সাদো টিভিতে একটা স্ক্যালিং উঠছে, একজন সরকারী অফিসার – শপিংমল থেকে ৩০০০ ইয়েনের ( ৩০ ডলার) খাদ্য চুরি করে ধরা পড়েছে! অল্প দামের একটি চুরি, হয়তো ভুল বা স্বভাব লোকটি’র কপাল ভাঙ্গলো!
জাপানে চুরি শান্তি খবুই সরল – জরিমানা ও ন্যাশনাল ডাটাবেইজে – ‘চোর’ অর্থাৎ অপরাধী হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়া।
জানলাম, লোকটির প্রথমিক শাস্তি হবে – চাকুরী থেকে বিতারণ! এরপর, জরিমানা – অনাদায়ে জেল এবং সারাজীবনের জন্য চোর হিসাবে অফিসিয়াল কলঙ্ক। আর সহজে চাকুরী বা কাজ পাওয়া যাবে না, চাকুরীর আবেদন – এমনকি ব্যবসা করার চেষ্টা করলেও পদে পদে প্রশ্ন ও বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে।
ছেলে-মেয়ে-আত্নীয় স্বজনও ঘৃণা করবে, এড়িয়ে চলবে! কারণ তাদেরকেও সমাজে, স্কুল-কলেজ, চাকুরি ও অফিসে আইডেনটিফিকেশনের সময় প্রশ্নের সম্মুখী হতে হবে! ফলত – অনেক চোর আত্নহত্যা ও এলাকা ত্যাগ করে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা করে! কিন্তু সার দেশে তার অবস্থান একই! ! তাই ধরা-পড়া চোরের নিভৃত ও একাকিত্ব জীবনই একমাত্র পথ! হয়তো এই কারণেই অতি অভাবীরাও চুরি-ডাকাতি করে না! যারা করে, আসলেই তারা চোর ও বাটপার, শরম-লজ্জ্বা কম!
আমি ১৩-১৪ বছর ধরে নিয়মিত জাপানে আসি; দীর্ঘ এই সময়ে আমি মাত্র দুই বার চুরির সংবাদ শুনলাম! জাপানের বাড়ি ও দোকান বেশ নিরাপ্ত্তা সুরক্ষিত! শপিং মলে – ক্যামেরা থাকলেও, সাধারণত ওটার চেয়ে নাকি জাপানীদের নৈতিক শিক্ষা বেশী কার্যকর।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেখানে হাত কেটে, অঙ্গচ্ছেদ করে চুরি বন্ধ করতে পারেনি, জাপান শুধু নৈতিক শিক্ষা দিয়ে তা চুরি প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে!
জাপানের স্কুলে, অক্ষর শেখানোর আগে জাপানে শিক্ষা দেয়া হয় – চুরি না করা, অন্যের ক্ষতি না করা, সঠিক ভাবে হাগা-মুতা ও খাদ্য খাওয়া!
এক সময় জাপানী প্রধানমন্ত্রী ও আমলারা ঘুষ খাওয়ায় চ্যাম্পিয়ান ছিল। তাই ঘন ঘন প্রধান মন্ত্রী, মন্ত্রীর পদত্যাগ হতো। এখন এটাও কমে গেছে – মুল কারণ; আইনের শাসন, শাক্তিশালী মিডিয়া, নৈতিক শিক্ষা আর ধরা পড়লে- সে যেই হোক সর্বনাশ – ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়!
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আন্দোলন আমার প্রাণে এক সময় আশার আলো জ্বালিয়ে ছিল! ভেবেছিলাম – সরকার প্রথম যে কাজটি করবেন, তা হবে ‘ন্যাশনাল ডাটাবেইজ তৈরী। দেশের প্রতিটি নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষন ও সঠিক ভাবে ব্যবহার। কিন্তু তা আজও হলো না!
দেশের নাগরিক, অফিসার, মন্ত্রী-আমলা প্রমুখের সুকর্ম-কুকর্ম রের্কড থাকলে, রের্কড অনুসারে ‘রিওয়ার্ড ও পানিশমেন্ট’এর ব্যবস্থা নেয়া যায়। এর ফলে দ্রুত অপরাধ কমে যেতে পারে – আইনের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ থেকেও অপরাধীর চাপ আসবে। মেয়ে-মেয়েরা হয়তো বলবে,
– বাবা/ মা, ঘুষ-চুরি-দূনীতি বন্ধ কর! আমরা চোরের সন্তান হিসাবে বড় হতে চাই না!
একদিন, আমি এক সন্তের লেকচারে যোগদিয়েছিলা। সন্ত বারবার শয়তানের প্রসঙ্গে আনছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাগা করেছিলাম, ‘স্যার, আপনি লেকচারে বার বার শুধু শয়তানের প্রসঙ্গ বলেছেন কেন? শয়তান কিভাবে কাজ করে?
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর সন্ত বললেন,
– শয়তানের মুল কাজ, ‘গুড এন্ড ইবিল’ মিশিত করে ফেলা, মানুষকে কনফিওশনে ফেলে দেয়া! তাহলে মানুষের সঠিক পথে চলতে পারবে না, সমাজ উন্নত হবে না, অধিকাংশই পথহারা হবে!
আমার মনেহয়, আমরা সেই ভ্রান্তিতেই আছি! এখন, ডিজিট্যাল বাংলাদেশ; উন্নত দেশ গুলোর মতো যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সঠিক ও পূর্ণ ডাটাবেইজ বানায়- আমরা চুরি, ঘুষ-দূনীতি, শয়তানের শয়তানি থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারি!
সুখের কথা বাংলায় – “সুকর্মের জন্য পুরুস্কার ও কুকর্মের জন্য ধীক্কার”এর সংস্কৃতি চালু হবে! জাপানের মতো বাংলাদেশের সমাজেও স্বস্তি আসবে!