( একটি বাস্তব গল্প! স্রষ্টা যদি অন্য ধর্মের হয়, কি হবে শেষ বিচারের দিনে? )
কবি শুদ্ধের পড়ার রুমের দেয়ালে ঝুলানো ইষ্ট-এশিয়ান সৌভাগে্যর সাত ঈশ্বর ছবিগুলো মহামতি খুব মনেযোগে দেখছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাদের নাম পড়ছিলেন, তাদের কর্মগুণ মনে করার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময়, কবি শুদ্ধ কফি নিয়ে রুমে আসে। মনোযোগে কেড়ে নিয়ে, কফিকাপ হাতে দিয়ে মহামতিকে জিজ্ঞাসা করে,
– এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন মহামতি?
– সৌভাগের সাত দেবতাদের ছবি। কি অপরুপ অয়বর! তয় তুমি হঠাৎ দেয়ালে অন্য ধর্মের দেবতাদের ছবি ঝুলিয়েছ কেন?
– পরকালের প্রস্তুতি মহামতি? কোন সময় চলে যাই বলা তো যায় না।
– বুঝলাম না! তোমার কি মৃত্যুভয় জেগেছে?
– না! আপনার শিক্ষা মেনে সকল প্রকার ভয়কে জয় করার চেষ্টা করছি। এই ছবিসূত্রের হিসাবটি সহজ। মৃত্যুর পর যদি পরকালে গিয়ে দেখি, ঈশ্বর আছে, তবে সেটা আমাদের বাবা-দাদার শেখানো ধর্মের নয়, অন্যধর্মের ঈশ্বর, তখন কি হবে? তার প্রস্তুতি!
– এসব কি আবোল তাবাল বলছো?
– হ, সত্য মহামতি! আমি সংশয়ে পড়েছি। আমরা যেসব প্রবক্তাদের কথা মানি ও জানি, পরকাল নিয়ে তাদের সবার বর্ণনাই তো প্রিডিকশন, অনুমান! আজ পর্যন্ত তাদের কেউ তো মৃত্যুর পর, পরকাল দেখে এসে আমাদেরকে সত্য ঘটনা বর্ণনা দেননি।
কবি শুদ্ধের কথায় মহামতি আতঙ্কিত হয়ে বলেন,
– যদি তাহাই হয়, তবে তো মহাঝামেলা হয়ে যাবে! তুমি, আমি, সকল নবী-রসুল, সাধু-সন্ত সবাই তো তখন বিচারের এক কাতারে থাকবো। কি আনন্দ, শতভাগ সমাজতন্ত্র! তয় তোমার হঠাৎ এই ভাবনা মনে হলো কেন?
– মহামতি, আপনি তো জানেন, পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম । সকল ধর্মের নিজস্ব – পরকাল, স্বর্গ ও নরক নিয়ে বিচিত্র গল্প আছে। সব মিথই চমৎকার। জাতিসংঘের ইউনাস্কোর মতে- পৃথিবীতে আজো ৩৬০০ এরও বেশী জীবিত ধর্ম ও উপধর্ম রয়েছে। সবাই নিজেদের গল্প, আচার ও বিশ্বাসকে সঠিক, শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর দাবী করে। তাদের প্রবক্তাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ দাবী করে। সকলের মাঝে মাত্র তো একটি ধর্মের ঈশ্বর- প্রকৃত ঈশ্বর, বাকীরা তো রুপকথা, মিথ্যা, বানানো। তবে কোনটি সত্য? সবাই তো নিজেরটাকে সত্য বলে, এই ভাবনা আমাকে সকল ধর্ম জানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। আমি ‘ওয়ার্ল্ড ক্রিপটারস্’ পড়ছি। ধর্মদর্শন বুঝার চেষ্টা করছি।
– খুব ভালো পরিকল্পনা। প্রিজোডিস ত্যাগ করে, আনন্দের সাথে পড়, ভালো ফল পাবে।
– মহামতি, একটি প্রশ্ন। যদি ঈশ্বর আলসেই আপনার ধর্মের না হয়ে, অন্য ধর্মের হয়, তখন পরকালে ঈশ্বরের সামনে আপনি কি করবেন, কি বলবেন?
– আগে বল, তুমি কি করবা?
– আমি সোজা ঈশ্বরের কাছে গিয়ে, পা সাপটে ধরে মাফ চাইবো! অষ্টাঙ্গ প্রণাম করবো। আর আপনি কি করবেন?
– আমি কিছু করবো না। চোখে চোখ রেখে- নির্ভয়ে ঈশ্বরকে বলবো। পৃথিবীতে আমি যে ধর্মটি পালন করেছি, সেটা তোমার দেয়া। যে ধর্মের ঘরে পাঠিয়েছ, সেটা তোমার ইচ্ছায় হয়েছে, দুনিয়াতে আমাকে পাঠানোর আগে তুমি পছন্দ করার কোন সুযোগ আমাকে দেওনি। যদি দিতে, তবে আমি তোমার ধর্ম নিয়েই জন্মাতাম। সুতরাং যদি অন্যধর্ম পালনে আমার দোষ হয়ে থাকে, তবে সেই দোষে তুমিও দোষী।
– ঈশ্বর যদি বলে, তোমাকে তো বিচার বিশ্লেষন করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছিলাম।
– আমি বলবো, আমি তো বিচার বুদ্ধি দিয়েই জীবন যাপন করেছি। ধর্মের পথেই ছিলাম, ভালোবাসার পথেই ছিলাম। স্বার্থপর হইনি, কাউকে ঠাকাইনি, গুন্ডামি-মাস্তানি করিনি, যুদ্ধ-বিগ্রহে সায় দেইনি, চুরি-ডাকাতি-দূনীর্তি করিনি, নেশা-ভান খাইনি, ধর্ষণ-বহুগামিতা করিনি, খুনখারাপি-বাটপারি করিনি, পরপদে- পরসম্পদে লোভ করিনি, অহিংসার বাণী প্রচার করেছি। তোমার দোষে যদি আমি দোষ করে থাকি, তবে তুমি আমাকে নরক দাও । আমি মাথা পেতে নিলাম।
– যুক্তি তো সুন্দর মহামতি, স্রষ্টা কি মানবেন?
– মানবেন না কেন, তিনি তো পরম দয়ালু। আমি নিশ্চিত পরম ঈশ্বর আমাকে নরক দিবেন না। স্বর্গ দেয়া তার সিদ্ধান্ত, আমার নয়। আমি স্বর্গের লোভ ও নরকের ভয় করি না। আমি তার সান্নিধ্য চাই। এটাই আমার পরম ইচ্ছা।-
সাদো, জাপান
সাদো, জাপান