নবম-দশন শ্রেনীতে (১৯৮৬-৮৭) পড়ার সময় ইংরেজী বইয়ে ব্রেইন ড্রেইন ( মেধা প্রাচার ) নামে একটি চাপ্টার পড়েছিলাম। জানি না সেই অধ্যায়টি এখনও আছে কিনা। না থাকলে অবাক হওয়ার কারণ নেই! বাস্তবতা অনুকুলে না! কিশোর-কিশোরীরা হয়তো এখন পড়ে না, বিশ্বাস করে না, এমনকি বেশীর ভাগ পিতামাতা-শিক্ষকগণও না! দৃশ্য পাল্টে গেছে। ফিরিঙ্গি আর ট্র্যাম্প মিয়াদের দাপট সমাজে বেড়ে গেছে।
একটি দেশের শিক্ষিত, সচেতন ও দক্ষ ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের সম্পদ, চালিকা শক্তি। নিজে এগুতে এগুতে দেশকেও এগিয়ে নিয় যায়। আর তারা যদি দেশ ছেড়ে পালায়, তবে দেশের জন্য কিভাবে কাজ করবে? ফল তো হিতে বিপরীত হবেই।
মেধাবান ছাত্র-ছাত্রীদের বিদেশ যাত্রার বিপক্ষে আমি না । আরো দক্ষ ও মেধাবান হওয়ার জন্য আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে কাজ বিশেষ ফলদায়ক। বিদেশযাত্রার সফলতায় আমি নিজেও প্রমান! ১৫-২০টি দেশে আমি কাজ করেছি, এখনো করি। কিন্তু, স্বেচ্ছা ও লোভে পড়ে প্রচার হওয়া, দেশে সুযোগ থাকতে পলায়ন করা, অন্যবন্ধুকে পলায়ন হতে অনুপ্রাণিত করা, দেশ ও জীবনের জন্য কল্যানকর নয়।
দেশে সুযোগ নাই, দেশে শান্তি নাই – এটা বলতে বলতে যাদের গলা শুকিয়ে যায়! তাদের বলি – বিদেশের চেয়ে দেশ ভালো। আমার বন্ধু- যারা মেধাবান, কিন্ত সুযোগ থাকার পরও দেশান্তরি হয়নি- দেশ ও সমাজকে ভালোবেসে দেশেই আছেন, তাদের প্রায় অধিকাংশ আজ ইউএন সহ নামি-দামী সংস্থার উচ্চপদে; বেতনে, ক্ষমতায়, সম্মানে ও রোজগারে বিদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন।
আরা বিদেশ থেকে দক্ষ হয়ে যেসব বন্ধুরা দেশে ফিরে এসেছেন, দেশের জন্য কাজ করছেন, সমাজের তাদের কদর অতুললীয়! সব বাজারের সাথে সাথে, বিয়ের বাজারেও তাদের কদর অনেক। সবারই এখন ভালো চাকুরি-ব্যবসার সাথে সাথে বাড়ি-গাড়ী-সুন্দরী বউ!
সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকতে, বাংলাদেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশী যুবক-যুবতীরা, প্রায় বিনা পয়সায় বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতে । যাদের অধিকাংশ দেশে ফিরে, দেশের জন্য কাজ করছে, এখনও। শুনেছি – বাংলাদেশে ৭০-৮০ দশকে স্কলারশীপের বন্যা বইতো! এখনও আছে – তবে সঙ্গে ‘ওয়ান-ওয়ে টিকেট’ থাকে ! বিদেশে গিয়ে, নিজের দেশের পরির্বতে আম্রিকা-ইউরোপ গড়াই জান কোরবানী দেন। টাকা, সম্মান ও প্রতিষ্ঠার নেশায় একটু এপাশ-ওপাশ তাকাতে পারেন না!
জাফর ইকবাল (Muhammed Zafar Iqbal) তার এক বক্তব্যে বলে ছিলেম, ‘আমার মা কালো, মোটা ও দরিদ্র বলে, মাকে কি আমি মা বলে ডাকবো না? যারা নিজের মাকে ভালোবাসে না, অন্যের মাকে – মা বলে ডাকতে চায়, তার মতো নির্বোধ দুনিয়াতে কে আছে? কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই তা করছি, ও অনুপ্রাণিত করছি।
‘একটি বিস্ময়কর ঘটনা’, জাফর ইকবালের কলামটি আজ পড়ছিলাম । তিনি লিখেছেন যার সঙ্গে আমি পুরাপুরি একমত –
———–
আমাদের দেশে অনেক নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সৌভাগ্যবান ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকেরা খুব আন্তরিতভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান সেটি বলা যাবে না, ভালো ছেলেমেয়েরা নিজের আগ্রহে লেখাপড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটুকু ধরে রেখেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয় যত ভালো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা তত দ্রুত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেবা করার জন্য চলে যায়। কোনো জরিপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানি না, কিন্তু যদি নেওয়া হয় আমার ধারণা আমরা দেখব এ দেশের মূল চালিকাশক্তি দেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামিদামি ছাত্রছাত্রীরা নয়, দেশের মূল চালিকাশক্তি এ দেশের অসংখ্য কলেজের অসংখ্য ছেলেমেয়ে। ঢাকা শহরের সাতটি কলেজেই যদি দুই লাখ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে তাহলে সারা দেশের এ ডিগ্রি কলেজগুলোতে কত ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে সেটি অনুমান করা যায়।
উচ্চশিক্ষার কথা বলা হলেই আমাদের চোখের সামনে দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছবি ভেসে ওঠে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেবা করার জন্য হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আছে। কিন্তু আমার ধারণা তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সারা দেশের অসংখ্য কলেজ। যদি তাদের লেখাপড়ার মান বাড়ানো হয় তাহলে শুধু বিশাল সংখ্যার কারণেই তার প্রভাব হবে অনেক বিশাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে সাতটি কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সেই কলেজের ছেলেমেয়েদের নিজের মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের মতো বিবেচনা করে লেখাপড়ার মান বাড়িয়ে তুলত তাহলে কী একটা ম্যাজিক হয়ে যেত না?