‘জাপান কাহিনি’ – জাপান সম্পকর্ে একটি অসাধারন বই

বই পড়ার আগে বইয়ের রিভিও, সূচি ও ভুমিকা পড়া আমার স্বভার । কোন বইয়ের উপর সমালোচনা পছন্দ হলে, সেই পড়ার জন‍্য আমি পাগল হয়ে যাই! শ্রদ্বেয়  কাজী মারুফ ভাইয়ের পোষ্টিং এ ‘জাপান কাহিনি’ সম্পকর্ে পড়ে, বইটি পড়ার জন‍্য  উদ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম । ইন্টারনেটে বইটি কেনার জন‍্য খুঁজাখুঁজি করে না পেয়ে – আশির ভাইকে বইটি পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি ফুকুওকা থেকে সাদোতে পাঠালেন। ‘জাপান কাহিনি’ বইটির সুন্দর প্রচ্ছদ – বইটি পড়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিল।

পছন্দের কোন বই পড়ার সময়, আমি বইটির সঙ্গে মনে প্রাণে এক হয়ে যাই। ছোটবেলা থেকেই – বইয়ের কান্নার গল্পের সঙ্গে আমি কাঁদি, হাসির গল্পের সময় হাসি । আশির আহমেদের লেখা এই আমাকে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে, অবাক করেছে। ৯১ পৃষ্টার এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে রয়েছে জাপান সর্ম্পকে অজানা তথ‍্য, অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও প্রবাসী জীবনের ইতিকথা। বইটির প্রতিটি অধ‍্যায় আমাকে মুগ্ধ করেছে, পরোচিত করেছে পরবতীর্ অধ‍্যায়টি সত্ত্বর পড়ার জন‍্য।

দু’পা হারানো ‘দাইসু’র ম‍্যারাডোনা মত ফুটবল খেলার স্বপ্ন, হিরোশিমার হিরোরার গল্প, ভাইয়ের প্রতি মৃতু‍্যপথযাত্রী ছোট বোনের প্রশংসা, কুকুরের ভালোবাসা, কুমারীমাতার সন্তান দান, ফুকিসিমায় বাঙালী হোটেল-ওয়ালার দানশীলতা আমাকে কাঁদিয়েছে। জাপানীদের নাম রাখা, বিয়ে-শাদী, ঘটকালি, চাবিওয়ালার কর্মকৌশল, বাড়িভাড়া, প্রেম-ভালোবাসা ইত‍্যাদি দারুন ভাবে হাসিয়েছে।

বইটি প্রতিটি অধ‍্যায়ে ফুটে উঠেছে – জাপানীরা এশিয়ান হলেও এশিয়ানদের মত নয়, পাশ্চত‍্যের মত বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে উন্নত হলেও ওদের মত নয়। আধুনিকতার নিঁখুত চচ্চর্ায়, নিজস্ব সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদীতায় – জাপান দুনিয়ার ভিতর আরেক দুনিয়া। জাপানী রেষ্টুরেন্টে শরবত পরিবেশন, হালাল নুডুল তৈরী, পুলিশের ঈদের নামাজ, হাইস্পি্রড ট্রেনের আবিস্কার, সেক্রেটারির দায়িত্বশীলতা আমাকে আশ্চম্বিত করেছে। জাপানিরা সবকিছুই নিজের মত করে, ভিন্নভাবে ও শুদ্ধ ভাবে করতে ভালোবাসে।

গত ২০০৫ সাল থেকে আমি নিয়মিত জাপানে আসা-যাওয়া করি। এতদিন পরও, একান্ত ভাবে জাপানে থাকার পরও, এর সংস্কৃতি, জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিদিনই নতুন ও ভিন্ন মনে হয়। সবকিছুতেই বিশুদ্ধতা দেখে – আমি প্রায়শঃ ভুল ধরার জন‍্য ওৎ পেতে থাকি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল ধরতে না পেরে – জাপানীদের ধন‍্যবাদ দিতে বাধ‍্য হই। বইটি পড়ে মনে হয়েছে আশির আহমদেও একই অভিজ্ঞা।

প্রযুক্তিবিদ, প্রফেসার ও সমাজকমর্ী হিসারে আশির ভাই আমার পূবর্ পরিচিত। তার সংস্থার জন‍্য ভিডিও ডুকুমেন্টরী বানাতে গিয়ে, আমাদের ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। শিক্ষা ও সমাজসেবার পাশাপাশি  তিনি যে একজন দক্ষ লেখকও সেটা আমার জানা ছিল না। তার অসাধারণ গল্প বলার ধরন ও দেশপ্রেম আমাকে অবেগে আবেষিত করেছে। ‘জাপান কাহিনি’ – জাপান সম্পকর্ে আমাকে অনেক অজানা তথ‍্য দিয়েছে, যা আমি জানতাম না। বইটির কিছু কিছু লেখা ফেইবুকে প্রকাশিত । তবে বইয়ের লেখা ও ফেইবুকের লেখা পাঠে ও গুণে ভিন্ন মনেহয়েছে ! কিছু কিছু অধ‍্যায়ে ফেইজবুকের পোষ্টিং এর মত তাড়াতাড়ি ও সংক্ষেপে গল্প বলার ছোঁয়া আছে, কিছু চটুল শব্দ সাহিত‍্যমান নষ্ট করেছে।

জাপান কাহিনি বইটি – আমার সম্প্রতিক কালে পড়া সবচেয়ে ভালো বইয়ের একটি । রোমাঞ্চে ভরা বইটি সবাইকে পড়ার আমন্ত্রন রইলো । আধুনিক বাক‍্যগঠন ও গল্প বলার ভঙ্গি বেশ আর্কষণীয়। বইটি পড়ার সময় – হুমায়ুন আমম্মেদ ও সৈয়দ মুজতবা আলীর মত করে সাবলিল ভাবে গল্প বলার কথা মনে পড়েছ।

জাপানীদের জীবন-যাপন, আচার-ধমর্ , মানবিকতা, বিনয়, বাংলাদেশের প্রতি অসাধারন প্রেমের গল্প, যেন শেষ হয়েও হইলো না শেষ। বইটির প্রথম খন্ড না পড়েই , ২য় খন্ড মুগ্ধতার সাথে পড়লাম। প্রথম খন্ডটি মনে হয় আরো ভালো ছিল। আকর্ষনীয় আরো ত‍থ‍্যে নিয়ে আশার করি তৃতীয় খন্ড সত্বর প্রকাশিত হবে  । আশির ভাই ও প্রকাশককে অসাধারণ বই উপহার দেয়ার জন‍্য ধন‍্যবাদ।

April 19, 2016