সকালে ঝলমলে বৌদ উঠেছে। চারদিক আলোর বৃষ্টিভালোবাসায় সিক্ত, চকচকে। প্রাতঃভ্রমণে ওসাদো পর্বত থেকে অনবরত আসা শুদ্ধবাতাস আমার হৃদয়ে প্রেম জাগিয়েছে। মনে হয়েছে, আমি মহাকালের এক মহাযাত্রী। দিন দিন প্রতিদিন নিজের অজান্তেই ভালোবাসার মহাকাব্য রচনা করে চলছি।
ঘরে ফিরেই নাস্তা বানালাম। শুদ্ধমন নিয়ে – ফাইভষ্টার রেষ্টুরেন্টের চাইতেও বিশুদ্ধ করে নাস্তা বানালাম। খাবারের আইটেম গুলো সহজ সরল হলেও স্বর্গীয়। জাপানি সুন্দরী বউয়ের নিজের হাতে বানানো প্রেমমাখা ইংলিশ ব্রেড, চিজপনির, মধু, গাছের পারসিমন (কাকি), ব্রেন্ড কফি আর সবজি স্যুপ।
দেশে থাকতে – যখন ‘মানবাধীকার ও উন্নয়ন’ নিয়ে আমার কন্ঠ সোচ্ছার ছিল, তখন দেশ বিদেশ থেকে ‘মাল্টিমিডিয়া জার্নালিষ্ট’, ‘ফটোগ্রাফার’ কাম ‘একটিভিষ্ট’ ( আরো কত কি) নামিদামী মানুষ হিসাবে ‘ডেভেলাপমেন্ট ট্যুরিজমে’র সুযোগ পেতাম। প্রয়াশঃ গরীর মানুষের মুখের ছবি দিয়ে প্রজেনটেশন করে, দেশ-বিদেশের ফাইভষ্টার হোটেলে মাগনা খেতাম। আর দ্রারিদ্রমুক্ত, ব্যাবধানমুক্ত
উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতাম।
জাপানে আসার পর থেকে আমার সেই কর্মযজ্ঞে শ্যাওলা পড়েছে। কারণ এখানে প্রাইভেসী, কপিরাইট, সরকার ও জনগনের দ্রুত সমতা-সমাধানে ইস্যু পাওয়া মুস্কিল। সবাই শিক্ষিত, ধনী ও সচেতন হলে- এনজিও, ফটোগ্রাফার, জার্নালিষ্ট ও একটিভিষ্টদের যে ভাত নাই তা হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি।
এরপরও বাংলাদেশের নাম ভাঙ্গিয়ে মাঝেমাজে টুকিটাকি দাওয়াত পাই। সেটাও হয়ে গেছে – কারোনার কারণে অনলাইন। ফাইভষ্টারের নাস্তা তো পরের কথা, বক্তৃতা শেষে যে নাজরানা পেতাম, সেটাও পাই না। আয়োজক কয়,
– ভাই দুঃখিত, এবার বাজেট নাই। ভলেনটিয়ারলি করে দিবেন। আপনি তো ভালো মানুষ, টাকার কাঙ্গাল না।
ভাবগতি দেখে মনেহচ্ছে ‘এসডিসি’ আর ‘এইচআর’ এনজিওত কাজ করার ফলে ডেভেলাপমেন্ট ট্র্যুরিজমের সেই সুযোগের সুদিন আর আসবে না। নিজের টাকা দিয়েই বিদেশে যেতে হবে, ফাইভস্টারে খেতে হবে।
মানুষ এখন দিন দিন ধনী হচ্ছে, সোস্যাল মিডিয়ার কারণে সবাই সব দ্রুত জেনে যাচ্ছে। কেউ কোন কিছু জানতে, শেখতে ও পাড়তে চায় না। ভাব দেখায় – সব জানে, সব মানে।
আর ইউরোপ-আম্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া-জাপানের মত যদি কোন ভাবে আইনের শাসন বাংলাদেশে এসে যায়, সবাই শিক্ষিত-সচেতন হয়ে যায়, তবে তো আর কোন কথাই নেই। উন্নয়নসভার নামে মাগনা ডালপুড়ি আর সিঙ্গারা খাওয়া পুরো বন্ধ হয়ে যাবে।
ভবিষতের প্রস্তুতি হিসাবে, নিজেই ‘ফাইভ স্টার’ হোটেলের আদলে মজার মজার খাবার বানানো অভ্যাস রপ্ত করছি। দেখি না কি হয়।