তানজিয়া মনবসু বৃত্তি পেয়ে এ মাসেই জাপানে এসেছে। সে আমার ঢাকা অফিসে ৩ বছর চাকুরি করেছে। ভদ্র, সৎ ও মেধাবী মেয়ে। মাচিজোতে যোগ দেয়ার সময়- ইন্টারভিউতে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
– কেন মাচিজোতে যোগ দিতে চান?
উত্তরে সে সৎ ভাবে বলেছিল,
– আমি জাপান শিক্ষা গ্রহন করতে চাই। বাংলাদেশের পরেই আমার পছন্দের দেশ জাপান। আপনার কোম্পানীতে যোগ দিতে পারলে, আমার মনেহয় সুযোগটা সৃষ্টি হতে পারে।
আমি হেসে বলেছিলাম,
– তা কি করে হয়? আমরা তো বাংলাদেশী কোম্পানী, বাংলাদেশেই কাজ করি। নামটা শুধু জাপানি! মাঝে মাঝে আউস সোর্সিং করি মাত্র!
একটু চুপ থেকে তানজিয়া বলেছিল,
– স্যার, আপনার সঙ্গে কাজ করলে হবে, আমার বিশ্বাস!
শান্ত স্বভাবে তানজিয়াকে আমি সেদিন ‘না’ করেনি। আমি ও আমার স্ত্রী সাই দিয়ে নিয়োগ দিয়েছিলাম। ও যোগদেয়ার পর পরই, আমি বড় বড় ৩টি জাপানি ওয়েব-প্রজেক্ট পেয়েছিলাম। অনলাইনে – কাজের ফাঁকে, সুযোগ পেলেই সে বলতো,
– স্যার আমি জাপানে আসতে চাই। পড়া-লেখা বা চাকুরী না হোক, অন্ততঃ দেখেতে চাই।
ভিসার গ্যারাকল আমি জানি, তাই সরাসরি সাই দিতাম না । তবে সাহস দিতাম!
– ঠিক আছে চেষ্টা করবো, দেখি কোনভাবে আনা যায় কিনা!
আমিও অবসরে, স্কাইপে – এটা সেটা নানান রকমের কৌশল ও বুদ্ধি দিতাম , যাতে সে কম খরচে বা বিনা খরচে জাপানে আসতে পারে। মনবসু স্কলারশীপ পাবার ব্যাপারে; জাপানি প্রফেসারকে লেখালেখি’র আমার বুদ্ধিটা তার কাজে লেগেছে। তানজিয়া এখন জাপানে।
– কানাগাওয়া বিশ্ববিদ্যায়লে ‘আর্টিফেসিয়াল ইনটেলিজেন্স’ এর উপর উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি পেয়ে এ মাসেই জাপানে এসেছে।
আমি তার বৃত্তি পাবার সংবাদটি শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। অজানা-অচেনা এই দেশে, তাকে সাহস দেয়ার জন্য, গত পরশু- টোকিও তে থাকার সময, আমি ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে সে অতন্তঃ আনন্দিত হয়েছিল। একসঙ্গে জাপানি ট্রেডিশনাল খাবার খেলাম। ‘কাঁচামাছ’ ( সুসি/ সাসিমি) প্রথম খেয়ে সে বললো,
– স্যার, কাঁচা মাছ এত সুস্বাধূ হতে পারে, আমি কখনো ভাবতেই পারিনি। আপনার লেখা পড়ে জেনে ছিলাম, আজ তা বুঝলাম।
তানজিয়া ‘জাপান আসার’ ঘটনাটি থেকে আবার প্রমানিত হলো,
– ‘মানুষ যা চায়, তাহাই পায়!’
কথাটা আধ্যাত্বিক মনে হলেও, মোটেও আধ্যাত্নিক না! ইহজাতিক ও শাশ্বত। শর্ত শুধু আসলেই মন থেকেই চাইতে হয়, ভালোবাসার সাথে চাইতে হয়। যে ভালোবাসার সাথে চায়, দরদ দিয়ে চেষ্টা করে, তার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকে না । হয়তো পূর্ণ হতে একটু সময় লাগে- যেমনটা লাগে একটা চারা গাছে ফল ধরতে ।
সুখের কথা, আমি আমার জীবনে যা চেয়েছি- প্রায় সব কিছুই পেয়েছি। যে গুলো পাইনি, ক্ষণিকের জন্য কষ্ট পেলেও পরে বুঝেছি – না পেয়ে ভালো হয়েছে। চাওয়ার ছোট জিনিষটা পেলে, পরে যে আরো ভালো ও বড়টা পেয়েছি, তা পেতাম না । হিসাব নিকাশের করে – সুফল, নিজের ঘরে পেয়ে, ‘খামিসামা’কে ধন্যবাদ-শুকরিয়া জানাই।
আমার মনেহয় তানজিয়া- মন থেকে চেয়েছিলম, তাই পেয়েছে।