১. সামজিকতা ও অসমাজিকতা
প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে অনেক পোষ্ট, বই, ওয়েবসাইট, ব্লগ, নাটক, ভিডিও ইত্যাদি তৈরী হচ্ছে। বিষয়টা বিপুল আনন্দের। যা চেয়েছিলাম তাই হচ্চে। ‘কুন হাইফা কুন’ – ‘বললাম হও, হয়ে গেল’। আমাদের ক্ষমতা এখন অনেকটা খামিসামার সমরুপ। তবে বেশী ভালো যে ভালো না – তার প্রমান, ‘যা ইচ্ছা তা বলা’, ‘যা ইচ্ছা তা করা’ এক অর্থে স্বেচ্ছাচারিতার কালচার স্বগৌরবে চলছে।
– স্বেচ্চাচারিতা ও স্বাধীনতা এক না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সেন্সরশীপের পক্ষে নই। তবে প্রকাশের পূর্বে একটি শর্ত প্রকাশক ও কনটেন্ট মেকারের জন্য বাধ্যতামূলক করা দরকার। যা হতে পারে
– কনটেন্টটি ব্যক্তি, সংসার, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না। বাঙালির সুশীলতার ঐতিহ্য ও সবার সমান অধিকারকে নসাৎ করবে না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্যের মানহানি করবে না। নিজের শারীরিক, মানসিক ও কালচারাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হবে না।
এই সুকর্মটি করতে বাঙালির যেমন পুরোটাই অনিহা, অদক্ষতায় একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। জাপানিরা তার উল্টো – ‘জান যাবে তবে মান দিবে না’। জাপানিরা অনেকসময় নিজের মন্দদিক উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সোসালমিডিয়াতে প্রকাশ করলেও, অন্যেরটা কখনো করে না। কেউ হারমাতি করলে – আইনগত মামলার পাশাপাশি, সামাজিক ভাবে শ্রীঘরে যেতে হয়। ‘হেন্ননস্ত’ মানে ‘পাগল বা মন্দমানুষ’ হিসাবে বিনেপয়সায় খেতাব পেতে হয়।
যার কারণে বেটাগিরির মিডিয়া ফেইসবুক এখনো জাপানে জনপ্রিয় হয় নি। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রিয়তায় ফেইসবুক শীর্ষে। অনেক সময় ফেইসবুক নিজের জামাই-বউয়ের চাইতেও প্রিয় হয়ে যায়, যা হাস্যকর।
২. মিডিয়া কন্ট্রোল
৪০% ফেইজবুক লাইক বাংলাদেশের। এ খবর ২০১৬ সালের । এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সফলতার খবর এত দেরীতে পেলাম। আজ পড়ে মন খারাপ করেছি। এত সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেও আপডেট হতে পারলাম না। যাইহোক এখন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে হবে পারসেন্টিসটা কত বেড়েছে। শুনেছি – ঢাকায় নাকি এখন লাইক বেচা-কেনা হয়। তার মানে পারসেন্টিস অতি চালাক ‘জুকার বাঘ’এর চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্তত ৬০ ভাগের বেশী চলে গেছে, বোধহয়। কারণ – কাজ কাম কম করে, বেশী লাভের বেলায়- বাঙালি, আম্রিকান আর বৃটিশদের তিন জাতীর মাথা ভালো।
৩. জাপানে ফেইজবুক
জাপানিরা কড়া কমিউনিষ্ট, সৌদি আর অতি পুজিবাদী আম্রিকানদের মত কৌশলে, নিজের কোটে ফল রেখে মিডিয়া কন্ট্রোল করে না। সেন্সরশীপ করে না।
জাপানিদের ভাবগতি, নীতি,
– যত পার টেক ব্যবহার কর, কিন্তু কপিরাইট মানহানি ও প্রাইভেসী আইন মানতেই হবে। নইলে জরিমানা, মামলা ও জেল। (তবে নিশ্চিত হামলা হবে না, জারিমানার টেকা দিতেই হবে। )
ফলত মানুষ নারী-বাড়ি-গাড়ি’র ছবি দেয় না। শুধু মানুষ না, কাউকে না বলে গাড়ির নাম্বার প্লেইটে ছবি বা ভিডিও তে আসলে, সংখুব্ধের ‘ট্রেটিং’র মামলার ভয় থাকে।
মামলারর ভয়ে- দানব গোগল নিজেও স্ট্রিটভিউ তে পথচারীর ফেইজ ব্লার করতে বাধ্য হয়েছে।
তাই জাপানি ফেইজবুকাররা, অযথা বাংলাদেশী ফেইজবুকারদের মত ‘ধর্ম , মান-অপমান, নেতাগিরি, বাবুনগরী-রাজনীতি; নিয়ে ফেরা প্যাঁচাল পারে না। লাইক ও শেয়ার বেচাকেনা করে না।
জাপানি সুন্দরী ফেইজবুকারদের টাইম লাইন বেশ মজার। হেরাবেড়া তেরা- নিজের সাজন ফ্যাশন থাকে। ফুল-পাখি আর পাহাড়-পর্বতে ভরা। সেক্সি ফটো গুলো শুধু পর্ণসাইটে বা পারসোনাল সাইটে থাকে প্রফেশল্যাল হলে ।
ফেইজবুক, বাংলাদেশের মত জাপানে জনপ্রিয়তা পাইনি।
আইন শৃঙ্খলায় ও শান্তিতে বাঙালি পিছনে পড়ে থাকলেও – ফেইজবুকিং ও ইউটিউবিং এ বেশ এগিয়ে। আরো এগিয়ে যাও বাঙালি, সুযোগ তোমাদের হাতে।
জাপানের কোন অনুষ্ঠানে আগে প্রবেশ পথে- ‘নো ক্যামেরো’, ‘নো স্পোকিং’ থাকতো। এখন নতুন আইকন যুক্ত হয়েছে। ‘না এসএনএস’ (নো সোস্যাল মিডিয়া)। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বলে দেয়া হয়- কেউ যদি না বলে তোমাদের ছবি বা ভিডিও তোলে তোমার শ্রেণী শিক্ষকে বলবে। এটা শুধু প্রাইভেসীর জন্য নয়, চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি বিরুদ্ধে কড়া উদ্দে্যাগ ।
ফলত অন্য শিশুদের ছবি তো পরের কথা, আমি আমার নিজের শিশুদের ছবিও আরামে তুলতে পারি না। অনুমতি নিতে হয়। কষ্ঠের কথা আমরা এত সভ্য – বাংলাদেশ ও ঢাকার কোন অনুস্ঠানের প্রবেশ পথে এখনো দেখিনি ‘নো ক্যামেরা’, ‘নো এসএনএস’। তার মানে আমরা ফুটাঙ্গি দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি।কিন্তু পাবলিক টয়লেট পরিস্কার রাখতে ভালোবাসি না। পরবর্তীজনে কি হবে, তা একটুও চিন্তা করি না।
প্রচার ও প্রসারে আমরা মরিয়া থাকি। প্রয়োজনে বাস্তবতা বদলে লেজে-গোবরে করে, ছেড়াবেড়া করে ফেলি।
—-
Related podcast link: http://bit.ly/36UYXdT