সাদো থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা! সবার জীবনে যেন ঈদ আরও সুখ ও শান্তি নিয়ে আসে…
আজ ঈদ হলেও জাপানে সব কিছু খোলা, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে গিয়েছে । জাপানে কোন নিদ্দিষ্ট ধমর্ীয় উৎসব উপলক্ষে ছুটি নেই, এনিয়ে সবকার বা সমাজের চিন্তাও করে না ।এখানে ঈদগাহ না থাকাতে বাড়ীতেই প্রথর্না করেছি, ময়মনসিংহে কোরবানী দিয়েছি । প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। নিজহাতে ‘ভুনা মাংস’ রান্না করব।…
জাপানে যে যার ধমর্ নিজের মত করে শান্তিপূণর্ ভাবে পূণর্ স্বাধীনতার সাথে পালন করতে পারে। ধমর্ নিরপেক্ষতার জাপানের নীতি। এখানে ধমর্ের রীতি, কথা ও আধ্যাত্বিক বিষয়ের চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় – হইজাগতিক কমর্ ও বাস্তবায়ন। ধমর্ের নামে হানাহানি, কুতর্ক, কতুকতু, ‘আমি শ্রেষ্ট-তুমি হীন’ একবারেই অগ্রহযোগ্য । অন্যের অসুবিধা হবে না – এমন দস্তগত দিয়ে উৎসবের আয়োজন করতে হয়। তাই বাংলাদেশের মত মাইকে বিকট আওয়াজে ওয়াজ, আজান, বক্তৃতা বা গান চলে না। প্রকাশ্যে বা রাস্তার ধারে পরিবেশ দূষণ করে নির্দয় ভাবে পশু হত্যা করে ‘ভয় জাগানো’ ধমর্ চচ্চর্া অপরাধ। নিদিষ্ট স্থানে, নিদ্দিষ্ট ভাবে উৎসগর্ করতে হয়। নিয়ম না মানলে আয়োজকদের উপর অথর্ দন্ড, সমাজদন্ড সবশেষে কারাদন্ড ও নিষিদ্ধ!
সাদো শহরে মসজিদ-মন্দির নাই। আছে শুধু সিন্তু শ্রাইন আর বৌদ্ধ প্রোগোডা। কয়েকটি খৃষ্টান গীজর্া আছে, তবে মানুষ যায় না। জাপানীরা বিশ্বজনীনতা পছন্দ করে, সব সংস্কৃতির ভালো দিক গ্রহন করে । তবে মধ্যপ্রাচ্যের গরম হাওয়া এখনও তেমন গ্রহন করেনি । এরাবিয়ান নাচ ও গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে; তবে ঈশ্বরবাদের তকর্ শ্রীঘরে। জাপানীরা পারসোনালাইড ধমর্ চচ্চর্াকে সাধুবাদ জানায়। অধিকাংশ মানুষই সবোশ্বরবাদী, স্রষ্টাকে স্বগর্ থেকে মত্যের্ নামিয়ে এনেছে জাপানীরা। ৩০ ভাগের বেশী মানুষ নাস্তিক বা ধমর্ চচ্চর্া করে না। এই নিয়ে কোন কথাও হয় না । ধমর্ নিয়ে জাপানীদের জরিপ অদ্ভুত। ৭০ ভাগ সিন্তু, ৬০ ভাগ বৌদ্ধ, ৩০ ভাগ নাস্তিক, ১০ ভাগ অন্যান্য ; মোট ১৭০% । এর মানে একজন মানুষ একাধিক ধমর্ পালন করে । টেডিশনাল বাড়িতে – সিন্ত ও বৌদ্ধ দু’ই ধমর্েরই বিগ্রহ ( খামিসামা ও খামিদানা) আছে। সব ধর্মের মানুষ স্রষ্টাকে ‘খামিসামা’ বলে । একই রীতিতি সালাম ও শুভ কামনা করে। তরুণ-তরুনীদের এপাটমেন্টে ধমর্ের নিশানা নাই বললেই চলে। বিশষজ্ঞদের পর্যবেক্ষন – একজন জাপানী জন্মে সিন্ত হয়ে, বিবাহ করে খৃষ্টান মতে (আর্কষনীয় পোষাক ও স্বপ্ন খরচের কারণে ), জীবন-যাপন করে ধমর্হীনতায় – মানবিকতায় (নাস্তিক বলা যেতে পারে) আর মৃত্যুবরণ করে বৌদ্ধিষ্ট হিসাবে অভিযোগহীন পুনর্তার সাথে।
