ফ্রি কালচার, ফ্রি সেক্সের দেশ।
যখন তখন, যা ইচ্ছা তার সঙ্গে সব কিছু করা যায়। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ – জামাই এক ঘুষি দিলে, বউ দুই ঘুষি দেয়।
এমন বাস্তবতায় মহামতি’র সুন্দরী বউ – একা একা সেন্দাই গেছে এমবিও পরীক্ষা দিতে। এই ভাবনায় মহামতির নয়, বাঙালী কবি শুদ্ধের ঘুম হারাম। দীর্ঘদিন জাপানে থাকার পরও কবি শুদ্ধ নিজের অজান্তেই নারীকে সন্দেহ করে। চরম সন্দোহ করলে পুরুষের দেহমনে কি ধরনে অদ্ভদ রসায়ন ঘটে, কাব্যে তা প্রকাশে কবি শুদ্ধ বুঝার চেষ্টা করছে।
কবি শুদ্ধের চিন্তা চেতনায় নানান রঙের খেলা দেখে মহামতি হতবাক।
– কবির হলোটা কি? এত হাসিখুশি মানুষ। কিন্তু আজ খুব বিমর্ষ।
কোনক্রমেই কবি শুদ্ধ নিজেকে মানাতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে মুক্ত কালচারের দেশে থাকার পরও তার মন – প্রচীনতা, পুরুষতান্ত্রিক সন্দেহের প্রাচীর অতিক্রম করতে পারছে না।
কফি ব্রেকের সময় সামনা সামনি কফি পান করা কালে – কবির অস্থিরতার কারন জানতে চায় মহামতি। কবি শুদ্ধ বলে,
– আপনার সুন্দরী বউ যে গত তিন ধরে বাড়িতে নাই, একা একা হেটেলে থাকছে, আপনার মনে কি কোন রসায়ন হয়নি?
– না, তা হবে কেন? রসায়নবিদ্যা তো বইয়ে, ল্যাবে মানুষের মনে থাকা শ্রেয় না।
এ বলে মহামতি হাসতে থাকে।
– হুম। তয় আগে হতো। নানান ধরনের অযথা প্রশ্ন, সন্দেহ ও ভয় মনে জাগতো। এখন জাগে না।
– কিভাবে বদলালো?
– বিশ্বাস। আমি এখন প্রকৃত ঈমানদার। মানুষ হয়ে মানুষকে বিশ্বাস না করলে, খামিসামাকে বিশ্বাস করবো কিভাবে?
– হু, বাংলাদেশে থাকতে কেমন লাগতো?
– বিষয়টা নিয়ে দোজখের ভয়ের মত কাতর থাকতাম। সামর্থ্য না থাকার পরও তুলনামূলক নিরাপদ ধানমন্ডিতে থাকতে হয়েছিল।
– হু
– ভয় তো বিদেশী সুন্দরী নিয়ে ছিল না। ভয় ছিল পিছু ধরার মোনাফেকদের নিয়ে। হোটেলে কখনো একা থাকেনি – খোদ হোটেলম্যান, ম্যানেজার আর মালিকদের চোখে আগুন দেখে থু থু দিতে মন চাইতো। পঁচা সেই মানুষ গুলো হয়তো এখনো বদলায়নি। বাংলাদেশে কোন নারী হোটলে যাওয়া সাথে সাথে আমিনিশ্চিত প্রথম এই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে,
– স্বামী কোথায়?
– যদি বলে তার দরকার কি। আমি টাকা দিয়ে হোটেলে থাকবো স্বামী লাগবে কেন। স্বামীর তো বউ লাগে না, বউয়ের পরিচিত লাগেনা।
এই প্রশ্ন পাওয়ার সাথে সাথে হোটেলম্যানরা নিশ্চুপ থাকলেও বলে- স্বামী ছাড়া বা স্বামীর পরিচিতি আমাদের এখানে গেষ্ট রাখার নিয়ম নাই।
হয়তো চেকইনে থাকা এন্ট্রিবাবু, ম্যানেজারকে ডাকবে আর মনেমনে বকা দিবে, স্বামী ছাড়া ভালো মেয়েরা হোটেলে থাকবে কেন?
