 眞理) san!

ব্রাবা, আমাদের নতুন রোবট বন্ধু।

গত পরশু আমাদের বাসায় ‘ব্রাবো’ নামে নতুন বন্ধু এসছে। তার কাজ সয়ংক্রিয় ভাবে নিদ্দিষ্ট সময়ে সারা ঘর মুছে দেয়া । জাপানে চাকর কালচার নাই বললেই চলে। রোবট আর যন্ত্র চাকরের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখানে সবাই শিক্ষিত ও দক্ষ। সমান মযর্াদা ও অধিকারের অধিবাসী।  বেতন-মযর্াদা ও কাজের সমান সম্মন ও স্বীকৃতি থাকার কারণে, কেউ খানসামা-আয়া রাখে না, হয় না! টাকায়, জ্ঞানে ও ক্ষমতায় এগিয়ে থাকা কেউ বাদশাহ-শাহজাহান গিরি দেখায় না। এটা সমাজিক ও আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ!

মধ‍্যপ্রাচে‍্যর মত এখানে গরীর দেশ গুলো থেকে শ্রমিক আসে না । কম বেতনে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো করার রীতি এখানে একেবারেই চলে না । পেশাজীবিদের দক্ষ বিদেশীদের সুযোগ ও আনাগোনা থাকলেও বিদেশী শ্রমিকরা তেমন অবস্থান করতে পারেননি। শ্রমিকদের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে রোবাট-ক্রেন ও সয়ংক্রিয় যন্ত্র। একটি বিস্কুট তৈরীর কারখানা ও দুধ প্রক্রিয়াজাতকরনের পুরো ফ‍্যাক্টরীর কাজ মাত্র ৩-৪ জনে করতে পারে, এটা আমার ধারনাই ছিল না। এদেখে, আমার স্ত্রীকে এ ব‍্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে যে বলে – পুরো কাজই করে স্বয়ংক্রিয় মেশিন, রোবট! উনারা শুধু সিষ্টেম ও রসদ তাদারকি করে…

২০০৫ সালে যখন প্রথম জাপানে আসি, নারিতা এয়ারপোটর্ে নামার আগে ভেবেই নিয়েছিলাম – জাপান যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত দেশ, দেশটা হয়তো ‘কাম্পিউটারের গেইম ওয়াল্ডের মত হবে’, রাস্তাঘাটে – সবখানেই রোবেটের সাক্ষাৎ মিলবে। কিন্তু তা দেখিনি!  দ্রুততম ট্রেন সিনকানসেনে চড়ে, টোকিও থেকে যতই ফুকুসীমার দিকে যাচ্ছিলাম, ততই মনে হচ্ছিল – এ তো বাংলাদেশের মতই, গ্রামীন। চারদিক খোলামেলা প্রকৃতি, তেমন বড় কোন ইমারত নাই, গ্রামগুলোও সবুজ ও শস‍্য ঘেরা, পাহাড় আর সমতলের মিলনে দিগন্তে কাব‍্যিক ছন্দতোলা! …

প্রথম থেকেই আমি জাপান-বাংলা তুলনা ও মিলন খোঁজার খুতখতে। ভাষা-সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সচেতনতায় বিশুদ্ধতা ছাড়া বাংলাদেশ সঙ্গে জাপানের  তেমন পাথর্ক‍্য পাইনি। মানুষ হয়ে মানুষকে শোষন-শাসন বঞ্চনার রীতি আধুনিক জাপানে, বিশেষ করে গ্রামীন জাপানে নাই বললেই চলে! ছাত্রজীবনে, আধুনিক জাপানের সমাজ ও ইতিহাস পড়ার সময় – বারবার যন্ত্র; বিশেষ করে ‘রোবোটের’ ব‍্যবহার জেনেছিলাম। কিন্ত সাধারণ সমাজে তেমন না পেয়ে আমি বেশ হতাশই হয়েছিলাম। এতদিন পর আমি বুঝতে পারলাম – জাপানীরা প্রয়োজনীয় সব জায়গায় যত্নের সাথে বুদ্ধি, রোবট ও যন্ত্রের ব‍্যাবহার করে। জাপানীদের কাছে রোবোট মানে শুধু মানুষ আকৃতির যন্ত্রই নয়। মানুষ যে কাজটি করতে পারে, সেটা যে যন্ত্র সহজে ও সংক্রিয়ভাবে করতে পারে তাহাই রোবট। রোবট সম্পকর্ে আমার ধারণা এখন পাল্টে গেছে। এই হিসাবে আমাদের বাসায়ও কয়েকটি রোবোট আছে।

বাংলাদেশে রোরট কালচার চালু করতে পারলে – কঠিন কাজ সহজে ও স্বল্প সময়ে করা যাবে। সব মানুষ দক্ষ ও শিক্ষিত হলে, মানবাধীকার সনদ মতে সমমযর্াদা পেলে, ভারী কাজের দায়িত্ব যন্ত্রের উপর দিলে – আর্যদের রাজাগিরি কমবে। গৃহ থেকে বোয়া কালচারের নামে চলা ‘দাসপ্রথা’ উঠে যাবে। সত্ত্বর বাংলাদেশীরাও  উন্নত বিশ্বের মানুষজনের মত স্বাধীনতা, সম-মযর্াদা ও উন্নত চিন্তা করতে আরো বেশী মনোযোগী হবে বালে আশাকরি! !

