মহাঘটনা ঘটে গেছে!
বিখ‍্যাত ও ধনী - Rich and Famous

ফেরিশিপে বাড়ি ফেরা সময়, ফাইভষ্টার ‘টকিমারো’ পানির জাহাজের বারান্দায় হাঁটছিলাম। মাঝে মাঝে জাপান সাগরের ঢেউয়ের ছবি তুলছিল। সীমাহীন সমুদ্র দিগন্তের ছবি তোলার সময়, হঠাৎ এক জাপানি পৌঢ় পাশে এসে দাঁড়ায়। আমার হাতে মার্কথ্রি ক‍্যামেরা দেখে বলে,
– আর ইউ ফটোগ্রাফার? গুড! ইউর ক‍্যামেরা ইস ভেরি এক্সপেনসিভ, নাইস। আই লাইক ইট।
– আরিগাতা?

জাপানিরা তেমন ইংরেজী বলতে পারে না। লোকটিকে শুদ্ধ বৃটিশ ষ্টাইলে ধীরে ধীরে ইংরেজী বলা দেখে আমি অবাক হলাম। কতক্ষন আমার চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, বললো,
– ইউর আই ইস গুড! ডু ইউ নো- হুয়াই টুডেস স্কাই ইস সো গ্রীণ?

লোকটির অতিধীর কথায় আমি বেশী আরাম পেলাম না। একটু বিরক্তি বোধ হলো। তেমন পাত্তা না দিয়ে আলোকবিদ‍্যার প্রায় ভুলে যাওয়া বিষয় দ্রুত বলে কেটে পড়লাম,
– ইটস লিঙ্কট ইউথ এটম মলিকুল ইন এয়ার, মিক্সষ্ট রিফলেকশন অফ ইয়োলো ওন্ড ব্লু কালারড লাইট!
(বিষয়টা ক‍্যালবিন, সোনালি-নীলের আলোর মিশ্রণের কারণে।)
– ইউ আর রাইট। ইউ আর ইনটেলিজেন্ট।
– থেক্সস্।

বুঝেছিলাম লোকটার দৃষ্টি গভীরে। আরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতে পারে। না পারলে শরমের বিষয় হবে, এই ভয়ে পালানোর পথ খুঁজছিলাম।

কথা বলার সময়, ব‍্যক্তিটির দুই পাশে দুইজন দাঁড়িয়ে থাকা আমার দিকে অতিসর্তকতার সাথে তাকিয়ে ছিল। যেন আমার বলা প্রতিটি শুব্দ গুনছিল। লোক দুইটি চামচা চামচা মনে হলো।
মনে হলো দুইজনই বাংলা সিনেমার ভিলেনের বডিগার্ড, গুন্ডা। বক্তার কথাতে একটু আরাম লাগলেও, সঙ্গী দুইজনের তাকানি আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি। ছেচড়া ছেচড়া লেগেছিল। জাপানিরা সাধারনত চামচা বা টুন্ডা মুসার মত বডিগার্ড রাখে না। কেন রেখে বুঝলাম না। হয়তো ফলোয়ার বা কর্মচারী কেউ হবে।

ফ‍েরির কামড়ায় গিয়ে, কাঁচের দরজায় দিয়ে লোকটিকে দেখিয়ে সুন্দরী বউকে বললাম,
– লোকটা এবনরামল নাকি? মদ খাইছে?
– কেন?
– অতি ভদ্রভাবে কথা বলে। একটু মাতাল মনে হলে। ভাব লইলো যেন সে কোন ধর্মের প্রবক্তা, অতিশুদ্ধ সাধুসন্ত । সব কিছু বেশী পরিপাটি।
বউ একটু চুপ থেকে বলে,
– আরে না, ধর্মের মানুষ না। এই দ্বীপের সবচেয়ে ধনী ও বিখ‍্যাত মানুষ, শিল্পপতি। অনেক ব‍্যবসা আছে তাঁর। কয়েক পুরুষ ধরে বিলিয়নিয়ার, তবে খুবই সৎ ও সম্মানী মানুষ, সমাজকল‍্যানে অনেক দান করে, অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছে। শুনেছি এই দ্বীপে নির্বাসিত এক সামুরাইয়ের বংশধর।
– তাই নাকি?

বিরাট ধনী ও শিক্ষিত শোনার সাথে সাথে আমার মনের চেহেরা একটু পাল্টে গেল । মনে মনে ভাবলাম,
– না জেনে ভালোই হয়েছে। যদি জানতাম অতি মানি-গুনী ও ধনী, হয়তো অন‍্যরকম নাটক ঘটতো। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারতাম না। হয়তো জি, জি করে শুধু শুনতাম।

মনে মনে আরো ভাবলাম – আমার নাপাত্তা দেয়া কথায় লোকটি বেয়াদবি মনে করে নাই তো? আরেকটু কথা বলা দরকার ছিল। বিদেশী ভেবে হয়তো তিনি আমার সঙ্গে আরো কথা বলতে চেয়েছিলেন।


শিক্ষা – বিশ্ব মানবাধীকার সনদের প্রথম অধ‍্যাদেশ মতে, প্রতিটি মানুষ জন্মগত ভাবে ধর্মে, বর্ণে, জাতিতে ও মর্যাদায় সমান। আমরা যদি কারো ব‍্যক্তিগত বিষয়, বিশেষ করে পদপদবী, সম্পদ-খ‍্যাতি না জেনে, গুরুত্ব না দিয়ে – সামান ভাবে শ্রদ্ধা, সম্মান ও কমিউনিকেশন করতে পারি, আমাদের সমাজিক সম্পর্কগুলো দ্রুত বদলে যাবে। শুদ্ধ হবে। একান্ত গোপন তথ‍্য না জানলে মানুষ ইনফিরিওরিটি ও সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগে না।

November 5, 2021