ব্রাবা, আমাদের নতুন রোবট বন্ধু।

গত পরশু আমাদের বাসায় ‘ব্রাবো’ নামে নতুন বন্ধু এসছে। তার কাজ সয়ংক্রিয় ভাবে নিদ্দিষ্ট সময়ে সারা ঘর মুছে দেয়া । জাপানে চাকর কালচার নাই বললেই চলে। রোবট আর যন্ত্র চাকরের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখানে সবাই শিক্ষিত ও দক্ষ। সমান মযর্াদা ও অধিকারের অধিবাসী।  বেতন-মযর্াদা ও কাজের সমান সম্মন ও স্বীকৃতি থাকার কারণে, কেউ খানসামা-আয়া রাখে না, হয় না! টাকায়, জ্ঞানে ও ক্ষমতায় এগিয়ে থাকা কেউ বাদশাহ-শাহজাহান গিরি দেখায় না। এটা সমাজিক ও আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ!

মধ‍্যপ্রাচে‍্যর মত এখানে গরীর দেশ গুলো থেকে শ্রমিক আসে না । কম বেতনে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো করার রীতি এখানে একেবারেই চলে না । পেশাজীবিদের দক্ষ বিদেশীদের সুযোগ ও আনাগোনা থাকলেও বিদেশী শ্রমিকরা তেমন অবস্থান করতে পারেননি। শ্রমিকদের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে রোবাট-ক্রেন ও সয়ংক্রিয় যন্ত্র। একটি বিস্কুট তৈরীর কারখানা ও দুধ প্রক্রিয়াজাতকরনের পুরো ফ‍্যাক্টরীর কাজ মাত্র ৩-৪ জনে করতে পারে, এটা আমার ধারনাই ছিল না। এদেখে, আমার স্ত্রীকে এ ব‍্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে যে বলে – পুরো কাজই করে স্বয়ংক্রিয় মেশিন, রোবট! উনারা শুধু সিষ্টেম ও রসদ তাদারকি করে…

২০০৫ সালে যখন প্রথম জাপানে আসি, নারিতা এয়ারপোটর্ে নামার আগে ভেবেই নিয়েছিলাম – জাপান যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত দেশ, দেশটা হয়তো ‘কাম্পিউটারের গেইম ওয়াল্ডের মত হবে’, রাস্তাঘাটে – সবখানেই রোবেটের সাক্ষাৎ মিলবে। কিন্তু তা দেখিনি!  দ্রুততম ট্রেন সিনকানসেনে চড়ে, টোকিও থেকে যতই ফুকুসীমার দিকে যাচ্ছিলাম, ততই মনে হচ্ছিল – এ তো বাংলাদেশের মতই, গ্রামীন। চারদিক খোলামেলা প্রকৃতি, তেমন বড় কোন ইমারত নাই, গ্রামগুলোও সবুজ ও শস‍্য ঘেরা, পাহাড় আর সমতলের মিলনে দিগন্তে কাব‍্যিক ছন্দতোলা! …

প্রথম থেকেই আমি জাপান-বাংলা তুলনা ও মিলন খোঁজার খুতখতে। ভাষা-সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সচেতনতায় বিশুদ্ধতা ছাড়া বাংলাদেশ সঙ্গে জাপানের  তেমন পাথর্ক‍্য পাইনি। মানুষ হয়ে মানুষকে শোষন-শাসন বঞ্চনার রীতি আধুনিক জাপানে, বিশেষ করে গ্রামীন জাপানে নাই বললেই চলে! ছাত্রজীবনে, আধুনিক জাপানের সমাজ ও ইতিহাস পড়ার সময় – বারবার যন্ত্র; বিশেষ করে ‘রোবোটের’ ব‍্যবহার জেনেছিলাম। কিন্ত সাধারণ সমাজে তেমন না পেয়ে আমি বেশ হতাশই হয়েছিলাম। এতদিন পর আমি বুঝতে পারলাম – জাপানীরা প্রয়োজনীয় সব জায়গায় যত্নের সাথে বুদ্ধি, রোবট ও যন্ত্রের ব‍্যাবহার করে। জাপানীদের কাছে রোবোট মানে শুধু মানুষ আকৃতির যন্ত্রই নয়। মানুষ যে কাজটি করতে পারে, সেটা যে যন্ত্র সহজে ও সংক্রিয়ভাবে করতে পারে তাহাই রোবট। রোবট সম্পকর্ে আমার ধারণা এখন পাল্টে গেছে। এই হিসাবে আমাদের বাসায়ও কয়েকটি রোবোট আছে।

বাংলাদেশে রোরট কালচার চালু করতে পারলে – কঠিন কাজ সহজে ও স্বল্প সময়ে করা যাবে। সব মানুষ দক্ষ ও শিক্ষিত হলে, মানবাধীকার সনদ মতে সমমযর্াদা পেলে, ভারী কাজের দায়িত্ব যন্ত্রের উপর দিলে – আর্যদের রাজাগিরি কমবে। গৃহ থেকে বোয়া কালচারের নামে চলা ‘দাসপ্রথা’ উঠে যাবে। সত্ত্বর বাংলাদেশীরাও  উন্নত বিশ্বের মানুষজনের মত স্বাধীনতা, সম-মযর্াদা ও উন্নত চিন্তা করতে আরো বেশী মনোযোগী হবে বালে আশাকরি! !

February 24, 2016