গত কয়েক দিনে অন্ততঃ ১০০টি নোবেল ষ্ট্যাটাস পড়েছি ফেইজবুকে। নিজে বা নিজের সন্তান কিভাবে নোবেল পেতে পারে কেউ তা বলেনি! সবাই বলেছে
– অন্যে কিভাবে পেতে পারে! কার পাওয়া উচিত, কার না পাওয়া উচিত, কে পেয়ে কি করেছে, কে না পেয়ে বিষ খেয়েছে ইত্যাদি!
২০১৬-১৭ সাল, এই দুই বছরে আমি বাংলাদেশের ‘শিশুদের স্বপ্নের’ উপর একটি ফটোষ্টরি করার জন্য অন্তত ২০০-৩০০ জন শিশু-কিশোরের সঙ্গে কথা বলেছি, ছবি তুলেছি!
‘তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?’ এ সরল প্রশ্নের উত্তরে, গ্রামের অধিকাংশ শিশুরা বলেছে,
– জানি না!
– স্যারে জানে!
– মায়ে কইছে মওলানা হইতে!
– দেহি আল্লায় কি করে!
– পরেডা পরে দেহা যাবো! এহন ভাইবা লাভ কি?
– বাপে কইছে এইট পাশের পর বুঝানে লগে গার্মেন্টে যাইতে… ইত্যাদি
আর শহরের ও সুবিধাভোগী তোতাপাখি শিশুরা বলেছে,
আব্বা-আম্মা (ফেইজবুক ওয়ালা) কইছে
– ডাক্তার, ডাক্তার, ডাক্তার ….হইতে
– ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার….হইতে
( মুন্সিগঞ্জে একজন শুধু কইছে, আমি বিজ্ঞানী হইতে চাই, পদার্থ বিজ্ঞানী!)
আর ইংরজী স্কুলের ও মাদ্রাসার পুলা-মাইয়ার কি কইবো, হেইডা তো আমরা সবাই জানি, তাই পাকনাদের লগে কথা কই নাই!
এখনও ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং এ সরাসরি নবেল প্রাইজ নাই । তারপরও নবেল প্রেমিক বাংলার শিক্ষিত পিতা-মাতারা
কেন ডাক্তার ডাক্তার করে?
কেন ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার করে?
ফেইজবুকের পছন্দ, আর আসল বুকের পছন্দ ভিন্ন কেন?
উল্লেখ্য, বাংলার ভাবগতি দেখে মনেহচ্ছে – নোবেল প্রাইজ মানেই ‘সাহিত্য’ আর ‘শান্তি’র পুরুস্কার। এটা আমাদের ভুলা উচিত না, পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, অর্থনীতি জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় নোবেল প্রাইজ আছে যার একটি বাংলাদেশ এগুনো জয়ী হতে পারেনি, স্বপ্ন থাকলে আপনার আমার সন্তানও পেয়ে যেতে পারে ।
সুতরাং আশা হারাবেন না । অন্যের তুস্তির আগে নিজের ও নিজের সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখুন। একটু স্বার্থপর হোন! বেশী নিঃস্বার্থবাদী ভালো না! নোবেল না আসুক – বাংলার বুকে অন্ততঃ অনেক জ্ঞানী-বিজ্ঞানীর জন্ম হবে।
কষ্টের কথা, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে বলার মত ১ জনও বিজ্ঞানীর জন্ম হয়নি! অথচ কত বিশ্ববিদ্যালয়, কত নেকাপড়া!
এই দুর্ভাগা জাতির কি কোন অধিকার আছে নোবেল, নোবেল করার?