আমি খাঁটি গেরামের পোলা। মদপান তো পরের কথা, ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে মদের বোতলও দেখি নি। তবে ছোটবেলায় মুক্তাগাছায় মদ্যপ মানুষকে মাতলামি করতে দেখে মজা পেতাম, কাউকে কাউকে ড্রেন পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট পেতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর, ১ম বর্ষে আল বিরুনীর এক্সটেনশনে, ডাইমন্ড বন্ধুর রুমে চকচকে ঝকঝকে মদের বোতল দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। সুন্দর বোতলটিতে অতি সাবধানে আদর বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
– দোস্ত, এইডা কি?
– ওয়ান!
কতক্ষণ হাতানোর পর, বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– ওয়াইন আর মদ কি এক?
বন্ধু ডাইমন্ড মুচকি হেসে বলে,
– এক না, তয় কাছাকাছি! এটা খাঁটি আঙ্গুরের রস দিয়ে বানানো। মদ ভাত পঁচিয়ে বানানো হয়। ওয়ান মজা, খাবা? আজ সন্ধ্যাই সবাই খামু । বিকালে রুমে চাইলা আইসো।
বন্ধুকে বললাম,
– হারাম না তো?
– আরে না, মদ খাওয়া হারাম, ওয়াইন খাওয়া হারাম না! বেহেস্তে সবাইকে ওয়ান খেতে দেয়া হবে! হারাম হলে, বেহেস্তে দিবে কেন?
– তাই নাকি? ঠিক আছে!
জীবনে প্রথম আঙ্গুরের রসে বানানো ওয়ান খাবো, এই ভাবনায় ফুরাফুরা মেজাজ নিয়ে বিকালে ডাইমন্ড বন্ধুর রুমে গেলাম। গিয়া দেখি, ৫ জন বন্ধু, দুইটা বড় বড় বোতল আর গ্লাস নিয়ে বসে মজমা করছে, হাত চপকাইতে চপকাইতে আমাকে দেখে হাসছে।। আর বলছে,
– তুমিও খাবা?
আমি দুনুমুনু করে বলি,
– খাইতে তো মন চায়! হারাম কিনা ভাবতাছি।
– আরে হারাম না! খাও, খাও, একটু খাও! চেক কর!
ইতিমধ্যে সবার কোর্স শেষ। প্রিয় হোষ্ট বন্ধু আবার বললো,
– মদ আর ওয়ান এক না । হেজিটেট করিও না, আনন্দের সাথে খাও! ফিলিংস আসবো। মদ খায় ছোট লোকে, আর ওয়াইন খায় শিক্ষিত মানুষে, বড়লোকে।
একটু বড়লোকি মুড নিলাম। নিজেকে সবার লগে লগে, হাইক্লাস ভাব দেখাতে শুরু করলাম।
– ঠিক আছে দেও, একটু খাই!
মুখে দেয়ার লগে লগে আমার শরীরে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত, কেমন যেন একটা বিদ্যুতের শক্তি ঝিলিক মারলো! সারা শরীর কেঁপে গেল! মনে হলো আমার শরীর আর মন যেন বদলে গেছে। অজানা কোন শক্তির দখলে চলে গেছে। গ্লাসের পুরোটা খেয়ে ডাইমন্ড বন্ধুকে বললাম ।
– দোস্ত, আরেকটু দেও! মজা পাইছি!
চাকমা বন্ধু বলে,
– আর দেইস না । পইড়ার যাইতে পারে । কোনদিন খায় নাই! বাকিটা মিষ্টার উন্মাদের লইগা রাখ। ঢাকা গেছে, একটু পরেই আসবো। ২০ মিনিট পরেই উন্মাদ হাজির। এসে বলে,
– দোস্ত, তোরা একলা একলা আমার রাইখা খাইলি?
হোষ্ট ডাইমন্ড বন্ধু বলে,
– আর না, তুই হইলি আমাগো জানের দোস্ত! সব সময় মজা দিয়া বেড়াস, তোরে ছাড়া আমরা খাই ক্যামনে? রাইখা দিছি।
আস্তে আস্তে কুমড়া বন্ধু কয়,
– দে, ওরে দে!
– ঠিক আছে! কাপড় বদলাইয়া আসুক!