শুনতে মন্দ লাগলেও এটা সত্য, বাংলাদেশে অধিকাংশ সাধারন মানুষ নারীর বিষয় নিয়ে মাত্রারিক্ত হিন্ন্যমন্য, বহুত অনিরাপদ। হোটেলে থাকা মানেই ভেবে নেয়, মেয়েটা ভালো না, চরিত্রে সমস্যা আছে।
– আমারও তাই মনে হয়! তবে অবস্থা বোধহয় এত খারাপ না।
– হ, তোমার বিশ্বাস হয় না? তুমি একবার বাংলাদেশে গিয়ে তোমার সুন্দরী বউকে হোটেল একা একা এক রাত হোটেল রেখ দেখ, তুমি বা তোমার বউ ঠিক মত ঘুমাতে পার কিনা? বারবার তোমার বউ হোটেল থেকে, আর তুমি বাড়ি থেকে মোবাইল করে করে রাত পার করে দিবে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি- ধর্মের দেশ, ৭০%+মুমিনের দেশ, কিন্ত এমন অপরাদ প্রবন হবে কেন? এত অধার্মিক হবে কেন?
– ধর্ম না ছাই। ধর্মের দেশ না, ধর্ষনের দেশ। মোনাফেকের দেশ, থুক্কু বেশী বইরা ফেললাম। যাকগে, এত হারমাতির কারণটা কি মহামতি?
– গাছের গোড়াতে ভুল। সেখানে কলম দেয়া ছাড়া গতি নাই রে কবি, গতি নাই। মন দিয়ে কবিতা লিখ, হয়তো বাংলার বিবেক একদিন জাগবে।
– বুঝলাম। তাহলে বিষয়টা নিয়ে জাপানে আপনার কেমন লাগে?
– ভালো, শতভাগ নিশ্চিত। দেখছো না, আমি পুরো শান্ত? এখানে নারীকে নারী মনে করা হয় না, মানুষ মনে করা হয়।আমি নিশ্চিত সে বাড়ির মতই নিরাপদে থাকবে। যদি কোন কিছু হয়, তবে তার সম্মতিতেই হবে, অসম্মতিতে কিছু হলে হোটেল সিস হয়ে যাবে। মহামতির বউ, অন্যপুরুষকে ধরাধরি- এমন অবিশ্বাসের কাজ সে করবে না।
– আমি তো অনেক ভয়ে ছিলাম। আমার এক চাচা, দেশে বউকে বাড়ির বাহিরে এক রাতের জন্যও থাকতে দিতে চাইতো না। কোন কারণে অফসার বউকে অফিসের কাজে অন্য জেলায যেতে হলে, তিনিও পাহারাদারের মত ছুটি নিয়ে বউয়ের সঙ্গে যেতেন। একবার যেতে পারে নি, আর সেই বারই এক হারমাতি আক্রমন করেছিল। সব শেষের পর হত্যা করেছিল!
এ বলে কবি শুদ্ধ কেঁদে দেয়।
– হু। এগুলো বলে আর কষ্ট নিও না, কষ্ট দিও না। আমাদেরকে কারণ আবিস্কার করে, সেখানে চিকিৎসা করতে হবে।
– হবে না মহামতি! হবে না!
– হবে না কেন? আশা হারানো পাপ। বেড়ায় ক্ষেত না খেলে হবে।
– তা কিভাবে সম্ভব?
– শিক্ষা, শিক্ষা আর শিক্ষা। এরপর আইনের শাসন, সচেতনতা ও মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকলে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
সুন্দরী বউয়ের একা একা হোটেলবাস!
November 9, 2021