কাঁদতে কাঁদতে আমার হৃদয় পাথর! ভালোবাসাহীন! আমার পাষান হাতে রক্ত দেখে, জানি তোমারা সবাই আমাকে আজ চেন, ঘৃণা করবে! আমি অপরাধী! খুন করেছি! খুন হয়েছি ৫১ বছর!
সবাই আমাকে খুন করেছো! ভালোবাসোনি! ভেবেছ- আমি তোমাদের কেউ নই, এক অপ্রত্যাশিত ঝামেলা! একাকিত্বে আমার হৃদয়, ছেলেবেলা থেকে ক্ষতবিক্ষত! কেউ আমার সঙ্গে একটু কথা বলনি, কেউ আমার কথা শুননি!
এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই! মা স্কুলে যাবার আগে কখনো পোষাক পড়িয়ে দেয়নি! পিতা কখনো আমাকে আইক্রিম কিনে দেয়নি। ভাই-বোন কেউ খেলেনি! নেই! আমি এক অদ্ভুত এতিম!
জন্ম হলো! পিতা-মাতা আমাকে ত্যাগ করলো! তাদের সঙ্গে আমার একটি ছবিও নেই! বড় হলাম দাদীর ঘরে। দাদা-দাদীও কখনো আমার সঙ্গে ছবি তোলেনি। অথচ চাচা-জেঠার ঘরে, পিসতু ভাই-বোনের হাসিভরা কত ছবি। তাদের জীবনে কত সুখ, কত ভালোবাসা! অথচ কেউ আমার সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসতো না! সবাই যেন আমাকে পরাজিত দেখে খুশী হতো!
দাদী আমাকে ভাত দিয়েছে ঠিকই; কিন্ত প্রতিটি দানা’র জন্য- প্রতিদিন খোটা খেয়েছি। আমি যেন ভাত খাইনি কখনো, পাথর খেয়েছি! তার দেয়া পোষাককে আমার মনেহতো, বন্য সরীসৃপের চামড়ার তৈরী কাপড়, আদরহীন! শাসনের অতি তাপে-চাপে; বুকের গহীনে সব সময় উনুনু জ্বলতো! বকা-ঝকার ভয়ে কাতর থাকতাম!
বাবা-মা মিথ্যা আবেগে, যৌনক্ষুধায় উদ্রান্ত হয়ে সংসার ভাঙ্গলো! আমাকে ত্যাগ করলো! নতুন সংসার পাতলো! ছেলের কোন খবর নেয়নি কেউ কোন দিন!
– কি খাই? কি পরি? কোথায় থাকি? কি আমার ভবিষৎ? কখনো তারা ভাবেনি। অদৃশে্য মিশে গেছে তারা!
জীবনের প্রতিটি দিন কেটেছে আমার অবচেতনে, অমনোযোগে। বাঁচার প্রতি আগ্রহের একটি আঙ্কুরও গঁজাতে পারেনি হৃদয়ে। পড়তে চেয়েছিলাম কারিতাসে, ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে! দিদিমা খোটা দিলেন,
– কে তোর হাতীর খরচ দিবে, হারামজাদা?
চাচাতো ভাই-বোনেরা কারিতাস স্কুলে গেল! আমি গেলাম সাধারণ স্কুলে! প্রতিদিন পিসতুদের সাথী হয়ে স্কুলে যাই! পথে আমি বিভক্ত হয়ে চলে যাই – প্রাইমারীতে আর ওরা কারিতাস! আমিও তো ওদের মতো হতে চেয়েছিলাম!
আমার হৃদরের হাহাকার, ভালোবাসার পিপাসা, বেঁচে থাকার চিৎকার, বড় হবার আগ্রহ কেউ শুনেনি কোনদিন! ঐ সুন্দুর স্কুল আমাকে প্রতিদিন রুদ্র করেছে, কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে আমার ভবিষত! জাগিয়েছে হিংসার হুঙ্কার, না পাওয়ার কষ্ট! আমি ঐ স্কুলে যেতে পারিনি, কাউকে যেতে দিব না!
– এই দেখ, আমার হাতে- আমার রক্ত! কেউ আমাকে থামাতে পারবে না!
এ বলে কাঁদতে কাঁদতে, ছুড়ি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আঘাত করে ছেলেটি! এক সময় মাটি লুটিয়ে পড়লো। হাত থেকে পড়ে গেলে ধারালো চাকু, অশ্রুধারা! হাউমাউ আহারাজি করে,
– আমার মতো, কোন সন্তান যেন পিতা-মাতা ছাড়া বড় না হয়! কারো হৃদয় যেন ভালোবাসাহীন না থাকে! কারো অন্তরে যেন পশুর হিংস্রতা জেগে না উঠে!
কাউসাকি বাসষ্টপে সাত-সকালে স্কুলগাশী শিক্ষার্থীদের লাশের সারি দেখে সবাই হতবাক! পুলিশ আসলো! তদন্ত শুরু হলো! সতি্যই পুলিশ তার অতীতের কোন ছবি খুঁজে পেল না! খোঁজে পেল না ভালোবাসার খাতা! খুনের রহস্য উৎঘাটনে তদন্ত চলছে!
বি.দ্র.: কাওয়াসাকি অঘটনের খলনায়ক ‘রয়োচি আইওয়াসাকি’র কাল্পনিক ভাষ্য!
—-
নিগাতা, জাপান
৩০ মে, ২০১৯