উন্মাদ রুমে গেলে, ডাইমন্ড কুমড়ার কানে কানে বলে,
– সব শেষ। ঐডা তো পানি।
– ঠিক আছে, ঐডাই দে। আমি মজা লুটার জন্য পানি দিয়ে বেশী করে রেখেছি! ও উন্মাদ, বুঝবো না, একটু গন্ধ থাকলেই হইলো! এটা খেয়েই দেখিস, ও পাঠ লইবো! পানি বলিস না!
হাত মুখ ধুয়ে নিজ রুম থেকে, মাঞ্জা মেরে উন্মাদ বন্ধু মজমাতে এসে বসে!
অবশেষে বোতল থেকে উন্মাদকে এক গ্লাস দেয়া হলো, সে তো পানি খেয়েই মাতাল । মজা লুটার জন্য, তাকে সবাই পরোচিত করলাম পুরো এক্সটেশন ঘুরতে। সে তাই করলো! করিডড়ের হেলেদুলে হাটে, আর সব রুমের দরজায় একে একে টুকা দেয়, মাতলামির ভাব নিয়ে, নানান রকমের উভ্রট ডয়লগ দেয়। কমন ডায়লগটা ছিল,
– ভালা আছস দোস্ত? দুনিয়াডা দুইদিনের, অন্ রকম ফিলিংস লাগতাছে! মদ খা, আমার মত মদ খা! মাথা ভালা হইয়া যাবো!
উন্মাদ রুমে রুমে যায়, আর ডায়লগ দেয়! আমরা সবাই উন্মাদের
পিছনে পিছনে হার্টি! মজা লই আর হাসি! কেউ অবাক হলে বলি,
– দোস্ত, মাল খাইছে। মাইন্ড করিস না! এরপর থেকে মিষ্টার উন্মাদের নাম হয়ে গেল, ‘ মিষ্টার টাল’!
গল্পের ভিতরে গল্প
——
প্রাইভেসির কারণে, সত্য ঘটনায় ছন্দ নাম ব্যবহার করার হয়েছে। এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ মদ্যপান। র্যাগ ডে তে বন্ধুরা বাংলা মদ দিয়েছিল, খেয়ে সহ্য না করতে পেরে, বমি করে ফেলে দিয়েছিলাম।
এখন আমি জাপানে থাকি, জেনারেল ষ্টোরেও হাজারো রকমের মদ পাওয়া যায়! কিন্ত খেতে পারি না! অর্থ রক্ষা, মাথা আর ধর্ম রক্ষার কারণে, মাঝে মাঝে পান করতে মন চাইলেও করি না। আমার চাইতে. আমার জাপানি বউ আরো কড়া। বলে, আপনি মুসলমান, মনে রাখবেন, ঐ পঁচা জিনিষ খেয়ে ঘরে আসবেন না। বউয়ের দাতানি তে মাঝে মাঝে মনে হয়, জাপানি সুন্দরী বিয়া করে লাভটা কি হইলো, এ তো দেখতাছি বাঙালী নারীর মতই গোড়া, কড়া!
শপিং মলে, ওয়ান কর্নারে, সুন্দর সুন্দর বোতল সাজানো দেখে, মাঝে মাঝে হাতাই আর বউকে চেতাই,
– কোন যৌতুক-টৌতুক তে দেন নাই! আজ, একটা কিনে দেন না! দুদিন আগে আর পরে, স্বর্গে গিয়ে তো খামুই। আগে বাগে খাইলে অসুবিধা কি? অভিজ্ঞতা হইবো।…
আমার কথা শুনে বউ না কথা না শোনার ভান করি, আমি শুনিয়ে বলি,
– স্রিগ্রেট খাইতে দেন না! পান করতে দেন ন! আশেপাশে এত সুন্দরী একটু ইটিশপিশ করতে দেন না, পাচিংকো (জুয়া খেলার দোকান) তে যাইতে দেন না! এমন বন্দি জীবন কি পুরুষে করতে পারে?
বউ যখন অতি রেগে যায়, তখন প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলি,
– মদ আর পারফিউমের বোতল এত সুন্দর হয় কেন? খালি মন টানে, হাত দিয়ে ধরতে মন চায়!
– এগুলোর ক্লাইন্ট বড়লোক, তাই! এট্রাক্ট করার জন্য! সুন্দর বোতল টেম্পটেশন বাড়ায়! কোম্পানীগুলো চালাকি করে জিনিষের চেয়ে বোতলে বেশী খরচ করে, সুন্দর করতে বানায়, আসলে প্রায় সবই এক!