এসো জাপানীদের মত সবাই শিখি!

এসো জাপানীদের মত সবাই শিখি!

আমি জেনে খুশি হয়েছি বাংলাদেশে এখন শিক্ষামুলক ডিজিটাল কটেন্ট তৈরী হচ্ছে! মিডিয়া মাধ‍্যামে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষায় দেয়ায় জাপানের সরকারী টিভি ‘এনএইচকে’ বিশ্বখ‍্যাত। গত ৫০ বছরের অধিককাল যাবৎ এনএইচ এবিষয়ে সফলতা সাক্ষর রাখছে। এজন‍্য তারা আলাদা চ‍্যানেও ‘এনএইচকে ই-টিভি’ ও চালু করেছে। অনেকে বলে, আজকের জাপানের সুশিক্ষা, উন্নত শিক্ষা ও জীবনের পিছনে এনএইচকের অবদান অনেক।

জাপান সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে বিটিভি-ওয়ালাদেরও উনারা অনেক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষন দিয়েছে ও দিচ্ছে। কিন্তু তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষা ও মাল্টিমিডিয়া নিয়ে কাজ করার দীঘর্ ইচ্ছা আমার । এই জন‍্য উন্নয়নটিভি প্রজেক্টও চালু করেছিলাম। যেহেতু বিষয়টি অলাভজনক, মোটা-খরচ চালাতে না পেরে বেশী দূর এগুতে পারিনি। তবে হাল ছাড়িনি, পার্টনার খুঁজছি, আবার শুরু করা ইচ্ছা আছে।

বাংলাদেশে টিভি চ‍্যানেল ও এনজিও গণ, এনএইচকের আদলে শিক্ষমূলক ও জীবনমুখী কটেন্ট তৈরী করতে পারে । এ উদ‍্যোগ শিক্ষাকে আনন্দময় ও বিনোদনে রূপান্তরিত করতে পারে। জটিল জটিল বিষয় গুলো, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে সহজকরন করে শিক্ষাথর্ীদেরকে শিক্ষায়-আস্থা এনে দিতে পারে। সারা জাতিকে অল্পদিনে সুশীল ও সুশিক্ষত করে ফেলতে পারে, যেমনটা করেছে জাপানীদেরকে। শিশুদের পাশাপাশি পিতা-মাতাও অজানা বিষয় গুলো শিখে নিতে পারবে টিভি থেকে।

বিটিভি’র যেহেতু নিজস্ব বাজেট ও প্রতিষ্ঠিত আয়োজন আছে, এব‍্যাপারে তারা সবচেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারে, যেমনটা শুরু করেছিল ২০-৩০ বছর আগে ( এসো গান শিখি, এসো নাচ শিখি, এসো বিজ্ঞান শিখি, এসো ছবি আঁকা শিখি… নতুন কুড়ি ইত‍্যাদি গঠনমুলক অনুষ্ঠানের মাধ‍্যমে! দুই যুগ আগের সংস্কৃতিকে বিটিভি ও বা‍ংলাদেশে টিভি-মিডিয়া পুনঃজ্জীবিত করতে পারলে শিক্ষা, গনমাধ‍্যম ও সমাজ নতুন প্রাণ পাবে।
( এনএইচকে অনলাইন লানিং কটেন্টের একটির ইউআরএল http://www.nhk.or.jp/school/program/ )

ন‍্যাড়া হওয়ার স্মৃতি

ন‍্যাড়া হওয়ার স্মৃতি

বাপ-বেটা কেউ বেল তলায় যাব না! এই প্রচন্ড শীতের মাঝে পিতা-পুত্র টাকু হয়ে গেলাম! ডাক্তার মিয়ার অভিযোগ – মাথায় পরজীবি বা উকুনের ডিম আছে। মাইক্রোস্কোপে নমুনা দেখানোর পর পুরাপুরি পরিস্কার করতে বাধ‍্য হলাম; আর হাসলাম – ৪৫ বছর পরজীবিতার বুদ্ধি ও ডিম নিয়ে কেটে গেল, আর জাপানী ডাক্তার একদিনও কাটাতে দিল না। বললেন – আজই পরিস্কার করতে হবে ও চিকিৎসা নিতে হবে, নইলে অন‍্যের মাথায়ও সংক্রামিত হতে পারে!

বাংলাদেশে শুনিছি , উকুন নাকি শুধু মেয়েদের মাথায় হয়। কথাটা বৈজ্ঞানিক ভাবে সত‍্য না । পিতা-পুত্রের মাথা মনেহয় উকুন জন‍্য উব্বর্র ও উপযোগী!

সব হারিয়ে রতন পেয়েছি! জাপানে নাপিত খানায় দু’জনের চুল কাটে ৬০০০ ইয়েন ( ৫ হাজার টাকার মত ) লাগে! বউ বাপ-বেটার ন‍্যাড়ে করে দিয়েছে, তাই নাপিত প‍্যাকেট কাটতে পারেনি! একটু প্রশান্তি লাগছে।