বউ আমার এনসাইক্লোপেডিয়া!
অনেক টাকার বই কিনছি বলে বউয়ের থমকের ভয়ে আছি! বল্লম উত্তর ঠিক করে রেখেছি, ধমক দিলেও বলবো,
– বাংলাদেশে বিয়া করলে, কত যৌতুক-টৌতুক পাইতাম! রাজমহল-টাজমহল, বাড়ি-টারি, কোন কিছু তো পাইলাম না ! সবাই নাকি পায়! ভেবে ছিলাম, জাপানি বিয়া করলে – এক লাফে ‘বিলিয়নিয়ার’ হয়ে যাবে ! সেই আশাতে তো চিকন-বালি দেখছি! কয়কটা বই কিনলাম, তারজন্য এত কথা?
🤣🤣🤣

যাক, এখনো কোন ধমক আসেনি!

কাজ না করে, এদিক-সেদিক করে, সহজে ধন অর্জন মানুষের সহজাত স্বভাব! এই স্বভাবটা আমার নাই! কাজ না করে, ফাঁকি দিয়ে রোজগার- আমি মনেকরি- দূনীতি, অপরাধ! ক্লাইন্ট না চাইলেও, আমি নিজ থেকেই বেশী কাজ করে দেই! হয়তো এই কারণেই আমি ক্লাইন্টপ্রিয়! সবাই আদর করে!

তবে সহজে জ্ঞান অর্জন করার স্বভাবটা আমার আছে! বড় বড় বই না পড়ে, ভিজু‍্যয়াল ও রিভিউ পড়ে, সহজে জটিল বিষয় বুঝার প্রীতি আমার আছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়গুলো! আর এই কারণেই- এনসাইক্লোপেডিয়া মার্কা জানলেওয়ালা মানুষের সঙ্গে আমার খাতির করার স্বভাবটা প্রবল। যার কাছে শিখতে পারবো- যে গাভী দুধ দিবে, সেই গাভীর লাথি খাইতে আমি রাজি আছি! অপ্রত‍্যাশিত ঝক্কি-ঝামেলা হলেও, আমি জ্ঞানী ও দক্ষ বন্ধুদের সঙ্গ ত‍্যাগ করি না !

অতি প্রশ্ন করা শিশুদের স্বভাব! আমার বেলায় স্বভাবটা, বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পড়ার পর্যন্ত ছিল! অনেক বই ও এনসাইক্লোপেডিয়া হাতের কাছে পেয়ে, প্রশ্ন করার স্বভাটা একটু কমে ছিল! আজো মনে আছে – জাহাঙ্গিরনগরের সেন্টাল লাইব্রেরীতে ঘন্টার পর ঘন্টা এনসাইক্লোপেডিয়া পড়া, পাতা উল্টানোর সেই স্মৃতি!
সবজান্তা ইন্টারনেট প্রবেশের পর, ২০০১ সাল থেকে- সেই স্মৃতির উপর অবহেলার মোটা স্তর পড়েছে! প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম!

দ্রুত বড় বড় বই পড়ার কৌশলটা আমি শিখেছিলাম, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী থেকে। উনি নাকি বইয়ের শব্দ বা লাইন পড়তেন না । পাতা পড়তেন। বইয়ের পাতা উল্টিয়েই উল্টিয়েই বুঝতেই কি লেখা আছে তাতে। এই ডিজিট্যাল যুগে অধিকাংশ ইন্টারনেটের পাঠকই অবশ্য বিবেকানন্দের মত – প্রতিদিন চোখ বুলিয়ে শত শত ওয়েবসাইট, পোষ্ট, লেখা পড়ে। তবে কতটুকু শেখে ও মানে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে!

১৯৯৬ এ এমএসসি পাশের পর বন্ধুদের সাথে সাথে এনসাইক্লোপেডিয়া পড়ার সুযোগ হারালাম। ২০০৩ সালে বিয়ের পর- বউকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বুঝলাম!
– বউ আমার এনসাইক্লোপেডিয়ার জাপানি ভার্সন! যা জিগায়, তার সৎত্তোর পাই! অতি ব‍্যস্ততার মাঝেও বার বার প্রশ্ন করলে, বউ একটু বিরক্ত হয়ে, হেসে উত্তর দিয়ে বলতো,
– আমি কি আপনার এনসাইক্লোপেডিয়া?

আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, এনসাইক্লোপেডিয়ার সিরিজ কেনা। কিন্তু মনে হতো- বিশাল এই সিরিজটা শুধু টাকার খরচ করে কেনাই হবে, পড়া বেশী হবে না। আমার ধানমন্ডির বাড়িওয়ালার ড্রয়িং রুমের আলমারীতে এনসাইক্লোপেডিয়ার বিশাল সিরিজ দেখে হিংসা করতাম। একদিন ভাড়া দিতে গিয়ে বাড়িওয়ালীকে বললাম,
– আপনার অনেক জ্ঞানী মানুষ! অনেক বই পড়েন?

হেসে বাড়ী ওয়ালি হেসে বলে,
– পড়া লেখার সময় কি আছে? এনসাইক্লোপেডিয়া গুলো আপনার ভাই কিনেছে! আড়াই লাখ টাকা দিয়ে! কখনো একটা পাতাও উল্টাতে দেখিনি! কৌলিন‍্য!

২০০৮ সালে, পুত্রের জন‍্য, থাইল‍্যান্ডে ‘বিজ্ঞান বিশ্বকোষ’ কিনতে গিয়ে অসাধারন কিশোর-বিশ্বকোষের সিরিজের সন্ধান পেয়েছিলাম! বইয়ের দোকানে কয়েকটা দ্রত দেখে অনুভব করেছিলাম- বিষয় বুঝের জন‍্য, শিশু-কিশোরদের এনসাইক্লোপেডাই যথেষ্ট!

১১ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে- স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে! গত সপ্তাহে লিষ্টের ২য় কিস্তিটা কিনলাম। ‘People & Culture’, ‘ Environment’, ‘Geology -‘Space’, ‘Ocean’ বইগুলো সত্ত্বর আসবে।

প্রতিদিনই Amazon থেকে বই আসছে, দেখে বউ বলে,
– এত বই কিনছেন কেন?

ভয়মাখা মুচকি হেসে বললাম,
– জ্ঞানের পিপাসাটা একটু মিটাতে চাই!

বউ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
– পিপাসা? মিটান! বেশি করে পানি খান!

আমি প্রসঙ্গ হালকা করার জন‍্য বললাম,
– মরে তো যাবো, একটু জেনে-শুনে শান্তিতে মরতে চাই!
– বুঝলাম! বই কিনছেন, কিনেন। আমি ষ্টেটমেন্ট দেখেছি! অনেক কিনেছেন, ৩০ হাজারের উপর যেন না যায়! তাহলে খাবার-সদাই বন্ধ!

আমি কোন কথা না বলে, মাথা নীচু করে- জি, জি করছি! আমার নীরবতায় সে বুঝেছে – আমি ভয়ে আছি। ‘ডাল মে কুচ কালা হে!’

কতক্ষন তাকিয়ে থাকার পর বলে,
– ঠিক আছে কিনেন! শর্ত, আমাকে আর কোন বিষয়ে আর প্রশ্ন করতে পারবেন না ! আমি আপনের বউ, এনসাইক্লোপেডিয়া না!

Note: I like to read subjectwise handbooks and encyclopedia to recap the knowledge and understanding.

April 16, 2019