আমি তো দেখে হতবাক – বাংলাদেশে বৃদ্ধরা যেখানে পরকালের ভয়ে থরথর করে কাঁপে, সেখান জাপানী বৃদ্ধরা ফ্যাশন করে ছবি তোলে ফিউনারালে ব্যাবহার করার জন্য। কবরের শীলালিপির কবিতা, জীবন-তথ্য নিজের হাতে লিখে যায়। মৃত্যুকে, জন্মের মত আনন্দের সাথে স্বাগত জানায় – অধিকাংশ জাপানী।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে এটম বোমা নিক্ষেপের পর, পাল ধরে খৃষ্টান মিশনারীরা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জাপানে এসেছে । শান্তির বানী শুনিয়েছে । কিন্তু জাপানীদের মন গলাতে পারেনি। কিন্তু কোন দন্দ্বও হয়েনি। অনেক চেষ্টা তদরিরের পরও খৃষ্টানের সংখ্যা নগন্য। তবে খ্রষ্টান মতে বিবাহও বড়দিন পালন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এক্ষেত্রে অহিংসার বানী শুনিয়ে ভারতীয়রা অনেক সফল হয়েছে । ভারতীয় ইয়োগা ও খাবার এখানে অনেক জনপ্রিয় । কিন্তু ‘হরে কৃষ্ণ হবে রাম..’ কে ‘ওম রিলিজিয়ন’ ( আশাহারির গ্যাস সন্ত্রাসের পর ) বলে ভারতীয় অধ্যাত্নবাদকে পাশ কেটে চলে প্রায় সবাই। নীরবে, বিশেষ করে বিবাহের মাধ্যমে ইসলামের প্রসারে একটু ভাটা পড়েছে। আইএস কর্তক দু’জন জাপানী হত্যার পর, মিডিয়াতে ইসলামের মন্দ দিক গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন ইসলামের নাম শুনলেই মানুষ এখন ভয় পায়। খারাপ লাগে – জাপানীরা মনে করে ইসলাম মানেই মাথা গরম, অহংকারী সুপিরিয়রিটি কম্পেক্সে আক্রান্ত। মুসলিমদেরকে উত্তরকোরিয়ানদের মত একরোখা মনে করে।
আজ ঈদ হলেও সারা দিন কাজ করব। খলিফা ওমর (রাঃ) ঈদের দিনেও নাকি কাজ করতেন। সাহাবীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন – “তার জীবন স্বাথর্ক, যিনি ঈদের দিনেও কাজ করেন…”। শান্তির জন্য হযরত ওমর (রাঃ) তলোয়ার ছেড়ে সমতা ও সেবার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তার পথ – সুপথ, মান্য।
ঈদের এই দিনে আমার কামনা – আমি জাপানীদের মত অভিযোগহী শতবষর্ বাঁচতে চাই । মৃত্যুকে শোকে নয় , সুখ ও উৎসব হিসাবে দেখতে চাই! করবে শিলালিপিতে লিখতে চাই – ” এ পৃথিবীতে জন্মে জীবন আমার ধন্য । আমি তোমাদের ভালোবেসে, তোমাদেরকে ভালোবাসতে পেরে আনন্দিত। পৃথিবীতে শান্তির যাত্রার আমার স্বাথর্ক !”